আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেলের ভাত ও তরকারি - পার্ট ওয়ান

আজ একটি ভিন্ন বিষয় নিয়ে এই ব্লগ। জেল, হাজত, লালদালান এই শব্দ গুলো আমরা শুনেছি। কিন্তু এই জেল, হাজত বা লাল দালান সম্পর্কে কি আমরা কিছু জানি ? বেশিরভাগেরই কোন ধারনাই নাই। আজ আপনাদের আমি জেলের গল্প শোনাব। ভাবছি একদম প্রথম থেকে শুরু করব।

First of all আসে মামলায় বিষয়টি। যে কোন ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান অথবা পুলিশ অন্য কোন কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। পুলিশি মামলার ঘটনা বলব আজ। পুলিশ , ডিবি , এসবি, র‍্যাব অথবা কোন আইন শৃংখলা বাহিনি একজন আসামীকে গ্রেফতার করার পরে কোন এক বা একাধিক মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করতে পারে। এখানে একটি বিষয় বলে রাখি, আপনি যে কোন অপরাধই করেন না কেন, পুলিশের অন্যান্য জটিলতা না থাকলে ঘুষ প্রয়োগ করে ছাড়া পেয়ে জেতে পারবেন।

ঘুষের পরিমাণ অপরাধের মাত্রার উপর নির্ভর করবে। গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় পরিলক্ষিত হয় তা হল আজকাল নিরপরাধ মানুষকেও গ্রেফতার করে পয়সার ধান্দায় মামলা দিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়। পুলিশের এই রিমান্ড আসলে টাকা আয়ের অন্যতম উৎস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মামলা দিয়ে রিমান্ড চেয়ে পরিবারের কাছে ফোন করে ভয় দেখানো হয়। এরপর পরিবার থেকে যদি পুলিশকে খুশি করা যায় তবে রিমান্ডে জামাই আদর করা হয়।

আর টাকা পয়সা না পেলে নির্যাতন করা হয়। এই নির্যাতনের মাত্রা থানা ভিত্তিক আলাদা আলাদা রকমের হয়। যে দিন গ্রেফতার করা হয় সেদিন আসামীকে থানা হাজতে থাকতে হয় রাতে। এরপর পুলিশ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে আসতে পারলে পরের দিন এক বা একাধিক মামলা দিয়ে কোর্টে প্রেরন করবে। কোর্ট আপনার রিমান্ড মঞ্জুর বা না মঞ্জুর করতে পারে।

আর জামিন না মঞ্জুর করা হলে আপনাকে কোর্ট থেকে প্রিজন ভ্যানে জেল হাজতে পাঠানো হবে। কোর্ট থেকে জেল হাজতের গেটে পৌছতে শেষ বিকেল বা সন্ধ্যা হয়ে যায়। এরপর জেল গেটে নিয়ে প্রথমে আসামীর নাম এবং অন্যান্য তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। টাকা পয়সা থাকলে তা personal cash বা পিসি তে জমা দিয়ে দিতে হয়। এই ক্যাশ আসামী পরবর্তীতে ব্যবহার করতে পারবেন।

নাম নিবন্ধন শেষে চেকিং এর পালা। সারা শরীর এবং ব্যাগের জিনিস পত্র খুব ভাল ভাবে চেক করা হয়। যে সকল জিনিসপত্র জেলে অবৈধ সে গুলো ফেলে দেয়া হয়। যেমন রান্না করা খাবার, কোমরের বেল্ট, অলংকার, অপ্রয়োজনীয় কাগজ , পানি ইত্যাদি ইত্যাদি। আসামীদের সংখ্যা যাচাই করে জেলের ভেতরে পাঠানোর পালা।

জেল গেটের দ্বিতীয় গেট দিয়ে এক এক করে গুনে গুনে ভিতরে ঢোকান হয়। এরপর পাঁচজন পাঁচজন করে ফাইলে বসতে হয়। ফাইল হচ্ছে জেলের ভিতর সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যাইহোক জেলের পরিভাষা গুলো পরে বলব। ফাইলে পুনরায় আসামীদের গুনে ভয়ানক আমদানিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

আমদানিতে আসামীকে একরাত থাকতে হয়। আর এই রাতরাই জেলের ভিতর মনে রাখার একটি বিষয়। নতুন সবার জন্যই জেলের প্রথম দিন এটি সে হিসেবে একটি ভয় কাজ করে। আর এই সুযোগ নিয়েই শুরু হয় জেলের দুর্নীতি। আমদানিতে নিয়ে শুধু শুধু আবার আপনাকে চেক করা হবে।

মুলত এই চেকিংটা করা হয় নতুন আসামীদের নতুনত্বের সুযোগ নিয়ে কিছু খাবার বা জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়ার জন্য। দ্বিতীয়বার চেকিং শেষে রাতের খাবার দেয়া হবে। রাতের খাবার হচ্ছে খিচুরি খিচুরি খিচুরি। এক প্লেটে দুজন দুজন করে খাবার খেতে হবে, হাত ধোয়ার জন্য পানি দেয়া হবে। খাবারের পানিও দেয়া হবে।

খাওয়া শেষ হলে শুরু হবে মূর্খ রাইটারদের প্যাচাল , যে প্যাচালে নতুন আসামীদের সহজেই কাবু করে টাকা আয়ের পথ উম্মোচন করা হয়। রাইটার বা লেখক সকলকে গাদাগাদি করে একদিকে বসিয়ে তার বয়ান শুরু করেন। প্রথমেই বলেন জেলে যে সকল জিনিসপত্র অবৈধ সে গুলোর ব্যাপারে। এরপর সাধারন কিছু নিয়ম নীতির কথা বলে দেয়া হয় যাতে জেলের পরিবেশের ব্যাপারে ধারনা লাভ করা যায়। এখানেও রাইটার মহোদয় তার নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন।

ইনিয়ে বিনিয়ে এমন ভাবে বলে যাতে আসামীরা ভয় পায়। জেলের ভেতরের বিরুপ পরিবেশের বর্ণনা দিয়ে এই খারাপ পরিবেশেও কিভাবে ভাল থাকা যায় তার পথ এবার বাতলে দেয়া হয়। টাকা!!!! আসলে দুর্নীতিবাজ এই চক্রটির এটি একটি ব্যবসায়িক মার্কেটিং হচ্ছে এই বয়ান। এরপর একদিকে যারা টাকা দিয়ে ভাল থাকতে চান তাদের নাম লেখান হয় এবং অপরদিকে যারা টাকা দিতে পারবে না তাদের সাথে শুরু হয় খারাপ ব্যবহার। যারা নাম না লেখায় তাদেরকে শৈল্পিক উপায়ে কেচকি ফাইলে শোয়ান হয়।

আর এতে সহায়তা করে চিফ রাইটারের শিস্যরা। বাকিটা আসছে .। .। । -- মাই ব্রো (তানভীর জিহাদ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.