আমি খুব ভীতু মনের এক মানুষ। মনুষের সাহস দেখলেই আশ্চর্য হই। চারপাশে বড়সড় কোন ঘটনার আভাস পেলেই ভয়ে লুকিয়ে পড়ি সবার আড়ালে। আর তখনই লুকানো অনেক কিছুই দেখতে পাই স্পষ্ট। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতের কাহিনীটা সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করাটাই আমার একমাত্র দু:সাহস।
চলুন আজ অতি পরিচিত একটা পুরোনো বিষয়ের সাথে নতুন করে পরিচিত হই। ধরুন আপনি বেসরকারি কোন ব্যাংকে গেলেন কিংবা কোন কর্পোরেট অফিসে অথবা বেসরকারি সেবাদানকারি যে কোন জায়গায়। গিয়ে দেখলেন ছোট্ট একটা অপেক্ষমান লাইন অথবা আপনার প্রয়োজনীয় কাজটা সম্পন্ন করতে দশ মিনিট দেরী হবে। নিজেকে একবার ঐ জায়গায় নিয়ে ভাবুন তো আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে?
শুধু আপনি কেন আমরা সবাই যারপরনাই বিরক্ত হব তাদের সার্ভিসের প্রতি। শুধু বিরক্তই না পারলে যথা জায়গায় নালিশ জানাতে এক মুহুর্ত দেরী হবে না আমাদের কারোরই।
এবার চলুন একটু অন্যভাবে চিন্তা করা যাক। এবার আপনি একটা সরকারি অফিসে গেলেন কিংবা সরকারি যে কোন প্রতিষ্ঠানে, হতে পারে সেটা কোন সরকারি ব্যাংক বিমা অথবা পাসপোর্ট অফিস। সেখানে দেখলেন আপনার দশ মিনিটের কাজটা করতে তারা ইতোমধ্যে মাসখানিক সময় পার করে দিয়েছে এবং অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আরো দীর্ঘ কাল অপেক্ষা করতে হবে। তো, ঐ জায়গায় আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে? শুধু আপনি কেন আমরা সবাই ধরেই নেব এটাই তো স্বভাবিক , এটাই তো হওয়া উচিৎ। আমরা সরকারি অফিসে আসব আবার আমার কাঙ্খিত কাজও সময়মত চাইব এটা তো হতে পারে না।
আমার প্রশ্নটা এখানেই, কেন এমনটা হবে? আমি তো দেখছি আমার আশেপাশে লাখ লাখ মেধাবি রীতিমত যুদ্ধ করে সরকারি চাকরিতে একটা আসন করে নেয়। তাহলে তারা চাকরিতে ঢুকেই এরকম স্লো হয়ে যায় কিভাবে? আমার পরিচিত ছেলেটা বা মেয়েটা যে কিনা বিসিএস উত্তির্ন হয়ে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছে সে তো এরকম না।
শুভংকরের ফাঁকিটা এখানেই। আপনার পরিচিত মেধাবী প্রতিযোগী তো আসলে তার যোগ্য যোগ্যতার জায়গায় যেতে পারছে না। তার যোগ্যতার জায়গাটা দখল করছে তার থেকে হাজার গুণ পেছনে পরে থাকা আরেকজন প্রতিযোগী।
আমরা যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা বলে সবকিছু হাসিমুখে মেনে নিয়ে দেশকে ক্রমাগত পিছনে ঠেলে দিচ্ছি এটাতো আমাদের নিজেদের সৃষ্টি, আমাদের অদ্ভুত বুদ্ধিমান সরকারের সৃষ্টি।
আমাদের সরকার আমাদের সামনে অদ্ভুত এক কোটা ব্যাবস্থা দাঁড় করিয়ে রেখেছে। যে ব্যাবস্থায় আছে জেলা কোটা ১০%, সংস্লিষ্ট জেলায় মুক্তিযোদ্ধা ৩০%, নারী ১০% এবং উপজাতি ৫%। মোট কোটা দাঁড়ায় ৫৫% যা কিনা অর্ধেকেরও বেশী!!!!
আরেকটা বিষয় কোটার অধিনে বিবেচনাধীন ব্যাক্তিরা আবার মেধার ৪৫ জনের মধ্যেও বিবেচিত। যে সংবিধান সংবিধান করে আমাদের রাজনীতিবিদরা মুখে ফেনা তুলে ফেলে সেই সংবিধানে তো কোথাও এই বৈষম্য সমর্থন করে না।
হ্যা, সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে নারী ও উপজাতি কোটা বৈধ। কিন্তু জেলা কোটা সম্পূর্ন অবৈধ। কারন সংবিধান ২৯(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে “অনগ্রসর অংশের” কোটা সমর্থন করে (যা কিনা নারি ও উপজাতি) কিন্তু কখনই ”অনগ্রসর অঞ্চল” সমর্থন করে না।
আবার দেখেন মাত্র ৭ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৩০ শতাংশের এক বিশাল জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে যা কিনা আবার সম্পূর্ণভাবে খুব কমই পূরণ হয়। যেমন উদাহরনসরুপ বলা যায়---
২১ তম বিসিএস এ মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৩০% এর মধ্যে পুরণ হয়েছিল মাত্র ১০.৮%, ২২ তম বিসিএস এ আরো কম মাত্র ২.২% , ২৫ তম বিসিএস এ ৫.২%।
আর ভয়ংকর ব্যাপার হল আইন অনুযায়ী অসম্পূর্ণ আসন গুলো খালি রাখতে বাধ্য হচ্ছে প্রশাসন। যেমন ২৮ তম বিসিএস এ মোট পদের ৮১৩ আসনই খালি রাখতে বাধ্য হয়েছিল পিএসসি।
তবে খুশির খবর এই নিয়ম এখন আর থাকছে না। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রির কাছে আমাদের আবেদন কোটা প্রথার যে অংশটা শিথীল করার উদ্দোগ নেয়া হচ্ছে সেটা ছিল একেবারেই অতিরিক্ত এবং হাস্যকর। এই অংশটা বাদ দিয়ে চিন্তা করলেও যে অসাম্য কোটা ব্যাবস্থা বর্তমানে প্রচলিত আছে তার চাপেই আমাদের মানষিক মৃত্যু অবধারিত আর “পূরণ না হলেও খালি রাখতে হবে” এই নিয়মটা ছিল আমাদের প্রতিকী মৃতদেহ নিয়ে ঘৃণ্য কাঁটাছেড়ার শামিল।
এভাবে আমরা দিন দিন যেমন মেধাবী আমলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি তেমনি অনেক তরুণ তাদের নিজেদের মেধার সঠিক পরিচয়ও দিতে পারছে না কোথাও। উন্নয়নরুপি বৃক্ষের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালছি আর বলছি গাছ বাড়ছে না কেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।