ইরা আর মিরা দুই পিচ্চি ।
টুইন !
অফিস থেকে ফিরেই এই পিচ্চি দুইটারে নিয়া খেলা শুরু করে দেয় সুমন ।
ক্যাডবেরি চকলেটের দারুন ভক্ত ইরা আর মিরা ।
প্রতিদিন চুপিচুপি ওদের হাতে ক্যাডবেরি তুলে দেয় সুমন !
তানিয়ার হাজারো বকাঝকা কোনদিনই কানে তোলে না সে ।
মেয়েদের দাঁত গুলো যে নষ্ট হচ্ছে সেদিকে খেয়াল আছে তোমার?!
...হোক !
হোক মানে ?
...আরে এই বয়সে চকলেট খাবে না, তো কখন খাবে ?
যা ইচ্ছে করো! আমি আর এসবের মধ্যে নেই ।
...তুমি নেই মানে ?! মেয়ে কি একা আমার!
চার বছর আগে ডাক্তার যখন বলেছিল, সুমন সাহেব আপনি দুইটা জমজ মেয়ের বাবা হচ্ছেন ।
সেদিন আকাশে উড়া শুরু করেছিল সুমন!
এমনিতেই বাল্যকাল থেকে শখ ছিল মেয়ের বাপ হওয়ার!
সেখানে টুইন বেবির কথা শুনে আনন্দ দেখে কে!
তানিয়া অবশ্য প্রথমে ভয় পেয়েছিল শুনে ।
বাচ্চারা সুস্থ্যভাবে জন্ম নেবে কিনা ।
টুইন বাচ্চার দেখা শোনা ঠিক মতো করতে পারবে কিনা !
ডাক্তারের হিসাবকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ের সাত দিন আগেই জন্ম নিল ইরা আর মিরা।
২৮ জানুয়ারি...রাত তিনটায় ।
তানিয়ার পেইন যখন উঠে, সুমন তখন লেপ মুড়ি দিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ।
এই! এই ! উঠো...তানিয়ার ভয় জড়ানো ডাকে ধড়ফড়িয়ে উঠেছিল সুমন ।
অনেক ঝক্কি ঝামেলার পর হাসপাতালে পৌছে, সোজা অপারেশন থিয়েটারে ।
তানিয়া একা কিছুতেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকবে না...অনেক বুঝিয়ে রাজি করানো হয়েছিল তানিয়াকে ।
নার্স হাসি হাসি মুখে পিচ্চি দুইটারে যখন সুমনের কোলে তুলে দিল, চোখের পানি আর সামলে রাখতে পারল না সে !
ফুটফুটে চেহারার দুইটা এঞ্জেল তখন সুমনের কোলে!!
এরপর মেয়েরা বাপ বলতে আর বাপ মেয়ে বলতে অজ্ঞান ।
অফিসে সুমনের সময় কাটতে চায় না ।
মন পড়ে থাকে বাসায় ।
দিনে দশ-পনেরো বার ফোন দিয়ে শুধু মেয়েরা কি করছে এখন ?
এই একটাই প্রশ্ন শুধু ।
তানিয়া বিরক্ত ।
কিছুটা অভিমানও মেশানো থাকে ।
আগে ফোন দিয়ে বউয়ের খোজ নিত, এখন মেয়ের খোজ নেয় !
বউয়ের কথা মনেই থাকে না যেন!
বাসায় দুই মেয়ে মিলে মায়ের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে ।
আজ এটা ভাঙছে, কাল জানালা দিয়ে ওটা ফেলে দিয়েছে, পাশের বাড়ির পিচ্চিকে মেরেছে!
হাজারো অভিযোগ !
সুমন শুধু হাসে আর মেয়েদেরকে উৎসাহ দেয়!
দেখি দেখি আম্মু জুতায় কাঁদা লেগে গেছে তোমার ।
মেয়ের জুতা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সুমন ।
কেমন আছ ??
অবনীর গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে গেল সুমন ।
তুমি ?!
...বললে না তো কেমন আছ?
হ্যাঁ...ভাল আছি ।
তুমি ?
...আছি...ভালই...
কতদিন পর দেখা! কবে ফিরলে আমেরিকা থেকে ?
হাজবেন্ড...বাচ্চা-কাচ্চার কি খবর ?
...আছে সবাই ভাল...সপ্তাহ খানেক আগে ফিরলাম ।
তোমার মেয়ে গুলো অনেক কিউট হয়েছে ।
ওদের মায়ের মতো হয়েছে দেখতে ।
হা হা হা হা হা ! সেটাই তো ভরসা যে দেখতে আমার মতো হয়নি!
হয়তো ওরা আরো কিউট হতে পারত!
...পুরনো ক্ষত স্থানে কিসের যেন আঁচড় অনুভব করল অবনী ।
তোমার বউ কেমন আছে ?
সে আমার মেয়েদের জ্বালায় অস্থির থাকে সারাক্ষন!!
দেশে আছো কতদিন ?
...আছি মাস খানেক ।
আজ আসছি...বাসায় এসো একদিন ।
আম্মুরা আন্টিকে বাই বলো ।
দুই মেয়ের দুই হাত ধরে সামনে এগিয়ে চলে সুমন ।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে থাকে অবনী ।
সেই সুমন! যাকে সে রিফিউজ করে দিয়েছিল অনেক আগে ।
প্রতি রাতেই কথা হতো ।
প্রেম বিয়ের কোন খবরই নাই, সেখানে বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কথা বলত সুমন ।
একবার বক বক শুরু করলে থামতেই চাইত না!
এতো বকতে পারত ছেলেটা!
বাচ্চা-কাচ্চার পুরো আলোচনা জুড়ে থাকত মেয়ে বাচ্চা ।
দুজনের মেয়ে হলে কেমন হবে ।
মেয়ের নাক, মুখ, চোখ, গাল, চুল, ঠোট যদি অবনীর মতো হয় মেয়ে দেখতে কতটা কিউট হবে হ্যান-ত্যান!
অবনী শুধু হাসত ।
আজ সত্যি সুমনকে অনেক সুখি মানুষ মনে হয় ।
মেয়ে গুলোকে নিয়ে অনেক সুখি ।
সেই মিসটেকটা যদি না করত হয়তো আজকের এই সুখের ভাগিদার সেও হতে পারত।
সুখ ?!
হাসি পায় আজকাল শব্দটা শুনলে ।
অবনী আর ভাবতে পারে না..... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।