বাংলাদেশের চিকিত্সা সেবায় শিল্পকলার তাত্বিক ও ব্যবহারিক গুরুত্বের স্বরূপ নির্ণয় গর্ভকালীন বিষণ্নতা :
সাধারণত একজন নারী গর্ভবতী থাকাকালীন ও সন্তান প্রসবের দিন থেকে এক বছরের মধ্যে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রসব-পরবর্তী বিষণ্নতার কারণ হিসেবে হরমোনের তারতম্যেকে দায়ী করা হয় । গর্ভকালীন মেয়েদের হরমোন এস্ট্রোজেন, প্রজেস্টোরেন উচ্চমাত্রায় থাকে। অতি তাড়াতাড়ি হরমোন বেড়ে যাওয়ায় হতাশায় ভোগে তারা। আবার সন্তান প্রসবের পর ২৪ ঘণ্টায় এই এস্ট্রোজেন, প্রজেস্টোরেন হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ হঠাৎ কমে যায়।
অর্থাৎ আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এই দ্রুত হরমোনের পরিমাণ পরিবর্তিত হওয়ার কারণে বিষণ্নতার সৃষ্টি হয়।
টিনএজ বিষন্নতা :
টিনএজ মুক্ত বিহঙ্গের কাল। খোলা আকাশের অসীম নীলিমার মতো বিশাল কল্পনার জগতে ঢুকে পড়ে কিশোর-কিশোরীরা। নিজেদের অপরিপক্ক অভিজ্ঞতার কারণে তুচ্ছ বাধাতেও তাদের মনে নেমে আসে বিপর্যয়।
এভাবে তাদের মনে হতাশা বাসা বাঁধে গোপনে। তারা সবকিছুতে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল এবং মুডি হয়ে যেতে পারে। আর এর প্রভাব পড়ে তাদের বাইরের আচরণে। অনেক সময় সমস্যায় জড়িয়ে থাকা টিনএজাররা নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে না। বিষাদে ডুবে থাকে।
তারা জানেই না যে, তারা বিষাদে ভুগছে। কাউকে বলে না বা সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কারও সাহায্য চায় না। সাধারণত মন খারাপ, বিষাদ বা ভালো লাগা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। তবে বিষণ্নতা বা মন খারাপ যদি জোরালো হয় তাহলে কোনোরূপ দোদুল্যমানতায় না ভুগে মনোচিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করা উচিত।
বিষাদের উপসর্গ :
বিষণ্নতা রোগের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হচ্ছে স্থায়ী অসুখী অনুভূতি, স্বাভাবিক কাজ করার প্রতি অনাগ্রহ, অক্ষমতা, অনুভূতির ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতা ইত্যাদি।
আশাহত, অসহায়ত্ব এবং পাপবোধে জড়িয়ে যাওয়া। যে বিষয় গুলোর সঙ্গে তাদের বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই, সেই সব বিষয়ের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা, নিজের দোষ খোঁজা ইত্যাদি ।
বিষাদের কারণ :
বিষাদ বা অবসাদ কেন আসে - এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা না থাকলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত ব্যাখ্যা দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অনেক পরীক্ষা বা গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, শারীরিক কিছু পরিবর্তনের কারণে বিষাদে আক্রান্ত হয় মানুষ। যেমন :
১. মস্তিষ্কের নানা পরিবর্তনের কারণে অবসাদ হতে পারে।
নিউরোট্রান্সমিটার হলো এক রকমের রাসায়নিক পদার্থ, যা সাধারণত স্নায়ুকোষে সব সময় তৈরি হয়ে চলেছে। যখন কোনো একটি নার্ভ উত্তেজিত হয় তখন সেটা বাইরে বেরিয়ে এসে অন্য নার্ভকে উত্তেজিত করে। এইভাবে এক নার্ভ থেকে অন্য নার্ভে যোগাযোগের জন্য আমরা সব অনুভূতি পাই নরেপিনেফ্রিন নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটারের ওপর প্রভাব ফেলে।
নার্ভে সেরোটোনিন নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটারের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে একজন মানুষ বিষাদে আক্রান্ত হয়। কারণ দেখা গেছে, ফ্লুওক্সেটিন নামক বিষন্নতার ওষুধ মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ায় মনের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
তাই মনে করা হয়, সেরোটোনিনের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে হয়তো এই রোগটা হয়। শেষ কয়েক দশকে আরও কয়েক রকমের সেরোটোনিনের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো আরও নানাভাবে মনের ওপর প্রভাব ফেলে।
ডোপামিন আরেক রকমের নিউরোট্রান্সমিটার, যেটা কম হওয়ার কারণে বিষন্নতা হয়। দেখা গেছে, টাইরোসিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যাল্ফিম্ফটামিন বা বিউপ্রোপিওন ইত্যাদি ডোপামিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। পারকিনসন স্নায়ুরোগের কারণ হলো মস্তিষ্কের কিছু স্থানে ডোপামিন কম হওয়া।
সেজন্য অনেক পারকিনসন রোগী বিষাদে আক্রান্ত হয়।
২. হরমোনের কম-বেশি হওয়ার জন্যও বিষাদ দেখা দিতে পারে।
থাইরয়েড হরমোন ও গ্রোথ হরমোন কম হলে বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া আরও নানান হরমোন আছে যার পরিমাণের কম-বেশি হওয়ার কারণে মনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. মস্তিষ্কের আকৃতির পরিবর্তন।
ক্যাট স্ক্যান বা এমআরআই করে মস্তিষ্কে নানা পরিবর্তন পাওয়া গেছে। যেমন ভেন্ট্রিকল বড় হয়েছে, মস্তিষ্কের কিছু জায়গায় নার্ভ শুকিয়ে গেছে। তবে সেগুলো আবার সব রোগীর ক্ষেত্রে পাওয়া যায়নি। আবার পেট স্ক্যান করে দেখা গেছে, যারা বিষাদে আক্রান্ত হয়েছে তাদের মস্তিষ্কের কিছু কিছু জায়গায় রক্তের চলাচল কমে গেছে। যখন সেরে উঠেছে তখন আবার রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
এই সব পরিবর্তন কিছু কিছু বিষণ্নতা আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্কে পাওয়া যায় ।
*** দয়া করে দ্বিতীয় পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন ......... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।