আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার কিশোরীবেলা পর্ব ৭ : রয় শুধু নির্জনতা, নির্জনতায় আমি একা!

মনে রবে দীর্ঘশ্বাসে, আর ১মিনিট নীরবতায়....! আগের পর্ব গতপর্বে মূলত নিজের একাডেমিক রেজাল্ট আর দুর্দশার কথা লেখা ছিলো কিন্তু মেয়ে হিসেবে কতটা বদলেছি তা বলিনি । অসুন্দরী ছিলাম বলে গার্লি টাইপ ভাব আনার প্রয়োজন পড়েনি কখনো । আমি স্নিকার অথবা ছোট চুলে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম । যেমন স্কুল কলেজের পিকনিকে সালোয়ার-কামিজ পড়ে যাওয়ার নিয়ম ছিলো, আমি ঐসব পোশাক পড়তাম না বলে পিকনিকেও যেতাম না । তবে শাড়ির প্রতি আমার ভয়ানক দুর্বলতা কাজ করতো... প্রেমে পড়ার পর কঠিনরকমের লুতুপুতু ভাব ঢুকে পড়েছিলো আমার মাঝে ।

কুম্ভকর্ণ চলে যাওয়ার পর আমি আমার মাঝে মেয়েলিভাব আনার চেষ্টা করি । হাতে রিস্ট ব্যাণ্ড পড়া ছেড়ে দেই, স্নিকার ছেড়ে স্যাণ্ডেল পড়া শুরু করি,কাজল ছোয়াই চোখে এই টাইপ আর কি । আমার ১৭বছর ১১মাসে আমি নিজের জন্য পার্লারে গিয়েছি ২বার, চুল কাটতে । আমাদের বাসায় কসমেটিক্স ছিলো না,আমার একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিলো সাজগোজ ব্যাপারটা শুধুই সুন্দরীদের জন্যে । একটু একটু করে মেয়ে হওয়ার চেষ্টা, কিন্তু বুঝে গেলাম মেয়ে হতে হলে ঝক্কি ঝামেলা অনেক ।

চাইলেও আমি আগের বছরগুলোর মত ১০০০টাকার মাঝে ঈদশপিং করে বাকি টাকা দিয়ে বই কিনতে পারবো না, সাজগোজের জিনিসের অনেক দাম! I hate shopping! আমার টেস্ট এক্সামের রেজাল্টের পর,ততদিনে আমার মাঝে মেয়েলিভাব বিদ্যমান আমি খুব সাধারণভাবে ঘুরে বেড়ালাম বন্ধুদের সাথে, কেউ বুঝলোই না আমি মানসিকভাবে কতটা অস্থিরতার মাঝে আছি । ফেবুতে তখন সারাক্ষণ কথা হত কয়েকজন বন্ধুর সাথে । এর মাঝে বিশেষ এক বন্ধুর একটা নাম দেয়া যাক, ধরে নিন তার নাম এরিক । আমি আর এরিক তুমুল বকবক করতাম, আমাদের কনভার্সেশনে ৩টা শব্দের আধিক্য বেশি ছিলো, ১. হু ২. বাল ৩. পেইন । দেখা হত মাঝেমাঝে শাহবাগে, আড্ডা দিতাম ২জন, এরিকের সাথে মারামারি, সময় খুব ভালো কাটছিলো মনে হয় ।

কথা কাটাকাটি খুব বেশি হত আমাদের মাঝে, ইগো বেশি ছিলো তাই 'বাল!' বলে কথায় ইতি টানতাম । পরের দিন আবার শুরু...এরিক আমার খুব বেশি ভালো বন্ধু হয়ে গেলো দ্রুত কারণটা মনে হয় ও আর আমি দুজনেই ইনসমনিয়াক ছিলাম বলে । আমি এরিককে ২০১১সালের শেষদিনটা আমার সাথে কাটাতে বলি, এর পেছনে মূল কারণটা লুকিয়ে এরিককে যুক্তি দেই যে, বছরের প্রতিটা দিন খারাপ কেটেছে তাই শেষ দিনটা ভাল কাটাতে চাই । এরিক সাথে সাথে না করে দেয় আমাকে, ওর যুক্তি ছিলো সারাদিন বিশেষ করে বছর শেষ দিন একসাথে ঘুরলে এর প্রভাব পড়বে । দুর্বলতা বাড়বে তারপর আমি নাকি পেইন পাবো...আমি ওকে স্যরি বলে মেনে নেই ।

নতুন বছর আসে ২০১২, সারারাত জেগে বসে থাকি এরিক চলে গেছে গ্রামে । সকালে আম্মু অফিসে চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমি একটা আকাম করি যা সম্পর্কে আমার কয়েকজন ব্লগার ফ্রেণ্ড অবগত আছে । আকাম করে চ্যাটে বসি, এরিক আর ব্লগার প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ারের সাথে (নাহোল আমাকে একটা থাপ্পড় দিছিলো,হুহ্!) চ্যাটিং করি । কথার একফাকে যাদের সাথে চ্যাট করছিলাম এরিক আর নাহোল তাদের দুইজনকেই আমার আকামের কথা বলে দিয়ে থেমে যাই । আমি ফিরেছিলাম ৫দিন পর...আমি জানিনা কার কী অনুভূতি ছিল! ফোনে দেখলাম অসংখ্য মিসড্ কল,কয়েকটা মেসেজ যার মাঝে এরিকের মেসেজটা পড়ে আমি ইমোশনাল হয়ে কল দেই ।

এরিক তখন মীরাক্কেল দেখতে দেখতে আমার সাথে নির্লিপ্তভাবে কথা বলছিলো । আমি বুঝলাম ওর কিছুই যায় আসেনি...কিন্তু আমার এই ধারণাটা ভুল ছিলো যা পরে জেনেছি! এরিক আর আমার চ্যাটে কথার মাত্রা বাড়তে লাগলো, ফোনে আমরা তুলনামূলকভাবে কম কথা বলতাম । আমার মনে হত এরিক বলার চেয়ে লিখে নিজেকে ভাল এক্সপ্রেস করতে পারে এজন্যই...কথার মাত্রা এতটাই বেড়েছিলো আমি সবচে দীর্ঘসময়ের চ্যাটিং এই এরিকের সাথে করেছিলাম রাত ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত, অথচ দুজন একই শহরে থাকি চাইলেই দেখা হতে পারে । এভাবে কয়েকটা দিন চলে গেলো দীর্ঘসময় চ্যাটিং করতে করতে... দেখা হলো এরিকের সাথে, দুজনে ঘুরলাম,আড্ডা দিলাম এইতো এভাবেই গেলো । এর মাঝে একটা ছোট্ট একসিডেন্ট আমাদের দূরত্বের কারণ ।

আমি নিজে জানতাম না আমি আসলে এরিকের প্রতি কি ফিল করি, কিছুই বুঝতাম না । আমার ফ্রেণ্ড টুশি ছুপা রুস্তম মার্কা কাজকারবার শুরু করে দিলো । আমি ওকে এরিকের ব্যাপারে যা কিছু বলতাম সে সব মেসেজ ফেবুতে এরিককে ফরোয়ার্ড করে পাঠালো....এবং একসময় মনে হলো আমার এরিককে ভাল লাগতে শুরু করেছে । কি ভয়ঙ্কর ব্যাপারস্যাপার,আমি মাথা থেকে এটা তাড়াতে চাইলাম কিন্তু কিছুই হলো না । এরিকের সাথে দেখা হলো, আমি সেলফোন কিনবো ঐ দিন ।

এদিকে টুশির অকল্যাণে এরিক অনেক কিছু জেনে আমাকে খোঁচাতে লাগলো । আমি ওকে বল্লাম,তোর সাথে এটাই শেষ দেখা চল তোকে খাওয়াই KFC তে । কতটা হাস্যকর! আমার অতি পছন্দের একটা মানুষের সাথে আমার আর দেখা হবেনা এই দুঃখ সেলিব্রেট করতে KFCতে যাবো! গিয়ে মুরগির ঠ্যাঙ চিবাতে চিবাতে বরফ দেয়া পেপসি খেলাম । ফিরে আসার সময় মনে হচ্ছিলো কেঁদেই দিবো! এর ঠিক কয়েকদিন পর থেকে আমাদের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায় । ঠিক তারপরেই আমি একটা ছাগলামি করি, আমাদের ফেবুতে দীর্ঘ কনভার্সেশন গোড়া থেকে পড়তে শুরু করি ।

পড়ার পর যেটা হয় আমি ওকে একটা মেইল পাঠাই, মেইলটার প্রথম অংশটুকু, "আমি আজ ভয়াবহ ছাগলামি করে ফেলেছি । তোকে ফেসবুকে পাঠানো প্রথম থেকে শেষ সব মেসেজগুলো আজ সারাদিনে পড়েছি । একটু আগে পড়া শেষ করে এখন হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মেইলটা দিলাম । আমি আমার আজাইরা মস্তিষ্কে আবিষ্কার করেছি আমি তোকে ভয়াবহরকম ভালোবেসে ফেলেছি এই বিশাল কনভার্সেশন পড়ে যন্ত্রণা পাচ্ছি আমি । তুই আমার সাথে ইনভল্ভ হবিনা জানি,তোকে ছাড়া থাকতে আমার কষ্ট হচ্ছে খুব আমি তোর মাঝে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম ।

এখন কেউ নেই একা লাগে খুব আমার.... " মেইলটা পাঠানোর পরে অনেক চিন্তা করি এরিককে ভালোবেসে ফেলার কারণ । মাথায় যেটা আসে,আমি কোন ছেলের সাথে এতটা সময় কখনো একসাথে কাটাইনি, আমার একা থাকার সময়টায় এরিক আমার পাশে ছিলো আমাকে সঙ্গ দিয়েছে ঠিক এই কারণে আমি ২বছর পর কাউকে ভালবাসতে পেরেছি...কি অদ্ভুত! এর জন্য আমার মেয়েলিভাব দায়ী ছিল! এরিকের প্রতি এই অনুভূতি জন্ম নিয়েছে এতে আমি একটা ধাক্কা খাই! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।