ভয়টা আগে থেকেই ছিল। ম্যাচ পাতানোর সর্বশেষ ঘটনায় সেটা শুধু বেড়েছেই। উপমহাদেশের ক্রিকেটে অপরাধজগতের সংশ্লিষ্টতা পুরোনো। ভয়টা তাদের প্রভাব বেড়ে যাওয়া নিয়েই। আর এখন তো মনে হচ্ছে স্পট ফিক্সিংয়ের মতো দুর্নীতি ‘ক্যানসারের’ মতোই ছড়িয়ে পড়ছে।
শ্রীশান্তদের গ্রেপ্তার করা দিল্লি পুলিশ বলছে এ ঘটনায় ক্রিকেটারদের ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে মধ্যপ্রাচ্যে আস্তানা গাড়া অপরাধীরা। ক্রিকেটাররা শুধু তাদের চিত্রনাট্য অনুযায়ী অভিনয় করেছেন। তবে ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা শুধু মাফিয়া বসদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন না। তাঁদের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেট-প্রশাসকেরাও কম দায়ী নন। আগের ঘটনাগুলোয় দোষী ক্রিকেটারদের কঠোর শাস্তি না দেওয়াতেই বারবার কলঙ্কিত হচ্ছে ক্রিকেট।
পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম ও মুশতাক আহমেদরা তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ার পরও সামান্য জরিমানা ও আর কখনো জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করতে পারবেন না, এই শর্তে পার পেয়ে যান। এই দুজনই আইপিএলের দুটি দলের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। বাজিকরদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে টেস্টে তথ্য সরবরাহ করে জরিমানা গুনেছেন স্পিন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্নও। সেই ওয়ার্নের অধিনায়কত্বেই প্রথম আইপিএলটা জিতেছিল রাজস্থান রয়্যালস। আর আজীবন নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন তো পরে সংসদ সদস্যই হয়ে গেছেন।
এবার কি তবে কঠোর কিছু দেখবে ক্রিকেট-বিশ্ব? আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন চাইছেন সবাই মিলে নজরদারিটা আরও কঠোর করতে। এ ছাড়া দোষী সাব্যস্ত হওয়া ক্রিকেটারদের কঠোর শাস্তির পক্ষে অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক এই ক্রিকেটারের। কঠোর শাস্তির পক্ষে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) সভাপতি এন শ্রীনিবাসনও। কাল বিসিসিআই প্রধান জানিয়েছেন, অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষীদের জেলে পাঠাতেও দ্বিধা করবে না বোর্ড।
তবে স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য যাঁরা খোদ আইপিএলকেই দায়ী করেছেন তাঁদের দলে নেই শ্রীনিবাসন।
তাঁর মতে, আইপিএল ক্রিকেট-ভক্তদের বিশ্বাসে নাড়া দেয়নি, দিয়েছে ‘এই নোংরা ক্রিকেটাররা’। নিজেদের সৎ মানুষ উল্লেখ করে আইপিএলের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন শ্রীনিবাসন। আজ জরুরি সভায় বসবে বিসিসিআই। তবে তার আগেই বিসিসিআই প্রধান জানান, অভিযুক্তদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হবে, করা হবে তদন্ত।
বসে নেই দিল্লি পুলিশও।
শ্রীশান্তরা আগের দিন দোষ স্বীকার করলেও গতকালও তিন ক্রিকেটারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। শুক্রবার প্রত্যেকের আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ হলেও কালই প্রথম তিনজনকে মুখোমুখি করা হয়। ক্রিকেটারদেরকে আটক হওয়া বাজিকরদেরও মুখোমুখি করা হবে, শোনানো হবে ধারণ করা অডিও টেপও। দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার এস এন শ্রীবাস্তব কাল জানিয়েছেন এসব।
আইপিএলের আরও দল ও ক্রিকেটার এখন পুলিশের নজরদারিতে।
আইপিএলের স্পট ফিক্সিংয়ে বিনিয়োগ করা টাকাপয়সার তত্ত্ব-তালাশ করতে দিল্লি পুলিশ ভারতের বিভিন্ন শহরে অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। মুম্বাই, হায়দরাবাদ, আহমেদাবাদ, কলকাতা ও দিল্লিতে চলবে এই অভিযান। এদিকে কাল মুম্বাই পুলিশ শ্রীশান্ত ও তাঁর বন্ধু জিজু জনার্ধনের ল্যাপটপ, আইপ্যাড, মোবাইল ফোন, ইংরেজি ও মালয়ালাম ভাষায় লেখা ডায়েরি এবং ক্রিকেট সরঞ্জাম জব্দ করেছে। শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলের কক্ষ থেকে জব্দ করা শ্রীশান্তের ল্যাপটপের যাবতীয় তথ্যও কপি করার অনুমতিও পেয়েছে পুলিশ। রাজস্থান রয়্যালস মুম্বাইয়ের যে হোটেলে ছিল, এটা সেই হোটেল নয়।
তখন দলের সঙ্গে না থাকলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ওই হোটেলেকক্ষ ভাড়া নেন শ্রীশান্ত। এএফপি, ওয়েবসাইট। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।