আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাইরেটস অব দ্যা বিডি ঃ গুমের রাজ্য স্বাগতম

বিশ্ববিখ্যাত 'পাইরেটস অব দ্যা ক্যারিবিয়ান' এর সম্পূর্ণ নতুন গল্প ও নাম নিয়ে আসছে এবার বাংলাদেশে। যার নাম হবে ' পাইরেটস অব দ্যা বিডিঃ গুমের রাজ্য স্বাগতম'। এর আগের সব সিরিজের মুল চরিত্র ক্যাপ্টেন 'জ্যাক স্প্রো' এবার অভিনয় করবে খলচরিত্রে এবং নায়ক চরিত্র অর্থাৎ মুল চরিত্রের এবারের নাম 'ক্যাপ্টেন কাব্যশাহ'চরিত্রে অভিনয় করবেন বিশাল বাংলার সমান বক্ষের অধিকারী, বুলেট যার শরীরে ঢুকে গলে রক্তের সঙ্গে মিশে যায় সেই বিরল প্রজাতির একমাত্র মানুষ হিসেবে খ্যাত অনন্ত কান্ত। ছবির প্রযোজনা সংস্থা 'সদরঘাটস টার্মিনালস ফিল্মস 'এর কর্ণধার শাহ জাহান বকবাজ জানিয়েছেন খুব শীঘ্রই ছবিটির শুটিং ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে শুরু হবে এবং এর জন্য ইতিমধ্যে বিদেশী সকল অভিনেতা অভিনেত্রী ও ছবির কলাকুশলীরা চলে এসেছেন। এর দিন দশেক পর- মহা সমারোহে ছবির মহরত অনুষ্ঠিত হলো যেখানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

যারা তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় একই কথা ব্যক্ত করলেন যার সংক্ষেপ হলো '' এটি এমন একটি চলচ্চিত্র হবে যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও উন্নতি করবে এবং যে ছবিটা মুক্তি পাওয়ার আগেই সারা বিশ্ব তোলপাড় করবে। যা হবে একটি অনন্য ইতিহাস। ' দুই দিন পর প্রথম দৃশ্য- ঘুম থেকে উঠে কাব্য সাহেব ছাই দিয়ে দাঁত ঘসাতে ঘষাতে বাথরুমে গেলেন। বাথরুম থেকে এসে নাস্তা খাওয়ার আগে টেলিভিশনটা অন করে প্রিয় 'চ্যানেল বাপবেটি২৪' এর সকালের খবরটা দেখতে বসলেন। সেখানেই শুনতে পেলেন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল দখল করতে একদল আমেরিকার জলদস্যু সদরঘাটে হামলা চালিয়েছে এবং সেখানকার নিয়োজিত নিরাপত্তা রক্ষির প্রধান শাজাহান মিয়াকে ঘাটের পিলারের সাথে বেধে রেখেছে।

পুলিশ ও র‍্যাব যাওয়ায় ওখানে নিয়োজিত সকল কর্মচারীদের জলদস্যুরা জিম্মি করে রেখেছে এবং ঘাটের দখল বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত কাউকে ছাড়বে না। সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে জলদস্যু প্রধান ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্রো। এরই মাঝে টেলিভিশনে শাহজাহান মিয়াকে পিলারের সাথে বেঁধে মারধরের কতগুলি ফুটেজও দেখিয়েছে যেখানে শাহজাহান মিয়াকে কতগুলো অস্ট্রেলিয়ান গাভী দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছে ' বল এগুলো কি?" উত্তরে শাহজাহান মিয়া বলছে 'গরু' এই শুনে জলদস্যুরা ক্ষেপে আর শাহজাহানরে চাবুক দিয়ে পিটায়। চাবুকের আঘাতে রক্তাক্ত শাহজাহান মিয়া আবারো ভুল করে বলে '' না ষাঁড়, না ষাঁড়, এগুলো বলদ'' এবার আরও জোরে চাবুকের আঘাত চলতে থাকে। মনে মনে কাব্যশাহ বলে "শালা , গাভিও চিনে না, বলদও চিনে না।

'' এমন উদ্ভট পরিসস্থিতিতে কাব্য শাহ ঠিক করলো জিম্মি হওয়া সব কর্মচারী কে জীবিত উদ্ধার এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পুনরায় দখল যে করে হোক করতেই হবে। এই ভেবে কোন রকমে লুঙ্গির উপরে জিন্স পেন্ট আর গেঞ্জি পরে মাথায় গামছা বেঁধে রওনা দিলো শহরের মেয়রের কাছে যেন তাকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছাতে সাহায্য করে। এই পর্যন্ত শুটিং বেশ ভালোভাবে ধারন করা হলো এবং মধ্যাহ্ন বিরতির পর আবার শুটিং শুরু হবে। ছবির অভিনেতা অভিনেত্রিরা যখন সবাই জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো তখন প্রোডাকশন বয় বেনজীর নিকোলাস দৌড়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো 'কিরে কি হয়েছে'? এমন করে দৌড় দিলি ক্যান''? হাঁপাতে হাঁপাতে প্রোডাকশন বয় বললো প্রোডাকশন ম্যানেজার মফিজউল ইসলাম টাকলু স্যার এর সাথে দেখলাম ৩/৪ জন সাদা শার্ট কালো পেন্ট পড়া মানুষের সাথে কথা বলতে।

আমাকে দেখেই টাকলু স্যার চা আনতে বললেন। ১ মিনিট পর ফিরে এসে দেখি টাকলু স্যারও নাই, ঐ লোকগুলাও নাই। পুরো শুটিং স্পট এর সব জায়গা খুঁজে দেখেছি কোথাও টাকলু স্যার নাই। ঐ লোকগুলারেও পাই নাই। এই কথা শুনে পরিচালক টুকু চোপড়া বললেন 'ধুর গেছে হয়তো কোথাও বিড়ি টানতে চলে আসবে বিড়ি টানা শেষ হলে।

আমি ওর মোবাইলে কল করে দেখি বলেই নিজের মোবাইলটা দিয়ে টাকলুকে ফোন করতে লাগলেন কিন্তু বারবার ওপাশের ভদ্রমহিলা বলছেন'' দুঃখিত। আপনি যাকে কল করেছেন তিনি এই মুহূর্তে 'গুম' (ব্যস্ত) অবস্থায় আছেন কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন। '' প্রায় ২ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর যখন টাকলু মিয়া ফিরে আসলো না তখন পরিচালক সহ ইউনিটের সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো এবং দেখলো যে তখন টাকলু মিয়ার মোবাইল বন্ধ। ইউনিটের সবাই গোল হয়ে বসে চিন্তা করতে লাগলো কি করবে না করবে!!! হঠাৎ পরিচালক এর মাথায় আসলো প্রোডাকশন বয় বেনজীর তো ঐ লোকগুলোকে দেখেছে, ওরে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে সব কিছু বললে ভালো হবে ভেবে বেনজীর......বেনজীর বলে চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু কোথায় বেনজীর? বেনজীর এর কোন সাড়াশদ পাওয়া যাচ্ছে না।

সবাই অবাক । যাকে ১৫ মিনিট আগেও আশেপাশে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে সেই বেনজীরও এখন উধাও!!!!!!!!!!! প্রযোজক- পরিচালক সবার মাথায় চিন্তার ভাজ। একদিনে ২ ঘণ্টায় ২ জন লোক উধাও। উনি থানায় গিয়ে সাধারন ডায়েরি করলেন ও দুইজন নিখোঁজ হওয়ার একটি মামলাও করলেন কিন্তু পুলিশের ওসির কথা শুনে বুঝলেন যে এতে কোন কাজ হবেনা এবং সমস্যার সমাধানও হবেনা। ওসি মকবুল পান চিবাতে চিবাতে আর বেন্সন সিগারেট এ একটান দিতে দিতে বললো '' মিয়া ভাই আপনারা বিদেশী লোক তাই এই এলাকা সমন্ধে অনেক কিছু জানেন না।

আমি পুরা এলাকা খুইজ্জাও আপনার লোক ২টারে পামুনা। আমাদের এখানে যারা একবার হারিয়ে যায় তাঁরে দুনিয়া উলটাই গেলেও পাওয়া যাবেনা। আপনি ২০ হাত মাটির তলে খুইজাও পাবেন না। এটা আমাদের এলাকায় প্রায় হয়। লোক হারানোর ফলে কয়দিন একটু চেঁচামেচি আর আলোচনা হয় এরপর সব শেষ।

লোকরে তো পাওয়া যাইবে না এটা সবাই বুইজা গেলে যারযার কামে আবার মন দেয় এবং নতুন কইরা কেউ হারাই যাওয়া খবর শুনার অপেক্ষা করে। আপনি এরচেয়ে বরং আপনার যে কাজ করতে আইছেন সেই কাজ শেষ কইরা বাড়িতে রওনা দেন পরে দেখবেন আপনারেও খুইজা পাওয়া যাইতেছে না !!!!! আপনি বুঝেন না আমাগো প্রধানমন্ত্রী কি এমনি এমনি এই ছবির নাম রাখছে 'পাইরেটস অব দ্যা বিডি ঃ গুমের রাজ্য স্বাগতম''। আপনার ছবির কাহিনী তো আমাদের এখানে বহু আগে শুরু হইয়া শেষ। এই ছবি আপনার দেশে চললেও এইখানে চলবেনা। কারন এই দেশের মানুষ প্রতি সপ্তাহে এইরকম ছবি দেখতাছে।

আপনি নতুন কোন আইডিয়া নিয়া কাম করেন। এই দেশে বহু আপডেট কাহিনী চলতাছে যা আপনাদের হলিউডের সিনেমাও পারবোনা এসব কাহিনী লিখতে!!!!!!! ওসির কথা শুনে পরিচালকের মুখ দিয়ে ' ওহ মাই গড! শব্দটা কয়েকবার বের হতে লাগলো এবং একসময় পরিচালক অজ্ঞান হয়ে চিৎপতাং হয়ে মাটিতে পরে গেলেন.........................................................। এরপর ছবির কাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেলো এবং যুক্তরাষ্ট্র এমন আধুনিক কাহিনীর ছবিতে বিনিয়োগ করতে অপরাগতা জানিয়ে চিঠি দিলো যেখানে কাহিনী বদল সহ শুটিং স্পট বদলানোর শর্ত জুড়ে দেয়া হলো। সরকারের পক্ষ থেকে চিঠির জবাবে দুটি শর্তের একটিও মানতে অপরাগতা জানিয়ে দেয়া হলো যেখানে কারন হিসেবে উল্লেখ ছিল - এমন আধুনিক গল্প ও লোকেশনের এক অনন্য নিদর্শন এই বাংলা যা নিয়ে সরকার গর্বিত ও জনগণ লজ্জিত সেখানে বাংলার এই গৌরব গাঁথাকে অবজ্ঞা করে সরকার জনগণের বিপক্ষে যেতে পারবেনা কারন এই সরকার জনগণের সরকার আমরা বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশকে মনে-প্রানে ভালোবাসি তাই আমরা শুনি- একটি শিক্ষিত রেডিও  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.