একজন শব্দ শিকারি ঘুম থেকে উঠে যখন দাঁতে সকালের রোদ লাগাচ্ছিলাম তখন আমার নাকে একরাশ ধুলো মেরে অস্থির ভাই অস্থির চিত্তে বাইক হাঁকিয়ে চলে গেলেন। আমাকে অবাক হওয়ার সময়টুকু না দিয়ে তিনি আমার কাছে এসে ব্রেক কষলেন আর উনার বাইকের পিছনে উঠতে বললেন। আমিও ভদ্র ছেলের উনার আদেশ মেনে উনার ইলেক্ট্রনিক ঘোড়া মানে বাইকের পিছনে উঠে বসলাম।
-কোথায় যাচ্ছি? প্রশ্ন করলাম উনাকে কিন্তু তিনি কোন উত্তর না দেওয়ার আমি একটা রহস্যের গন্ধ পেলাম।
যখন কোথায় যেতে পারি এই চিন্তা মাথায় ভর করছিল তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম গার্লস কলেজের সামনে।
তিনি আমাকে বললেন পছন্দ কর।
আমি অবাক হয়ে গোল গোল চোখ করে উনার প্রতি প্রশ্ন ছুড়লাম “পছন্দ করব মানে কি পছন্দ করব?” তারপর খুশী মনে বললাম “কিছু কিনে দিবেন নাকি আমাকে? তাহলে দোকানে চলেন। ”
-আরে বোকা আমার বয়স কি আর বসে আছে, আমি দৌড়ানোর আগে আমার বয়স দৌড়ে যাচ্ছে, মাথার সব চুল পেকে সাদা হয়ে যাচ্ছে এদিকে তো কেউ নজর দিচ্ছে না। তাই পাত্রী খোঁজার মিশনে নামতে বাধ্য হয়েছি।
-আপনার এতগুলো প্রেমিকা থাকতে পাত্রী খোঁজতে হয় নাকি! তাদের মাঝ থেকে একজনকে বেছে নিলেই হয়।
-“তাদের বিয়ে করার জন্য প্রেম করেছি নাকি!” ধমকের স্বরে বলে উঠেন তিনি। তিনি আরো যোগ করেন “এ সব মেয়েদের বিয়ে করলে সংসার টিকবে না। আমার প্রয়োজন নম্র ভদ্র সামাজিক মেয়ে। ”
-১০০টা প্রেম করবেন আধুনিক মেয়ে দেখে আর বিয়ে করবেন ন¤্র ভদ্র সামাজিক মেয়ে ঐ মেয়েদেরও-তো পছন্দ থাকতে পারে।
-বেশী কথা না বলে দেখত কাউকে পছন্দ হয় কিনা?
-ন¤্র ভদ্র সামাজিক মেয়ে খুঁজতে হলে আন্টিকে বলেন অথবা পাত্রী চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন স্কুল কলেজের সামনে দাড়িয়ে মেয়ে দেখলে নির্ঘাত ইভ টিজিং এর মামলায় পরতে হবে।
-তুই দেখি এখনো সেকেলেই রয়ে গেছিস! আরে এখন মডার্ন যুগ সব মডার্ন ভাবে চিন্তা করতে শিখ। ইভ টিজিংয়ে আমাদের কিছুই হবেনা থানায় লোক আছে আমার।
কিন্তু উনার কথায় আমি আশ্বস্তÍ হতে পারলাম না। যা হোক হঠাৎ দেখলাম কলেজ থেকে সাদা পোশাক পরিহিত একটি মেয়ে বের হচ্ছে যাকে দেখে অস্থির ভাই খালি মুখে লবণ ছাড়া টাশকি খেলেন। আর আমারও পলক পড়া কিছুক্ষণের জন্য থেমে গিয়েছিল।
মেয়েটি আমাদের সামনে দিয়ে হেঁটে একটি সাদা গাড়িতে করে রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে চলে গেল। আর সাথে সাথে অস্থির ভাই ঐ রাগান্বিত ধুলো গুলোর সাথে আরো ধুলো যোগ করে আমাকে পিছনে বসিয়ে বাইক নিয়ে ছুটলেন সাদা গাড়ির পিছু পিছু।
এ রাস্তা ঐ রাস্তা, এ গলি ঐ গলি পেরিয়ে সাদা রঙের গাড়িটি একটি সাদা রঙের বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়ালো। মেয়েটি গাড়ি থেকে নামতেই বাড়ির গেটে খেলতে থাকা একটি ছেলে বলে উঠল “আম্মু আজ এত দেরী করলে কেন?” তখন অস্থির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি চোঁখ মুখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন যেন সব দোষ আমার। তারপর ঐদিনের মত পাত্রী দেখা স্থগিত ঘোষণা করে চলে আসলাম বাসায়।
---------------
পরদিন সকালে অস্থির ভাই আবার উনার বাইক নিয়ে হাজির। আমাকে বললেন চল বৃক্ষ মেলায় যাব।
আমি বললাম বৃক্ষ মেলায় গিয়ে কি হবে? সেখানে-তো অবিবাহিত কেউ আসবেনা। যারা আসবে তারা সবাই নিজেদের ঘর বাড়ি সুন্দর করে সাজানোর জন্য স্বামী সন্তান নিয়েই আসবে।
তিনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন “আরে তুই জানিস না অনেক মেয়েই একা একা অথবা বাবা মায়ের সাথে বৃক্ষ দেখতে আসে আর যেসব মেয়ে বৃক্ষ মেলায় আসে তাদের মন অনেক নরম হয় আর তারা সংসারী হয়।
আমি তারপর আর কথা না বাড়িয়ে তৈরি হয়ে উনার বাইকের পিছনে বসে রওনা দিলাম বৃক্ষ মেলায় অস্থির ভাইয়ের পাত্রীর খুঁজে।
মেলায় সবুজ সবুজ বৃক্ষের সারি, সারি বেঁেধ মানুষ মেলায় প্রবেশ করছে। মেলা চলবে এক মাস তবে মেলাটি যদি সারা বছর চলত তাহলে শান্তিতে অক্সিজেন নিতে পারতাম। গাছের দিকে তাকালেই আমার মাথায় কবিতা ভর করে কিন্তু অস্থির ভাইয়ের গাছ দেখার দিকে মন নেই তিনি হাঁ করে মেয়েদের দেখতে থাকেন।
হঠাৎ তিনি আমাকে ডেকে বললেন “এই মেয়েটাকে দেখতো আমার সাথে কেমন মানাবে?”
আমার মনে হলো তিনি পোষাক কিনছেন আর ঐ পোষক পরলে উনাকে কেমন লাগবে তা জানতে চাইছেন।
আমি বললাম “দুর থেকে বুঝা যাবেনা আপনি উনার কাছে গিয়ে দাঁড়ান আমি দেখি কেমন মানায়। ”
তারপর তিনি মেয়েটি যে স্টলে দাড়িয়ে গাছ দেখছিল সেখানে গিয়ে মেয়েটির পাশে দাড়িয়ে গাছ দেখার ভান করে মেয়েটিকে আরো ভালো ভাবে পরখ করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বললেন কেমন চলবে তো?
“আরে চলবে মানে, বিয়ে করবেন আপনি আর আপনার চললে দুনিয়ার সবার চলবে। চলুন উনাকে নজরে রাখি কোথায় থাকে কি করে সব বের করে ফেলি। ” চেষ্টায় অমৃত মিলে তাই মেয়েটির সব কিছু জানতেও বেশী সময় লাগল না।
মেয়েটি বাবা মায়ের সাথে মেলায় এসেছে ছাদে বাগান করার উদ্দেশ্যে। সে পড়ে ঢাকা ভার্সিটিতে অনার্স ফাইনাল ইয়ার।
---------
যাহোক পাত্রী পছন্দ হল, পাত্রী সম্বন্ধে জানাও হলো এখন বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো যায় কিভাবে?
বললাম আন্টিকে বলুন আপনার পছন্দের কথা, তিনি রাজি হলে নিশ্চয় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবেন।
’-নিজের বিয়ের কথা বলতে লজ্জা করেনা! তুই যা বলে আয় আম্মুকে মেয়েটির কথা।
-লজ্জার মখ বুড়িগঙার জলে ধুয়ে পাত্রি খুঁজলেন আর এখন বিয়ার কথা বলতে লজ্বা করে!
শেষ পর্যন্ত আমিই গেলাম আন্টিকে রাজি করানোর জন্য।
তারপর আন্টিকে রাজি করিয়ে একদিন আমি অস্থির ভাই ও আন্টি তিনজন মিলে চলে গেলাম মেয়েদের বাসায়। বাসার কলিং বেল চাপতেই আংকেল মানে মেয়েটির বাবা দরজা খুলে দিলেন। আন্টি ভণিতা না করেই বললেন “আমি ব্যবসায়ী অমুকের স্ত্রী আমার ছেলে অস্থির আপনার মেয়েকে পছন্দ করেছে বিয়ে করার জন্য। ” তারপর আংকেল অস্থির ভাইকে ভালভাবে দেখলেন। তারপর ভিতরে নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসানোর পর অস্থির ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন “অস্থির তুমি কি কর?”
অস্থির ভাই সহজ উত্তর দেন “আমি ধুলোকে উড়তে সাহায্য করি”
- ধুলোকে উড়তে সাহায্য করো মানে?
আমি বুঝিয়ে বললাম “উনার একটি বাইক আছে, আর প্রতিদিন তিনি ঐ বাইকে চড়ে রাস্তার ধুলো উড়িয়ে যান।
”
তারপর আন্টি বললেন “আমার অতি আদরের একমাত্র ছেলে তাই কোন কাজ করতে দিই না। ”
-আচ্ছা লেখাপড়া কতদূর করেছ?
- এস এস সি পর্যন্ত পড়া আছে, আর লেখাপড়া করে কি হবে আমার বাবাও বেশী লেখাপড়া করেনি কিন্তু তিনি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।
এতটুকু শোনার পর আমাদের বসিয়ে রেখে আংকেল ভিতরে গেলেন।
কিছুক্ষন পর তিনি এসে বললেন “আমি দুঃখিত, আপনাদের অস্থিরের সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারব না। যে ছেলের কোন যোগ্যতা নেই, যে ছেলে বাবার প্রভাবে চলতে চায় সে ছেলের সাথে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে মেয়েটির জীবন নষ্ট করতে চাই না।
আপনারা এখন আসতে পারেন। ”
আন্টি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারেননি হয়ত অপমানে। তারপর পাত্রী দেখা ইস্তফা দিয়ে সরাসরি চলে আসলেন।
আর তখন অস্থির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি উনার মুখে সন্ধ্যা নেমেছে কিছুক্ষন পরই আঁধার ধেয়ে আসবে।
তিনি এখন বুঝতে পারছেন “বিয়া করতে লাগে যোগ্যতা, বাপের টাকায় ঢাকা যায়না অজ্ঞতা।
কে এই অস্থির ভাই ? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।