মনে রবে দীর্ঘশ্বাসে, আর ১মিনিট নীরবতায়....! এস.এস.সি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ সেটা পিছিয়ে নেয়া হলো ১১ তারিখ আমাকে আর পায় কে! একুশে বইমেলায় গিয়ে একগাদা বইটই কিনে নিয়ে আসলাম। এক্সাম শুরু হলো এবং আমি চরম খামখেয়ালি করে এক্সাম দিতে লাগলাম...আমার জিদ ছিলো না যে পুরানো কষ্টগুলো শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যাব। আমি স্কুলের ঐ ঘটনার পর আর উঠে দাঁড়াতে পারিনি। আমি কি খামখেয়ালি করেছি তার একটু নমুনা দেই, গল্পের বই পড়ে ভোরে ঘুমাতাম এক্সাম ছিল ১০টায়। ৯টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বইয়ে চোখ বুলিয়ে এক্সাম দিতে যেতাম।
আমার মনে পড়ে সাধারণ বিজ্ঞান পরীক্ষার সময় আমি রচনামূলক অংশে ৫০ এর মাঝে ২০ এর উত্তর দিয়েছিলাম। ব্যাপারটা এমন নয় যে আমার কিছু কমন পড়েনি, আমি সব পারতাম তবুও দিয়ে আসিনি। আমার বাসায় আমি সহ সবাই ধরে নিলো আমি ফেল করতে যাচ্ছি। বইটই কাউকে না দিয়ে রেখে দিলাম কারণ এভাবে এক্সাম দিয়ে আসলে কেউ পাশ করেনা...
২০১০ সালের প্রথম বৃষ্টি হয় ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখ, আর দ্বিতীয় শিলাবৃষ্টি ২৪ ফেব্রুয়ারী ঐ দিন আমার ভূগোল পরীক্ষা ছিলো। পরীক্ষা দিয়েই বইমেলা সেদিন ইচ্ছে মত ভিজেছিলাম বৃষ্টিতে।
এভাবে পরীক্ষা দেয়া শেষ হলো...
মস্তবড় এক ছুটি কাটাতে গ্রামে চলে গেলাম, বিক্রমপুরে। আমাদের পাশের গ্রামে একটা স্কুল আছে মালখানগর স্কুল এণ্ড কলেজ। যারা জানেন না তাদের একটু জানিয়ে দেই, স্কুলটার বয়স বর্তমানে ১২২ বছর। কবি বুদ্ধদেব বসুর স্কুল ছিলো এটা। আমার স্কুলে কোন লাইব্রেরী ছিলো না, এই স্কুলটার লাইব্রেরী দেখে আমি পুরা টাশকি।
এত সমৃদ্ধ একটা লাইব্রেরী! খুব বিশেষ একটি ব্যাক্তি এই বইগুলো দান করেছিলেন, আমার পুরান বইয়ের ঘ্রাণ অসম্ভব প্রিয় ছিলো আমি এর মাঝে ডুবে গেলাম।
হেডস্যার আমার সাথে কথা বলে মুগ্ধ, সে একটা পাগলামি করলো ক্লাস এইট থেকে টেন পর্যন্ত একটা ক্লাস ঠিক ঐ দিন আমার জন্য বরাদ্দ করলো। আমি কিশোরীবেলাতে এই কথাগুলো লিখছি এজন্য এটা আমার জীবনের অবিস্মরণীয় স্মৃতি ৬টা ক্লাসে ৩০মিনিট করে আমি বকবক করতে লাগলাম আর স্টুডেন্টরা আমাকে গিলতে লাগলো। ঐদিন মনে হলো আমি খুব ভাল টিচার হতে পারবো
১০টা দিন আমার জন্যে অসাধারণ ছিল, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত লাইব্রেরীতে পড়তাম আর ফিরে আসার সময় রাতের জন্য বই নিয়ে আসতাম। দারুণ সময় কেটেছিলো...
ঢাকায় ফেরার পর নেটে কুম্ভকর্ণের সাথে আমার অনেক কথা হতে লাগলো।
এভাবে চলে আসলো পহেলা বৈশাখ...ঘুরতে ঘুরতে আমাদের পুরো ফোরাম গ্যাঙটার সাথে এবং কুম্ভকর্ণের সাথে দেখা হয়ে যায়, সেই প্রথম আমি ছেলেটাকে দেখি। তারপরের শুরুটা আমাদের অসাধারণ ছিলো...
এর মাঝে আমার রেজাল্টের দিন এগিয়ে আসে, সবাই জানে আমি ফেল করবো। আমার বোন কল করে জানালো যদি আমি পাশ করি টানা ৭ দিন আমাকে শুধু মিষ্টিই খাওয়াবে। যাইহোক কিভাবে কিভাবে জানি পাশ করে গিয়েছিলাম...!
এরপরের গল্প আমি যেদিন রাত সাড়ে ৪টার দিকে কুম্ভকর্ণকে কল করে জিজ্ঞেস করি বিয়ে করবে নাকি আমার আছে একটা গল্প পুরোনো সেটা ছিলো ১৯ মে ২০১০। আমি ছেলেটাকে প্রচণ্ড ভালোবেসে ফেলেছিলাম, ও আমাকে মায়াবতী ডাকতো।
কুম্ভকর্ণ আর মায়াবতীর সম্পর্ক শুরু হয়...
আমি ওর কারণে নিজের মাঝে মেয়েসুলভ আচরণ আনার চেষ্টা করি, ও হয়তো আমাকে আমার টমবয়গিরিতে কিছু বলতো না তবুও ও যেরকম পছন্দ করে আমি সেভাবে নিজেকে গুছাতে চেষ্টা করতাম। তবে একটা জিনিস বাদ দিতে পারিনি সেটা হচ্ছে রাস্তাঘাটে মারামারি যেটা নিয়ে কুম্ভকর্ণের ভয় ছিল। আমার সাথে রাস্তায় কেউ ইতরামি করলেই আমি দুমদাম পিটাতাম, তখন স্নিকার পড়তাম স্নিকার দিয়ে একটা লাথি যথেষ্ট ছিলো।
কুম্ভকর্ণ আর আমার সম্পর্ক অসাধারণ পর্যায়ের ছিলো। দুজন দুজনকে বুঝতাম, আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং ভাল ছিলো।
সবচে বড় ব্যাপার যেটা কুম্ভকর্ণ অনেক বেশি কেয়ারিং ছিলো। আমার গভীর রাতে গোসল করা, খাওয়া দাওয়া না করা, পড়াশোনায় খামখেয়ালিপনা এসব ব্যাপারে ও আমার এতটা বেশি কেয়ার করতো যেটা আমার ফ্যামিলিও দিতে পারেনি আমাকে।
যেমন, রাতে কল দিতো সারাদিন কি করেছি শুনতো তারপর বকবক। এই পাশে আমি কলেজের পড়া ঠিক করতাম, ঐ পাশে ও ওর প্রেজেন্টেশনের কাজ করতো কিন্তু ফোন ধরাই থাকতো। আমাকে ঘুমাতে পাঠিয়ে ও ফোন রাখতো, এভাবে আমার কারণে রাতজাগার অভ্যাস ওর ও হয়ে গেলো।
আমাদের ফোরাম বন্ধুদের মাঝে কেউ জানতো না আমাদের রিলেশনের কথা। আমরা যখন ফোনে কনফারেন্সে কথা বলতাম আরেকদিকে দুজন দুজনকে মেসেজ দিতাম।
কুম্ভকর্ণ ছিলো একদমই আমার উল্টো। ও শান্ত চুপচাপ আমি চঞ্চল, ও লম্বা আমি খাটো, ও সুদর্শন আমি কুত্সিত মানে কিছুতেই ওর মায়াবতী হওয়ার কথা আমার ছিলো না, কিন্তু আমি অসম্ভব পরিমাণে ছেলেটাকে ভালবাসতাম।
এদিকে ওর কারণে আমি পাগলামি বাদ দিলাম, আমার কলেজের পারর্ফম্যান্স ভালো হতে লাগলো দিন দিন, একটা মানুযের সাপোর্ট যে কিভাবে জীবনটা বদলে দিতে পারে আমি তা দেখেছিলাম।
আমাদের দেখা হত গেটটুগেদারে, একই শহরে থেকেও কেনো জানি আমাদের কখনো একা দেখা হয়নি। আমার প্রথম প্রেম ছিল যেহেতু সেক্ষেত্রে ডেটিং সম্পর্কিত চিন্তা ভাবনা আসেইনি মাথায় আর ও খুব লাজুক ছিল বলে এই বিষয়ে কথাও হয়নি। মজার ব্যাপার এই যে আমি ওর হাতটাও ধরিনি...
ও জানতো আমি বই পড়তে ভালবাসি, দেখা হলেই আমার জন্য একটা বই থাকতো। আমাদের এমন টুকরো টুকরো গল্প সাজিয়ে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো এবং আমি আমার বইগুলোর কসম খেয়ে বলতে পারবো এমন একটা দিন ছিলো না যে আমি ভালো ছিলাম না।
সমস্যাটা দেখা দিলো তখন যখন শ্রাবণী আপু মারা গেলো এবং কুম্ভকর্ণ আমাকে জানালো কেউ একজনের কষ্টের কথা শুনে তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে.....
আমার কিশোরীবেলা পর্ব ১ : একটি ঘাস অথবা নামের গল্প, নামটি দূর্বা
আমার কিশোরীবেলা পর্ব ২ : আঁধারে বসবাসকারী আমি
আমার কিশোরীবেলা পর্ব ৩ : While I am so afraid to fail so I won't even try
***তৃতীয় পর্বের কিছু অংশ নতুন করে যোগ করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।