আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাহা বলিবো সত্য বলিবো ১২- রোহিঙ্গা রক্তে রাঙ্গানো পাশার ছক, আমরা কেবল নিরব দর্শক

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল কতটুকু অসহায় হলে একজন নারী তার সতিত্ব নিলামে তুলতে পারে? তার কোন পরিমাপক যন্ত্র এখনও আবিস্কৃত হয়নি। শুধুমাত্র জাতিগতভাবে মুসলমান হওয়ার পাপে রোহিঙ্গারা, বার্মার সামরিক জান্তা কর্তৃক ব্যাপকহারে বহিঃস্কৃত হওয়ার পর পর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম আর কক্সবাজার এলাকায় আশ্রয় পায়। কিন্ত বেচে থাকতে গেলেতো ক্ষুন্নিবৃত্তি করতেই হবে। শরণার্থি পুরুষদের কাজ দেবে কে? আমাদের নিজেদেরই তো টেনে টুনে চলে। তবে কিনা কাজ না থাকলেও রাতের উষ্ণতায় আনন্দের জন্য নারীদের চাহিদার কমতি, যুগে যুগে কোন দেশেই ছিল না।

আমরাও ব্যাতিক্রম নই। তাই রোহিঙ্গা পুরুষদের কাজ না হলেও, নারীরা ব্যাস্ত। আমাদের মনোরঞ্জনে আর পরিবারের মুখে দুটি অন্নের আশায় রোহিঙ্গা নারীরা তাদের সতিত্বকে নিলামে তুলেছেন। যারা চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের ব্লগার রয়েছেন, তারা এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারবেন। সেই ১৯৭৮ সালেই সামরিক জান্তা বার্মা থেকে রোহিঙ্গাদের বহিস্কার শুরু করে।

সময়টা খেয়াল করে দেখুন। শার ছক কাটা হয়েছে, সেই ছক আমাদের রক্তেও রঞ্জিত হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। অন্যদিকে শান্তিবাহিনী ভারতের মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেছে। এমতাবস্থায় মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করার সুযোগ দেয়া হলেও, অন্য কোন সাহায্য দেবার সুযোগ ছিল না।

কিন্ত রোহিঙ্গাদের নির্যাতিত মুসলমান হিসাবে দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেক টাকাই বেসরকারি পর্যায়ে আনিয়ে অনেকেই আখের গুছিয়েছে। চোরগত স্বভাব যাবে কই? নিজেদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আসা রিলিফও আমরা ওভাবেই চুরি করে অভ্যস্থ ! তাতে রোহিঙ্গাদের কোন কাজের কাজ হয়নি। এর পরেও জীবন তো থেমে থাকে না। কোনমতে ওদের চলে যাচ্ছিলই। মাঝখানে খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে বার্মার নাসাকা বাহিনীর বাড়াবাড়ি চুড়ান্ত করলে, একটি যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছিল।

চীনের হস্তক্ষেপে সেটা হয়নি। শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামল এবং খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় শাসনামলে পরিস্থিতি অনেক উন্নত হয়ে আসছিল। সামরিক জান্তা আস্তে আস্তে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পুনর্বাসন শুরু করেছিল। ইতিমধ্যে সৌদি বদন্যতায় অনেক রোহিঙ্গা মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী হলে, অন্তত হতদারিদ্রতা থেকে রোহিঙ্গাদের মুক্তি ঘটছিল। কিন্ত গরিবের কপালে সুখ সয় না।

এবছর গণতন্ত্রায়ণ শুরু হলে বিশ্বমোড়লের কৃপাদৃস্টি পায় বার্মা। বহু বছর পর অং সং সুচি মুক্তি পান। পুরস্কার স্বরুপ বার্মার বিরুদ্ধে যে কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ ছিল, আমেরিকা সেটাও তুলে নেয়। আমেরিকা নতুন করে রাস্ট্রদুত নিয়োগ করে। অং সং সুচি গণতন্ত্রের মানসকন্যা হয়ে এখন ইউরোপ সফরে ব্যাস্ত।

কথা হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা যখন ধীরে ধীরে সমাধানের পথে এগুচ্ছে তখন কি কারণে নতুন করে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হলো? এর আগের একটি লেখাতেই উল্লেখ করেছিলাম যে, চীনকে চারিদিক থেকে পরিবেস্টন করে কোনঠাসা করার যে পরিকল্পনা, বাংলাদেশ আর বার্মা দুই শক্তিশালি দাবার ঘুটি। হাসিনার লেজে গোবরে অবস্থাকে পুজি করে মার্কিন রাস্ট্রদুত "বিশেষ চুক্তি" করার জন্য প্রচন্ড পরিশ্রম করছেন। মুলা হিসাবে পদ্মা সেতু নিয়ে হাসিনার গায়ে যে কলংক পড়েছে, সেই কলংক মোচনে আমেরিকার ক্ষমতা ব্যাবহারের কথাও ঝুলানো হচ্ছে। ঘসেটি বেগমের বৈশিস্ট সম্পন্ন হাসিনা সেই টোপ গিলবে না, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আর অং সং সুচিকে তো অনেক আগেই থেকেই পালন করে আসছে পশ্চিমারা।

বৃটিশ নাগরিককে বিয়ে করার সুবাধে যেখানে সুচি বৃটিনে নিরাপদে থাকতে পারতেন, সেখানে কোন মুলার লোভে পড়ে বছরের পর বছর কারান্তরে থেকেছেন, সেটি গভিরভাবে ভেবে দেখার অবকাশ আছে। তিনি যে কত ভালোমানুষ, তার প্রমান হলো খৃস্টান কারেন বিদ্রোহিদের প্রতি প্রেম আর রোহিঙ্গাদের প্রতি বিরুপতা থেকেই তার প্রমান পাওয়া যায়। বর্তমান দাঙ্গার উৎস নাকি বৌদ্ধ বিহার। পাঠকদের মনে আছে, গত বছরই এই বিহারগুলি থেকেই বার্মার সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আবার আজ যখন আমেরিকা আর পশ্চিমা বিশ্ব চীনকে রুখতে বার্মার সাথে দহরম মহরম বাড়াচ্ছে, সেখানে নিজের পায়ের নিজে কুড়াল মারার মত মুর্খতা নিশ্চই সামরিক জান্তা করবে না।

রোহিঙ্গাদের বলির পাঠা বানিয়ে সেখানে অবস্থা অস্থিতিশীল করতে পারলে চীনের মিত্র সামরিক জান্তাকে কোনঠাসা করে সেখানে নিজেদের অবস্থান শক্ত করাই পশ্চিমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। একারণেই সুচির সমর্থকরা পশ্চিমাদের ইশারাই রোহিঙ্গাদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলায় মত্ত ! আমাদের কিছু ব্লগীয় সুশিলদের দেখলাম রোহিঙ্গাদের জন্য কেদে বুক ভাসাচ্ছে। পশ্চিমাদের উচ্ছিস্টভোগিদের রোহিঙ্গা প্রীতি কখনো মুসলমানিত্বের নামে, কখনও বাঙ্গালিত্বের নামে, কখনও মানবাধিকারের নামে মিডিয়া বা অন্তর্জাল কাপাবে সন্দেহ নেই। পশ্চিমাদের স্বার্থ উদ্ধারের পর সেই কান্নাকাটি কোথায় তলিয়ে যাবে ! ইরাক লিবিয়া তার জলন্ত উদাহারণ। আমাদের প্রতিবন্ধিত্ব কর্মদক্ষতা নয়, মানসিক চিন্তা চেতনায়।

আমাদের ঘরের পাশে যে আগুন জ্বালানো হয়েছে, সেই আগুন আমাদের গায়ে পড়বেই। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন যে, এক দিকে সুচির সমর্থকরা সরকারি বিরোধী শান্তিপুর্ন আন্দোলন করবে, অন্য দিকে রোহিঙ্গা আর কারেনদের অস্র দিয়ে সশস্র প্রতিরোধ শুরু করানো হবে। আর তখনই চীনের মিত্র বার্মার সামরিক জান্তা এমন অবস্থায় পতিত হতে বাধ্য হবে, যা পশ্চিমা স্বার্থ সংরক্ষনের অনুকুল। রোহিঙ্গাদের নামে অস্র সস্র যে আমাদের সন্ত লারমাদের ভাগেও পড়বে না, সেই দিব্যি কে দিতে যাচ্ছে? আমাদের সুলতানা কামাল, আর জাফর ইকবালরা তো আন্তর্জাতিক পার্বত্য কমিশনের কাছে টিকি বাধা দিয়েই রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার প্রয়োজন হলে পশ্চিমাদের হাতের ইশারাই যথেষ্ঠ হবে।

অন্তত প্রচার মাধ্যম জমিয়ে রাখতে এদের তুলনা নেই। সাথে তো নব্য রাজাকার মইত্যা সহ কিছু রাম্পন্থি বাম এবং হালের পুজিবাদি বুদ্ধিজীবিরা তো আছেই। হাজার হোক মানবাধিকারের তকমাটা খুবই চিত্তাকর্ষক এবং পশ্চিমাভক্ত। তাই শ্রেফ তকমাধারি শিক্ষিত বলেই এদের সব কথাকেই বেদবাক্য জ্ঞান করার অবকাশ নেই। হুজুগ থেকেও দূরে থাকতে হবে।

নইলে আজ রোহিঙ্গাদের রক্তে গড়া যে পাশার ছক কাটা হয়েছে, সেই পাশার ছক আমাদের রক্তেও রঞ্জিত হবে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.