আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অমোঘ অন্তর্ঘাত

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা । প্রচন্ড গরমেও বাসের মধ্যে মানুষ প্রায় গাদাগাদি করে যে যার মত বসে আছে । সারা দিনের তেতে থাকা আবহাওয়ার ছোঁয়া বাসের যাত্রীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে । প্রায় প্রত্যেকেই কিছু না কিছু নিয়ে উত্তপ্ত এবং একে অন্যের সাথে কলহরত । কেউ তার স্ত্রীকে ব্যাগের অনেক ভেতরে পানির বোতল রেখেছে বলে ঝাড়ি দিচ্ছে তো কেউ তার পাশের সিটের যাত্রীর সাথে রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে প্রবল তর্ক জুড়ে দিয়েছে ।

হাসিনা বেশী নিষ্ঠুর নাকি খালেদা , সাদ্দাম হোসেন মুসলমানদের বাপের বেটা নাকি লাদেন এসব নিয়ে দেদারসে চলছে । একেকজনের গলার স্বর বহু আগেই সভ্যতার মাত্রা পার হয়ে গেলেও কেউ ভ্রুক্ষেপ করছেনা । কেবল একজন মানুষকে এসবের কিছুই স্পর্শ করছেনা । সে যাত্রাপথের প্রাক্কালে নিজেকে শান্ত রাখবার প্রাণপন যেই প্রতিজ্ঞা করেছিলো সেটা মেনে চলছে । চারপাশের হইহল্লা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে মানুষটা নিজের অতীতের স্মৃতি রিওয়াইন্ড করা শুরু করলো ।

শৈশবের ঘুড়ি ওড়ানোর বয়স থেকে শুরু করে অনেকদূর পেরিয়ে নিজের মৃতা স্ত্রীর অভাব অনুভূত হবার সময় যখন লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তখন বাসের হেলপার মনে করিয়ে দিলো গন্তব্যে চলে এসেছেন । সাথে বেশি কিছু ছিলোনা বলে রক্ষা । এই গরমে ভারি কিছু নিয়ে দীর্ঘ সময় যাবত লম্বা পথ হেঁটে পাড়ি দেওয়াটা আর পেরে উঠেন না । বার্ধক্যের সাথে অনবরত যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে রণে ক্ষান্ত দিয়েছেন । হাতের ছোট ব্যাগটি নিয়ে চিরচেনা পথটিকেও বহুদিন পর অচেনা মনে হতে লাগলো প্রৌড় মানুষটির ।

অথচ খুব বেশী কিছু বদলেছে এমন বলা যাবেনা । রাস্তার কিছু অংশ পাকা হওয়া ছাড়া আর তেমন বেশী কিছু বদলায়নি । সামনে ডান দিকেই জলিল সাহেবের বাড়ির সেই চেনা হলুদ গেট । একবার ভাবলেন নিজের ঠিকানায় পৌঁছাবার আগে দেখা করে যাবেন । তাকে এতোদিন পর দেখে জলিল সাহেব কি বলবেন , কি করবেন সেটা এখনো নিশ্চিত বলে দিতে পারেন তিনি ।

মানুষ সময়ের ফেরে বদলায় কিন্তু পুরনো ভালোলাগার মুহূর্ত অথবা ভালোলাগার মানুষগুলোর মুখোমুখি হয়ে বেমালুম পরিবর্তিত রুপকে ফেলে দেয় । প্রৌড় মানুষটি নিজের পুরনো এবং বর্তমান হতে মৃত্যু অবধি সর্বশেষ ঠিকানার সামনে এসে দাঁড়ান আর বুক ভরে বাতাস নেন । দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ থাকা ঘরের দরজা খুলে যায় । ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই সম্পূর্ণ বিপরীতার্থক দুই প্রশ্নের আবির্ভাবে তিনি ক্ষতবিক্ষত হন । গ্ল্যামারাস , আপরাইজিং সোসাইটির স্ট্যাবলিশমেন্টের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকা ভুঁইফোড় ছেলের কাছে ৫ বছর যাবত ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাখাত এবং আনরিকগনাইজড হবার গ্লানি কতখানি বিষাদে পরিপূর্ণ ? নিজের সবচেয়ে প্রিয় ঘরটির সাহচর্যে জীবনের শেষের দিনগুলো কাটিয়ে দেওয়ার আনন্দ কতখানি স্বচ্ছ ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.