গতকাল ব্লগার মামুন বিদ্রোহীর পোস্টে বন্ধুর পালিয়ে বিয়ে করার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি লেখা পড়ে আমার অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া অনুরূপ একটি ঘটনা মনে পড়ায় ক্ষণে ক্ষণে হেসেই যাচ্ছি। সে বহু বছর আগের কথা, আমার ঘনিষ্ট বন্ধুদের মধ্যে এক প্রেমিক বন্ধু বছর খানিক লুকিয়ে প্রেম করার পর অধর্য্য হয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করার সির্ধান্ত নেয়। কিন্তু বিয়ে করার পথটা তখন তার জন্য নিস্কন্টক ছিল না। একে তো মেয়ের বয়স ছিল আঠারো বছরের নিচে তার উপর সে ছিল না স্বাবলম্বি। উভয় পক্ষের অভিভাবকের অমতে বিয়ে হলে তারা কোথায় উঠবে, কি ভাবে সংসার চলবে এসব বিপদ আপদের কথা চিন্তা করে আমরা তিন চারজন বন্ধু মিলে তাকে এ পথ পরিহার করতে বারবার অনুরোধ করি ।
কিন্তু প্রেম এমনি অবুঝ সে কি শুনে কারো কথা! সে সাফ জানিয়ে দেয় এ বিয়ে না হলে সে আত্মহত্যা করবে। সেই সাথে বিয়ের যাবতীয় কাজে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য দাবি জানায় । ছোটবেলা থেকেই আমরা পরস্পরকে চিনি এবং তার একগুয়েমির কথাও জানি , অগ্যতা দুর্ঘটনা এড়াতে সাতপাঁচ না ভেবে বন্ধুর অনুরোধ রক্ষায় রাজি হয়ে যাই। এখন সমস্যা হলো তাদের থাকার জায়গা নিয়ে , আপাতত কয়েকদিনের জন্য হলেও কোথাও মাথা গোঁজার জায়গা দরকার, পরে উভয় পরিবারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বিষয়টি নিস্পত্তি করা গেলে বরকনে বাসায় ফেরত আসতে পারবে। কিন্তু কথা হলো বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? এ কয়দিন কার বাসায় থাকবে নব দম্পত্তি ? দুজনের আবাসন সংকট নিয়ে যখন আমরা চিন্তায় বিভোর সৌভাগ্যক্রমে তখন পেয়ে গেলাম বন্ধুটির বড়ভাইকে।
তিনি ছিলেন বন্ধুটির সৎবড় ভাই। আমাদের তুলনায় বয়সে তিনি অনেক বড় হলে কি হবে, আমাদের সাথে তার ছিল প্রানখোলা সম্পর্ক। পেশায় তিনি ছিলেন এম বি বি এস ডাক্তার,পোস্টিং ছিল খুলনায়, ছুটিতে এসেছেন ঢাকায়। অনেক অনুনয় বিনয় করে সবকিছু বুঝিয়ে বলার পর ডাক্তার ভাই পাশে থাকতে রাজি হলেন। এরপর এই মর্মে স্থির হল আগামীকালের মধ্যে বিবাহ কার্য সম্পন্ন হবে এবং বিয়ের পর অন্য এক বন্ধুর বাড়িতে রাত্রি যাপন করে ভোরের গাড়িতে তারা খুলনা উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে।
যাহোক পরিকল্পনা অনুযায়ী পরের দিন সন্ধ্যায় চুপিচুপি কনে ঘর থেকে বেরোলো , পেছনে পেছনে আমরাও বেরুলাম। এরপর আমরা তিন বন্ধু, ডাক্তার এবং বর কনেসহ মোট ৬ জন লালমাটিয়ায় কাজির অফিসে উপস্থিত হলাম। কাজির সাথে আগেই এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া ছিল।
কিছুক্ষণ পর শশ্রুমন্ডিত ধর্মপ্রাণ কাজী সাহেব কক্ষে প্রবেশ করলেন। সালাম আদাব পর্ব শেষে বর আর কনেকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর তিনি কনের বয়স জানতে চাইলেন, বলা হলো ১৯।
কাজী সাহেব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কনের দিকে তাকালেন, তার চোখে সন্দেহের ছাপ। এরপর মেয়ের উকিল বাপ হিসেবে আমাকে পরিচয় করানো হলো, কাজী সাহেব এক নজর আমাকে দেখে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে এমন ভাব দেখালেন যেন আমি উকিল বাপ হবার যোগ্য নই। আমার ভেতর সন্দেহের দানা বাধতে লাগলো, না জানি সব পন্ড হয়! পরমহুর্ত্তে কনের দিকে তাকাতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ! আমরা এতগুলো মানুষ বসে আছি, পাশে কাজী সাহেব বসে আছে , কিন্তু মেয়েটির সেদিকে খেয়াল নাই , সে সোফাতে বসা অবস্থায় সমানে দুপা দুলিয়ে যাচ্ছে! সে দৃশ্য দেখে আমার এমনই অবস্থা যে না পারি কইতে, না পারি সইতে।
যাক ততক্ষণে কাজী সাহেবকে দেখা গেল বিয়ের প্রসঙ্গ এড়িয়ে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথাবার্তা শুরু করেছেন। আমারও বুঝতে বাকি রইলো না যে কনের আচরণ তাকে বিব্রত করেছে এবং বিয়ে না পড়ানোর অজুহাতে তিনি অপ্রসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করছেন।
অবশেষে আমাদের চমকে দিয়ে কাজী সাহেব অসহায়ের মত মিনতি করে তার অপরগতার কথা জানালেন,
--- বাবারা, আমাকে মাফ করবেন, আমি এই মেয়ের বিয়ে পড়াতে পারব না।
---কি বলছেন কাজী সাহেব এসব, বিয়ে হবে বলেই না আমরা তৈরী হয়ে এসেছি, তাছাড়া এ্যাপয়েন্টমেন্ট আপনি দিয়েছেন।
--সব মানলাম বাবারা, এই মেয়ের বিয়ে পড়ালে আমার ২০বছর জেলের ভাত খেতে হবে। বাবারা, আমার সংসারে বৌবাচ্চা আছে, আমাকে এতবড় বিপদ মাথায় নিতে বলবেন না। আমি আপনাদের এলাকার অনেককেই চিনি, আপনার বাবাকেও( ওপর এক বন্ধুকে) চিনি, দয়ে করে আমাকে বিপদে ফেলবেন না।
কি আর করা, কাজী সাহেবের অসহায়ত্বের কাছে হার মেনে সবাই বের হয়ে আসলাম। আজ এত বছর পর যখনই ঘটনা মনে পড়ে তখন ভাবি, যৌবনের জোসে সেদিন যে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম যদি সেদিন বিয়েটা হয়েই যেত, তাহলে কনের উকিল বাপ হবার কারণে ২০ বছরের জেলের ঘানি আমাকেই টানতে হত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।