জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুবায়ের হত্যার বিচার এবং অবৈধ শিক্ষক নিয়োগ বন্ধের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষকদের আন্দোলন এখন ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পরিনত হয়েছে। প্রথমে শিক্ষকদের আন্দোলনে ভিসির পদত্যাগ না থাকলেও ভিসির একগুয়েমি আচরণ আর ছাত্রলীগের নামে নিজের বাহিনী দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নীপিড়নই তাকে এই অধপতনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমানে যারা ভিসির পদত্যাগ দাবি করছে তাদের অনেকেই প্রথমে ভিসির পদত্যাগের পক্ষে ছিলেন না। ভিসির পদত্যাগকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগরে যা হচ্ছে তা রিতীমত রোমাঞ্চকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। এক দিকে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে একদল ভিসি বভনের উত্তর গেটে রাতদিন কাটাচ্ছে আরেক দল পিছনের গেটে ভিসিকে পাহারা দিতে ব্যাস্থ।
উভয় দলই টিভি, লেপটপ নিয়ে আনন্দের সাথেই দিনরাত্রি পার করছে। একদল ভিসির পদত্যাগের দাবিতে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেখানে অবস্থান করছে কিন্তু প্রশ্ন হল অপর দল কেন অন্যগেটে অবস্থান নিয়েছে? তারা যদি সাধারণ শিক্ষকই হয়ে থাকেন তাহলে কেন তারা ভিসিকে পাহারা দিচ্ছেন? অন্য দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্রলীগের কমিটি নেই বললেও কারা এখানে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে আন্দোলন রত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়ে ভিসির সাথে সাক্ষাত করছে? অনেক সংবাদপত্রে এদেরকে ভিসিলীগ বলেও উল্লেখ করেছে। এই বিষয় গুলো ভালভাবে বিশ্লেষন করলেই ভিসির অবস্থান এবং তার যে এই মূহুর্তে পদত্যাগ করা উচিত তা স্পষ্ট হয়।
বর্তমান উপাচার্য শরীফ এনামূল কবির ক্ষমতায় এসেই ছাত্রলীগের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি করে প্রতিবাদী অংশটিকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে তার অনুগত গ্রুপকে ক্ষমতায় বসান। যার ফলে এই ভিসিলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া ভাবেই ক্যাম্পাসে ত্রাসের সৃষ্টি করে আসছে।
তাদের বিরুদ্ধে কারও কিছু বলার সাহস নেই। কারণ যার কাছে এর বিচার চাইবে সেইতো এদের লালন কর্তা পালন কর্তা। ফলে অহরহ ঘটছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন আর এই নির্যাতন থেকে বাদ পরেনি সাংবাদিকরাও। জুবায়ের আহমদ ছিল ভিসি কর্তৃক বহিস্কৃত গ্রুপের নেতা যারফলে ভিসির পালিত ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের হাতেই তাকে দুনিয়া ত্যাগ করতে হল। আর এই হত্যাকান্ড নিয়েও ভিসি নিজে একটি মজার খেলা দেখিয়েছেন যারা হত্যাকান্ডের মদদ দাতা তাদের অনেকেই এখনও সবুজ ক্যাম্পাসে বুক উঁচু করে ঘুরে বেড়ায় আর কিছু হত্যাকারী যারা হুকুম পালন করতে হত্যাকান্ডে লিপ্ত হয় তাদেরকে বহি¯কার করে নিজের স্বচ্ছতার জাহির করছেন।
অন্যদিকে তার আসন পাকাপোক্ত করতে বাছ-বিচারহীন ভাবেই নিয়োগ দেয় একদল ভোটার। এদের অনেকের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কাজ ছিল শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ভোট দেয়া। এদের মধ্যে অনেকে রয়েছে যারা হাই স্কুলের জন্য নিয়োগ পরিক্ষায়ও উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আর এভাবে যদি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে মেধাহীন শিক্ষক নিয়োগ অব্যহত থাকে তাহলে আমার মনে হয় এই প্রতিষ্ঠানে পড়া-শোনা করে সার্টিফিকেট অর্জন আর কেনা সার্টিফিকেটের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। কিন্তু বর্তমান ভিসি এই নিয়োগকে বলছেন বৈধ নিয়োগ।
তিনি সেশনজট কমাতে নাকি শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন। বাস্তবতা হল এমন অনেক বিভাগ আছে যেখানে সত্যিই শিক্ষক প্রয়োজন কিন্তু নিজের আস্থাভাজন শিক্ষকের অভাবে সেখানে নিয়োগ দিচ্ছেন না। বরং যেসকল বিভাগে অধ্যাপকের অভাব নেই সেখানে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন এবং শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখেও তিনি নিয়োগ দিযেই যাচ্ছেন।
বর্তমানে জাবিতে চলমান নাটক
বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগরে ভিসির পদত্যাগকে কেন্দ্রকরে সাজানো হয়েছে নাটক। এই নাটক পরিচালনা করছেন স্বয়ং ভিসি নিজে।
তার পদত্যাগের বিষয়ে প্রথমে শিক্ষার্থীরা মুখ না খুললেও যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় অচল তখন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দাবিতে ভিসি বরাবর স্মারক লিপি পেশ করে। কিন্তু ভিসি শিক্ষার্থীদের দাবি উপেক্ষা করলে তারা কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেয়। ফলে যখন নিজের পরিসর সংকীর্ণ হয়ে আসছে তখন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে মঞ্চস্থ করলেন এক নাটক। বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থান করালেন এক ঘৃণ্য ঘটনার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি না করে মধ্যরাতে শিক্ষক গ্রেপ্তারের ঘটনা মনে হয় বিশ্বে প্রথম ঘটল জাহাঙ্গীরনগরে, যেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া একজন কর্মচারী কেও গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই পুলিশের সেখানে শিক্ষক গ্রেপ্তারের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছু জানেন না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন ভিসি, প্রো-ভিসি ও রেজিস্টার।
এর চেয়ে লজ্জাকর বিষয় আর কি হতে পারে। যে বিষয়কে ঘিরে শিক্ষক গ্রেপ্তারের ঘটনা সেটাও কম লজ্জাকর নয়। ভিসি নিজের পদত্যাগের বিষয়টিকে অন্যদিকে মুড় দিতেই তিনি এ ঘটনার সৃষ্টি করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি সফল হতে যাচ্ছিলেন কিন্তু কথায় আছে ”অতি লোভে তাঁতি নষ্ট” যার ফলে তিনি ফেঁসে গেলেন। তিনি চেয়েছিলেন শিক্ষদের মধ্যে বিভাজনের ফাঁকে তাদের ব্যবহার করে শিক্ষকদের আন্দোরন ঠেকাবেন।
আর ছাত্রদের আন্দোলন ঠেকাতে তো তার নিজের গড়া ভিসিলীগ সদা প্রস্তুত। এই নাটক বাস্তবায়ন করতে তিনি আমাদের বর্তমান সরকারের সুরেও কথা বলেছেন। প্রথমে তিনি বলেছেন শিক্ষকদের আন্দোলন নাকি যুদ্ধাপরাধ বিচার ঠেকাতে করা হচ্ছে। এর ফলে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসির পাত্রও হয়েছেন। এই অভিযোগ দিয়ে ব্যর্থ হয়ে তিনি বললেন শিক্ষকরা জামাতি আর শিক্ষার্থীরা নাকি শিবির কর্মী।
তাই তিনি ক্যাম্পাস থেকে শিবির তাড়াতে ছাত্রলীগকে হুকুম দিয়েছেন। এরই বলি সাংস্কৃতিক কর্মী কলি, কার্তিক, সুসান প্রমুখ। সাংস্কৃতিক কর্মী নির্যাতনের বিষয়ে প্রক্টরিয়াল বডির বক্ত্যব্য হল সাংস্কৃতিক সংগঠনে শিবির ঢুকছে তাই ছাত্রলীগ এদের উপর হামলা করেছে।
এদিকে ভিসি নিজে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ক্যাম্পাসে নতুন প্রেসক্লাব করেছে যার ৯ সদস্যের মধ্যে ৪ জনই অছাত্র। তার এ নিজস্ব সাংবাদিকদের মাধ্যমে পত্রিকায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের জামাত আর শিক্ষার্থীদের শিবির বলে রিপোর্ট করিয়ে ছাত্রলীগ দিয়ে নিপিড়ন চালাচ্ছে।
এ দিকে ছাত্রলীগও জাহাঙ্গীরনগর সাংবাদিক মমিতির সাংবাদিকদের হুমকি দিতে ভুলেনি। ভিসির এই হিংস্রলীগের থাবা থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি শিক্ষকরাও। রাতের আধাঁরে আন্দোলন এলাকা থেকে পুলিশ সরিয়ে নিয়ে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন করে ছাত্রলীগ আক্রমন চালায় শিক্ষকদের উপর। এসময় ভিডিও করতে গেলে মাছরাঙ্গা টিভির সাংবাদিককে গুরুতর আহত করে এই হিংস্রলীগ। আর এই জঘন্য আক্রমনের নেতৃত্বে ছিলেন একজন শিক্ষক নামধারী সন্ত্রাসী।
এ ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্পাসে থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শুধু নয় শিক্ষকরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। আর ছাত্রলীগও অস্রসহ মিছিল মিটিং করে নিয়মিত ভিসির কাছে তাদের রিপোর্ট জমাদিচ্ছে। এবং বর্তমানে এই ভিসির একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে ছাত্রলীগ।
যদি এই ভিসি পদত্যাগ না করে তাহলে বর্তমান ছাত্রলীগ শিবির তাড়ানোর নামে যে লাইসেন্স ভিসির কাছ থেকে পেয়েছে এর ফলে ক্যাম্পাসে লাশের বন্যা বয়ে যাবে।
অন্যদিকে ভিসি তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তার পোষা সাংবাদিকদের দিয়ে মিথ্যাচার চালিয়েই যাবে। ক্যাম্পাসে বর্তমানে একটি কীটও নিরাপদ নয়। কারণ কাকে কখন ছাত্রলীগ পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শিবির কর্মী বলে পিঠিয়ে জুবায়েরর মত পৃথিবী ছাড়া করে এর কোন নিশ্চয়তা নেই।
তাই ভিসির পদত্যাগ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগরের বর্তমান সৃষ্ট পরিস্থিতির উন্নয়ন মোটেই সম্ভব নয়। তাই প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে বলব একজন ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করবেন না।
যত দ্রুত সম্ভব এই পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হোন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।