সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সংগঠিতভাবে যে সমস্ত সংগঠন কাজ করেছেন বা এখনও করছেন তাদের মধ্যে ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’ নিঃসন্দেহে অগ্রগণ্য। ২০০৭ সালে দেশে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে সামরিক শাসন চলছিল ঠিক সেই কঠিন সময়ে ময়দানে নেতৃত্বদানকারী একাত্তরের সেই বীরযোদ্ধারাই ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’ নামক সংগঠনের ছায়াতলে একত্রিত হয়ে যুদ্ধপাপীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হন। একসময়ের ক্ষমতাধর এই যুদ্ধাপাপীদের বিচারের আওতায় আনার পিছনে দেশের অন্যান্য প্রগতিশীল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সাথে ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’ এর ভূমিকাও আলোচিত হবার দাবি রাখে। আমি নিশ্চিত ১৯৭১ সালে তাদের ত্যাগের মতোই যুদ্ধপাপীদের বিচারে তাদের ভূমিকার কথা জাতি সব সময় মনে রাখবে এবং কৃতজ্ঞা থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে যুদ্ধপাপীদের বিচারের আওতায় আনার পিছনে সেক্টর কমান্ডারদের এ সফল সংগ্রাম ১৯৭১ সালে তাদের সম্মুখ সমরে সফলতার চাইতে কম কিছু নয়।
দেশের সাবেক সেনাপ্রধান এবং মুক্তিযোদ্ধা লে. জে. (অব.) হারুন-অর-রশিদ ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বে আছেন। সে কারণে যুদ্ধপাপীদের বিচারের দাবিতে ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’ এর কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকার কিছুটা কৃতিত্ব তিনিও পেতে পারেন। জাতি অবশ্যই তার কাছে কৃতজ্ঞ। তবে ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’ বা তার প্রতি জাতির এই কৃতজ্ঞতা বা নমনীয়তাকে যদি তিনি ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন তবে সেটার চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছুই হতে পারেনা।
জনাব হারুন-অর-রশিদ ডেসটিনি-২০০০ নামের একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অননুমোদিত ব্যাংকিং, দুর্নীতি, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহসহ মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগগুলো যেহেতু তদন্তাধীন তাই এসব বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। প্রতিষ্ঠানটির একজন বেতনভোগী হিসেবে জনাব হারুন-অর-রশিদ এর পক্ষে তৎপরতা চালাতেই পারেন, সাফাই গাইতে পারেন। এটাই স্বাভাবিক এবং এ নিয়ে কারো কোন অভিযোগ বা দ্বিমত থাকার কথা নয়। কিন্তু তিনি যদি তার প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’ এর মতো সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় একটি সংগঠনকে ব্যবহার করেন তবে তা হবে জাতির জন্য চূড়ান্ত অর্থেই হতাশার এবং ব্যক্তি হিসেবে তার জন্য লজ্জার।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় জনাব হারুন-অর-রশিদ শেষ পর্যন্ত এই লজ্জাজনক পন্থাটিই অবলম্বন করছেন।
আজকের দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী জনাব হারুন-অর-রশিদ সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নাম ভাঙিয়ে গতকাল (২৯/০৪/২০১২) ডেসটিনির কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের অভিপ্রায়ে তার সচিবালয়ের অফিসে যান। কিন্তু মাননীয় মন্ত্রী বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে তাদেরকে সাক্ষাৎ দেননি। ফলে জনাব রশিদ ও ডেসটিনির অন্যান্য কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এ বিষয়ে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারকে মাননীয় অর্থমন্ত্রী টেলিফোনে জানান, “আমার সঙ্গে অ্যাপয়নমেন্ট ছিল সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম এর জেনারেল হারুন-অর-রশিদের।
ডেসটিনির কারো সঙ্গে কোন অ্যাপয়নমেন্ট ছিলনা। কিন্তু তার সঙ্গে ডেসটিনির লোকজনও এসছিল। ডেসটিনির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলার কারণে আমি তাদের সঙ্গে দেখা করিনি”। তিনি আরো বলেন, “আমি যদি জানতাম ডেসটিনি লোকজন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে, তাহলে কোন অবস্থায়ই অ্যাপয়নমেন্ট দিতাম না। তদন্ত চলছে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সাথে আমি দেখা করতে পারিনা”।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নাম করে জনাব হারুন-অর-রশিদ ও অন্যান্য ডেসটিনি কর্মকর্তাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের ব্যর্থ প্রয়াসের প্রায় একই ধরণের একটি রিপোর্ট আজকের দৈনিক প্রথম আলোতেও প্রকাশিত হয়েছে।
আমার বক্তব্য এখানে পরিস্কার। একজন বেতনভোগী হিসেবে জনাব হারুন-অর-রশিদ তার প্রতিষ্ঠানের জন্যে তার ব্যক্তিস্বত্ত্বাকে ব্যবহার করে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এনিয়ে কারো কোন মাথাব্যাথা থাকার কথা নয়। কিন্তু তার ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য তিনি কোন অবস্থায়ই ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’ এর মতো সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় একটি সংগঠনকে ব্যবহার করতে পারেন না।
যদি তিনি ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য অবিরত এই সংগঠনের নাম ব্যবহার করতে থাকেন তাহলে একটা সময় সংগঠনটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠবে। ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম’ এর সাথে সংশ্লিষ্ট জাতির সেই বীর সন্তানদের কাছে তাই অনুরোধ থাকবে যে, দয়া করে জনাব হারুন-অর-রশিদ-কে নিবৃত করেন। আপনারা যদি এটা করতে ব্যর্থ হন তাহলে চূড়ান্তঅর্থেই জাতির আশা-ভরসার আরেকটি স্তম্ভ ভেঙে পড়বে।
সবশেষে জনাব হারুন-অর-রশিদ কে বিনয়ের সাথে বলব, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনি সর্বমহলে সন্মানীত। তবে দয়া করে স্মরণে রাখবেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিন্তু পরবর্তীতে নিজের কর্মের জন্য পতিত হয়েছেন এমন উদাহরণও কিন্তু কম নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।