বাঙালী নির্বাচনমুখী, নির্বাচন হলেই খুশী, দেশ কিংবা রাষ্ট্র নিরপেক্ষ ভাবেই তারা ভোটের আনন্দে মশগুল। নেপাল, ভুটান, কম্বোডিয়া, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, যেখানেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক না কেনো বাঙালী আগ্রহী হয়েই এইসব সংবাদ সংগ্রহ করে এবং প্রচার করে।
বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষেরা আন্তর্জাতিক হয়ে উঠছে প্রতি নিয়ত, দেশের নির্বাচন বিষয়ে সংশয় থাকলেও সেটা নিয়ে তেমন ভাবনা চিন্তা নেই, বরং নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বিষয়ে তাদের উদ্বেগ সীমাহীন। ওবামাপন্থী এবং ম্যাককেইনপন্থী বাংলাদেশীদের দেখে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
তথ্যের অবাধ প্রবাহ অন্তত এই একটা বিষয় নিশ্চিত করেছে, ওবামা এবং ম্যাককেইনের বাকযুদ্ধের সরাসরি সম্প্রচার দেখছে বাঙালী।
ওবামার পরিবর্তনের ডাক, শান্তির আশ্বাস এবং ম্যাককেইনের যুদ্ধকালীন নেতৃত্বের দাবিদার হয়ে যাওয়ার প্রচারণাগুলো সংক্রামক।
এই নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। বাঙালী ওবামা জিতলেই খুশী, অন্তত আমাদের দৃষ্টিতে যারা শোভন এবং সচেতন তারা সবাই ওবামাপন্থী। সুতরাং যদি বাংলাদেশীদের কোনো উপায়ে ওবামা চিঠিতে চোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় তবে যুক্তরাষ্ট্রের জেগে ওঠা খ্রীষ্টনদের পক্ষে বারাক ওবামার জয় ঠেকানোর কোনো উপায় নেই ।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির নোংরামি কোনো ভাবেই বাংলাদেশের তুলনায় কম নয় বরং অনেকাংশেই বেশী।
ম্যাককেইনের রানিং মেট সারাহ পলিন বিষয়ে কৌতুক এবং সস্তা আদিরসের কমতি নেই বাজারে। বিশ্বের গণতন্ত্রের একমাত্র রপ্তানীকারকেরা চেতনায় এখনও অনেক পিছিয়ে, তাদের সম্ভবত হতে পারা উপরাষ্ট্রপতির বিষয়ে যৌনহয়রানীমূলক বক্তব্য এবং কৌতুকস্কিট প্রচার এবং প্রকাশে তেমন বাধা নেই সেখানে।
সৌজন্যতা এবং শোভনতার সীমাটা অনির্ধারিত তাই সুন্দরী এবং মুখরোচক গল্পের আদর্শ চরিত্র হিসবে পলিনের বিষয়ে উৎসুক্য এবং নোংরামি চুড়ান্ত ঘটবে সামনের দিনগুলোতে। সেটা নিয়ে আদতে বাংলাদেশিদের বিব্রত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশেও রাজনীতিবিদদের নোংরা কথাবার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
দেবর ভাবীর সংলাপ, উনি গভীর রাতে হোটেলে কি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন, আপনি কেনো আমার সোনা নিয়ে টানাটানি করছেন- দুই নারীর মিলনে কোনো কিছু হয় না- এইসব হাস্যরসত্মক ইতরামি বাংলাদেশ দেখেছে আগেই।
আমাদের শিক্ষা আমাদের ভেতর থেকে পুরুষতান্ত্রিকতা মুছে ফেলতে পারে না, আমাদের নৈতিকতা অনেক সময়ই আমাদের বিভ্রান্ত করে। আমরা অন্তত ভাবপ্রকাশে ও সামাজিক চেতনার অগ্রগতি প্রকাশে নিজেদের যে অবস্থানে চিহ্নিত করতে চাই এবং যেভাবে নিজের মানসিকতার বিপনন করি, আদতে সেই পরিমান মানসিক উন্নতি কিংবা চেতনার অগ্রগতি হয় নি অধিকাংশেরই।
এই দেশে সবই সম্ভব। চাপিয়ে দেওয়া পরিবর্তন, জোরপূর্বক নির্বাচনে অংশগ্রহনে বাধ্য করা, নিতান্ত যৌক্তিক হলেও নীতিমালা চুড়ান্ত না করেই বিকল্প উপায়ে সম্মতি লাভের প্রচেষ্টা, এবং অবশ্যই ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে চুড়ান্ত ইতরামি।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েব এ আমির মতিউর রহমান নিজামী ৩ দিন আগে নিজেদের গণতন্ত্রমনা দল দাবি করেছেন, তিনি পুরুষতান্ত্রিক একটা অবস্থা থেকে বললেন আমরা কি শ্বশুর বাড়ীতে আশ্রিত- বললেই চলে যাবো। বক্তব্যের ভেতরে যাই থাকুক না কেনো জামায়াত সুর বদলেছে। যেহেতু বিএনপি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হবেই সুতরাং জামায়াত গোঁ ধরে থাকবে না। তাদের সেই সাহস নেই। এখন তারা নির্ধারিত সময়ে নিবন্ধিত হতে খসরা নীতিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করেই নিবন্ধিত হবে।
নির্বাচন কমিশনের এই নীতিমালা বিশেষ ব্যবস্থায় অনুমোদিত হচ্ছে- নির্বাচন কমিশন স্বায়ত্বশাসিত হলেও নীতিমালা সংসদে স্বীকৃতি না পেলে যেই লাউ সেই কদু অবস্থায় পৌঁছাবে এই সব খসরা নীতিমালা এবং চাপিয়ে দেওয়া পরিবর্তনের দাবিগুলো। পরিবর্তন আসবে না কোনোই।
রাজনৈতিক দল হিসেবে ধর্মীয় রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করবার সৎ সাহস নেই নির্বাচন কমিশনের বরং তারা সকল ধর্মের মানুষদের জন্য রাজনৈতিক দলের সদস্য পদ ও নেতৃত্ব উন্মুক্ত রাখতে আগ্রহী। এমন কোনো সম্ভবনা কি আছে কোনো খ্রীষ্টান কিংবা বৌদ্ধ কিংবা হিন্দু কিংবা উপজাতি আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জামায়াতে ইসলামীর কর্মী হওয়ার জন্য সদস্যপদ পূরণ করবে?
শিক্ষিত এবং উচ্চমন্য মানুষদের বিবেচনার সমস্যা থাকেই। সমস্যাকে প্রায়োগিক ভাবে না দেখে আদর্শিক পর্যায়ে বিবেচনা করলে সকল আশাবাদী হয়ে উঠবার মতো সমাধানই আদতে সঠিক সমাধান বিবেচিত হয় না।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সমস্যা এখানেই।
নিজস্ব বৈধতার জন্য মরিয়া এই সরকার অনেক রকম প্রচেষ্টা গ্রহন করছে, সাধ এবং সাধ্য এবং নিজস্ব সীমাবদ্ধতার ভেতরে সংযোগসেতু স্থাপনের নানাবিধি প্রচেষ্টার ভেতরে ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে সংশয় নেই আপাতত।
প্রশ্নটা আরও পরের, আদৌ এইসব ইমপ্রাকটিক্যাল, ইম্যাচিউর সমাধান দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।