আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙালী কারা? শুধু হিন্দুরাই নাকি মুসলিমরাও !!

সবাইকে আমার নিজস্ব ব্লগ ভিজিট করার আমন্ত্রন রইলঃ www.islameraalo.wordpress.com বাঙালী সত্ত্বার অধিকারি কারা? এরকম একটা বিষয়ের উপরে প্রবন্ধ দেখে হয়ত অনেকেই চমকে যাবেন। কিন্তু বিষেশ করে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য এরকম একটা প্রবন্ধের খুবই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। এই ব্যাপারটি আলোচনা করার আগে বাংলাভাষা সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলি পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার ভাষা আছে তারা আবার অনেক ভাষা গোষ্টিতে বিভক্ত। এই নিরিখে বাংলা ভাষার স্থান পৃথিবীতে পঞ্চম কিংবা ষষ্ট। এই ভাষা ভাষীর লোক গোটা বাংলাদেশ, গোটা পশ্চমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর, আসম, মিজোরাম সহ গোটা ভারত এবং পৃথিবী জুড়ে অনেক জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

এই ভাষায় যারা কথা বলেন তারাই বাঙালী। এটা আমরা সবাই জানি। তারপরেও বাঙালী কারা? এরকম একটা প্রশ্নের কি মানে হতে পারে। এরকম প্রশ্ন উঠছেই বা কেন? পাঠক ভায়েরা দয়া করে বিরক্ত না হয়ে এই প্রবন্ধটি পড়ুন। এরকম প্রশ্ন উঠছে কারণ বেশীর ভাগ হিন্দু ‘বাঙালী’ বলতে নিজেদেরই বোঝেন।

আর অনেক অশিক্ষিত মুসলমান নিজেদের বাঙালী মনে করেননা। তারা মনে করেন যারা হিন্দু তারাই বাঙালী। একারণেই মুসলমানদের পাশে বসবাসকারী হিন্দু পাড়ার নাম বাঙালী পাড়া হয়ে যায়। এবিষয়ে আরো কিছু বলার আগে আমার জীবনের একটি সত্যি ঘটনা শুনুন। যখন আমি একাদশ শ্রেনীতে পড়ি আমার m.c.a সাব্জেক্ট থাকায় একজন স্যারের কাছে কম্পিউটার শিখতে যেতাম।

সেখানে আরো বেশ কয়েকজন ছেলে ও মেয়ে পড়ত। কয়েকদিন যাওয়ার পর একদিন একটা মেয়ে বলল তোমার নাম কি? আমি বললাম ফরিদ। সে একেবারে চমকে গিয়ে বলল তুমি মুসলমান? আমি ভেবেছি তুমি বাঙালী! তোমার কথা শুনে একেবারেই বাঙালী মনে হয়। আমি দ্বিগুন চমকে গিয়ে বললাম আমি বাঙালীই তো! তখন সে বলল তবে তোমার নামটা যে মুসলমানদের মতো। সেবারেই জীবনের প্রথম এরকম একটা প্রশ্নের স্মমুখিন হয়েছিলাম।

আমি সেই মেয়েটি বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম যে আমি মুসলমান আবার বাঙালীও। কিন্তু সে মানেনি আমার কথা শুনে হেসেছে শুধু। যাইহোক এই প্রেক্ষিতে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বাঙালী সংস্কৃতির উত্ত্রাধিকার’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ জ্ঞানপীঠ পুরুস্কার প্রাপ্ত বিখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন; ‘যুক্ত বাংলায় এতকাল হিন্দু মুসলমান পাশাপাশি থাকলেও কিছুতেই যেন সাংস্কৃতিক মেল বন্ধন ঘটেনি। তার জন্য অনেকটাই দায়ি ফাঁকা হিন্দু উন্নাসিকতা। বাঙালী হিন্দুরা বহু দিন ধরে গোপনে বলে এসেছে- আরে ঐ লোকটা তো মুসলমান ও আবার বাঙালী নাকি? যেন মুসলমানরা বাঙালী হতে পারে না।

অধিকাংশ হিন্দুরাই জানে না কিংবা খেয়াল করে না যে বাংলা ভাষার সন্মান রক্ষার জন্য যাবতীয় লড়াই বাঙালী মুসলমানরাই করেছে। একটু আগে থেকে শিক্ষা পাবার সুযোগে হিন্দুদের মধ্যে অনেক বড় বড় লেখক জন্মে যেত বটে, কিন্তু সম্মিলিত ভাবে বাঙালী হিন্দুরা বাংলা ভাষার জন্য কিছুই করেননি। মুসলমানরা যেটা ভাবতে শুরু করেছে পাকিস্তানী আমলেরও অনেক আগে, সেই উনিশ শ সাইত্রিশ সাল থেকে। (দেশ; ১৪.০৪.১৯৮৯) যারা একুশে ফেব্রুয়ারীর কথা জানেন না তারা হয়ত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা শুনে আশ্চর্য হবেন। ভাব্বেন মুসলমানরা আ্বার বাংলা ভাষার জন্য কবে লড়াই করল? ভাই, শুধু লড়াই নয় নিজের মুখের বুলি যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে সেই জন্য প্রানও দিয়েছে মুসলমানরাই।

বাংলা ভাষা আন্তর্জাতীক ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে মুসলমানদের জন্যই। ‘মোদের গরব-মোদের আশা –আ মরি বাংলা ভাষা’ একথার মানও মুসলমানরাই রেখেছে। পৃথিবীতে সব চেয়ে বেশি বাংলা ভাষায় কথা বলে মুসলমানরাই। যে সব পাঠক পাঠিকারা একুশে ফেব্রুয়ারীর কথা জানেন না বা যাদের স্মৃতির আড়ালে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে এই ঘটনা তাদের জন্য জেনে নেওয়া যাক ঐ ঐতিহাসিক দিনের কথা। সালটা ১৯৫২।

বাংলাদেশ তখনও স্বাধীন হয়নি। পুর্ব পাকিস্তান নামেই তার পরিচিতি। পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মগর্বি নেতারা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল বাংলা মায়ের মুখের ভাষা। তারা চেয়েছিল উর্দুকে রাষ্ট্রিয় ভাষা করতে। অফিস আদালত স্কুল কলেজ সব জায়গায় উর্দু।

কিন্তু বাংলাদেশের বাঙালীরা সেটা মেনে নিতে পারেনি। বাংলাদেশের পথে পথে শুরু হয়েছিল উত্তাল বিদ্রোহ। মুখে মুখে শোনা যাচ্ছিল বিদ্রোহবাণী- বন্দুকের নলে প্রাণ দেবো তবুও মুখের ভাষা কেড়ে নিতে দেব না’। সেদিন পাকিস্তানের সেনা দলের সামনে প্রাণ দিয়ে ছিল জাব্বার, সালাম, বর্কত, রফিক ও আরো অনেকে। তাঁদের আত্মদলে পরাস্ত হয়েছিল পাকিস্তানি সেনা দল।

ধীরে ধীরে ১৯৭২ সালে য়াত্মপ্রকাশ করল ভাষাভিত্তিক একটি দেশ- বাংলাদেশ। সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে ১০০% লোক বাংলা ভাষাই কথা বলে। একটু চিন্তা করুন দেশের জন্য, অধিকারের জন্য, অবিচারের জন্য পৃথিবীতে কত লড়াই হয়েছে। প্রান দিয়েছে হাজার-লক্ষ লোক। কিন্তু পৃথিবীতে এমন দেশ কি পাওয়া যাবে যেখানে ভাষার জন্য লোক বন্ধুক উঠিয়েছে, লড়াই করেছে, প্রান দিয়েছে? নাহ এমন উদাহরন সম্ভবত নেই।

অনেক খারাপ লাগে যখন কেউ বাংলা ভাষা-ভাষী মুসলমানদের বাঙ্গালী বলেন না। যারা এধরনের কথা বলেন তাদের আমি কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই— ১. পৃথিবীতে প্রায় ছাব্বিশ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলেন। তার মধ্যে কমপক্ষে ১৭ কোটি লোক মুসলমান। তারপরেও কি বলবেন মুসলমানরা বাঙালী না? ২. বাংলা ভাষার সন্মান রাখতে মুসলমানরাই তো রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, তারপরেও মুসলমানরাই বাঙালী নয়? ৩. পশ্চিম বঙ্গে কোলকাতা ছাড়া অন্য কোন জেলায় তেমন ভাবে ভাষা দিবস পালন করা হয় না। তবে পুরো বাংলাদেশ জুড়ে এই দিনটি পালন করা হয়।

বাংলা ভাষার উপর এতটাই তাদের ভালোবাসা। তার পরেও মুসলমানরাই বাঙালী নয়? এরকম আরো প্রশ্ন করা যেতে পারে। তবে এইটুকুই যথেষ্ট এটা বোঝানোর জন্য যে, বাংলা ভাষার উত্তোরোধিকার নিয়ে যদি প্রশ্ন উঠে তবে মুসলমানরাই এর অধিক দাবিদার। প্রসঙ্গত আরেকটি কথা বলতে চাই, স্কুল কলেজে পড়ানও হয় বাঙালীর উতসব দূর্গাপুজো। এটা একেবারেই অযৌক্তিক, হাস্যকর।

যেখানে ১৭ কোটি বাঙালী মুসলমান আর ৭-৮ কোটি হিন্দু সেখানে কিভাবে বাঙালীর উতসব দূর্গাপূজা হতে পারে। হ্যাঁ পশ্চিমবঙ্গের প্রধান উতসব দূর্গাপূজা এতে কারো কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। কিন্তু বাঙলীর উতসব কোন মতেই নয়। এব্যাপারে বাংলা দেশের বাঙালীরা আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে কারণ ওখানে বাঙালীর উতসব ঈদ নয় ২১ ফেব্রুয়ারী। @ বাংলাদেশী ব্লগাররা এই লেখা পড়ে চমকে উঠবেন জানি।

কিন্তু যারা ভারতে এসেছেন বা ভারতে যাদের আত্মীয় আছে তারা এই ব্যাপারটির সাথে নিশ্চয় ওয়াকিবহাল। আমার জীবনে যত লেখা লেখেছি তার মধ্যে সব চেয়ে প্রশংসা পেয়েছি এই লেখার জন্য। আমাদের পত্রিকায় (ইসলামের আলো) যত লেখা ছেপেছে তার মধ্যেও এই লেখা নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। আপনাদের কাছেও এই প্রসঙ্গে মতামত আশা করছি। ____________________________ ভালো থাকুন।

সাথে থাকুন। শুভ ব্লগিং। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.