কাঁঠাল এক প্রকারের হলদে রঙের সুমিষ্ট গ্রীষম্কালীন ফল। এটি বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসবে সরকারীভাবে নির্ধারিত। বাংলাদেশের সর্বত্র কাঁঠাল গাছ পরিদৃষ্ট হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus ( আরটোকারপাস হেটারোফাইলাস) । কাঁচা কাঁঠালকে বলা হয় এঁচোড়।
কাঁঠাল গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরীর জন্য অত্যন্ত সমাদৃত। আকারের দিক থেকে কাঁঠাল সবচেয়ে বড় ফল। কাঁঠালে প্রচুর শর্করা, আমিষ ও ভিটামিন ‘এ’ আছে। দামের তুলনায় এত বেশি পুষ্টি উপাদান আর কোন ফলে পাওয়া যায় না। মেয়েদের মত আমাদের সমাজে ধনী লোকেরাও কাঁঠাল পশ্চন্দ করে না।
কাঁঠাল দেখলে কেমন করে উঠে। বাংলাদেশের জাতীয় ফল হলো কাঁঠাল।
বাংলাদেশ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে কাঁঠালের উৎপত্তি স্থান হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণ ভারত, বিহার, মিয়ানমার, মালয়, শ্রীলংকা প্রভৃতি এলাকা ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও এরূপ ব্যাপকসংখ্যায় কাঁঠালের চাষ করতে দেখা যায় না। তবে ব্রাজিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জ্যামাইকা প্রভৃতি দেশে সীমিত আকারে কাঁঠাল জন্মে।
সাধারণতঃ লালচে মাটি ও উঁচু এলাকায় এটি বেশী দেখা যায়। কাঁঠালের ক্যালসিয়াম দেহের হাড়, দাঁতের পুষ্টি জোগায়, জিঙ্ক শরীরের ইনসুলিন হরমোনের সরবরাহ নিশ্চিত করে, দেহের অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আর ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম দেহের অম্ল ও ক্ষারের সাম্যাবস্থা বজায় রাখে। ফলের রাজা এই কাঁঠালের বিচিতেও রয়েছে উচ্চতর প্রোটিন। কম পরিমাণে কাঁঠালের বিচি খান।
ডায়াবেটিসের রোগীরা কাঁঠাল খেতে পারবেন। বাংলা ও হিন্দিভাষা কাঁঠাল বলা হলেও এই ফলের আরও অনেক নাম আছে। যেমন গুজরাটি ভাষায় পানাসি, নেপালিতে রুখ কুট-এ-হের, তামিল ভাষায় পালা, চীনাভাষায় বৌলমী বা পৌলমী, জাপানিতে পারামিটসু, কোরিয়ান ভাষায় বারামিল বলে।
কাঁঠাল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। বসন্তকাল থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত কাঁচা কাঁঠাল ইচোড়’ সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।
পাকা ফল বেশ পুষ্টিকর, কিন্তু এর গন্ধ অনেকের কাছে ততটা আকর্ষণীয় নয়। কাঁঠালের পাতা ছাগলের প্রিয় খাদ্য। কাঁঠালের ছোবড়া গরুর প্রিয় খাদ্য। আমাদের দেশে সাধারণত তিন ধরণের কাঁঠালের জাত চাষ করা হয়-খাজা, আধরসা ও গলা। কাঁঠালের চারা জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে রোপণ করা হয়।
প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় দেড় টন কাঁঠাল পাওয়া যায়। কেশবপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে কেতাবদী গাজীর পুত্র গোলাম মোস্তফা (৪৫) ছাগলের জন্য কাঁঠাল গাছে পাতা কাটতে উঠে। এক পর্যায়ে অসাবধানতা গাছ থেকে পড়ে মারাত্বক আহত হয়।
কাঁচা কাঁঠালের কোপ্তা কারিঃ কাঁঠালবাটা ২ কাপ, পাউরুটি ২ টুকরা, আদা বাটা ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, রসুনবাটা আধা চা-চামচ, ডিম ১টা, জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ২ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, গরম মসলা গুঁড়া আধা চা-চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ২ টেবিল চামচ। প্রণালি: ওপরের সব উপকরণ একসঙ্গে মাখিয়ে গোল কোপ্তা বানিয়ে হালকা বাদামি করে ভেজে তুলতে হবে।
তেল এক কাপের একটু কম, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজবাটা ৪ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা আধাকাপ, ধনেবাটা এক চা-চামচ, টক দই ৪ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, টমেটোর সস ২ টেবিল চামচ, এলাচি-দারচিনি ৩-৪ চা-চামচ, দুধ ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, ঘি ১ চা-চামচ।
পাত্রে তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ২-৩ মিনিট ভাজার পর সব মসলা একে একে দিয়ে ভুনতে হবে। দুধ ও অল্প পানি দিয়ে ঝোল দিতে হবে। ফুটে উঠলে কোপ্তাগুলো দিয়ে মাঝারি আঁচে দমে রাখতে হবে। ঝোল মাখা হলে ঘি ও বেরেস্তা দিয়ে পাঁচ মিনিট দমে রেখে নামিয়ে পরিবেশন।
কাঁঠালের আঁটি তরকারির সাথে রান্না করে খাওয়া হয় অথবা পুড়িয়ে বাদামের মত খাওয়া যায়। এর একটি সুবিধে হল, আঁটি অনেকদিন ঘরে রেখে দেয়া যায়। পাকা ফলের কোষ সাধারণত খাওয়া হয়, এই কোষ নিঙড়ে রস বের করে তা শুকিয়ে আমসত্বের মত ‘কাঁঠালসত্ব’ও তৈরি করা যায়। এমনটি থাইল্যান্ডে এখন কাঁঠালের চিপস্ তৈরি করা হচ্ছে। কোষ খাওয়া পর যে খোসা ও ভুতরো ( অমরা ) থাকে তা গবাদি পশুর একটি উত্তম খাদ্য।
ভুতরো বা ছোবড়ায় যথেষ্ট পরিমাণে পেকটিন থাকায় তা থেকে জেলি তৈরি করা যায়। এমন কি শাঁস বা পাল্প থেকে কাঁচা মধু আহরণ করার কথাও জানা গেছে। কাঁঠাল গাছের পাতা গবাদি পশুর একটি মজাদার খাদ্য। কাঁঠালের আঠা নিয়ে না বললে নয়! কাঁঠালের আঠা নিয়ে বাংলা ছিনেমাতে গানও আছে। পিরিতি নাকি অনেকটা কাঁঠালের আঠার মত! লাগলে ছুটে না!
কাঁচা কাঁঠালের কাবাবঃ উপকরণ : কাঁঠাল টুকরা করা ২ কাপ, পেঁয়াজ ৪টা, ছোলার ডাল আধা কাপ, আস্ত জিরা ১ চা-চামচ, আদাকুচি ১ টেবিল চামচ, আস্ত শুকনা মরিচ ৮টা, রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ, টোস্ট বিস্কুটের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, ডিম ২টা, কর্নফ্লাওয়ার ২ টেবিল চামচ, কাবাব মসলা ১ চা-চামচ, এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা ৩টি করে।
ভাজার জন্য তেল ও লবণ পরিমাণমতো দিতে হবে।
কাঁচা কাঁঠাল কেটে সামান্য হলুদ দিয়ে পানিতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। ডিম, কাবাব মসলা, টোস্টের গুঁড়া, কর্নফ্লাওয়ার ও তেল বাদে বাকি সব উপকরণ পরিমাণমতো পানি দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। গরম গরম পাটায় বেটে নিতে হবে। এবার বাকি উপকরণগুলো দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে কাবাবের খামির তৈরি করতে হবে।
যদি খামির বেশি নরম হয়, তবে আরও একটু বিস্কুটের গুঁড়া দিয়ে মাখিয়ে নিতে হবে। সব শেষে কাবাবের আকার করে ডুবো তেলে ভেজে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে কাঁচা কাঁঠালের কাবাব।
রাইজোপাস অটোকারপি নামের ছত্রাকের আক্রমণে কাঁঠালের মুচি বা ফল পচা রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের আক্রমণে কচি ফলের গায়ে বাদামী রঙ্গের দাগের সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ফল শেষ পর্যন্ত ঝরে পড়ে। গাছের পরিত্যক্ত অংশে এ রোগের জীবাণু বেঁচে থাকে এবং তা বাতাসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে।
একেকটা কাঁঠালের ব্যাস ২৫ সেন্টিমিটারের মত আর লম্বায় ৯০ সেন্টিমিটার হয়। এদের ওজন ৩৬ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। গাছের সব জায়গাতেই কাঁঠাল ধরতে পারে। একেবারে মাটির কাছে গোড়া থেকে শুরু করে অনেক উচুঁতেও ধরতে পারে। একটি গাছে গড়ে প্রায় ১৫০ টা পর্যন্ত কাঁঠাল ধরতে পারে।
সাধারণত একটা কাঁঠাল গাছ লাগানোর তিন বছরের মধ্যেই তাতে ফল ধরতে শুরু করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।