আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাইরেটস অফ দা সোমালিয়া। ডিফেন্ডিং । পর্ব ৩

পেশায় নাবিক নেশায় যাযাবর
জাহাজ ছিনতাই , বিভিন্ন দেশের নেভির আক্রমণ , জলদস্যু আটক খবর পত্রিকা , আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এগুলো নিয়মিত দেখা যায় । কিন্তু যে ব্যাপারটা সবার দৃষ্টির বাইরে থাকে তাহলো আমাদের কথা। নাবিকদের কথা । ৩য় পর্বে তাই শধু থাকবে নাবিকদের প্রতিরোধের কথা যারা কোন রকম ভঁয় ভীতি ছাড়াই ঐ জলদস্যুদের মোকাবেলা করে । বিষয়টা গত ৬/৭ বছর ধরে ভয়াবহ রূপ ধারন করলেও আমি কখনো দেখিনি কোন নাবিককে এই কারনে চাকরি ছেড়ে দিতে ।

এবার পড়ুন আমাদের প্রতিরোধের গল্প । পূর্বের পর্বের একটা কথা আবার রিপিট করছি । জলদস্যুদের এড়িয়ে বাণিজ্য জাহাজগুলি পরিচালনা করা এক কথায় অসম্ভব। কারন এশিয়ার দেশগুলো ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চাইলে ভারত ও আরব উপসাগর দিয়ে সুয়েজ খাল অতিক্রম করেই কেবল ভূমধ্য সাগরে পৌঁছানো সম্ভব। আর এই পথে জাহাজগুলিকে সোমালিয়ার উপকূল অতিক্রম করতেই হবে।

আর একটি পথ আছে ইউরোপ থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় পৌঁছানোর উত্তামাশা অন্তরীপ বা কেপ অফ গুড হোপ। কিন্তু এত পথ ঘুরে বাণিজ্য করতে গেলে ব্যবসায়ে লালবাতি জ্বলার সম্ভাবনাই বেশি। উপরের ছবিটা দেখুন । লাল বা অরেঞ্জ কালার করে সোমালিয়ান জলদস্যুদের এলাকা দেখান হয়েছে । সর্বশেষ জাহাজ ছিনতাইটা হয়েছে এই এলাকার বাইরে তার মানে তাদের ছিনতাই এরিয়া আর বেড়েছে ।

আমার শেষ জাহাজটির রুট ছিল এই দিকেই । আমারা মালয়শিয়া / সিংগাপুর থেকে ওমান / কুয়েত / সউদি আরব যেতাম আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে হংকং / সিঙ্গাপুর আসতে হত । আমাদের প্রতিরোধের উপায় ছিল শ্রীলঙ্কা পার হয়ে আমরা মুম্বাই , মুম্বাই থেকে করাচী এবং করাচী হয়ে মধ্যপ্রাচ্য প্রবেশ করতাম । জলদস্যুতা না থাকলে সাধারণত শ্রীলঙ্কা থেকে সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাওয়া হত । এতে তেল খরচ সাশ্রয় / সময় সাশ্রয় ছাড়া ন্যাভিগেশনে ঝামেলা কম হত ।

কারন কোস্টের কাছাকাছি বেশি জাহাজ চলাচল করে । অনেক ফিশিং বোট থাকে । রুট বদলান ছাড়া আর কিছু অতিরিক্ত ব্যাবস্থা নেয়া হয়। যেমন ব্রিজে বেশি লোকজন রাখা , জাহাজের সামনে / পিছনে একজন করে লুক আউট দেয়া ইত্যাদি । তাছাড়া ফায়ার লাইন দিয়ে পানি মারা , জাহাজের চারদিকে ষ্টীম লাইন দিয়ে ষ্টীম স্প্রে করা ।

কিন্তু এশিয়ার দেশগুলো থেকে ইউরোপের যেতে হলে দুটি উপায় আছে একটি সরাসরি সোমালিয়ার উপকূল অতিক্রম করে অন্যটি উত্তামাশা অন্তরীপ বা কেপ অফ গুড হোপ হয়ে চলাচল করা । কিন্তু উত্তামাশা অন্তরীপ বা কেপ অফ গুড হোপ ঘুরে গেলে তেল খরচ বৃদ্ধি ছাড়া ও অতিরিক্ত দুই দিন সময় অপচয় হয় যেটা কোন শিপিং কোম্পানি চায় না । আর এ কারণেই জলদস্যুদের এড়ানোটা বেশ রকমের ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে শিপিং কোম্পানিগুলোর জন্য। আমি আগেই বলেছি সোমালিয়া উপকূলে প্রায় বিশটি দেশের নৌবহর আছে । এসব নৌবহর নেভাল কনভয়ের ব্যাবস্থা করে থাকে ।

একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী এসব কনভয় চলাচল করে । এদের কাজ হল অনেক গুল জাহাজ একত্রে পাহারা দিয়ে বিপদ সিমা পার করে দেয়া । এজন্য শিপিং কোম্পানিগুলোর বেশ ভাল পরিমাণে খরচ করতে হয় । একটি কনভয়ের নিউজ “The Republic of Korea's Navy has announced that in March 2011 they will execute convoys in accordance with the schedule below. In case of more than two hours delay, convoys are not guaranteed. Eastbound convoys, rendezvous position "A": 12 07 N - 044 11 E: 24 March, 0400Z Westbound convoys, rendezvous position "B": 14 54 N - 054 41 E: No westbound convoys are currently scheduled. Convoy speed The convoys' base speed is minimum 12 Knots. Ships should be able to maintain 12 knots throughout the transit. Joining instructions Merchant vessels that wish to join the ROK Naval escort task group need to submit their application directly to the ROK warship actually conducting the escort, and registered ships should establish good communications with the warship at least 24 hours prior to convoy start time. Furthermore please update the ship's position, course, speed, and ETA every 4 hours from 24 hours prior to convoy start time.” বিভিন্ন কনভয়ের নিউজ দেখে কোন কনভয়ে যোগ দিতে হবে কোম্পানি থেকে তা বলে দেয়া হয় । অনেক সময় কনভয় ছাড়াও পাওয়া যায় নেভির কমান্ড ।

৬জন কমান্ড প্রতিদিন ৩০ হাজার ইউ এস ডলারে ভাড়া পাওয়া যায় । ভাড়া পাওয়া যায় এজন্য বললাম কারন এটা রীতিমত একটা ব্যাবসায় পরিণত হয়ে গেছে । এই এলাকায় চলাচলের সময় রাডারে কোন সন্দেহমূলক কিছু দেখা গেল সাথে সাথে নেভিদের জানালে ওরা হেলিকপ্টার পাঠিয়ে চেক করে । কনভয় ছাড়াও নেভির জাহাজ গুলো নিয়মিত টহল দেয় । প্রায়ই গুলি করে জলদস্যুদের জাহাজ ডুবিয়ে দেয় ।

ওদের তারা করে সরিয়ে দেয়। দশ বার দিন আগে আমাদের কোম্পানির এন্টি পাইরেসি সেমিনারে যোগ দিয়ে ছিলাম । জানলাম নতুন ব্যাবস্থা হিসাবে প্রতিটি জাহাজে ওরা ফেন্সিং ব্যাবস্থা করছে । এটা হল জাহাজের চারদিকে তারকাটার মত থাকবে এবং তাতে সাপ্লাই দেয়া হবে হাই ভোল্টেজ । যাতে ছিনতাই কারীরা জাহাজে উঠতে না পারে ।

আমরা দাবি জানিয়ে ছিলাম জাহাজে কিছু অস্ত্র দিতে । কিন্তু আই এম ও নাকি পারমিশন দেয় না । ছিনতাই এড়াতে ঐসব রুটে চলাচল করে এমনসব জাহাজে নিয়মিত ড্রিল হয়। জলদস্যু আক্রমণ ঠেকানর জন্য সব কম্পনির নিজস্ব কিছু প্রতিরধের ব্যাবস্থা থাকে । থাকে জরুরী যোগাযোগ ব্যাবস্থা ।

নিয়মিত রিপোর্ট করতে হয়। প্রতিদিন কিছু না কিছু যোগ হয় । এসব এলাকাতে সাবাইকেই অতিরিক্ত সময় ডিউটি করতে হয় । তাছাড়া পরিবার পরিজন যদি জানতে পারে আপনি ঐ দিকে যাচ্ছেন । আর একটি বিপদ ।

প্রতিদিন কয়েকবার করে ফোন করতে হয়। কোন কোন জাহাজে ডামি ইউজ করা হয় । এমন ভাবে ডামি গুলো রাখা যাতে দূর থেকে মনে হয় নাবিকরা পাহারা দিচ্ছে । মূলত জলদস্যুদের ভঁয় দেখানই আমাদের প্রতিরোধের মূল মন্ত্র। ওরা যখন বুঝতে পারে কোন জাহাজে সবাই খুব সতর্ক আছে এবং দখল নেয়া খুব সহজ হবে না।

সাধারণত ঐসব জাহাজে আক্রমণ করে না। ওরা যানে জলদস্যুদের উপস্থিতি তের পেলেই জাহাজ থেকে রিপোর্ট করলে কোন না কোন নেভির জাহাজ চলে আসবে । আর একবার কোথাও রিপোর্ট করলে সাথে সাথে সব জাহাজে ঐ পজিশন চলে যায় এবং ঐ জায়গায় সবাই আর সতর্ক হয়। (চলবে) পাইরেটস অফ দা সোমালিয়া। ১ম পর্ব পাইরেটস অফ দা সোমালিয়া।

২য় পর্ব
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.