আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আগুনে পুড়ে গেলে করণীয়

সকালের স্নিগ্ধ বাতাস মনে দেয় শান্তি, দুপুরের সূর্যটা মিষ্টি করে হাসে, রাত্রের আকাশে চাদ মামা দেখা দেই আকাশটা তখনই সকলের চোখে পরে যাই......... শরীরের চামড়া ও অন্য স্থান পুড়ে যাওয়ার কারণ অনেক হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলঃ -আগুন -গরম পানি -গরম তেল -বিদ্যুৎ -রাসায়নিক পদার্থ : এসিড, ক্ষার ইত্যাদি -আভনিক রশ্মি বা রেডিয়েশন -বোমা বিস্ফোরণ তবে আমাদের দেশে আগুন ও আগুনজনিত ঘটনায় (গরম পানি, তেল ইত্যাদি) পুড়ে যাওয়ার ঘটনা অন্যগুলোর চেয়ে বেশি। পোড়ার খুব সহজলভ্য ও কার্যকরী চিকিৎসাব্যবস্থা হাতের নাগালে না থাকা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবে আমাদের দেশে পুড়ে মৃত্যুর হার বেশি। অথচ একটু সচেতন হলে অনেক বড় বিপদ থেকে নিজেকে এবং আক্রান্তকে রক্ষা করা যায়। পোড়ার ধরনঃ চামড়ায় পোড়ার গভীরতা, আক্রান্ত স্থানের ব্যাপ্তি ও ভয়াবহতার ওপর ভিত্তি করে পুড়ে যাওয়া বা বার্নকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়।

এ ভাগগুলোর ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয়। তাই প্রত্যেকেরই এ সম্পর্কিত ধারণা থাকা দরকার। যেমন- এক ডিগ্রি বার্ন বা পোড়াঃ যখন চামড়ার উপরিভাগের একটি স্তর (এপিডার্মিস) ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং নিচের লক্ষণ প্রকাশ পায় তখন এক ডিগ্রি বার্ন বলা হয়। লক্ষনঃ -চামড়া লাল হয়ে যাওয়া -সামান্য ফুলে যেতে পারে -ব্যথা হবে -অনেক সময় লাল না হয়ে গোলাপি বা হালকা গোলাপি রং ধারণ করতে পারে -ফোস্কাও পড়তে পারে কারণঃ -তীব্র রোদে বেশিক্ষণ থাকলে -দীর্ঘ সময় বা দীর্ঘদিন ধরে রোদে কাজ করলে বা থাকতে হলে -আগুনের পাশে কাজ করলে -রান্নার সময় আগুনের আঁচ বেশি লাগলে -ফুটন্ত পানি নয় কিন্তু বেশ গরম-এ রকম পানিতে শরীর পুড়লে চিকিৎসাঃ -আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা পানি ঢাললে বা বরফের সেঁক দিলে উপকার হয়। -ব্যথা বেশি হলে আক্রান্ত স্থানে ব্যথানাশক মলম বা ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হবে।

-ঠান্ডা পানিতে ভেজানো পরিষ্কার কাপড় আক্রান্ত স্থানে ব্রান্ডেজের মতো খানিকটা সময় বেঁধে রাখতে হয়। -নতুন করে যাতে আক্রান্ত স্থানে কোনো আঘাত বা ঘষার শিকার না হয় সেটা লক্ষ রাখতে হবে। সাধারণত এ জাতীয় পোড়া কোনো ক্ষতিকর প্রভাব বা দাগ ফেলা ছাড়াই এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে যাদের পেশাগত কারণে যেমন-রোদে কাজ করা বা বাবুর্চির কাজ করা থেকে এ জাতীয় বার্ন হয়, তাদের সতর্ক হয়ে কাজ করা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই। দুই ডিগ্রি বার্ন বা পোড়াঃ যখন চামড়ার উপরিভাগের দুটি স্তরের প্রথম স্তর (এপিডার্মিস) সম্পূর্ণভাবে এবং পরবর্তী স্তর (ডার্মিস) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন তাকে দুই ডিগ্রি পোড়া বা বার্ন বলে।

লক্ষণঃ -পুড়ে যাওয়া স্থান লাল হয়ে যায় -ফোসকা পড়বে -প্রচণ্ড ব্যথা হবে -অনেকখানি ফুলে যাবে -পুড়ে যাওয়া স্থান থেকে পানির মতো রস বের হতে পারে বা ভেজা ভেজা থাকতে পারে কারণঃ -সাধারণত গরম পানি বা গরম তরকারি জাতীয় কিছু পড়লে এ ধরনের ক্ষত তৈরি হয় -কাপড়ে আগুন লেগে গেলে এবং তা দ্রুত নিভিয়ে ফেললে (সাধারণত রান্নার সময়) -মোমের গরম তরল অংশ সরাসরি চামড়ায় পড়লে -আগুনে উত্তপ্ত কড়াই বা এ জাতীয় কিছু খালি হাতে ধরলে বা শরীরের কোনো খোলা স্থানে এগুলোর স্পর্শ লাগলে। চিকিৎসাঃ -আক্রান্ত স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঠান্ডা পানি ঢালুন। -সরাসরি বরফ আক্রান্ত স্থানে লাগাবেন না। -আক্রান্ত স্থানে সরাসরি ব্যথানাশক ওষুধ লাগাবেন না। -ডিম, পেস্ট ইত্যাদি লাগাবেন না।

-এ জাতীয় পোড়ার চিকিৎসা বাড়িতে নয়, হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে গিয়ে করাতে হয়। -উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ সেবন করলে অন্তত দুই সপ্তাহ লাগে ঘা শুকাতে। তিন ডিগ্রি বার্ন বা পোড়াঃ যখন চামড়ার উপরিভাগের দুটি স্তরই (এপিডার্মিস ও ডার্মিস) সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চামড়ার নিচে থাকা মাংসপেশি, রক্তনালি, স্নায়ু ইত্যাদিও আক্রান্ত হয় তখন এ জাতীয় পোড়াকে তিন ডিগ্রি পোড়া বা বার্ন বলে। লক্ষণঃ -আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায় -চামড়া পুড়ে শক্ত হয়ে যায় -স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভূত হয় না -আক্রান্ত স্থান অনেকখানি ফুলে যায় -আক্রান্ত স্থান থেকে পানির মতো রস বের নাও হতে পারে কারনঃ -সরাসরি আগুনে পুড়লে -বিদ্যুতায়িত হলে -ফুটন্ত পানি সরাসরি শরীরে পড়লে -ফুটন্ত তেল সরাসরি শরীরে ছিটকে এলে বা পড়লে -আগুনে উত্তপ্ত ধাতব কড়াই, পাতিল বা তাওয়া শরীরে পড়লে চিকিৎসাঃ -আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব আগুন বা গরম পদার্থ থেকে সরিয়ে আনতে হবে। -দ্রুত ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে, ঠান্ডা পানি না পেলে সাধারণ তাপমাত্রার পানি ঢালতে হবে।

সম্ভব হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ট্যাপের পানির নিচে বসিয়ে দিতে হবে। -পুড়ে যাওয়া কাপড় খুলে দিতে হবে। -আক্রান্ত অংশ পরিষ্কার কাপড় বা গজ ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। -হাত-পায়ের আঙুল পুড়ে গেলে তা আলাদাভাবে ব্যান্ডেজ করতে হবে। অন্যথায় একটার সঙ্গে অন্যটা জোড়া লেগে যেতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে ছাড়ানো কঠিন হবে।

-আক্রান্ত স্থান একটু উঁচুতে রাখতে হবে। -আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান থাকলে এবং মুখে খাওয়ার মতো অবস্থা থাকলে পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে বা শরবত করে খেতে দিন, স্যালাইন বা ডাবের পানি এমনকি সাধারণ খাওয়ার পানিও পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করতে দিন। -অবশ্যই ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। মনে রাখতে হবে, এ জাতীয় পোড়ায় সাধারণত পোড়া স্থানের অপারেশন বা স্কিন গ্রাফট দরকার হয়, তাই প্রথম থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া জরুরি। অন্যান্য পোড়াঃ বিদ্যুায়িত হয়ে পোড়াঃ সাধারণত অধিক ভোল্টেজের বিদ্যুৎ যখন শরীরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন কোষগুলো বার্ন হয় বা পুড়ে যায়।

অধিক সময় ধরে এ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে পুরো শরীর কালো কয়লার মতো হয়ে যায়। এ রকম হলে অবশ্যই মৃত্যু ঘটে। তবে অল্প সময় বিদ্যুতায়িত হলে দুই ডিগ্রি বা তিন ডিগ্রি পোড়ার সৃষ্টি হয়। বিদ্যুতায়িত হয়ে পোড়া অনেক সময় খালি চোখে দেখা যায় না। এমন হলে অবহেলা করা যাবে না।

অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিদ্যুতায়িত হলে হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে, কিডনির সমস্যা হতে পারে এমনকি বন্ধ্যাত্বও হতে পারে। রাসায়নিক পদার্থে পোড়াঃ এসিডের মতো রাসায়নিক পদার্থ চামড়ায় ভয়াবহ ক্ষত সৃষ্টি করে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। সাধারণত রাসায়নিক পদার্থে যখন পোড়ে তখন তা তিন ডিগ্রি বার্ন হয় এবং রক্তনালি, মাংসপেশি, স্নায়ু নষ্ট করে দেয়। তবে এ জাতীয় পদার্থ দেহের সংস্পর্শে আসামাত্র পানি ঢাললে বা পানিতে নামলে বা ট্যাপের নিচে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে রাসায়নিক পদার্থ ধুয়ে ফেললে ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনা যায়।

মেনে চলুন সাধারণ কিছু সতর্কতাঃ -সহজে খুলে ফেলা যায় এমন পোশাক রান্নার সময় ব্যবহার করুন। কিন্তু ঢিলেঢালা কাপড় পরবেন না। -ওড়না বা শাড়ি সাবধানে রাখুন। -মাটির চুলার তিনপাশে অন্তত আড়াই ফুট দেয়াল তুলে দিন। -ঢাকনা বা চিমনিযুক্ত বাতি ব্যবহার করুন।

এমনকি মোমবাতি ব্যবহারের সময়ও সতর্ক থাকুন। -রান্না শেষে গ্যাসের চুলা বন্ধ করুন, লাকড়ির চুলা হলে ঠান্ডা ছাই ঢেলে নিশ্চিত হোন আগুন নিভে গেছে। -মশার কয়েল এমন স্থানে রাখুন, যেখান থেকে অন্য কিছুতে আগুন লাগার কোনো ঝুঁকি থাকবে না। -গরম তরকারি ও ফুটন্ত পানি নাড়াচাড়ার সময় সতর্ক থাকুন। এগুলো অবশ্যই শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।

-কেউ বিদ্যুতায়িত হলে তাকে খালি পায়ে, খালি হাতে জড়িয়ে ধরে ছাড়াবেন না। অবশ্যই শুকনো ও অধাতব কোনো কিছু দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনুন। সম্ভব হলে মেইন সুইচ বন্ধ করে তারপর তাকে ধরুন। -গরম পানি পাতিলে করে নয়, বালতিতে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিন। -ধূমপান শেষে বিড়ি-সিগারেটের বাদ দেয়া অংশের আগুন নিভিয়ে ফেলুন।

যেখানে-সেখানে তা ফেলবেন না। মশারির ভেতর বা খাটে শুয়ে শুয়ে ধূমপান করবেন না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।