আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! মুরগীর মাংসের টেষ্ট নাকি ঠিক সময় লবন দেওয়ার উপর নির্ভর করে । মা বলে মাংস কষানোর ঠিক আগে লবন দিতে হয় । কিন্তু এই একটা কাজই আমি ঠিক মত পারি না । ইতি মধ্যে দুইবার লবন দেওয়া হয়ে গেছে তবুও আমার কাছে মনে হচ্ছে যে লবন মনে হয় ঠিক মত হয়নি । তৃতীয় বার লবন দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে ।
মাংসে আর কতটুকু লবন দিবো এই যখন ভাবছি তখনই ডোরবেলটা বেজে উঠল ।
এই সময়ে কে এল ? কারো তো আসার কথা না । আর ছুটির দিনে মানুষ জন ঠিক আমার বাড়ির দিকে পা মাড়ায় না । কারন তারা খুব ভাল করে জানে ছুটির দিকে আমার একটু রান্নার বাতিক আছে । আর আমার রান্না যে একবার খেয়েছে সে দ্বিতীয় বাড় আর এদিকে পা দেয় নি ।
তাহলে কে এল ?
মনটা একটু খুশি হল । যাক, কেউ তো এসেছে ! যেই আসুক, তাকে দুপুরে না খাওয়িয়ে ছাড়ছি না ।
আগুন টা একটু কমিয়ে দিয়ে দরজা খুলতে গেলাম । দরজা খুলে খানিকটা চমকালাম । নিশি দাড়িয়ে আছে ।
হালকা নীল রংয়ের একটা শাড়ি পরা । মুখে খানিকটা লজ্জা মিশ্রত হাসি ।
খানিকটা লজ্জিত হয়েই বলল
-সরি খবর না দিয়ে চলে এলাম । আই হোপ ইউ ডোন্ট মাইন্ড ।
-না ঠিক আছে ।
আমার অবাক ভাব টা তখনও কাটেনি । নিশির এখন এখানে আসার কথা না । কোন ভাবেই না । তাহলে কেন এল ।
আমি হাসলাম ।
বললাম
-আসুন । আামর ঠিকানা পেয়েছেন কোথায় ?
-চেষ্টা করলে কি না পাওয়া যায় !
এই কথাটও আমি ঠিক বুঝলাম না । আমি এমন কেউ না যে আমার ঠিকানা খোজার জন্য চেষ্টা করতে হবে ।
নিশি ঘরের ভিতর ঢুকলো । এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলল
-একানে একা থাকেন ?
-হুম ।
একাই !
হায় হায় আমার না চুলায় মুরগি !! আমি নিশিকে বললাম
-প্লিজ একটু বসুন । রান্না চড়িয়েছি তো !
-রান্না ?? আপনি নিজে রান্না করেন ?
নিশি খানিকটা অবাক হওয়ার কন্ঠে বলল ।
-প্রতি দিন না । এই ছুটির দিন গুলোতে নিজেই রান্না করে খাই ।
-আমি আসি আপনার সাথে ? কি রান্না করছেন একটু দেখি ??
-আসুন ।
আমি ওকে নিয়ে রান্না ঘরে নিয়ে এলাম ।
আবার সেই পরীক্ষা । লবন নিয়ে খানিকটা ইতস্তঃ করতে দেখে নিশি হেসে উঠল । বলল
-আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি লবনটা দেখে দেই ?
আমি খুশি হই ।
নিশি কি চমৎকার ভাবে লবনটা দেখে দিল ।
আমার নিশির এই লবন টেষ্ট করার দৃশ্যটা দেখে কেন জানি খারাপ লাগল । আমি যদি ইচ্ছা করতাম তাহলে এরকমটা প্রতিদিন হতে পারতো !!
লবন টেষ্ট করার পর বলল
-আপনি তো খুব সুন্দর রান্না করেন ! বেশ স্বাধ হয়েছে । আমি কিন্তু দুপুরে না খেয়ে যাবো না ।
বলেই নিশি বাচ্চা মেয়েদের মত হেসে উঠল ।
নিশির কথা টা শুনে আমার মনটা ভাল হয়ে গেল ।
নিশি কট সহজ ভাবেই না আমার সাথে আমার সাথে কথা বলছে । কিন্তু কেন জানি না আমি খুব বেশি সহজ হতে পারছি না । পারার কথাও না ।
নিশির সাথে আমার পরিচয় হয় পারিবারিক ভাবেই । আমার জন্য তখন মেয়ে দেখা শুরু হয়েছে ।
বলতে গেলে নিশিই ছিল প্রথম । এবং সত্য কথা বলতে কি নিশিকে আমাদের সবারই খুব পছন্দ হয়েছিল । এমন কি আমারও । আংটি পড়ানোও হয়ে গিয়েছিল । যেদিন বিয়ের কথা বার্তা পাকা করতে যাবে ঠিক সেদিনই শোনা যায় যে নিশির নাকি আগে একটা বিয়ে হয়ে ছিল ।
এই কথা শোনার পর খোজ খবর লাগানো হয় । সত্যি খবরটা বের হয়ে গেল । সত্যিই নিশির আগে একটা বিয়ে হয়ে ছিল । ডিভোর্সও হয়ে গেছে । তারপর আর এগোই নি ।
ওখানেই থেমে গিয়ে ছিল সব কিছু ।
আজ তাও প্রায় মাস তিনেক আগের কথা । এতো দিন পর নিশি আমার বাসায় এসে হাজির হল । ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না ।
রান্নাবান্নার পর আরেকটা জিনিস আমাকে খানিকটা অবাক করল যে নিশি পুরো ফ্লাট টা ঘুরে ঘুরে দেখছিল ।
কোথাও কোন জিনিস এলোমেলো থাকলে তা গুছিয়ে রাখছিল । যেন ও নিজের নিজের ঘর গোছাচ্ছে । এটা আমাকে আরো খানিকটা অবাক করলো ।
সত্যিই নিশি দুপুর পর্যন্ত রয়ে গেল । দুপুরে খাবার সময় ও নিজেই নিজেই আামকে সব কিছু এগিয়ে দিচ্ছিল ।
একসাথে যখন খেতে বসলাম, নিজের কাছে মনে হচ্ছিল যেন নিশি সত্যিই আমার বউ , স্বামী স্ত্রী একসাথে খেতে বসেছে ।
খাওয়ার সময় ও টুকটাক কথা বলছিল । হাসছিল ।
হটাৎ নিশি কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেল । বলল
-এরকম একটা সময় আমদের জীবনে সত্যি সত্যিই আসতে পারতো, তাই না ?
আমি কোন কথা বললাম না ।
আসলে আমর কোন কিছু বলার ছিল না ।
নিশি আবার বলল
-আামর ঐ লোকটার সাথে বিয়ে হয়েছিল , এটা আমার তোমার কাছে লুকানো ঠিক হয় নি । আমি কেন লুকিয়ে ছিলাম জানো, তোমাকে হারানোর ভয়ে ! আমার ভয় ছিল তুমি জানলে হয়তো তুমি আর আামকে বিয়ে করটে চাইবে না ।
নিশি চুপ করলো খানিক্ষন । আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ।
বিয়েটা ভাঙ্গার পরও আমি নিশির সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম । কিন্তু কি এক কারনে নিশি নিজেই আমার সাথে দেখা করে নি । জানি না কি কারন ছিল । তবে আমি ঠিকই ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম । এ নিয়ে আমার পরিবারে সাথে আমার বেশ মনমানিল্য হয় ।
তাদের একই কথা, দুনিয়াই এতো মেয়ে থাকতে একটা বিয়ে হওয়া মেয়ে বিয়ে করা কি দরকার । কিন্তু আমার মন তখন পুরপুরিই নিশির উপর নিবদ্ । কারো কোন যু্ক্তিই আমার কান পর্যন্ত পৌছাবে না ।
নিশি আবার বলতে শুরু করলো
-জানো যে ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে হয়ে ছিল তাকে আমি কোন দিন সরাসরি দেখি নি । ছবি দেখেছিলাম ।
আর ফোনে কথা হয়েছিল কয়েক বার । বাবাই পাত্র ঠিক করে এনেছিল, নিজেই বিয়ে দিল আবার একদিন বাবা নিজেই আমার ডিভোর্স লেটার টা আমার হাতে ধরিয়ে দিল । জানো ঐ দিন আমার খুব বেশি খারাপ লাগে নি কিন্তু তোমার সাথে বিয়ে ভাঙ্গার পর আমার মন অনেক বেশি খারাপ হয়েছিল । অনেক বেশি খারাপ । মনে হত গলায় ওরনা পেচিয়ে মরে যাই ।
নিশির চোখে পানি দেখতে পেলাম । কিন্তু অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই ও সামলে নিলো । আমি বললাম
-একটা কথার জবাব দিবে ?
-বল ?
-ঐ সময় আমি যখন তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম , তুমি দেখা করলে না কেন?
-আমি জানি না কেন করলাম না । তবে ঐ সত্যটা লুকানোর জন্য নিজেকে ব্ড় ছোট মনে হচ্ছিল তোমার কাছে !
-তাহলে আজ কেন এলে ?
-তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল । আর যাবার আগে শেষ বারের মত তোমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছা হল ।
আর .....।
-যাবার আগে মানে ? কোথায় যাচ্ছ?
-বাইরে এমবিএ করার জন্য আামর একটা ফান্ডিং এসছে । আজ রাতে আমি চলে যাবো ।
আমি কিছু বলতে পারলাম না । কেবল মনে হল কোথাও যেন কি একটা শূন্যটা অনুভব হচ্ছে ।
নিশি আমাকে বা হাতটা তুলে দেখালো । বলল
-এটা চিনতে পারো ?
আমি তাকিয়ে দেখি আমর দেওয়া ঐ বিয়ের ? আংটিটা ।
নিশি বলল
-এটা আমি তোমার কাছে চেয়ে নিতে এসেছি । এটা আমার কাছে থাক ।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না ।
নিশি যখন চলে যাচ্ছিল আমি খুব চেষ্টা করছিলাম স্বাভাবিক থাকার । কিন্তু ঐ সময়ে ওর প্রতি যে আবেক সৃষ্টি হয়েছিল সেটা আমকে কিছুতেই স্বাভাবিক থাকতে দিচ্ছিল না ।
খুব চেষ্টা করছিলাম চোখ দিয়ে যেন পানি না পরে কিন্তু খনিকটা পানি বের হয়েই গেল । নিশি কেবল ঐ একফোটা পানি স্পর্শ করে বলল
-যে টুকু তোমার কাছ থেকে নিতে এসেছিলাম তার থাকে অনেক বেশি কিছু নিয়ে যাচ্ছি । তুমি ভাল থেকো ।
ও চলে গেল ।
আমি কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম । একবার মনে হল থামাই । ওকে যেতে না দিই কিন্তু সেই অধিকার কি আমার আছে ? নেই হয়তো । ঐ সময় যদি আর একটু জোর করতাম মা বাবা নিশ্চই মেনে নিত !!
বিষন্ন মন নিয়েই পুরো বিকেলটা কাটলো ।
রাতে না খেয়েই শুয়ে পরলাম । কিন্তু নিশি কে মন থেকে বের করতে পারলাম না কিছুতেই । আামর মনে হচ্ছে ওকে হয়তো আর ভুলতেই পারবো না কিছুতেই ।
রাত তিনটার দিকে আবার আমার ডোরবেলটা বেজে উঠল । সবে মাত্র ঘুম এসেছিল ।
বিরক্তি নিয়ে দরজা খলে দেখি..................
দেখি.............. নিশি দাড়িয়ে । এক গাদা ব্যাগ নিয়ে ।
প্রথমে ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি ।
নিশি কোথা থেকে আসবে এখন ?
কিন্তু ঘুমের রেশ কাটার পরও যখন দেখি নিশি দাড়িয়েই আছে তখন কেবল এই কথাটাই বললাম
-তুমি এখানে কেন?
-কি করবো আমার যাওয়া দেখে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে আাবম্ভ করলে, ছেড়ে যাই কিভাবে ??
-আমি কখন ভেউ ভেউ করে কাঁদলাম ?
-হয়েছে নাও । এখন ব্যাগ গুলা ধর ।
আমার খুব ঘুম পাচ্ছে । জানি না বাবা যখন জানতে পারবে আমি যাই নি তখন আমাকে কি করবে !!
নিশি ব্যাগ গুলা রেখেই ঘরে ঢুকে পড়ল ।
আমি এই মধ্য রাতে কুলির কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিলাম ....... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।