বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন] আপনারা হয়তো জেনে কিছুটা অবাক হবেন যে খ্রীস্টানদের একটি অন্যতম ফেরকা ইস্টার্ন অর্থডক্স চার্চ (মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে এর অনুসারীদের সংখ্যা সর্বাধিক) বড়দিন পালন করে ৭ই জানুয়ারী যা কিনা অধিকাংশ খ্রীস্টানদের দ্বারা পালিত ২৫ শে ডিসেম্বর থেকে ১৩ দিন পরে। এটা জানার পর আমার আগ্রহ বেড়ে গেল যীশু বা ঈসা মসীহ -র আসল জন্মদিন টা কবে সেটা জানার। আপনারা তো জানেনই যে মুসলিমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছে যে যীশু ২৫ শে ডিসেম্বরে জন্ম নেননি।
চলুন তাহলে আমরা ইতিহাসের আলোকে জানার চেস্টা করি যীশু বা ঈসা মসীহ্ -র আসল জন্মদিন কবে?
অধিকাংশ পন্ডিতদের মতে যীশু জন্মেছিলেন খ্রীস্ট পূর্ব ৬ থেকে ৪ (যীশুর জন্ম সন বলে প্রচলিত সনের পূর্বে আসল যীশু জন্ম নিয়েছিলেন) এর মধ্যে। অনেকে আবার কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন, তারা বলেন যীশুর জন্ম খ্রীস্ট পূর্ব ৭ থেকে ২ এর মধ্যে। মজার তাই না। ধারণা করা হয় ৪র্থ শতাব্দীতে পশ্চিমের খ্রীস্টান পন্ডিতেরা ২৫শে ডিসেম্বরকে প্রথম বড়দিন হিসেবে পালন করা শুরু করে। হুমমম সত্যিই চিন্তার বিষয়, যীশুর উর্ধ্ব আরোহণের প্রায় চারশ বছর পর "পশ্চিমা খ্রীস্টান পন্ডিতেরা" এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রিয় পাঠক এই ২৫ শে ডিসেম্বর প্রাচীন কাল থেকেই রোমান মূর্তিপূজারীদের কাছে একটি অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল। আর এরা যখন খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহণ করে তখন তাদের অনেক প্রাচীন প্রথা এই নতুন ধর্মের সাথে মিশিয়ে ফেলে। ২৫ শে ডিসেম্বরের মূল তাৎপর্য হলো সূর্যের বার্ষিক প্রত্যাবর্তন ঘটে এই দিনে। ২১ শে ডিসেম্বর সবচেয়ে ছোট দিন যা দক্ষিণায়ণ নামে পরিচিত আর ২৫ শে ডিসেম্বরেই বোঝা যেত যে দিন বড় হতে শুরু করেছে, সূর্যের আলো ফিরে আসছে। তাই প্রাচীন কাল থেকেই মূর্তিপূজারীরা বিশেষ করে যারা সূর্যের উপাসনা করতো তাদের কাছে ২৫ শে ডিসেম্বর ছিল এক মহা উৎসবের দিন।
পরবর্তীতে "খ্রীস্টান পন্ডিতেরা" এই দিনটিকেই বড়দিন হিসেবে পালন করা শুরু করে।
প্রিয় পাঠক, পবিত্র কুরআন ও বাইবেলে যীশুর জন্মতারিখ উল্লেখ নেই। যীশুর বারো জন সাহাবীদের মধ্য থেকে কেউই ২৫শে ডিসেম্বরকে যীশুর জন্মদিন বা বড়দিন হিসেবে পালন করেছিলেন এমন প্রমাণ নেই। এমনকি ১ম, ২য় ও ৩য় শতাব্দীর খ্রীস্টানরা বা খ্রীস্টান পন্ডিতেরা ২৫ শে ডিসেম্বর বা অন্য কোন দিনকে বড়দিন হিসেবে পালন করেন নি। তাদের কাছে যীশুর আদর্শ, তার শিক্ষাই মূল বিষয় ছিল, তার জন্মদিন নয়।
বাইবেলের কিছু আয়াত থেকে অনেকে ধারণা করেন যে, যীশুর জন্ম সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে। কিন্তু সত্যি কথা হলো, সবই শুধুমাত্র ধারণা।
তথ্যসূত্রঃ
en.wikipedia.org/wiki/Winter_solstice
en.wikipedia.org/wiki/Chronology_of_Jesus
www.christiananswers.net/christmas/mythsaboutchristmas.html
www.bbc.co.uk/religion/religions/christianity/subdivisions/easternorthodox_1.shtml
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।