আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্পঃ মাল্টিভার্স

অপেক্ষায় আছি সেই পলিনেশিয়ান তরুণীর যার বাম কানে সাঁজানো লাল জবা... দূর্ঘটনাটা ঘটার পর থেকে আমি আমার ভেতর এক ধরনের পরিবর্তন বুঝতে পারছি। পরিবর্তনটা আমার জন্য খুব স্বস্তিকর হচ্ছেনা এবং এটা নিয়ে আমি চরম মাত্রায় বিরক্ত। অস্বীকার করার উপায় নেই আমি অনেকখানি ভীতও! আমি আমার চোখের সামনে মৃতদের দেখতে পাচ্ছি। হ্যা, লোকে আমাকে পাগল ঠাওরাতে পারে, হয়ত ইতমধ্যে কিছু সন্দেহবাতিকগ্রস্ত পাঠক ধরেই নিয়েছেন যেহেতু দূর্ঘটনার পর থেকেই আমি মৃতদের দেখতে পাচ্ছি সেহেতু আমার ব্রেইন ট্রমা আমার স্বাভাবিক সাইকোলজিকাল ফাংশন ব্যহত করছে। আসলে এমন কিছুই নয়।

আমি সত্যিই মৃতদের দেখতে পাচ্ছি। যে দৃশ্যগুলো দেখছি তার বেশিই সম্ভবত নরকের; কষ্ট আর যন্ত্রনার। হঠাৎ দু' একটা স্বর্গীয় দৃশ্যও চোখে পরছেনা এমন নয়। ____________________দুইঃ______________________ ছোটবেলা থেকেই আমার সুপার হিরো হওয়ার শখ ছিল। ব্যাটম্যান, সুপারম্যান আর স্পাইডারম্যানের গল্প, কমিক পড়ে, টিভি সিরিয়াল দেখে একধরণের ফ্যান্টাসীতে ভুগতাম।

এমনটা হয়ত সব শিশুই ভুগে থাকে। আসলে আমাদের শৈশবটাই একটা দূর্দান্ত ফ্যান্টাসী। তবে আমার ফ্যান্টাসীর জগৎ-এ সুপারহিরো হওয়ার ইচ্ছাটা ছিল মাত্রাতিরিক্ত ধরণের প্রবল। মনে আছে ছোটা মাকরশা ধরে হাতের উপর রেখে অপেক্ষা করতাম কখন ওটা আমাকে কামড়াবে! কামড়ালেই আমি স্পাইডারম্যান হয়ে যাবো। একবার আমাদের দোতলা বাড়ির ছাদে উঠে সুপারম্যান স্টাইলে একহাত মুঠোবদ্ধ করে কৌনিকভাবে আকাশের দিকে তুলে নিচে লাফিয়ে পরেছিলাম।

ভেবেছিলাম উড়ে যাবো, কিন্তু দু' মাস হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল। ধীরে ধীরে বড় হতে গিয়ে বুঝেছি সুপারহিরো গল্পে, উপন্যাসে, টিভি পর্দায় বা সিনেমায় সম্ভব। বাস্তবে তা সম্ভবপর নয়। তবু মনের কোনে কোথাও একটা স্বপ্ন ধরে রাখতাম আমি কোন একটা ঐশ্বরিক ক্ষমতা পাবো। সেই ক্ষমতাবলে আমি অন্যের মনের কথা বুঝতে পারবো বা এমন কিছু।

দূর্ঘটনার পর থেকে আমি একটা অদ্ভুত ক্ষমতা পেয়েছি বটে কিন্তু মোটেও আনন্দিত হতে পারছিনা। নরকের দৃশ্যগুলো তীব্র যন্ত্রনা দিচ্ছে। স্বর্গীয় দৃশ্যের আনন্দ হচ্ছে ক্ষনস্থায়ি! ___________________ তিন _____________________ দূর্ঘটনাটা খুব বড় কিছু ছিলনা, বেশ ছোটখাটই বলা যায়। আমি রাস্তা পার হচ্ছিলাম। চারিদিকে দেখে পার হওয়া নিয়ম।

সেই নিয়ম মেনেই রাস্তার মাঝখানে যখন দাঁড়িয়ে তখন কোথা থেকে কে জানে দমকা বাতাস এলো সেই বাতাসে উড়ে এলো একটা পলিথিন ব্যাগ। এসে আমার মুখে গেল লেপটে। কি হাস্যকর পরিস্থিতি! আমার শরীর সঙে সঙে রিফ্লেক্সের কারণে চোখ বন্ধ করে দিল আর হাটা গেল থেমে। আবার হাটতে শুরু করবো এমন সময়ে হৈ হৈ আওয়াজ, একটা বাসের হার্ড ব্রেক করার প্রচেষ্টা, রাস্তার পিচের সাথে টায়ারের ঘর্ষনের আওয়াজ এবং আমার চারদিক হঠাৎ নিশ্চুপ। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।

আমি নিজেকে আবিষ্কার করেছি আমার ঘরে, বিছানায়। যতটুকু মনে হচ্ছে তেমন একটা আঘাত পাইনি। পানির পিপাসা পেয়েছে খুব। উঠে পানি খাবো ভাবছি এমন সময় মা এসে আমার ঘরে ঢুকলেন। বিছানায় বসলেন।

তার চোখে পানি, হয়ত কিছুটা চাপা গলায় কাঁদছেন। মা আমাকে কিছু বললেন না আমি আধবোঁজা চোখে শুয়ে থাকলাম। তিনি মিনিট পাঁচেক পর চলে গেলেন। কিছু বলতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু আমার মনে হয়েছে আমি শান্তিতে ঘুমাচ্ছি দেখে ওনার হয়ত চিন্তা কিছুটা কমবে।

______________________চার____________________ রাত বাড়ছে। আমার পিপাসাও বাড়ছে। উঠতে কষ্ট হচ্ছে। তবু উঠে ফ্রীজ থেকে পানি খেতে হবে। হঠাৎ বাইরে একটা রিকশার আওয়াজ পেয়ে ঘরের লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।

সম্ভবত আমার ছোট ভাইটা ফিরেছে। এমন সময় আবার সেই মৃতদের দেখার ক্ষমতাটা ফিরে এলো। একটা গাড়ি থেমেছে আমাদের বাসা থেকে দুই বাসা পরে। বিয়ের পোষাক পরে এক সুন্দরী নববিবাহিতা আর তার স্বামী নামলেন। নতুন বিয়ের গাড়ি, ফুলে সাজানো।

স্বর্গে বিয়ের ব্যবস্থা আছে এমনটা কোথাও শুনিনি। তবে নিশ্চিৎ এটা একটা স্বর্গীয় দৃশ্য। কারণ বর-কনে দু'জনের চোখই আনন্দ, চোখ আনন্দে হাসছে। কিন্তু দৃশ্যটা স্থায়ি হলোনা। আমার মাথাটা ব্যথা করছে।

আমাদের বাড়ির সামনে সদ্যমৃত একটা লাশ এসে থেমেছে খাটিয়ায়। বেচারা এখনও স্বর্গ বা নরক কোনটিই পায়নি। লাশটার সম্ভবত এখন জানাযা হবে। একজন সাদা পায়জামা পান্জাবী পরিহিত হুজুরকে দেখতে পাচ্ছি। আমার মা, বাবা, ছোটভাই সহ আরো অনেকেই লাশটার পাশে দাঁড়িয়ে।

লাশটার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা। আমি খুব করে চাইছি মুখটা দেখতে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছিনা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     বুকমার্ক হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।