আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসলে কতটুকু শিখছে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম?

রৌদ্রভেজা পথিক... পারিবারিক কাজে ময়মনসিংহে গিয়েছিলাম এবং ছোট মামার বাসায় থাকা হয়েছে। আমার ছোট মামার দুই ছেলে মেয়ে। আমার এই মামাতো বোনটি বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। সে এ বছর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পেয়েছে। আর মামাতো ভাইটা বাসার কাছেই একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কেজিতে পড়ে।

তো মামাতো বোনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম ক্লাস শুরু হয় কয়টায়? সে বললো শুরু হয় সাড়ে বারোটায় (তাই মনে হয় বলেছিলো) আর ছুটি হয় বিকেল সাড়ে চারটায়। কিন্তু কোচিংয়ে পড়ে বলে সকাল সাড়ে আটটাতেই বের হয়ে যায়। ও বের হয়ে যাওয়ার পর ওর আকাঁআকিঁর খাতা নাড়াচাড়া করে দেখি সুন্দর করে আঁকা একটা ঝর্ণা কলমের ছবি। মামীকে বললাম ও তো খুব সুন্দর আঁকে। মামী বললেন ড্রইং টিচারের কাছে যায় তো তাই।

ওদের স্কুলের ড্রইং টিচার। মামাতো বোন ওদের প্রথম সেমিস্টারের সিলেবাসে কলম, অ আ ই ঈ ক খ অক্ষর, হাঁস এবং গ্রামের দৃশ্য আছে। এবং ওদের আকাঁআঁকির জন্য কোন বই নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। ওদের ড্রইং স্যার আঁকার প্রত্যেকটা বিষয়ের জন্য ২০০ টাকা করে নেন। আমি বললাম কলম দেখতে কেমন হয় তুমি তা জানো, অক্ষরের কথা বাদ দিলাম তুমি কী হাঁস দেখো নি? গ্রাম দেখতে কেমন হয় জানো না? আচ্ছা নিজে নিজে না পারলে ছবির কত বই আছে, কিনে নিয়ে আঁকা শেখার চেষ্টা তো করতে পারো।

ও বললো ওদের স্যার যেভাবে ঠিক যেভাবে শেখান সেভাবে না আঁকলে নম্বর কম দেন। দেখা গেলো একজন বাংলা, ইংরেজী, গণিত, সমাজ, বিজ্ঞান, ধর্ম সব বিষয়ে অনেক ভালো নম্বর পেলো কিন্তু ড্রইংয়ে কম নম্বর পেলে প্লেস পেছনে চলে যায়, তাই ড্রইংয়ের কোচিংয়েও যেতে হয়। আমি আর কিছুই বলার পেলাম না। মনে হতে লাগলো আমাদের নিজেদের কথা। আমি ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে চারু ও কারু কলায় ছবি আঁকতাম।

আমাদেরকে বোর্ডের বইয়ের ভেতর কিছু ছবি দেয়া হতো। সেরকম করে না আঁকতে পারলে কম নম্বর। প্রমাণ একমাত্র মামী বললেন স্কুলের ফলাফল নাকি কোচিংইয়ের উপরেই দাড়িয়ে আছে। প্রাইভেট যারা পড়ে স্কুলে তারাই ভালো করে। এজন্য প্রাইভেট পড়তে হয়ই।

আমি বলার আর কিছুই পেলাম না। আমার ছোট মামা কমবেতনের একটা চাকরি করেন যা দিয়ে উনি অনেক হিসেব নিকেশ করে উনার সংসার চালান। স্কুলের বেতন ৬ টাকা কিন্তু প্রাইভেট কোচিংয়ে ৬০০ টাকা দিয়ে পড়ানো হয়। বিদ্যাময়ী স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য মামা আমার বোনটিকে কোচিং, প্রাইভেট পড়িয়েছেন। তাই এখন তারও ধারণা যে কোচিং, প্রাইভেট পড়ানো ছাড়া পড়াশোনা ভালো হয় না।

এখন চতুর্থ শ্রেণী থেকে সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে গেছে। যে সৃজনশীল শিক্ষা চালুর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের ভেতর স্বকীয় সৃজনশীলতাকে বের করে আনা তাও এখন গাইড বইয়ের চক্করে পুঁথিগত জ্ঞানের ভাঙ্গা রেডিও রয়ে গেছে। বিভিন্ন প্রকাশনীর গুটিকয়েক গাইড বই লক্ষ লক্ষ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধার বিকাশকে অথর্ব করে রাখছে। সবচে বেশি খারাপ লাগলো আমার ছোট মামাতো ভাইটি যখন বললো সেও গাইড বই দিয়ে পড়বে যখন সামনের ক্লাসে উঠবে। আমি তাকে বলেছি, না তোমার গাইড বই লাগবে না।

তুমি গাইড বই ছাড়াই পড়াশোনা করতে পারবে। আমি এটা বোঝাতে পারি নি যে ক্লাসের ভেতরে প্লেসে থাকার প্রতিযোগীতায় থাকা মানে পড়াশোনায় ভালো করা না। ক্লাসে শিক্ষক নতুন কিছু পড়ালেও ছাত্র ছাত্রীরা মনযোগ দেয় না কোচিং বা প্রাইভেটে পড়ে নেবে বলে। আসলে আমরা কোথায় আছি? এতো ছোট বয়সে কোচিং, প্রাইভেট, গাইড বই আর শিক্ষকদের এমন সীমাবদ্ধ মানসিকতার প্রভাব পড়লে আমরা কী আশা করতে পারি? তবে কী কোচিং, প্রাইভেটের ওপর নির্ভর করেই সৃজনশীল শিক্ষা চলতে থাকবে? কীভাবে আমাদের প্রজন্ম সত্যিকার অর্থে শিক্ষিত হবে যেখানে জানার আগ্রহ তাকে শেখার দিকে টেনে নয়ে যাবে, যেভাবেই হোক পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার দিকে নয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.