আমার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন অনেকেই আছে শিক্ষক। বেশীরভাগই ছাপোষা মধ্যবিত্ত, দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে রাও করে না। আর বাকিরা এলিট শ্রেণীর শিক্ষক। শিক্ষকতা ও গবেষণা করলে বিদেশে ভালোভাবে দুধে-ভাতে থাকা যাবে, তাই তারা শিক্ষক ও গবেষক। এদের মাঝে ব্যতিক্রম ছাড়া বাকিরা আঁতেল মার্কা মন্তব্য ছাড়া কখনো প্রতিবাদের পও উচ্চারণ করে না।
ফলাফল আমাদের মেরুদন্ডহীন জাতিতে রুপান্তর। বুঝলেন না? শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা না থাকলেতো মেরুদন্ডহীন জাতিতে রুপান্তর বটেই। দাঁড়ান, দাঁড়ান। আপনাদেরকে অশিক্ষিত বলার আমার কোন ইচ্ছাই নেই।
আপনারা মেরুদন্ডহীন জাতি।
মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগে পুলিশের লাঠিপেটায় আহত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান রাতে তার বাড়ি ফেরার পথে মারা গেছেন। আজিজুর একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সুশীল , মুক্তিযুদ্ধের ব্যবসায়ী আর স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকারের আজিব আচরণ। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করিবার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আর, লাঠিপেটা করে মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক খুন! আমাদের মিডিয়াগুলোও অদ্ভুত। শিরোনামগুলো দেখুন। শিরোনাম দেখলেই বাস্তবতা বুঝতে পারবেন-
"আশ্বাসে শিক্ষকদের কর্মসূচি স্থগিত" [বিডিনিউজ২৪, রাত ৮টা ২২]
"সরকারের সমঝোতা প্রস্তাব প্রত্যাখান ধর্মঘটী শিক্ষকদের" [বাংলা নিউজ২৪, রাত ১০টা ২৭]
আর প্রথম আলোর মত নির্লজ্জ-বেহায়া প্রমাণ করতে চাইল, এইটা উনার নিজের দোষে মারা গেছেন। আজিজুর রহমানের স্ত্রী হাজরা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, "তাঁর স্বামী মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় শিক্ষকদের মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা ও গরম পানি নিক্ষেপের মধ্যে পড়েছিলেন। তবে তিনি লাঠিপেটায় আহত হননি।
পুলিশের মারমুখী অবস্থা দেখে দৌড় দেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ১০টায় তিনি বাসায় পৌঁছে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। " ঐক্য পরিষদের কো-চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মিয়া বলেন, মঙ্গলবার শাহবাগে এই শিক্ষক আহত হয়েছিলেন। প্রথম আলোর শেষ প্যারাটা দেখেন।
"মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার উদ্দেশ্যে মিছিল বের করেন শিক্ষকেরা। মিছিলটি শাহবাগে পৌঁছালে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ জলকামান থেকে গরম পানি ছোড়ে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। এরপর তাঁরা শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
" লাঠিপেটার কোন উল্লেখ পর্যন্ত নাই। প্রথম আলো যেন গোয়েবলস চালায়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায়-শতভাগ ভর্তির হার নিয়ে আজ সরকার যে গর্ব করে তার নেপথ্যে এই ২০০৬১টি বিদ্যালয়ের বিপুল অবদান আছে। এই অবদানেরই বুঝি স্বীকৃতি পেলেন শিক্ষক আজিজুর রহমান! একটা ন্যূনতম সচ্ছল ও সম্মানজনক জীবনযাপনের প্রয়োজনে চাকুরি জাতীয়করণের দাবি করেছিলেন আজিজুর রহমান ও তাঁর সহকর্মীরা। কিন্তু পুলিশি বর্বরতায় আজিজুর রহমানকে শেষপর্যন্ত মৃত্যুবরণ করতে হলো।
দধীচীরূপী শিক্ষকের হাঁড়ের তৈরি মানুষরূপী যে দানব,তা-ই একদিন ফ্রাংকেনস্টাইন হবে। তোমারে বধিবে যে, গোকূলে বাড়িছে সে।
সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পণ্ডিতমশাই’ গল্প আমাদের সবারই পড়া। গল্পের এক জায়গায় লেখক বলেন, ‘স্কুল ইন্সপেক্টরের তিন ঠেঙে কুকুরের পেছনে ব্যয় মাসে ৭৫ টাকা। আর বিদ্যালয়ের পণ্ডিতমশাইয়ের মাসিক বেতন ২৫ টাকা।
তাহলে পণ্ডিতমশাইয়ের বেতন ইন্সপেক্টরের কুকুরের কয় ঠ্যাংয়ের সমান?
আমাদের দেশের দালালেরা প্রতিবেশী দেশের কাছে ভদ্রতা করে ট্রানজিট ফি চায়না। আইপিএলে বিদেশ থেকে নাচনেওয়ালী এনে নাচায়। আর, শিক্ষকেরা গরু চরান পেটের তাগিদে।
'মূর্খের মত একবার পণ্ডিত মশায়ের মুখের দিকে মিটমিটিয়ে তাকিয়েছিলুম। দেখি, সে মুখ লজ্জা, তিক্ততা, ঘৃণায় বিকৃত হয়ে গিয়েছে।
ক্লাসের সব ছেলে বুঝতে পেরেছে, কেউ বাদ যায় নি, পণ্ডিতমশাই আত্ম-অবমাননার কি নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে মাখছেন, আমাদের সাক্ষী রেখে। '
প্রয়াত আজিজুর রহমানের দাবিই আমার দাবি, সকল রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকুরি জাতীয়করণ করা হোক। তাঁদের বেতন বাড়ানো হোক। তাঁদের একটা সচ্ছল ও সম্মানজনক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।