পৃথিবীর বাধা-এই দেহের ব্যাঘাতে/ হৃদয়ে বেদনা জমে;-স্বপনের হাতে/ আমি তাই/ আমারে তুলিয়া দিতে চাই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ঘটে যা তা সব সত্য নয়, কবি তব মনোভূমি রামের জনমস্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো। হুমায়ুন আহমেদ 'দেয়াল' উপন্যাসে যা লিখেছেন তা সম্পূর্ণই তাঁর নিজস্ব চেতনার ব্যাপার। তা তিনি লিখতেই পারেন। তবে তিনি কিছু কিছু জায়গায় ব্যর্থ হয়েছেন।
ঘাতকদের চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলতে গিয়ে তার নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায় নি। খল চরিত্র নির্মাণে নৈপুণ্য দেখতে পারেন নি তিনি। ঘাতকদের একজনকে তিনি (পাকি মেজর হত্যা করিয়ে) দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন ঠিকই কিন্তু ঘাতকের নৈতিক স্খলন, পশুত্ব, নিকৃষ্ট পাশব মানসিকতার স্বরূপ উদঘটনে চরম ব্যর্থ হয়েছেন। প্রথম আলোতে প্রকাশিত দুই অধ্যায় পড়ে মনে হল, লেখক উদ্ধৃত খল চরিত্রের প্রতি পাঠকের তীব্র ঘৃণা উদ্রেক না করিয়ে কিঞ্চিত করুণা সৃষ্টি করেছেন। যা ইতিহাস অনুসৃত নয়।
১৫ আগষ্টের বর্বর ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের প্রতি সামান্যতম আবেগ-অনুভূতি মানতাবাদী কোন মানুষের আছে বলে প্রতীতি হয় না। বাংলা সাহিত্যে সাজাহান, রক্তাক্ত প্রান্তর, রাজসিংহ প্রভৃতি ইতিহাস আশ্রিত রচনা ঘটনা ঘটার অনেক পড়ে লিখিত হয়েছে। তাই লেখকরা ইতিহাসের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পেরেছেন। আর তাই, মহাপ্লাবী একাত্তর নিয়ে এখনই শিল্পত্তীর্ণ সাহিত্য রচনার সময় আসেনি-এ কথা বলা যায়। তলস্তয়ের 'ওয়ার এন্ড পিস' এর মত শিল্পোত্তীর্ণ রচনার আশায় রইলাম।
হুমায়ূন আহমেদের ধ্বসে পড়া দেয়ালে নতুন দেয়াল একদিন গড়ে ওঠবেই-রবীন্দ্র নজরুলের দেশে তা অসম্ভাব্য নয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।