ক’দিন আগে একুশে রাত অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী মো. ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের বক্তব্য শুনছিলাম। তার বিপরীতে ছিলেন বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য, সদ্য কারামুক্ত ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেই অনুষ্ঠানে ইলিয়াস আলী গুম প্রসঙ্গে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বললেন, পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলন করে ইলিয়াসের নাকি ক্ষতি করা হয়েছে। তার মতে, গুম নিয়ে দেশে-বিদেশে অতিরিক্ত হৈ চৈ হওয়ায় অপহরণকারীরা ইলিয়াস আলীকে আর ছেড়ে দিতে পারেনি। অর্থাত্ গুমের পর চুপচাপ থাকলে সরকার তাকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে দিত! ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সরকারি দলে আছেন।
সুতরাং ধারণা করছি, ইলিয়াস আলীর ভাগ্যে কী ঘটেছে সেটা তিনি জেনেশুনেই এই মন্তব্য করেছেন। সেদিন তার কথা শুনে মনে হচ্ছিল, তিনি গুমকারীদের পক্ষে ওকালতি করছেন। তার পরামর্শ মোতাবেক এখন থেকে এদেশে অপহরণকারীরা কাউকে ধরে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করলে সাহারা খাতুনের পুলিশকে না জানিয়ে চুপচাপ মুক্তিপণ দেয়াটাই সম্ভবত বুদ্ধিমানের কাজ হবে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে কী চমত্কার আইনের শাসন চলছে! কোনো বেয়াড়া নাগরিক যদি প্রশ্ন করেন—তাহলে আর জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় পুলিশ পুষে লাভটা কী, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনদের সেই প্রশ্নের জবাব দেয়ার কোনো ঠেকা নেই।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একতরফা জয়লাভের ফলে আমরা সবাই আজ তাদের প্রজায় পরিণত হয়েছি।
আমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে আওয়ামী গুণ্ডাবাহিনী যে ভিন্নমতাবলম্বীদের ধরে নিয়ে গুমরাজ্যে পাঠিয়ে দিচ্ছে না, এতেই আমজনতার কৃতজ্ঞ থাকা
উচিত। তবে এ প্রসঙ্গে শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম এবং বিএনপির ঢাকা মহানগরের নেতা চৌধুরী আলমের কথা তুললে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন কী জবাব দেবেন. সেটা জানার সুযোগ আমাদের এখনও হয়নি। কারণ ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কিংবা কোনো দর্শক প্রশ্নটি সেদিন উত্থাপন করেননি। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামকে গুম করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি গুম হওয়ার পর আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত অজ্ঞাত লাশের ছবি দেখেই তার পরিবার তাকে চিনতে পেরেছিলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরকালে আমিনুল ইসলামের গুম ও হত্যা প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছেন। ঢাকা শহরের নির্বাচিত একজন কমিশনার চৌধুরী আলম ২০১০ সালের জুন মাসে সাদা পোশাকের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গুম হওয়ার পর থেকে আর ফিরে আসেননি। আমি তখন কারাগারে ছিলাম। কাজেই চৌধুরী আলমের গুম নিয়ে বিএনপি কতটা তীব্র আন্দোলন করেছিল, সেটা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ আমার হয়নি। তবে জেল মুক্তির পরে শুনেছি দলটি তেমন কিছুই নাকি করেনি।
এমনকি ঢাকা মহানগরীতেও একটি দিনের জন্যও হরতাল আহ্বান করা হয়নি। বিদেশেও যে তেমন উচ্চবাচ্য হয়েছে, সেরকম কোনো প্রমাণ আমার হাতে অন্তত আসেনি। তাহলে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের দলের অপহরণকারীরা চৌধুরী আলমকে অদ্যাবধি কেন ছেড়ে দিল না কিংবা আমিনুল ইসলামকে কেন হত্যা করল, সেই প্রশ্ন করার সুযোগ হলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যকে অবশ্যই করব।
বিএনপির তরুণ প্রজন্মের নেতা ইলিয়াস আলীর একমাত্র মেয়ে নাওয়ালের দশম জন্মদিন ছিল এ মাসের ১৮ তারিখে। তার আগের দিন ইলিয়াসের গুমের দুই মাস পূর্ণ হয়েছে।
সেই উপলক্ষে স্বাধীনতা ফোরাম নামীয় একটি সংগঠন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতীক অনশনের আয়োজন করেছিল। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সংগঠনটির সভাপতি আবু নাসের রহমতউল্লাহ্ অনশনস্থলে গণআদালতের কিছু প্রতীক যেমন দাঁড়ি-পাল্লা, কাঠগড়া ইত্যাদি প্রদর্শনের ব্যবস্থা রেখেছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তাদের মূল সুর ছিল এদেশে ভবিষ্যতে কোনোদিন প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ইলিয়াস আলী গুমের হোতাদের অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছিলেন, বর্তমান সরকারের কাছে ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানানোটাই কালক্ষেপণ মাত্র।
বাংলাদেশের বর্তমান বিচারব্যবস্থায় ভিন্নমতের রাজনীতিবিদদের ইনসাফ পাওয়ার যে কোনো সুযোগ নেই, সেটি কিছুদিন আগে প্রকাশিত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনেও প্রকাশিত হয়েছে। এদেশে এমন বিচিত্র অবস্থায় আমরা বসবাস করছি যে, আদালতে ন্যায়বিচার না পেলে সে কথাটি প্রকাশ্যে বলারও স্বাধীনতা নেই। কারণ মাননীয় বিচারপতিগণ আদালত অবমাননা নামক মহা শক্তিশালী অস্ত্র হাতে নিয়ে বসে আছেন। পৃথিবীর অন্য কোনো রাষ্ট্রে আদালত অবমাননা আইনের এমন যথেচ্ছ ব্যবহারের নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। এদেশে চিন্তা, বিবেক, বাক ও লেখার স্বাধীনতা আজ কাগুজে বুলিতে পরিণত হয়েছে।
এ মাসেরই ২১ তারিখ সন্ধ্যায় সাদা পোশাকে দু’জন ব্যক্তি পান্থপথে বসুন্ধরা মার্কেট থেকে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত টুপি-দাড়িওয়ালা একজনকে অপহরণের চেষ্টা করে। অসহায় ব্যক্তিটি চিত্কার করে তাকে বাঁচানোর আবেদন করলে মার্কেটের লোকজন ছুটে আসে এবং অপহরণকারীদের পরিচয় জানতে চায়। তারা নিজেদের র্যাব-২-এর সদস্য পরিচয় দিয়ে জানায়, টুপি-দাড়িওয়ালা ভদ্রলোকের হাতের ব্যাগ দেখে তাদের নাকি সন্দেহ হয়েছে যে সেখানে ফেনসিডিল রয়েছে। ব্যাগ খুলে সেখানে কাগজপত্র এবং ভদ্রলোকের ১৫ হাজার টাকা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। উপস্থিত জনগণ তখন অসহায় লোকটিকে ছাড়িয়ে দেয়।
এতে র্যাব পরিচয় দানকারী দুই ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকে, এখানের সবাইকে আটক করতে হবে, গাড়ি খবর দাও। জড়ো হওয়া লোকজন স্বাভাবিকভাবেই সেখান থেকে সরে যেতে থাকেন। এই সুযোগে সাদা পোশাকের দুই অপহরণকারীও সটকে পড়ে। পুরো ঘটনাটি আমার দেশ পত্রিকায় পরদিন প্রকাশিত হয়েছিল।
উদ্ধৃত ঘটনাটি বিচ্ছিন্নভাবে দেখার উপায় নেই।
বাংলাদেশে যতগুলো গুমের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রত্যেকটিতে অভিযোগ পাওয়া গেছে যে সাদা পোশাকধারীরাই নিখোঁজ ব্যক্তিদের উঠিয়ে নিয়ে গেছে। চৌধুরী আলম এবং ইলিয়াস আলীর গুমেও একই ধরনের বর্ণনা পাওয়া গেছে। উভয় ক্ষেত্রে অপরিচিত ব্যক্তিরা তাদের গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে থামিয়ে সাদা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। চৌধুরী আলমের গাড়িচালক জীবিত ফিরে এসে ঘটনার বর্ণনা দিতে পারলেও ইলিয়াস আলীর সঙ্গে তার গাড়িচালকও গুম হয়েছে। সাদা পোশাক এবং সাদা গাড়ির অপহরণকারীরা দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
সুতরাং, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রত্যেক নাগরিকের সাদা পোশাকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা উচিত। দাবি জানানো উচিত সাদা পোশাকের কোনো পুলিশ দেশের কোনো নাগরিককে গ্রেফতার করতে পারবে না।
ইলিয়াসের মেয়ে নাওয়াল এবার তার জন্মদিন পালন করেনি। তবে জন্মদিন উপলক্ষে সে প্রধানমন্ত্রীকে একটি খোলা চিঠি লিখেছে। সেই চিঠিতে বাবাকে জন্মদিনের উপহার রূপে তার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানিয়েছে।
পিতৃহারা এই ছোট্ট বালিকার আকুতিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মন গলার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের ষাটোর্ধ্ব প্রধানমন্ত্রী ৩৭ বছর আগে নিহত তার বাবা-মা-ভাইয়ের জন্য আজও প্রকাশ্যে নিয়মিত অশ্রুপাত করলেও অন্যের বেদনা তাকে কোনোরকম স্পর্শ করে, এমন কোনো প্রমাণ দেশবাসী এখনও পায়নি। বিশেষত ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি তিনি যে ভয়ানক বিতৃষ্ণাবোধ করেন, সেটি তার আচার-আচরণ এবং বক্তব্যে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। অতএব, তার কাছ থেকে নাওয়ালের চিঠির কোনো প্রতিক্রিয়া আমরা আশা করতে পারি না। ইলিয়াস গুম হওয়ার কয়েকদিন পরই নাওয়াল একই আকুতি নিয়ে তার মাকে সঙ্গে করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিল।
সেদিন শেখ হাসিনা ইলিয়াসকে ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস প্রদান করলেও আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো পুলিশ এখন ইলিয়াসের পরিবারকে নানা উপায়ে হয়রানি করছে। মধ্যরাতে তার বাসায় রহস্যময় পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে অসহায় পরিবারের সদস্যদের ভয় দেখাচ্ছে। নিচের তলায় সার্বক্ষণিক ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে, যাতে সহমর্মিতা জানানোর জন্যেও লোকজন সেখানে যেতে অস্বস্তিবোধ করে। সরকারের নির্লজ্জ দালালের ভূমিকা গ্রহণকারী পুলিশ কর্মকর্তারা হয়তো ভুলে গেছেন যে তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা, দলীয় ঠ্যাঙারে সদস্য নন।
বর্তমান সরকার পুলিশ এবং আদালতকে ব্যবহার করে ভিন্নমত দলন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণের অতিশয় মন্দ নজির রেখে যাচ্ছে। ইলিয়াসের পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার আয়ত্তের বাইরে। কেবল মহান আল্লাহতায়ালার কাছে ইলিয়াসের নিরাপত্তা এবং জালিম শাসকদের শাস্তির আবেদন জানাতে পারি।
ইলিয়াসের মেয়ের জন্মদিনের দুই দিন আগে আর এক হতভাগ্য শিশু মেঘের জন্মদিন ছিল। এ বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে অসহায় মেঘকে পাশের ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে ঘাতকরা বড় নির্মমভাবে তার বাবা ও মাকে হত্যা করেছে।
সাগর এবং রুনি দু’জনই সংবাদমাধ্যমের কর্মী ছিলেন। রুনির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় না থাকলেও জ্বালানি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালীন ইত্তেফাকের জ্বালানি বিটের সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। একবার যমুনা নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় তেলবাহী ট্যাংকার চলাচলে বিঘ্ন ঘটার কারণে সৃষ্ট জ্বালানি সঙ্কটের সময় উত্তরবঙ্গে সরেজমিন প্রকৃত অবস্থা দেখতে গিয়েছিলাম। অন্যান্য সাংবাদিকের সঙ্গে সাগরও আমার সফরসঙ্গী হয়েছিল। খুবই স্বাধীনচেতা রূপেই সেদিন তাকে দেখেছিলাম।
সফর থেকে ফিরে এসে আমার অধীনস্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কে খানিকটা সমালোচনামূলক রিপোর্টই সে করেছিল। তারপরও আমার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক বজায় ছিল, কারণ ছেলেটির সততা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। সেই সাগর এবং তার সংবাদকর্মী স্ত্রী রুনি তাদেরই শয়ন কক্ষে আজ পর্যন্ত ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা খুনিদের উপর্যুপুরি ছুরির আঘাতে নিহত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের পাকড়াও করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পুলিশের বড় কর্তা হাসান খন্দকার তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতির গল্প শুনিয়েছিলেন।
ডিবি পুলিশ জাতিকে এমন ধারণা দিয়েছিল যে, হত্যাকাণ্ডের মোটিভ জানা গেছে, কেবল অপরাধীদের গ্রেফতার বাকি। খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের পরিবর্তে প্রশাসন এ বিষয়ে লেখালেখি বন্ধ করার জন্য আদালতকেও ব্যবহার করেছে। বিতর্কিত এবং জাতীয় সংসদ কর্তৃক তিরস্কৃত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সংবাদপত্রে লেখালেখি বন্ধ করার অপচেষ্টা নিয়ে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গিয়েছিলেন। অনেক নাটক শেষে তদন্তভার ডিবি ও সিআইডি’র হাত থেকে নিয়ে র্যাবের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। র্যাব অনেক ঘটা করে হত্যার এতদিন পর সাগর-রুনির লাশ কবর থেকে আবার তুলে ভিসেরা পরীক্ষা করলেও হত্যা রহস্যের কোনো কূলকিনারা আজও হয়নি।
মাঝখান থেকে কুিসতভাবে রুনির চরিত্র হননের অপচেষ্টা করা হয়েছে।
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যে তদন্ত ব্যক্তিগতভাবে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সেই তদন্ত সম্পর্কে মন্তব্যকালে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বিদেশের মাটিতে বসে সরকারের ব্যর্থতার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। খুনিবাহিনী কতটা শক্তিশালী হলে এত বড় চাঞ্চল্যকর হত্যা তদন্ত এভাবে ধামাচাপা দেয়া সম্ভব, সেটা সহজেই অনুমেয়। ফেসবুক, ব্লগ, ইন্টারনেট নিউজ মিডিয়ায় হত্যার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ ব্যক্তিবর্গকে জড়িত করে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু, আজ পর্যন্ত কোনো প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারেনি।
এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি হৃদয়হীন উক্তির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। দৃশ্যত বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হত্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, কারও বেডরুম পাহারা দিতে পারব না। এ যুগের শাসক শ্রেণীর আত্মম্ভরিতাপূর্ণ চরিত্র প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগের শাসকদের সঙ্গে আজকের ক্ষমতাবানদের এখানেই পার্থক্য। এই প্রসঙ্গে পুরনো দিনের এক খলিফার গল্প বলি।
উমাইয়া বংশের খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন এবং দামি পোশাক ব্যবহার করতেন। খলিফা হওয়ার পর তার ওজন দ্রুত কমতে শুরু করে। দামি পোশাকের স্থলে তার শরীরে তালি দেয়া জামা শোভা পেতে থাকে। একদিন তার উদ্বিগ্ন স্ত্রী ওজন কমার ব্যাপারে উত্কণ্ঠা প্রকাশ করে খলিফার কাছে কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ জবাবে বললেন, ফোরাত নদী তীরে একটি কুকুরও যদি অনাহারে থাকে তাহলেও শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ্র কাছে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে।
সেই দুশ্চিন্তায় আমার শরীরের ওজন কমে যাচ্ছে। ওমর বিন আবদুল আজিজের মা খোলাফায়ে রাশেদিনের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হযরত ওমর (রা.)র দৌহিত্রী ছিলেন। ইসলামের ইতিহাস নিয়ে যাদের সামান্য লেখাপড়াও আছে, তারাই জানেন হযরত ওমরের (রা.) শাসনব্যবস্থা কতটা উচ্চমানের ছিল। আমাদের দেশের একশ্রেণীর ব্যক্তির মধ্যে চরম ইসলাম বিদ্বেষ রয়েছে। তাদেরকে ইসলামের প্রকৃত ইতিহাস চর্চা করতে আবেদন জানাব।
মেঘের প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
এ মাসের ১৬ তারিখে ছয় বছরে পা রেখেছে সাগর-রুনির শিশুপুত্র মেঘ। এবারের জন্মদিনে কেক কাটা হয়েছে নানী বাড়িতে। সেখানেই সে এখন রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেছে, নিরানন্দ জন্মদিনের সারাটি দিন মেঘ বড় চুপচাপ কাটিয়েছে।
আপনজনদের বলেছে তার মন খুব খারাপ। সাগর-রুনি হত্যার পর মিডিয়ার কাছে তার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মেঘের জন্মদিনে কোনো কেক তো আসেনি এতিম শিশুটির কাছে। শিশুটির কথা প্রধানমন্ত্রীর কি আদৌ কখনও মনে পড়ে? আসলে এসব দায়িত্ব নেয়ার কথা বলা রাজনৈতিক স্টান্টবাজি মাত্র। প্রকৃত আপনজনদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এদেরকে উদ্দেশ করেই মেঘের খালা ফেসবুকের মাধ্যমে মেঘকে লেখা পত্রে বলেছেন, ‘এরা টিভি ক্যামেরার সামনে বড় বড় কথা বলে, দায়িত্ব নেয় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।