হাজারটা স্বপ্ন একটি বাস্তবতাকে বদলাতে পারে না
১৯৯৫ সালে রাজনৈতিক বাস্তবতার মাঝে লেখক ও বুদ্ধিজীবী আহমদ ছফার একটা গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতকার পাই। সাক্ষাতকারটিতে তিনি একটি তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি করেছিলেন, আওয়ামী লীগ যখন জিতে তখন শেখ হাসিনা তথা কিছু মুষ্টিমেয় নেতা জিতেন, আর আওয়ামী লীগ যখন হারে গোটা বাংলাদেশ পরাজিত হয়।
এ কথা সত্য যে আওয়ামীলীগ দেশের মূল ধারার একমাত্র দল যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল দাবিদার। স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিল তারা। অপরদিকে লীগের বিরোধী শক্তি বিএনপি একটি তীব্র ডানপন্থী শক্তি।
একজন খেতাব ধারী মুক্তিযোদ্ধার প্রতিষ্ঠিত দল হওয়া সত্ত্বেও চেতনার প্রতি তাদের যে সম্মানবোধটুকু থাকা দরকার তা দেখা যায়নি। বরং তার বিপরীতটাই বিভিন্ন সময়ে আমরা লক্ষ করি। আর তার ষোলকলা পূর্ণ হয় ২০০১ এর নির্বাচনে। একটি আন্দোলনকে ঘিরে একসময় খোদ লীগও জামতের সাথে রাজনৈতিক মৈত্রী ছিল তা আমরা জানি। কিন্তু বিএনপি আরো একধাপ এগিয়ে স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী এই দলটিকে নিজেদের জোটেই নিয়ে নেয়।
তারপর থেকেই তারা ক্রমেই মৌল্বাদ-নির্ভর দলে পরিণত হতে শুরু করে। ফলতঃ যা দাড়ালো, আওয়ামীলীগের পরাজয় মানে সেই সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের একটি সুযোগ হওয়া, মানে যেই আদর্শ নিয়ে দেশ গড়ে উঠেছিল সেই আদর্শের পরাজয়।
আসলে এই অবস্থাটা কিছু আগে পর্যন্ত ঠিক-ই ছিল। তবে সাম্প্রতিক অনেক ঘটনা-অঘটনে দৃশ্যপটে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে বলাই বাহুল্য। এ মুহুর্তে লীগ তার অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীলতার রূপ ধরে রাখতে পারছে কি? সংক্ষেপে না।
আর অতিরিক্ত ভারত-মূখিতা তো আছেই, জনমনে সন্দেহের ঘটিয়েছে। আর তার পরিণতি ঘটতে যাচ্ছে এবার দশম নির্বাচনে।
এখন একটি সুষ্ঠ ও স্বাভাবিক নির্বাচন একেবারেই অসম্ভব। এ নির্বাচন হল একক নর্বাচন। কারণ লীগ ছাড়াও যারা নির্বাচনে রয়েছে, তারা মূলতঃ মহাজোটেরই শ্রীক।
তার উপর অর্ধেকের বেশি সাংসদ বিনা ভোটেই জয়লাভ করেছে। বড় ছোট বেশিরভাগ দলই বর্জন করেছে এবার নির্বাচন। তো আওয়ামী লীগ যে নিরংকুশ ভাবে নির্বাচিত হচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। আর এইখানেই ঘটবে তাদের নৈতিক পরাজয়।
লীগের এভাবে একা একা নির্বাচনের মাধ্যমে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করার খেলা হয়তো অনেক কট্টর আওয়ামীপন্থিও মেনে নেবে না।
দেশের বিপুল জনগোষ্টির সমর্থন ছাড়াই তাদের টিকে থাকতে হবে। আর এটা দেশবিরোধী অপশক্তির জন্য রাস্তা পরিস্কার করবে।
নির্বাচনে সবদলের অংশগ্রহণে হলে তারা হয়তো হেরে যেত। কিন্তু তবু সংসদে তাদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা অসম্ভব ছিল বলে মনে হয় না। অনেক অনাকাংক্ষিত বিষয় ঠেকানো যেত।
কিন্তু এখন আর পিছু হটার উপায় নেই। নির্বাচন করতেই হবে। অতীতের নানান ভুল কাজের জন্য লীগ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে লীগ এখন নিজেদের আত্ম্রক্ষায় মরিয়া। এখন পর্যন্ত তারা একক নির্বাচন থেকে সরে দাড়ায়নি, বরং সস্তা পলিটিক্স করে চলেছে। তাদের এহেন কর্মকান্ডের জন্যই অনেকে আঙ্গুল তোলার সুযোগ পাচ্ছে।
আর কিছু সুযোগ সন্ধানী এটাকে কাজে লাগিয়ে এমনকি রাষ্ট্রের মূল ভিতের বিপক্ষে জনমত দাড় করানোর প্রয়াস পাচ্ছে। আর এখানেই ঘটতে চলেছে ঘোটা জাতির পরাজয়।
সুতরাং, অবস্থা যা দাড়িয়েছে, এখন বলা চলে আওয়ামীলীগ জিতুক আর হারুক যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের পরাজয় ঘটতে যাচ্ছে। আফসোস লীগ তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে চলেছে বার বার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।