আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামী লীগের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট আজ

ভালবাসি আকার ১ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাজনৈতিক বিবেচনায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আজ জাতীয় সংসদে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী বাজেট উপস্থাপন করবেন। এই বিশাল বাজেটে থাকবে বিশাল অঙ্কের ঘাটতির বোঝা। আয়, ব্যয়, ভর্তুকি এবং ঘাটতির বিশালতায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের পরি-সংখ্যানে তৈরি হবে নতুন রেকর্ড। এরপরও থাকছে নির্বাচনী প্রকল্পের গুরুত্ব আর কালোটাকা সাদা করার সুযোগ। এটাই হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট, যা তারা বাস্তবায়ন করার সুযোগ পাবেন।

এর পরের বাজেট বাস্তবায়নে তারা মাত্র ৬ মাস সময় পাবেন। সূত্র জানায়, নতুন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। আর অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় প্রাধান্য পাবে সরকারি সেবার মান বৃদ্ধি, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, জেন্ডার সমতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একই সঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় সমাপ্ত অর্থ বছরের বিভিন্ন খাতে সরকারের অর্জিত সাফল্য ও ব্যর্থতার মূল্যায়ন, বিভিন্ন নীতি, কৌশল, অগ্রাধিকার ও বরাদ্দের প্রতিফলন।

এদিকে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বরাদ্দে এবার এমন কিছু প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে, যার পুরোটাই রাজনৈতিক বিবেচনার বরাদ্দ। যার বাস্তবায়ন নিয়ে সরকার কখনোই ভাববে না। আর চলতি অর্থবছরের নামমাত্র বরাদ্দের কিছু প্রকল্প আছে, যার ১ শতাংশও কাজ হয়নি। এসব প্রকল্পেও অর্থ বরাদ্দ দিয়ে তা ঝুলিয়ে রাখা হবে। বাজেটে ভোটার সন্তুষ্টির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তির বাজেটজন্য বরাদ্দ রাখা হতে পারে ৫ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা।

বেহাল সড়ক এবং পূর্ত মেরামত ও সংরক্ষণে বরাদ্দ রাখা হতে পারে ২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হতে পারে দেড় হাজার কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হতে পারে ২১ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাইরেও বিভিন্ন প্রকল্পে ২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় এক হাজার ৩৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য কর্মসূচিতে থাকছে আরো ১৮ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে পারে এক লাখ ৯০ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ৫৫ হাজার কোটি টাকা আর অনুন্নয়ন ব্যয় এক লাখ ৩৫ হাজার ৫০ কোটি টাকা। বাজেটের ব্যয় নির্বাহের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। কর বহির্ভূত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার ৮৪৬ কোটি ও এনবিআর বহির্ভূত কর ব্যবস্থা থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে, ৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা।

নতুন ২০১২-১৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫০ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে ব্যাংকিং খাত থেকে ২০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আর ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৯ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। বাকি অর্থের জোগান দেয়া হবে বিদেশি উৎস থেকে। এর মধ্যে ২১ হাজার ২০ কোটি টাকা ঋণ আর ৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা অনুদান প্রাপ্তির আশা করছে সরকার। এরমধ্যে ৭ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে ঋণ পরিশোধ করতেই।

সূত্র জানায়, এক বছরের জন্য বিনা প্রশ্নে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আর চলতি অর্থবছরের মতো একইভাবে শেয়ারবাজারে এই সুবিধা বহাল থাকবে তবে কালোটাকা সাদার করার জন্য বরাবরের মতো জরিমানার বিধান থাকছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগের উপার্জিত টাকা সাদা করতে হলে ১০ শতাংশ, দুই বছর আগে উপার্জিত টাকা সাদা করতে বছরপ্রতি ১০ শতাংশ করে মোট ২০ শতাংশ এবং তিন বছর আগে উপার্জিত অর্থ সাদা করলে বছরপ্রতি ১০ শতাংশ করে মোট ৩০ শতাংশ হারে জরিমানা নির্ধারণ করা হবে। আর যে বছর অবৈধ অর্থ উপার্জিত হয়েছে, সেই বছরের কর হার অনুযায়ী করও দিতে হবে। আয়কর অধ্যাদেশের ১২৮ ধারা সংশোধন করে এই সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

নতুন অর্থবছরে ভর্তুকির জন্য প্রয়োজন হবে ৩৪ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছর ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে চলতি অর্থবছরের ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ভর্তুকির দায়। আর এ ভর্তুকির বড় অংশই ব্যয় হবে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও কৃষি খাতে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ২০ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা।

যদিও অর্থবছরের শেষ প্রান্তে তা এসে দাঁড়ায় ৪০ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৯ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা চলতি অর্থবছরে পরিশোধ করা সম্ভব হলেও বাকি ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঢুকছে। সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলে ভর্তুকি হিসেবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) ১৩ হাজার ৩০০ কোটি, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনসহ অন্যান্য খাতে মোট ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ভর্তুকি থাকতে পারে। বরাদ্দে এগিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় মিলে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য সম্ভাব্য বরাদ্দ হতে পারে ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা।

তবে একক মন্ত্রণালয় হিসেবে আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেতে পারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ হতে পারে ১২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। এরপরে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, ১১ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দের সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৯৪৫ কোটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৫৯৫ কোটি, কৃষি মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ২৪৫ কোটি, বিদ্যুৎ বিভাগ ৮ হাজার ১৫১ কোটি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ৩৬১ কোটি এবং সড়ক বিভাগ ৪ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতে পারে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.