কোনো বাধাই আমাদের রুখতে পারবেনা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার-২০০৮.ইশতেহার অনুযায়ী জাতি কি পেলো তথ্য দিয়ে শেয়ার করুন মন্তব্যের ঘরে ...আওয়ামীলীগ কি পেরেছে জাতির আকাংখা পূরণ করতে ? তাদের নিজেদের ইশতেহারইবা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছে?.নিচে আপনাদের জন্য আওয়ামীলীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার কপি করলাম ...ইশতেহার পড়েই মন্তব্য কাম্য,কারণ এতে একটি সুবিধা হলো আওয়ামীলীগ কি কি ওয়াদা করে ক্ষমতায় এসেছে তা জানতে পারলেন .আসুন দেখি এবার আওয়ামীলীগের ২০০৮ নির্বাচনী ইশতেহার
১. দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং বিশ্বমন্দার মোকাবিলায় সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা :
১.১ দ্রব্যমূল্য : দ্রব্যমূল্যের দুঃষহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময় মতো আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মজুতদারি ও মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে, চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। ‘ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
১.২ বিশ্বমন্দা : বিশ্বমন্দার প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য নীতি প্রয়োজন, পরামর্শ প্রদান, তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলা ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য জরুরিভিত্তিতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। বিনিয়োগ, জ্বালানি নিরাপত্তা, মুদ্রামান সুরক্ষা ও রফতানি সহায়তা এবং জনশক্তি রফতানি অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা : দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণ দিতে হবে।
রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনোপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালোটাকা ও পেশীশক্তি প্রতিরোধ ও নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি দফতরে গণঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিক সনদ উপস্থাপন করা হবে। সরকারি কর্মকাণ্ডের ব্যাপকভাবে কম্পিউটারায়ন করে দুর্নীতির পথ বন্ধ করা হবে।
৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি
৩.১ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত সার্বিক জ্বালানি নীতিমালা গ্রহণ করা হবে। তেল, গ্যাস, কয়লা, জলবিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস ও জৈবশক্তি, বায়ুশক্তি ও সৌরশক্তিসহ জ্বালানির প্রতিটি উৎসের অর্থনৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। তিন বছর মেয়াদি ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় বর্তমানে নির্মাণাধীন ও গৃহীত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র দ্রুত বাস্তবায়ন, জরুরিভিত্তিতে ১০০-১৫০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন প্রকল্প, বৃহৎ ও ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণসহ আওয়ামী লীগ আমলে বেসরকারি খাতে ১০, ২০ ও ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহোলিংয়ের ব্যবস্থা করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হবে। আগামী তিন বছরে অর্থাৎ ২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫ হাজার মেগাওয়াটে, ২০১৩ সালের মধ্যে ৭ হাজার মেগাওয়াটে এবং ২০২১ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে।
৩.২ তেল ও নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও আহরণের কাজে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। গ্যাস ও এলপিজি’র সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে।
৩.৩ জাতীয় স্বার্থকে সমুনড়বত রেখে কয়লানীতি প্রণয়ন করা হবে। এ যাবৎ প্রাপ্ত কয়লার অর্থনৈতিক ব্যবহার এবং কয়লাভিত্তিক নির্মাণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
নতুন কয়লা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
৪. দারিদ্র্য ঘুচাও বৈষম্য রুখো : আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত কৌশল ও লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করা হবে।
দারিদ্র্য বিমোচনের প্রধান কৌশল হবে কৃষি ও পল্লী জীবনে গতিশীলতা। হতদরিদ্রের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিস্তৃত করা হবে। ২০১৩ সালের মধ্যে দারিদ্র্যসীমা ও চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২৫ ও ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
বর্তমানের ৬.৫ কোটি দরিদ্রের সংখ্যা ২০১৩ সালে হবে ৪.৫ কোটি এবং ২০২১ সালে হবে ২.২ কোটি। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য অন্যান্য পদক্ষেপের সঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত প্রকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ আশ্রায়ন, গৃহায়ন, আদর্শ গ্রাম, ঘরে ফেরা, বাস্তবায়ন করা হবে। বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ভাতা, সুবিধাভোগিদের সংখ্যা কমপক্ষে দ্বিগুণ করা হবে। কর্মসংস্থান ব্যাংকে প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করে তরুণ উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হবে। বর্তমান দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন পিআরএসপি প্রণয়ন করা হবে।
৫. সুশাসন প্রতিষ্ঠা : ৫.১ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শক্ত হাতে দমন করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।
৫.২ বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর ও জেলখানায় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের পুনর্বিচার সম্পন্ন করা হবে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন গঠন ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে। মানবাধিকার লংঘন কঠোরভাবে বন্ধ করা হবে।
৫.৩ নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন পদ্ধতির চলমান সংস্কার অব্যাহত থাকবে। জাতীয় সংসদকে কার্যকর ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস প্রতিবছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কতিপয় সুনির্দিষ্ট বিষয় ছাড়া সংসদ সদস্যদের ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার দেয়া হবে।
৫.৪ রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিষিদ্ধ করা হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা গড়ে তোলা হবে এবং সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নিষিদ্ধ হবে।
একটি সর্বসম্মত আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৫.৫ প্রবাসী বাঙালিদের জাতি গঠনে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। রেমিটেন্সের বিনিয়োগ এবং প্রবাসী মূলধনকে আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রবাসীদের মেধার সদ্ব্যবহারের জন্য পরামর্শক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে।
৫.৬ দলীয়করণমুক্ত অরাজনৈতিক গণমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে।
যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা ও মেধার ভিত্তিতে সব নিয়োগ ও পদোনড়বতি নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনিক সংস্কার, তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ই-গভর্নেন্স চালু করা হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন করা হবে।
৫.৭ জনজীবনে নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। তাদের বেতন-ভাতা, আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং কল্যাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৫.৮ রংপুর নতুন বিভাগ গঠন করা হবে।
৫.৯ কর্মসংস্থান নীতিমালা : দারিদ্র্য বিমোচন, বেকার সমস্যা সমাধান এবং নাগরিকের জীবনকে অর্থবহ করার উদ্দেশে একটি সার্বিক কর্মসংস্থান নীতিমালা গ্রহণ করা হবে। যার মূল বিষয় হলো: ক. গ্রামীণ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান খ. আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ঋণ ও প্রশিক্ষণ গ. শিল্পায়নে বেতনভোগী শ্রমিকের জন্য সুযোগ সৃষ্টি ঘ. বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সাব-কন্ট্রাক্টিং সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং ঙ. প্রবাসে শ্রমিক রফতানির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ। বর্তমানে ২.৮ কোটি লোক বেকার, ২০১৩ সালে তা কমে হবে ২.৪ কোটি এবং ২০২১ সালে হবে ১.৫ কোটি।
গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য কর্মসূচি
৬. স্থানীয় সরকার : ক্ষমতার বিকেন্দ্রায়ন করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে শক্তিশালী করা হবে।
জেলা পরিষদকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-শৃঙ্খলা ও সকল প্রকার উনড়বয়নমূলক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন সদরকে স্থানীয় উনড়বয়ন ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু, পরিকল্পিত পল্লী জনপদ এবং উপজেলা সদর ও বর্ধিষ্ণু শিল্পকেন্দ্রগুলোকে শহর-উপশহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
৭. কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন
৭.১ আমাদের মূল লক্ষ্য ‘সবার জন্য খাদ্য’ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পুনরায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে। কৃষি উপকরণে ভর্তুকি বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা ও কৃষি ঋণের আওতা বৃদ্ধি এবং প্রাপ্তি সহজীকরণ করা হবে। সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও সুলভ করা হবে ফসল সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফসল ও সকল কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। মাছ, দুধ, ডিম, মুরগি, গবাদি পশু ও লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশীয় চাহিদা পূরণ করে, উদ্বৃত্ত পণ্য রফতানির লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা নেয়া হবে।
৭.২ বর্গাচাষীদের জন্য ঋণ, ক্ষেতমজুরদের কর্মসংস্থান ও তাদের পল্লী রেশনের আওতায় আনা হবে।
৭.৩ বাণিজ্যিক কৃষি, জৈব প্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন, বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে।
কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হবে।
৭.৪ পল্লী উন্নয়নে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার পরিধি বিস্তৃত করা হবে। ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ, খাস জলাশয় ও জলমহাল প্রকৃত মৎস্যজীবীদের বন্দোবস্ত দেয়া হবে। সমুদয় জমির রেকর্ড কম্পিউটারায়ন করা হবে এবং জমি, জলাশয়ের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও সামাজিক ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে ভূমি সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে।
৭.৫ উপকূলীয় অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে ভূমি উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে।
৮. পরিবেশ ও পানি সম্পদ : বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব থেকে রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং পানিসম্পদ রক্ষায় সমন্বিত নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। নদী খনন, পানি সংরক্ষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ভাঙন রোধ, বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও লবণাক্ততা রোধ ও সুন্দরবনসহ অববাহিকা অঞ্চলের মিঠা পানি প্রাপ্তি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পরিবেশ ও পানিসম্পদ রক্ষায় কার্যকর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গড়ে তোলা হবে। পানি ও বায়ু দূষণ রোধ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে।
ভূ-উপরিস্থিত পানির যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
৯. শিল্প বাণিজ্য :
৯.১ দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের জন্য দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, পুঁজি বাজারের দ্রুত বিকাশ, আইন-শৃঙ্খলা, ঘুষ-দুর্নীতি, প্রশাসনিক জটিলতা এবং রাজনৈতিক পোষকতামুক্ত, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, ভৌত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, উদ্যোক্তা শ্রেণীকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম এবং অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণ প্রভৃতি নীতিমালা সংবলিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে।
৯.২ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং প্রবাসী বাঙালিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করা। বিনিয়োগকারীদের জন্য আনুষ্ঠানিকতা ও আইনি জটিলতা সহজিকরণ করে ওয়ান স্টপ সার্ভিস কার্যকর করা হবে। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
৯.৩ আইটি শিল্পের উনড়বয়ন, পোশাক ও টেক্সটাইল খাতকে সম্প্রসারণ, বিপদমুক্ত ও শক্তিশালী করা, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ওষুধ, চামড়া, রাসায়নিক দ্রব্য, খেলনা, জুয়েলারি ও আসবাবপত্র শিল্পের বিকাশকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। পাটের বিকল্প ব্যবহার ও পাট শিল্পকে লাভজনক করতে নেয়া হবে বিশেষ উদ্যোগ।
৯.৪ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের বিকাশে সহায়তা দান, তাঁত শিল্প রক্ষা ও রেশম, বেনারসি ও জামদানি পল্লী গড়ে তোলাসহ তাঁতী, কামার, কুমার ও মৃৎ শিল্পীদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হবে। আখ চাষ ও চিনি শিল্পসহ কৃষিনির্ভর শিল্পকে উৎসাহিত করা, বাজার সৃষ্টি ও রফতানিতে সর্বতোভাবে সহযোগিতা দেয়া হবে। পর্যটন খাতে বিকাশ, জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি এবং প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের উৎপাদনশীল বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হবে।
মানব উন্নয়ন
১০. শিক্ষা ও বিজ্ঞান
১০.১ মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে যুগোপযোগী নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হবে। ২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে নিট ভর্তি ১০০ শতাংশে উনড়বীত করা এবং ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষাঙ্গনকে দলীয়করণমুক্ত, শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর বেতন কাঠামো ও স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন এবং স্বতন্ত্র কর্মকমিশন গঠন করা হবে। পর্যায়ক্রমে স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক সেবায় পরিণত করা হবে।
১০.২ নারীশিক্ষা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে উপবৃত্তি অব্যাহত রাখা হবে।
১০.৩ শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রাস, সেশনজট মুক্ত করা হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে তোলা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হবে। বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণা কর্মের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে।
১০.৪ রাজধানী ঢাকায় পর্যায়ক্রমে আরো প্রতি থানায় সরকারি মাধ্যমিক হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিটি জেলা সদরে সরকারি স্কুলগুলোর উনড়বয়ন ও সম্প্রসারণ করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে প্রতি উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
১০.৫ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি : আইসিটি খাতের সম্ভাবনাকে স্বার্থক করে তোলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের প্রতিভাবান তরুণ ও আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সর্বোতভাবে সহায়তা দিয়ে সফটওয়্যার শিল্প ও আইটি সার্ভিসের বিকাশ সাধন করা হবে। এতে রফতানি বাড়বে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
২০২১ সালের লক্ষ্য হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০২১ সালে প্রাথমিক স্তরে আইটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠিত এবং জোট সরকারের আমলে নিস্ক্রিয় করা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক টাস্কফোর্স সক্রিয় ও কার্যকর করা হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইসিটি ইনকুবেটর এবং কম্পিউটার ভিলেজ স্থাপন করা হবে।
১০.৬ প্রতিবন্ধী কল্যাণ : ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্রণীত প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন যুগোপযোগী ও বাস্তবায়িত করা হবে।
প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চলাফেরা, যোগাযোগ সহজ করা এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১১. স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ
১১.১ সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পূর্বতন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি পুনর্মূল্যায়ন করে যুগের চাহিদা অনুযায়ী নবায়ন করা হবে। এই নীতির আলোকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, পুষ্টি, শিশু ও মাতৃমঙ্গল নিশ্চিত করা হবে। জনসংখ্যা নীতি যুগোপযোগী করা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।
১১.২ আর্সেনিক সমস্যা সমাধান করে ২০১১ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি এবং ২০১৩ সালের মধ্যে প্রতি বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হবে।
১১.৩ মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন ও রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওষুধনীতি যুগোপযোগী করা হবে। হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ূর্বেদসহ দেশজ চিকিৎসা শিক্ষা এবং ভেষজ ওষুধের মানোন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১১.৪ এইচআইভি/এইডস, কুষ্ঠ, যক্ষ্মাসহ সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধের ব্যবস্থা এবং রোগ নিরাময়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
১২. নারীর ক্ষমতায়ন
১২.১ নারীর ক্ষমতায়ন, সম-অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্রণীত ‘নারী উন্নয়ন নীতি’ পুনর্বহাল করা হবে।
১২.২ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
প্রশাসন ও সমাজের সর্বস্তরের উচ্চপদে নারীদের নিয়োগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১২.৩ নারী নির্যাতন বন্ধে কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। নারী ও শিশু পাচার রোধে আঞ্চলিক সহযোগিতাসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১২.৪ নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বৈষম্যমূলক আইনসমূহ সংশোধন করা হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা, কর্মবান্ধব পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
১৩. শিশু-কিশোর কল্যাণ
পর্যায়ক্রমে সর্বক্ষেত্রে শিশুশ্রম বন্ধ করা হবে। শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার, প্রলোভন বা জোর করে জড়িত করা হবে না। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী শিশু অধিকার সংরক্ষণ, ১৯৭৪ সালের শিশু আইন এবং ১৯৯৪ সালের শিশুনীতি পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী করা হবে। তাদের শারীরিক, মানসিক বিকাশে পুষ্টি শিক্ষা ও বিনোদনের উপযুক্ত সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। শিশু নির্যাতন বিশেষ করে কন্যা শিশুদের প্রতি বৈষম্য, নির্যাতন বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
পথশিশুদের পুনর্বাসন ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
১৪. যুব সমাজ ও কর্মসংস্থান
বছরে ন্যূনতম ১০০ দিনের কর্মসংস্থানের জন্য প্রত্যেক পরিবারের একজন কর্মক্ষম বেকার তরুণ/তরুণীকে কর্মসংস্থানের জন্য ‘এমপ−য়মেন্ট গ্যারান্টি’ স্কিম পর্যায়ক্রমে কার্যকরী করা হবে। সকল কর্মক্ষম নাগরিকের নিবন্ধন করা হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নতুন প্রজন্মের সমূদয় যুব সমাজকে দুই বছরের জন্য ‘ন্যাশনাল সার্ভিস’-এ নিযুক্ত করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
১৫. যোগাযোগ ও ভৌত অবকাঠামো
১৫.১ পরিবহন, সড়ক নির্মাণ, গৃহায়ন, বন্দর উনড়বয়ন ও নির্মাণে উপযুক্ত নীতিমালা গ্রহণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
সড়ক নেটওয়ার্কে গ্রাম-ইউনিয়ন-উপজেলা ও জেলা সদরকে সংযুক্ত করার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
১৫.২ পদ্মা ও কর্ণফুলী সেতু, টানেল নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেন বিশিষ্ট এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রেলপথ সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা হবে।
১৫.৩ এশীয় রেল ও জনপথের আওতায় পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহের সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।
১৫.৪ প্রতিটি ছোট-বড় নদী খনন করা হবে এবং তা যেন সারা বছর নাব্য থাকে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপদে স্বল্প খরচে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের জন্য নৌপথের উনড়বয়ন ও নৌ পরিবহনের আধুনিকায়ন
করা হবে।
১৫.৫ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে আধুনিকায়ন করে এশিয়ার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। স্থলবন্দর আধুনিকায়ন করা হবে।
১৫.৬ বাংলাদেশ বিমানকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে। বেসরকারি বিমান পরিবহনকে আরো উৎসাহিত করা হবে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংযোগস্থল হিসেবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে সর্বাধুনিক আন্তর্জাতিক মানসম্পনড়ব নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে।
১৫.৭ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের সব উপজেলাকে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আনা হবে।
১৫.৮ স্বল্প খরচে যাতায়াত ও রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলওয়েকে গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং এজন্য নতুন রেললাইন স্থাপন করা হবে। রাজধানী ঢাকার জনপরিবহন সমস্যার সমাধান ও যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে ভূগর্ভস্থ রেললাইন নির্মাণ, আকাশ রেল অথবা সার্কুলার রেলপথ এবং রাজধানীকে ঘিরে নাব্য ও প্রশস্ত নৌপথ নির্মাণ করা হবে।
১৬. শ্রমনীতি
১৬.১ জাতীয় শ্রমনীতি পুনর্মূল্যায়ন ও সংশোধন করা হবে।
পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য দূর করা হবে। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ এবং স্থায়ী মজুরি কমিশন গঠন করা হবে। দক্ষ শ্রমশক্তি রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক চাহিদা বিবেচনায় ট্রেডভিত্তিক ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
১৬.২ গার্মেন্টস শ্রমিকসহ সকল শ্রমিক, হতদরিদ্র এবং গ্রামীণ ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় রেশনিং প্রথা চালু করা হবে।
১৭. মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা
১৭.১ স্বাধীনতার স্বপ্ন ও মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ, বিশেষত দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, বার্ধক্যকালীন ভরণ-পোষণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে রেল, বাস ও লঞ্চে বিনামূল্যে চলাচলের সুযোগ দেয়া হবে।
১৭.২ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়স্তম্ভ মূল নকশা অনুযায়ী নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে। দেশের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা এবং প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিতকরণ, শহীদদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।
১৮. ধর্মীয় সংখ্যালঘু, অনুন্নত সম্প্রদায় ও অনগ্রসর অঞ্চল
১৮.১ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, আদিবাসী ও চা বাগানে কর্মরত শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর ওপর সন্ত্রাস, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চির অবসান, তাদের জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম, মানমর্যাদার সুরক্ষা এবং রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকারের বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। আদিবাসীদের জমি, জলাধার এবং বন এলাকায় সনাতনি অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও অন্যান্য ব্যবস্থার অবসান করা হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের জন্য চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
১৮.২ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। অনগ্রসর অঞ্চলসমূহের উনড়বয়নে বর্ধিত উদ্যোগ, ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী, আদিবাসী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। বস্তি, চর, হাওড়, বাওড় ও উপকূলসহ সকল অনগ্রসর অঞ্চলের মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
১৯. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য-প্রবাহ
১৯.১ সকল প্রকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্য-প্রবাহের অবাধ চলাচল সুনিশ্চিত ও সংরক্ষণ করা হবে। জাতীয়ভিত্তিক ছাড়াও স্থানীয়ভিত্তিক কমিউনিটি রেডিও চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।
১৯.২ সকল সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার করে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা এবং সাংবাদিক নির্যাতন, তাদের প্রতি ভয়-ভীতি-হুমকি প্রদর্শন এবং সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে।
১৯.৩ সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বিতরণে বৈষম্যমূলক নীতি, দলীয়করণ বন্ধ এবং সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে তার বিকাশে সহায়তা প্রদান করা হবে।
২০. প্রতিরক্ষা
২০.১ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে একটি দেশপ্রেমিক, সাহসী, দক্ষ ও অজেয় প্রতিরক্ষা বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলবে। দেশের ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উনড়বত করা হবে। একটি ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি’ প্রণয়ন করা হবে।
২০.২ প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যতা, মেধা, দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতার নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় সংবিধানসম্মতভাবে প্রয়োজনীয় স্বশাসনের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
২০.৩ আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীসহ আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় অধিকতর অংশগ্রহণ ও অবদান রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২১. সংস্কৃতি ও ক্রীড়া
২১.১ বাঙালি সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, সঙ্গীত, শিল্পকলা, নাটক, চলচ্চিত্র এবং সৃজনশীল প্রকাশনাসহ সুকুমার শিল্পের সকল শাখার উৎকর্ষ সাধনে রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবে।
পূর্বতন আওয়ামী লীগ সরকারের (১৯৯৬-২০০১) উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করা হবে।
২১.২ সাম্প্রদায়িকতা, গোঁড়ামি, কূপমণ্ডুকতা, কুসংস্কার এবং জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের পাশাপাশি এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও জনগণকে বিজ্ঞানমনষ্ক এবং উদার মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হবে।
২১.৩ কোরআন ও সুন্নাহ্ পরিপন্থি কোনো আইন প্রণয়ন করা হবে না। সকল ধর্মের শিক্ষা ও মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে।
২১.৪ ক্রীড়াঙ্গন ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণমুক্ত করা হবে।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধন আন্তর্জাতিক মান অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধার সম্প্রসারণসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে। শিশু, কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে খেলাধুলা ও শরীরচর্চার ব্যবস্থাকে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের অংশ করা হবে।
২২. সরকার ও এনজিও
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ আইনি কাঠামোর মধ্যে স্বশাসিতভাবে তাদের নিজস্ব বিধি মোতাবেক পরিচালিত হবে। তবে বিধিবদ্ধ এনজিও প্রতিষ্ঠানসমূহ দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না। তাদের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
২৩. পররাষ্ট্র নীতি
ক. বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই নীতির আলোকে স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করা হবে। ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক বজায় রেখে বহুমুখী সহযোগিতা জোরদার করা হবে। সার্ক বিমসটেক ও ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোসহ আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সুদৃঢ় করা হবে।
খ. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কানাডাসহ উনড়বত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের উনড়বয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার ও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করা হবে।
রাশিয়া, চীন এবং আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা হবে। বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার সঙ্গে অধিকতর যোগাযোগ ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হবে।
গ. সৌদি আরব, মিশর, প্যালেস্টাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ এবং তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক এবং উনড়বয়ন ও সহযোগিতার ক্ষেত্র জোরদার করা হবে। মুসলিম উম্মাহ্র সংহতি এবং ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) কাঠামোয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সহযোগিতা জোরদার করা হবে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে ফলপ্রসূ সম্পর্ক স্থাপনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঘ. সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
ঙ. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার এবং উজ্জ্বল করা হবে
এই হলো লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ...এবার কি আশা করেছিলেন আর কি পেলেন ? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।