আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিরোনামহীন গল্প-১

ইরা আর মিরা দুই পিচ্চি । টুইন ! অফিস থেকে ফিরেই এই পিচ্চি দুইটারে নিয়া খেলা শুরু করে দেয় সুমন । ক্যাডবেরি চকলেটের দারুন ভক্ত ইরা আর মিরা । প্রতিদিন চুপিচুপি ওদের হাতে ক্যাডবেরি তুলে দেয় সুমন ! তানিয়ার হাজারো বকাঝকা কোনদিনই কানে তোলে না সে । মেয়েদের দাঁত গুলো যে নষ্ট হচ্ছে সেদিকে খেয়াল আছে তোমার?! ...হোক ! হোক মানে ? ...আরে এই বয়সে চকলেট খাবে না, তো কখন খাবে ? যা ইচ্ছে করো! আমি আর এসবের মধ্যে নেই ।

...তুমি নেই মানে ?! মেয়ে কি একা আমার! চার বছর আগে ডাক্তার যখন বলেছিল, সুমন সাহেব আপনি দুইটা জমজ মেয়ের বাবা হচ্ছেন । সেদিন আকাশে উড়া শুরু করেছিল সুমন! এমনিতেই বাল্যকাল থেকে শখ ছিল মেয়ের বাপ হওয়ার! সেখানে টুইন বেবির কথা শুনে আনন্দ দেখে কে! তানিয়া অবশ্য প্রথমে ভয় পেয়েছিল শুনে । বাচ্চারা সুস্থ্যভাবে জন্ম নেবে কিনা । টুইন বাচ্চার দেখা শোনা ঠিক মতো করতে পারবে কিনা ! ডাক্তারের হিসাবকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ের সাত দিন আগেই জন্ম নিল ইরা আর মিরা। ২৮ জানুয়ারি...রাত তিনটায় ।

তানিয়ার পেইন যখন উঠে, সুমন তখন লেপ মুড়ি দিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । এই! এই ! উঠো...তানিয়ার ভয় জড়ানো ডাকে ধড়ফড়িয়ে উঠেছিল সুমন । অনেক ঝক্কি ঝামেলার পর হাসপাতালে পৌছে, সোজা অপারেশন থিয়েটারে । তানিয়া একা কিছুতেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকবে না...অনেক বুঝিয়ে রাজি করানো হয়েছিল তানিয়াকে । নার্স হাসি হাসি মুখে পিচ্চি দুইটারে যখন সুমনের কোলে তুলে দিল, চোখের পানি আর সামলে রাখতে পারল না সে ! ফুটফুটে চেহারার দুইটা এঞ্জেল তখন সুমনের কোলে!! এরপর মেয়েরা বাপ বলতে আর বাপ মেয়ে বলতে অজ্ঞান ।

অফিসে সুমনের সময় কাটতে চায় না । মন পড়ে থাকে বাসায় । দিনে দশ-পনেরো বার ফোন দিয়ে শুধু মেয়েরা কি করছে এখন ? এই একটাই প্রশ্ন শুধু । তানিয়া বিরক্ত । কিছুটা অভিমানও মেশানো থাকে ।

আগে ফোন দিয়ে বউয়ের খোজ নিত, এখন মেয়ের খোজ নেয় ! বউয়ের কথা মনেই থাকে না যেন! বাসায় দুই মেয়ে মিলে মায়ের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে । আজ এটা ভাঙছে, কাল জানালা দিয়ে ওটা ফেলে দিয়েছে, পাশের বাড়ির পিচ্চিকে মেরেছে! হাজারো অভিযোগ ! সুমন শুধু হাসে আর মেয়েদেরকে উৎসাহ দেয়! দেখি দেখি আম্মু জুতায় কাঁদা লেগে গেছে তোমার । মেয়ের জুতা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সুমন । কেমন আছ ?? অবনীর গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে গেল সুমন । তুমি ?! ...বললে না তো কেমন আছ? হ্যাঁ...ভাল আছি ।

তুমি ? ...আছি...ভালই... কতদিন পর দেখা! কবে ফিরলে আমেরিকা থেকে ? হাজবেন্ড...বাচ্চা-কাচ্চার কি খবর ? ...আছে সবাই ভাল...সপ্তাহ খানেক আগে ফিরলাম । তোমার মেয়ে গুলো অনেক কিউট হয়েছে । ওদের মায়ের মতো হয়েছে দেখতে । হা হা হা হা হা ! সেটাই তো ভরসা যে দেখতে আমার মতো হয়নি! হয়তো ওরা আরো কিউট হতে পারত! ...পুরনো ক্ষত স্থানে কিসের যেন আঁচড় অনুভব করল অবনী । তোমার বউ কেমন আছে ? সে আমার মেয়েদের জ্বালায় অস্থির থাকে সারাক্ষন!! দেশে আছো কতদিন ? ...আছি মাস খানেক ।

আজ আসছি...বাসায় এসো একদিন । আম্মুরা আন্টিকে বাই বলো । দুই মেয়ের দুই হাত ধরে সামনে এগিয়ে চলে সুমন । দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে থাকে অবনী । সেই সুমন! যাকে সে রিফিউজ করে দিয়েছিল অনেক আগে ।

প্রতি রাতেই কথা হতো । প্রেম বিয়ের কোন খবরই নাই, সেখানে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কথা বলত সুমন । একবার বক বক শুরু করলে থামতেই চাইত না! এতো বকতে পারত ছেলেটা! বাচ্চা-কাচ্চার পুরো আলোচনা জুড়ে থাকত মেয়ে বাচ্চা । দুজনের মেয়ে হলে কেমন হবে । মেয়ের নাক, মুখ, চোখ, গাল, চুল, ঠোট যদি অবনীর মতো হয় মেয়ে দেখতে কতটা কিউট হবে হ্যান-ত্যান! অবনী শুধু হাসত ।

আজ সত্যি সুমনকে অনেক সুখি মানুষ মনে হয় । মেয়ে গুলোকে নিয়ে অনেক সুখি । সেই মিসটেকটা যদি না করত হয়তো আজকের এই সুখের ভাগিদার সেও হতে পারত। সুখ ?! হাসি পায় আজকাল শব্দটা শুনলে । অবনী আর ভাবতে পারে না..... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।