মাত্রাতিরিক্ত রকমের জ্ঞেয়ানী জনেরা আমার ব্লগের উটকো অতিথি বলে বিবেচিত হবে।
১৯৪৮ সালের ২৯ মে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ বিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সিনাই অঞ্চলে প্রথম জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন করা হয়েছিল। সেই থেকে প্রায় ৬৩ বৎসর ব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জাতিসংঘ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৬৬ টি শান্তিরক্ষা মিশন পরিচালনা করেছে যাদের মধ্যে এখনও ১৬ টি মিশন চালু আছে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত বিশ্বের ১২০ টিরও বেশি দেশের সেনা, পুলিশ ও বেসামরিক নাগরিকগণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেছে যাদের মধ্যে প্রায় ২,৯৮০ জন দায়িত্বপালনকালে নিহত হয়েছেন। বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশনে মোট ৮২,০৫৮ সেনা ও ১৪,৪৭৩ পুলিশ সদস্য ও ২,৩২৩ জন সামরিক পর্যবেক্ষক কর্মরত রয়েছে।
উর্দি পরিহিত সেনা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বাইরেও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন গুলোতে প্রায় ৫,৪৫৯ আন্তর্জাতিক কর্মচারী, ১২,৩১২ স্থানীয় বেসামরিক কর্মচারী ও ২,৩২৩ জন স্বেচ্ছাসেবক কর্মরত আছে ।
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মোতায়েনের জন্য জাতিসংঘের নিয়মিত কোন সৈন্য বা পুলিশ বাহিনী নেই। সদস্য রাষ্ট্রসমূহই প্রয়োজনে তাদের নিজস্ব বাহিনী দিয়ে জাতিসংঘকে সহায়তা করে। প্রথম দিকে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ান দেশসমূহ সৈন্য ও লোকবল দিয়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে সচল রাখত। কিন্তু স্নায়ু যুদ্ধের অবসান ও সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর উন্নত দেশ সমূহ সৈন্য সরবরাহ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।
এই অবস্থায় এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশসমূহ এগিয়ে আসে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপালই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সিংহ ভাগ পোশাকী সদস্য সরবরাহ করে।
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রথম অবস্থায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ সমূহে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সম্পাদিত শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ, নিরস্ত্রীকরণ ও প্রতিবেদন প্রদান কাজে কেবল সেনাবাহিনীর সৈন্য ও অফিসারদের মোতায়েন করা হত। কিন্তু ধীরে ধীরে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি পেলে সেনা সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ অফিসারসহ অন্যান্য বেসামরিক বিশেষজ্ঞদেরও মোতায়েন করা হয়।
১৯৬৪ সালে জাতিসংঘের সাইপ্রাস মিশনে সর্ব প্রথম পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।
কিন্তু সেই সময় পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম আজকের মতো এত ব্যাপক ছিল না। সত্তর ও আশির দশকে স্নায়ু যুদ্ধের ডামাডোলে শান্তিরক্ষার কাজে বেশ ধীর গতি পরিলক্ষ্যিত হয়। এই সময় শান্তিরক্ষার কাজে পুলিশ সদস্যদের মোতায়েনও অত্যন্ত সীমীত আকারে চলে। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার /নামেবিয়া মিশন থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক অংশ গ্রহণ শুরু হয়।
বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে আফ্রিকার নামেবিয়া শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথম অংশ গ্রহণ করে।
এর পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ১৭টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা অংশ গ্রহণ করেছে। এই সব মিশনে এখন পর্যন্ত অংশ গ্রহণকারী বিভিন্ন পদবীর পুলিশ অফিসারের সংখ্যা প্রায় ৯,২০০ জন। বর্তমানে জাতিসংঘের চলমান শান্তিরক্ষা মিশন গুলোর মধ্যে ০৭ টি মিশনে বাংলাদেশের প্রায় ২,০৯১ জন পুলিশ অফিসার কর্মরত রয়েছেন । ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের পুলিশ কম্পোনেন্টে বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিটের প্রচলন করা হলে বাংলাদেশ এই পুলিশ ইউনিটেও পুলিশ সদস্য দিয়ে সহায়তা করে। মিশন এলাকায় মোতায়েনকৃত এই বিশেষায়িত ইউনিটকে ফর্মড পুলিশ ইউনিট বা এফপিইউ বলা হয়।
বাংলাদেশ বর্তমানে চলমান মিশন সমূহের মধ্যে ৪টি মিশনে ১৩ টি ফর্মড পুলিশ ইউনিট দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, আইভরি কোস্ট ও সুদানের দারফুরে বাংলাদেশের ফর্মড পুলিশ ইউনিট দায়িত্ব পালন করছে।
জাতিসংঘের সদর দফতরের শান্তিরক্ষা বিভাগ থেকে শুরু করে ফিল্ড মিশন সমূহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। মিশন এলাকার চিফ অব অপারেশন, সেক্টর কমান্ডার, লজিস্টিক চিফ, কমিউনিটি পুলিশিং চিফ, টিম সাইট লিডার, সেক্টর হেড কোয়ার্টারে পাবলিক রিলেশনস অফিসার, কমিউনিটি পুলিশিং অফিসার, ট্রেনিং অফিসার, জেন্ডার ও শিশু প্ররক্ষা অফিসারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ পুলিশের অফিসারগণ। এ ছাড়াও জাতিসংঘ সদর দফতরের শান্তিরক্ষা অধিদফতরের বিভিন্ন স্থায়ী পদ ও চুক্তি ভিত্তিক পদেও বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা কর্মরত আছেন।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘ মহাসচিবের পুলিশ কো-অর্ডিনেটর হিসেবেও বাংলাদেশ পুলিশের একজন সাবেক আইজিপি দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাতিসংঘ পুলিশের নিয়োগ ও নির্বাচন প্রক্রিয়াঃ
মিশন এলাকায় মোতায়েনের উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্য নির্বাচনের জন্য জাতিসংঘ সদর দফতরের পুলিশ বিভাগ থেকে তিন সদস্যের একটি নির্বাচনী দল (সিলেকশন এসিসট্যন্স টিম-স্যাট) সংশ্লিষ্ট সদস্য রাষ্ট্রে প্রেরণ করে। স্যাট টিমের তিন জন সদস্যের মধ্যে একজন জাতিসংঘের সদর দফতরের পুলিশ বিভাগের প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট মিশন এলাকায় কর্মরত একজন পুলিশ অফিসার থাকেন। তৃতীয় একজন পুলিশ অফিসার স্যাটের সদস্য থাকেন যিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ সার্ভিসের কার্যপ্রণালী ও চাহিদা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন।
স্যাট পরীক্ষায় পুলিশ অফিসারদের তিনটি বিষয়ে পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে হয়, যেমন-
১. সংশ্লিষ্ট মিশনের ব্যবহারিক ভাষায় (সাধারণভাবে ইংরেজী) তাদের পারদর্শী হতে হয়।
২. পুলিশ অফিসারদের গাড়ি চালনায় দক্ষ হতে হবে এবং
৩. কোন কোন মিশনের জন্য অস্ত্র চালনায় পারদর্শী হতে হবে।
অনেক সময় জরুরী ভিত্তিতে মোতায়েনের জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেশী সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োগের প্রয়োজন হলে অফিসারদের মিশন এলাকায় পৌঁছার পর স্যাট পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। যদি কোন পুলিশ অফিসার মিশন এলাকায় এসে স্যাট পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে অসফল হন তবে তাকে নিজ খরচে (দেশের খরচে)নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
জাতিসংঘ পুলিশের কার্যাবলীঃ
জাতিসংঘের মোতায়েনকৃত শান্তি রক্ষী পুলিশ সদস্যরা মূলতঃ পর্যবেক্ষক বা পরামর্শকের ভূমিকাই পালন করেন। তবে পরামর্শদানের কাজটির বিভিন্নমুখী ও জটিল দিক রয়েছে।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত মিশন এলাকার স্থানীয় পুলিশ বাহিনীকে সাধারণ পরামর্শদান, পুলিশ বাহিনীর পূনর্গঠন, সংস্কার এবং পূনর্বিন্যাস ছাড়াও তাদের অন্যান্য সহযোগিতামূলক কাজ করতে হয়। এইসব ভূমিকার তালিকা তৈরি করলে তা নিম্ন রূপ হতে পারেঃ-
• পরামর্শ দান ও প্রতিবেদন প্রদান;
• পুলিশ প্রতিষ্ঠান সমূহ সংস্কার, পূনর্গঠন, পূনর্বিন্যাস ও শক্তিশালীকরণ;
• প্রশিক্ষণ প্রদান,উপদেশ প্রদান এবং দক্ষতা হস্তান্তর;
• কোন কোন ক্ষেত্রে নির্বাহী আইন প্রয়োগ;
• ফর্মড পুলিশ ইউনিটের মাধ্যমে জনতা নিয়ন্ত্রণ, দাঙ্গা-দমন, ভিভিআইপি ও নিরস্ত্র শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা প্রদান ইত্যাদি কাজ করা;
• মিশন এলাকায় গণ-ভোট ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা প্রদান;
• যুদ্ধরত পক্ষ গুলোর নিরস্ত্রীকরণ ও বেসামরিকীকরণ;
• কমিউনিটি পুলিশিং চালু ও সাধারণ জনগণের সাথে পুলিশের সুসম্পর্ক তৈরি করা; এবং
• গণ শিক্ষা
শান্তিরক্ষীদের ইউনিফর্ম
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মোতায়েনকৃত সেনা ও পুলিশ সদস্যগণ সাধারণতঃ নিজ নিজ দেশের জাতীয় ইউনিফর্মই পরে থাকেন। এই ইউনিফর্ম হল তাদের স্বদেশের পরিচয় ও গর্বের বস্তু। তবে জাতিসংঘের প্রতীক বা মনোগ্রাম বহনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
• মিশন এলাকায় যোগদানের প্রথম দিনেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের একটি ব্লু বা আকাশী রঙের ব্যারেট ক্যাপ, একটি মেটাল ক্যাপ ব্যাজ ও পোশাকের ডান বাহুতে পরার জন্য জাতিসংঘের মনোগ্রাম সম্বলিত এক খণ্ড কাপড় দেয়া হয় ;
• ইউনিফর্মের বাম বাহুতে শান্তিরক্ষীরা তাদের জাতীয় প্রতীক, সাধারণতঃ ক্ষুদ্রাকার জাতীয় পতাকা পরে থাকেন।
• প্রয়োজনে তাদের জাতিসংঘ কর্তৃক সরবরাহ করা ব্ল হেলমেট ও ব্লু রঙের এন্টি-ট্যাংক বা বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরতে হয়।
বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাবলী
মিশন এলাকায় জীবনের ঝুঁকি, জীবন-যাত্রার ব্যয় ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে প্রত্যেকটি মিশনে ভিন্ন ভিন্ন স্কেলে শান্তিরক্ষীদের মিশন সাবসিস্টেন্ট এলাউন্স (এমএসএ) দেয়া হয়। এমএসএ হল মিশন এলাকায় দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষ ধরণের ভাতা। এই ভাতার বৈশিষ্ট্য হল (এফপিইউ ছাড়া) পদবী, চাকুরীর বয়স সীমা ইত্যাদি নির্বিশেষে সবার জন্য এর পরিমাণ সমান। জাতিসংঘের বেসামরিক পুলিশ বাহিনীতে দায়িত্ব পালন কালে একজন সাব-ইন্সপেক্টর ও এক জন ডিআইজি সমান এমএসএ পেয়ে থাকেন।
এমএসএ কোন ক্রমেই নিয়মিত বেতন নয়। কারণ শান্তিরক্ষীগণ নিয়মিত বেতন তাদের নিজ নিজ দেশের সরকার থেকেই পেয়ে থাকেন। এক জন পুলিশ শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ থেকে প্রতিদিন যে ভাতা পেয়ে থাকেন তা অনেক ক্ষেত্রে তার দেশের মাসিক বেতনের চেয়েও বেশী। মিশন ভেদে এই ভাতার পরিমাণ দৈনিক ১০০ থেকে ১৮৮ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সেনা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণ এক দিকে যেমন আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনে তেমনি এর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করতে পারে।
এতে শান্তিরক্ষী সদস্যরা যেমন ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হয়, তেমনি বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ থেকে অস্ত্র-পাতি, যান-বাহন ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক সেবা সরবরাহের জন্য ভাড়া পেয়ে থাকে। ২০০৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত শুধু ফর্মড পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের এমএসএ ও ইউনিটে ব্যবহৃত সরঞ্জামের ভাড়া বাবদ প্রায় ৯২০ কোটি টাকা অর্জন করেছে । পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে ।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ গ্রহণকারী সেনা ও পুলিশ সদস্যরা তাদের কর্তব্য পালন কালে বিশেষ দায়মুক্তি ও সুবিধাদি ভোগ করে থাকে। কর্তব্য পালন কালে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রচলিত আইনের অনেক কিছু থেকেই তারা দায়মুক্তি ভোগ করে।
১৯৪৬ সালের জাতিসংঘ কনভেনশন অন প্রিভিলিজ এন্ড ইমিউনিটি এর আওতায় জাতিসংঘের সকল আন্তর্জাতিক কর্মী ও শান্তি রক্ষী এই সুবিধা ভোগ করে। তবে সরকারি দায়িত্বের বাইরে কৃত মিশন এলাকার প্রচলিত আইন ভঙ্গ করা হলে তার দায়িত্ব জাতিসংঘ বহন করে না।
প্রশিক্ষণ, পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়া ও পেশাগত দক্ষতা বিনিময়ঃ
মিশন এলাকায় কাজ শুরুর প্রাক্কালে জাতিসংঘ পুলিশ সদস্যদের এক সপ্তাহ ব্যাপী একটি আত্মীকরণ প্রশিক্ষণ (ইন্ডাকশন ট্রেনিং) দেয়া হয়। এই প্রশিক্ষণ কোর্সে মিশন এলাকার ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়। মিশন এলাকায় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পুলিশিং, মানবাধিকার, নারী-শিশু প্ররক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
তা ছাড়া, মিশন এলাকা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধরত ভূখণ্ড হওয়ায় আত্মরক্ষা, সন্ত্রাসী/ বিদ্রোহী সংগঠনের সাথে মধ্যস্ততা করা ইত্যাদি বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকদের নিকট থেকে এমন মান সম্মত প্রশিক্ষণ পাওয়া অত্যন্ত ভাগ্যের বিষয় । আত্মীকরণ প্রশিক্ষণের বাইরেও দীর্ঘ এক বছর দায়িত্ব পালনকালীন জাতিসংঘ কর্তৃক গণতান্ত্রিক পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, জেন্ডার ইসু ইত্যাদি অনেক বিষয়ের উপর শান্তিরক্ষীদের বিভিন্ন মেয়াদের প্রশিক্ষণ বা কর্মশালায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। এই সব প্রশিক্ষণ নিঃসন্দেহে পুলিশ অফিসারদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে ও মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সারা পৃথিবীর প্রায় শতাধিক দেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করেন।
বাংলাদেশের পুলিশ অফিসারগণ আন্তর্জাতিক মণ্ডলে অন্যান্য দেশের পুলিশ অফিসারদের সাথে একই রকম দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ দিন একত্রে কাজ করার ফলে তাদের মধ্যে পারস্পারিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায় এবং একে অপরের সাথে নিজ নিজ অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশী পুলিশ অফিসারগণ অন্যান্য দেশের পুলিশ বাহিনীর গঠন, কার্যপ্রণালী, আচরণ বিধি, সেবাদান পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান লাভ করতে পারেন এবং অন্যান্য দেশের সর্বোত্তম ব্যবহারবিধি নিজ দেশের পুলিশ বিভাগে প্রচলনের ব্যবস্থা করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হল, বাংলাদেশের পুলিশ অফিসারগণ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ কালে অন্যান্য দেশের পুলিশ সার্ভিসের সাথে নিজেদের সার্ভিসের তুলনা করে বিশ্ব পুলিশিং ব্যবস্থায় নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারেন যা তাদের মানসিকতার প্রসার ঘটায় এবং পুলিশ বাহিনীর সংস্কার প্রক্রিয়া তরান্বিত করে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে পুলিশ সদস্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ।
বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যারা ইতিমধ্যেই নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তব সত্য হল পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় জনসংখ্যানুপাতে বাংলাদেশে পুলিশের সদস্য সংখ্যা অত্যন্ত কম। বাংলাদেশে প্রতি ১২৫০ জন নাগরিকের বিপরীতে মাত্র এক জন পুলিশ সদস্য রায়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে কোন দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সহনীয় অবস্থায় রাখার জন্য প্রতি ৪০০ জন নাগরিকের বিপরিতে কমপক্ষে ০১ জন পুলিশ সদস্য থাকা দরকার। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ সদস্য প্রেরণ করতে গিয়ে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্যের অভাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও অপরাধ পরিস্থির অবনতির আশঙ্কা থাকে।
কোন দেশের আভ্যন্তরীন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় না হলে বহির্বিশ্বে তার শান্তিরক্ষা কার্যক্রম প্রশ্নের সম্মুখিন হয়। তাই, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য প্রেরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করা দরকার।
সূত্র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।