আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কি সমস্যা যদি কোন মুসলিম নর নারী কোন অমুসলিমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়?

বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন] সমস্যা তো আছেই, উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। একটা ভালো উদাহরণ হতে পারে বলিউডের শাহরুখ খান। তার উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র আমি একাধিকবার একাধিক টিভি চ্যানেলে দেখেছি।

সেটার একটি অংশ ছিল এমন, শাহরুখের স্ত্রী গৌরী তার সন্তানদের নিয়ে তাদের বাড়ির একটি রুমে চলে গেল। সেটি তাদের প্রার্থনা কক্ষ। সেখানে ছিল একটি মূর্তি আর তার ডানপাশে ছিল পবিত্র কুরআন। সেখানে গৌরী তার সন্তানদের নিয়ে পূজো করলো। আরেক বলিউড অভিনেতা সালমান খান, যার বাবা সেলিম খান আর মা সুশীলা চারাক যিনি একজন মারাঠা হিন্দু।

তার সৎ মা হেলেন। এ সালমান খানের পরিবার প্রতিবছর মুসলিম ও হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান (যেমন, শিবরাত্রী, গনেশ পূজো) ধুমধাম করে পালন করে। ২০১০ সালে সালমান খান বলেছিলেন, তিনি অর্ধেক মুসলিম, অর্ধেক হিন্দু। সমস্যাটা কি ধরতে পেরেছেন, এখনো পারেননি! এ বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার কোন ইচ্ছাই আমার ছিল না। কিন্তু আজকে এক দৈনিকের অনলাইন ভার্সনে দেখলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, আমার ছেলের বউ ইহুদি নয় খ্রিস্টান।

আমি এই খবরটি ফেসবুকে শেয়ার করলে, আমার এক অস্ট্রেলীয় প্রবাসী বন্ধু কিছুটা প্রতিবাদের সুরেই বলে, দোস্ত, হাসিনার পোলার বউ খ্রিস্টান না মুসলিম এইটা নিয়া আমাগো এত মাথা ব্যাথা ক্যান?... আরো কিছু ছিল। আমি খালি খবরটি শেয়ার করেছিলাম, কোন মন্তব্য জুড়ে দেইনি। যা হোক, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ভবিষ্যতে আওয়ামীলীগের প্রধান হবেন, এমনকি দেশের প্রধাণমন্ত্রীও। তাকে নিয়ে তো আমাদের চিন্তা করতেই হবে। উনার চিন্তাধারা, উনার জীবণসঙ্গীণির চিন্তাধারা উনি দেশের মানুষের উপর, এ দেশের সংস্কৃতির উপর বিস্তৃত করার চেষ্টা অবশ্যই করবেন।

শাসক শ্রেণী সে যেই হোক, বরাবরই তার চিন্তাধারা, দর্শন, বিশ্বাস জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রচারে উদগ্রীব থাকে। এটা তো একটা মহা চিন্তার বিষয়। যারা দেশ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে তারা কি করে এটা উপলব্ধি করবে? উপরের উদাহরণগুলো খেয়াল করলে দেখবেন, যখন দুটো ভিন্ন ধর্মের মানুষ একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন তাদের ঘরে যে সন্তান বেড়ে ওঠে, তারা উভয় ধর্মের আচার অনুষ্ঠান নিয়ে, বিশেষ করে ধর্মীয় উৎসবগুলো নিয়ে একটি হাইব্রীড ধর্ম বানিয়ে ফেলে। যারা নিজ ধর্মের বাইরে অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করে, খেয়াল করলে দেখবেন তারা ধর্মীয় বিষয়ে কিছুটা উদাসীন থাকে, তারা ধর্মকে আচার অনুষ্ঠান সর্বস্ব কিছু বলে মনে করে। তাদের কাছে তাদের প্রিয় মানুষ, তাদের ধর্ম বা বিশ্বাসের চেয়েও বেশী প্রিয়, বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

এখন যেসব মুসলিম সেক্যুলার ধ্যান ধারণা লালন করেন বা ইসলামকে শুধুমাত্র দুই ঈদ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন, তাদের বিনীতভাবে বলছি, আপনাদের ইসলাম সম্পর্কে ধারণা সঠিক নয়। আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে আপনারা শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনের অনুবাদ মনোযোগ দিয়ে একবার পড়ে দেখুন। তাহলে এর উত্তর পেয়ে যাবেন। আমি জানি, আপনাদের মধ্যে অধিকাংশই সারা জীবণ থেকেও এতটুকু সময় বের করতে পারবেন না। আমি জানি, অনেকেই এখন বলবেন আহলে কিতাবের অনুসারীদের বিয়ে করা যায়।

হ্যা কুরআনে আছে, আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হল। আহলে কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্যে হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল। তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী করার জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়। যে ব্যক্তি বিশ্বাসের বিষয় অবিশ্বাস করে, তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [পবিত্র কুরআন, ৫ নং সূরা মায়েদা, আয়াত নং ৫] ভালো করে লক্ষ্য করুন, এখানে মুসলিম পুরুষদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, তাদের জন্য মুসলিম নারী ও আহলে কিতাবের অনুসারী নারীরা বৈধ এবং বৈধ মানে হচ্ছে মোহরানা দিয়ে বিয়ে করার জন্য বৈধ, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়।

এখন কেউ যদি প্রশ্ন করেন, কেন মুসলিম নারীরা আহলে কিতাবের অনুসারী পুরুষদের বিয়ে করতে পারবে না? এর উত্তর আমার জানা নাই, যেটা আল্লাহ্ বলেননি সেটা আমি কি করে জানবো? তবে অনেকে অনেক রকমের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন, যেটা আপনারা অনলাইনে সার্চ করলেই পাবেন। এরকম একটি ব্যাখ্যা পাবেন এখানে । তো আহলে কিতাব কারা? আহলে কিতাব বলতে ঐসব একেশ্বরবাদীদের বোঝায় যাদের উপর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল, মুহাম্মাদ (সা) এর উপর কুরআন অবতীর্ণ হবার পূর্বে। আমি আবারো বলছি, আহলে কিতাবরা অবশ্যই একেশ্বরবাদী এবং তাদের উপর কিতাব এসেছিল মুহাম্মাদ (সা) এর উপর কুরআন অবতীর্ণ হবার আগে, বহু আগে। পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াত উদ্বৃত করছি, বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য, তোমরা কিতাবধারীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে না, কিন্তু উত্তম পন্থায়; তবে তাদের সাথে নয়, যারা তাদের মধ্যে বে-ইনসাফ।

এবং বল, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমাদের উপাস্য ও তোমাদের উপাস্য একই এবং আমরা তাঁরই আজ্ঞাবহ। [পবিত্র কুরআন, ২৯ নং সূরা আল আনকাবুত, আয়াত নং ৪৬] তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে যারা অবিচলভাবে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং রাতের গভীরে তারা সেজদা করে। তারা আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়; অকল্যাণ থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে।

আর এরাই হল সৎকর্মশীল। [পবিত্র কুরআন, ৩ নং সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ১১৩,১১৪] নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না। [পবিত্র কুরআন, ২ নং সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ৬২] বলুনঃ হে আহলে-কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস-যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান-যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও যে, সাক্ষী থাক আমরা তো অনুগত।

[পবিত্র কুরআন, ৩ নং সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ৬৪] এটা আমার অত্যন্ত প্রিয় একটি আয়াত। বর্তমানে, স্রষ্টা সম্পর্কে অধিকাংশ ইয়াহুদীই একেশ্বরবাদী। সোজা কথায়, স্রষ্টা সম্পর্কে মুসলিমদের সাথে ও বর্তমানে যেসব ইয়াহুদী আছে তাদের ধারণা একই। বিশুদ্ধ একেশ্বরবাদ। কিন্ত্ত খ্রিস্টানদের বেলায় এটা খাটে না।

রোমান ক্যাথলিক, প্রোট্যাস্ট্যান্ট, লুথেরান, মেথডিস্ট, এংলিকান, ব্যাপ্টিস্ট, গ্রীক অর্থডক্স, কপ্টিকসহ অধিকাংশই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ট্রিনিটি (পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্নার এক রহস্যময় সমন্বয়) তে বিশ্বাসী। বিশুদ্ধ একেশ্বরবাদী খ্রিস্টানদের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। উদাহরণস্বরূপ, খ্রিস্টানদের একটি ফেরাকা জেহোবাস উইটনেসদের একেশ্বরবাদী বলা যায়। আর অতীতে অনেক একেশ্বরবাদী খ্রিস্টান ফেরকা ছিল, যাদের অধিকাংশই এখন বিলুপ্ত। আমার প্রিয় ভাই বোনেরা, আপনারা নিশ্চয়ই পরকালে সুখী থাকতে চান এবং তা চান আপনাদের কাছের মানুষদের সঙ্গে নিয়েই।

অবশ্য যারা পরকালে বিশ্বাস করে না তাদের কথা আলাদা। যারা পরকালে বিশ্বাস করেন তাদের বলছি, আমি আমার মুসলিম ভাই বোনদের বলছি, আপনার সন্তান সন্ততি ও জীবণসঙ্গী বা জীবণসঙ্গীণীর ভবিষ্যত চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। এবার আসি মাননীয় প্রধাণমন্ত্রীর ছেলে জয়ের বিষয়ে। আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী নারীকে বিয়ে করাটা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। কিছুদিন আগে একটি খবরে পড়েছিলাম শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ ক্রিস নামের ব্রিটিশ এক শ্বেতাঙ্গ সরকারি কর্মকর্তাকে বিয়ে করেছেন।

যদিও সংবাদ মাধ্যমে ক্রিসের ধর্মীয় বিশ্বাস উল্লেখ করা নেই তবুও ধারণা করা যায় যে, ক্রিস ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। দেখা যাচ্ছে, এই পরিবারে এ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন করাটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্ত্ত এ স্বাভাবিক ঘটনা, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী স্বাভাবিক ভাবে নিবে না। আপনি বলবেন, মৌলবাদী, জঙ্গী তাই এভাবে চিন্তা করে। আমি বলবো, এদেশের মুসলিমদের বিশ্বাস দৃঢ়, মজবুত তাই নিবে না।

তারা বোঝে, যে মুসলিম তার ধর্ম নিয়মিত চর্চা করে না সে যখন অন্য ধর্মের সাথে বিয়ের মত একটি বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন সমূহ সম্ভাবনা থাকে তার ধর্মীয় সত্ত্বা বিসর্জন দেয়ার। সমূহ সম্ভাবনা থাকে এ রকম সম্পর্ক থেকে বিকৃত ধর্মীয় (hybrid) আচার অনুষ্ঠান, বিকৃত, পথভ্রষ্ট ও নোংরা শিল্প সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটার। যার ধারক বাহক হয় তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তথ্যসূত্রঃ Salman Khan আমার ছেলের বউ ইহুদি নয় খ্রিস্টান : হাসিনা Marrying non-Muslims: the legal ruling বিয়ে করেছেন টিউলিপ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.