সুরা আল ইমরানের ৫৯ আয়াতে হযরত ঈসা (আসম্পর্কে আল্লাহ বলেন:¨আল্লাহর কাছে ঈসার উদাহরণ হচ্ছে আদমের অনুরুপ । তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা থেকে । এবং তারপর তাকে বলেছিলেন-হয়ে যাও,সংগে সংগে হয়ে গেলেন । ’’ পিতাবিহীন জন্মাবার দরুণ ইহুদীরা তার জন্মবিষয়ে নানা অপবাদ দিত । ( খ্রীষ্টানদের মধ্যেও ঈসার সঠিক পরিচয় নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছিল ।
) ঈসা অনন্য, তিনি পৃথিবীর অন্যান্য মানুষদের মত না । তার জন্ম, শিক্ষা, কাজ, অলৌকিক ঘটনা, এবং মৃত্যু—সবই অনন্য । তাই এতো বিস্ময়কর মানুষের পরিচয় নিয়ে বিতর্ক করা স্বাভাবিক । তিনি আগের ও পরের সকল নবীদের তুলনায় অনেক বেশী কেরামতী কাজ দেখিয়েছিলেন । আগেকার কিতাবে তার এই চিহ্নগুলো ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে ।
নবীদের কিতাবে বলা হয়েছে যে তাঁর আশ্চর্য কেরামতী কাজ দিয়ে আল্লাহ্র মসীহের চিনা যাবে, এবং এই চিহ্নের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে । একদিন হযরত ঈসা এবং তার সাহাবীগণ গালীল সাগরের মাঝখানে একটি ভীষণ ঝড়ের মধ্যে আটকে গেল । তার সাহাবীরা ভীষণ ভয় পেয়ে মনে করত যে নিশ্চয় তারা ডুবে যাবে । কিন্তু সাহাবীদের সামনে হযরত ঈসা ঠান্ডা ভাবে বাতাস ও সাগরকে ধমক দিলেন, এবং হঠাৎ করে সব কিছু খুব শান্ত হয়ে গেল । এতে সাহাবীরা আশ্চর্য হয়ে বললেন, "ইনি কি রকম লোক যে, বাতাস এবং সাগরও তাঁর কথা শোনে!” (মথি ৮:২৭) ।
আমরা যদি এই ঘটনা নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করি, তাহলে আমাদেরও একই প্রশ্ন হয় । অন্য একদিন ঈসা একটি নিষ্ফল গাছকে ধমক দিলেন এবং সেটা সরাসরি শুকিয়ে গেল (মথি ২১:১৮-১৯) । প্রকৃতির উপরে তার ক্ষমতার আরও উদাহরণ দেওয়া যায় ।
মানব জাতির মূল শত্রু মৃত্যুর উপরও তিনি তার ক্ষমতা প্রকাশ করেছিলেন । বিভিন্ন সময়ে তার হুকুমে একটা মরা মানুষ আবার জীবিত হয়ে উঠল ।
উদাহরণস্বরূপ ইউহোন্না ১১ অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে হযরত ঈসার বন্ধু লাসার হঠাৎ করে মারা গেলেন । যদি মসীহ্ লাসারের অসুখ সম্বন্ধে আগ থেকে জানতেন, তবুও লাসারের মারা যাওয়ার ও কবর দেওয়ার তিন দিন পরেই তিনি লাসারের গ্রামে গেলেন । সেখানে এসে ঈসা মসীহ্ সেই কবরের কাছে গিয়ে কবরের উপর যে পাথর ছিল তা সরিয়ে দিতে বলল । ( হিব্রু এবং আরবীতে (?) 'মসীহ্' কথাটির অর্থ ঈশ্বরের প্রতিনিধি। খৃষ্টানেরা হযরত ঈসার নামকে যিশুখৃষ্ট বলে।
গ্রীক শব্দ Christos এর অর্থ ও ঈশ্বরের প্রতিনিধি। ) তাতে লোকেরা প্রতিবাদ করে বলল যে চার দিন হল সে মারা গেছে বলে দুর্গন্ধ হবে । কিন্তু পাথর সরিয়ে দেওয়া হল এবং ঈসা জোরে ডাক দিয়ে বললেন, "লাসার, বের হয়ে এস"। সবাই আশ্চর্য হয়ে দেখল যিনি মারা গিয়েছিলেন সেই লাসার কবরের কাপড় পরে জীবিত এবং সুস্থ অবস্থায় কবর থেকে বের হয়ে আসলেন । ঈসা মসীহ্ বলেছিলেন, “আমিই দুনিয়ার নূর ।
যে আমার পথে চলে সে কখনও অন্ধকারে পা ফেলবে না, বরং জীবনের নূর পাবে” (ইউহোন্না ৮:১২) । মূলত ঈসা মসীহ্ এখানে বলছে যে আল্লাহ্র পথে কেউ জীবন যাপন করতে চাইলে তাঁর শিক্ষা অনুসরণ করতে হবে । এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, খেজুর গাছের গোড়া ধরে নাড়া দেওয়া কখনোই সম্ভব নয় । বিশেষ করে একজন সদ্য প্রসূত সন্তানের মায়ের পক্ষে । এর মধ্যে এ বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে যে, নেকীর কাজে আল্লাহর উপরে ভরসা করে বান্দাকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে ।
যত সামান্যই হৌক কাজ করতে হবে। আল্লাহ তাতেই বরকত দিবেন ।
খ্রিস্ট ও ইসলাম ধর্মে প্রচলিত একটি বিশ্বাস । এই মত অনুসারে, মেরি কুমারী অবস্থাতেই অলৌকিক উপায়ে যিশুকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন । যিশুকে ঈসা (আঃ) এবং মেরীকে মরিয়ম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ।
মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে ঈসা (আঃ) অর্থাৎ খ্রিস্টানদের যিশু আল্লাহ্র প্রেরতি পুরুষ বা রাসুল । কুরআনে তাঁকে মাতৃপরিচয়ে অর্থাৎ "মরিয়ম-পুত্র ঈসা" (ঈসা ইবনে মারিয়াম) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে । ঈসা বিন মারিয়াম এই নামটি কুরআনে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে । খৃষ্টান ধর্ম শুরু হয়েছিল যীশুর মৃত্যুর অনেক পরে , তার অনুসারীদের দমনের লক্ষ্যে তাদের মাঝে পল ও আনানিয়াস কর্তৃক বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে । যীশুর একমাত্র লক্ষ ছিল রাজনৈতিক , ইহুদীদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা , ধর্ম প্রচার নয় ।
যিশুর শক্তির উৎস ছিলো তাঁর ধ্যান, তাঁর প্রার্থনা । যে ধ্যানে তিনি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতেন । যে প্রার্থনা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, প্রার্থনায় যা কিছু তোমরা চাও বিশ্বাস করবে তা পেয়েছ, তাহলে তা-ই পাবে । সারাদিন ধরে ভক্ত-শিষ্য-অভ্যাগতদের সাথে সময় কাটানোর পর সন্ধ্যাবেলা খানিকটা নির্জনে গিয়ে তিনি প্রার্থনায় নিমগ্ন হতেন, ভুলে যেতেন সমস্ত ক্ষুধা-ক্লান্তি-অবসাদ । অন্যদেরকেও তিনি বলতেন, অনেক কাজ করেছো, এখন ধ্যান কর ।
নিজেকে পর্যালোচনা কর, ভুলগুলো খুঁজে বের কর, মনের পর্দায় নিজেকে দাঁড় করাও, জীবন পরিবর্তন কর । ( আমি মনে করি, ধ্যান-মেডিটেশন বা রিফ্লেকশন- যে নামেই বলি, ধ্যানের পথেই আমাদের মুক্তি । কারণ ধ্যান আধ্যাত্মিকতার দ্বার উন্মুক্ত করে আর আধ্যাত্মিকতার ফসল হলো শান্তি সমপ্রীতি সমৃদ্ধি । কারণ ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্ট- কোনো ধর্মই সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না, অনৈতিকতাকে সমর্থন করে না, অশান্তিকে সমর্থন করে না । )
যিশুর সমসাময়িককালের এমন কোনো দলিল আজও পাওয়া যায় নি, যাতে যিশুর অস্তিত্বের কোনো উল্লেখ আছে ।
ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাসবিদ ও অন্যান্য ধর্মের (যেমন ইহুদি ধর্ম ) অনুসারীগণ যিশুকে একজন সাধারণ মানুষ বলে মনে করেন, এমনকি অনেকে মনে করেন যিশু বলে আসলে কেউ কখনো ছিলো না । ( একসময় মানুষ মানুষ হয়ে জন্মাতো, তার পরিচয় হত সে মানুষ, মানুষ আর শুধুই মানুষ । সহজ-সরল, সুন্দর, বিশুদ্ধ সুন্দর প্রকৃত মানুষ । ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় গোত্র, দন্ধ, বংশ, জাত-পাত, দেব-দেবী, বার্তাবাহক, ইশ্বর, ধর্ম, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি । এখন মানুষ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ইত্যাদি হয়ে জন্মায় ।
) মারিয়ামকে খেজুর গাছের কান্ড ধরে নাড়া দিতে বলা হয়েছে, যাতে সুপক্ক খেজুর নীচে পতিত হয় । এটাতে বুঝা যায় যে, ওটা ছিল তখন খেজুর পাকার মৌসুম অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল। আর খৃষ্টানরা কথিত যীশু খৃষ্টের জন্মদিন তথা তাদের ভাষায় X-mas Day বা বড় দিন উৎসব পালন করে থাকে শীতকালে ২৫শে ডিসেম্বর তারিখে। অথচ এর কোন ভিত্তি তাদের কাছে নেই । যেমন কোন ভিত্তি নেই মুসলমানদের কাছে ১২ই রবীউল আউয়াল একই তারিখে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালনের ।
অথচ জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী রাসূলের জন্মদিবস ছিল ৯ই রবীউল আউয়াল সোমবার ও মৃত্যুর তারিখ ছিল ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার ।
ঈশ্বর মানুষের কল্পনার সৃষ্টি । মানুষ ঈশ্বরকে নিজের মত কল্পনা করে- ফলে মনে করে মানুষের সকল বৈশিষ্ট্য যেমন খুশি হওয়া, রাগ করা, সৃষ্টি হিসাবে মানুষের খোঁজখবর নেয়া ইত্যাদি মনুষ্যসুলভ বৈশিষ্ট্য তার রয়েছে এবং সে ইবাদত করলেই তিনি খুশি হয়ে যাবেন । প্রকৃতপক্ষে যীশুর আদর্শ ছিল প্রেম, ভালবাসা ও ক্ষমার । তিনি মানুষের মন জয় করেছিলেন ক্ষমা ও ভালবাসার মাধ্যমে ।
আর্ত, পতিতের সেবা ও তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করাই ছিল তার জীবনের একমাত্র ব্রত । তিনি সর্বাগ্রে মানুষের মঙ্গল চেয়েছিলেন তাই তার ধর্ম প্রচারের পথে কোন রক্তপাত বা সংঘর্ষের ইতিহাস নেই । অন্ধ, খঞ্জ, আতুর ছুটে এসেছে তার কাছে। পরম বিশ্বাসে সমর্পিত করেছে নিজেকে প্রভুর পাদপদ্মে আর তাতেই আরগ্য লাভ হয়েছে তাদের । আজও বহু বিশ্বাসী তাদের জীবন সমস্যার সমাধান খুজে পাচ্ছেন প্রভু যীশুর আত্মজীবনী থেকে ।
এনরিকো নামে এক ভদ্রলোক যিনি ছিলেন নাস্তিক অর্থাৎ ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবান, যীশু কাউকে বিশ্বাস করতেন না । তার এই অবিশ্বাসের শিক্ষা দিতে অথবা অন্য যে কোন কারনে তার হল ক্যান্সার । ডাক্তার ঘোষনা করলেন মৃত্য নিশ্চিত । মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার মনে পরিবর্তন এলো । তিনি একদিন গীর্যায় গেলেন ।
ফাদার তার সব শুনে তাকে বললেন যীশুর করূনা ভীক্ষা করতে । তিনি জানালেন বাইবেলের কথা যেখানে যীশু বলেছেন “তোমরা বিপদের সময় আমার স্মরণ লও, আমি তোমাদের মুক্তি দেব, এতেই আমার মহিমা প্রকাশ হবে । ” এই বানী শোনার পর তিনি আরো গভীরভাবে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলেন । দিনে বিশবার তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেন। ঈশ্বর শেষ পর্যন্ত তার প্রার্থনা শুনেছিলেন ।
ঐ ভদ্রলোকের ভীতর থেকে তখন কে যেন বলে উঠলেন যীশুর কাছে আত্মসমর্পন করাই হল বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় । বাইবেলে আছে “তুমি ঈশ্বরের নিকট অবস্থান কর, তিনিও তোমার নিকট অবস্থান করবেন”।
যিশু যে অমিয় বাণী রেখে গিয়েছেন তার দ্বারা আমরা পারলৌকিক মুক্তিরপথ খুঁজে পাই এবং সংঘাত ও স্বার্থের দ্বন্দে লিপ্ত আজকের দুনিয়াকে মুক্তির পথদেখাতে পারে যিশুর সেই অমিয় বাণী ।
তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।