সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল ইলিয়াস আলির গুম হওয়া উপলক্ষ্যে বিএনপির ডাকা হরতালের আজ দ্বিতীয় দিন। প্রথম দফায় একজন বাস ড্রাইভারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। আর কত সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক খেলায় গুম হবে কিংবা খুন হবে কে জানে?
নেতা গুম হবে আপনাদের। আর পুড়ে মরবে সাধারণ একজন মানুষ? এই মানুষটির উপর নির্ভরশীল পরিবারের দ্বায়িত্ব কে নেবে? আপনারা?
কোনদিন কোন রাজনৈতিক দল সেই দ্বায়িত্ব পালন করেছে?
কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেবার মত এই পুড়িয়ে মারার ঘটনাটির নিন্দা করেছেন, স্থানিয় সরকার প্রতিমন্ত্রি জাহাঙ্গির কবির নানক। হাসবো নাকি কাদবো? এই নানকের পরিকল্পনায়ই (সাথে মীর্যা আযমও ছিল) তো শাহাবাগে আওয়ামি লিগের হরতালের আগের দিন সন্ধ্যায় বাসে আগুন দিয়ে ১১ জন নিরপরাধ বাসযাত্রিকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল।
হ্যা আমাদের গোল্ডফিস মেমরি বটে ! তবে সবার না।
সেই ঘটনায় যদি নানক-আযমকেও শাস্তি স্বরুপ পুড়িয়ে মারা হতো, তাহলে হয়তো অন্তত শাস্তির ভয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না।
কিন্তু আমাদের দেশে "বড়"দের কে কবে কেশাগ্র স্পর্শ করতে পেরেছে? ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট অবশ্য এই দিক দিয়ে একটি ব্যাতিক্রমি ঘটনা।
তাদের তো ফাসিতে লটকে বিদায় করা হয়েছে। আর বাকি যারা বেচে ছিল, অন্তত যাদেরকে প্রতিবাদ করতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়েছিল, ক্ষমতায় বসে সেই ২০০৯ সালেই পিলখানা বিদ্রোহের নামে খুন করা হয়েছে।
সেদিন যারা সৌভাগ্যবশত বেচে গিয়েছিল, তাদেরকে হয় চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে, কিংবা বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
র্যাব গঠন করা হয়েছিল আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই সন্ত্রাসিদের নির্মুল করার জন্য। জামিন নামের প্রভাবশালিদের হাতের পুতুল মুলক ব্যাবস্থায় আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, বার বার সন্ত্রাস করেও যারা এতদিন ধরা ছোয়ার বাইরে থাকতে সক্ষম ছিল, র্যাবের কারণে তাদের দুর্বৃত্তয়ানের ইতি ঘটেছিল। এজন্য সুশিলরা যতই সন্ত্রাসিদের পক্ষ্যে সুশিলতা দেখাক না কেন, র্যাবের কর্মকান্ডের প্রতি প্রবল জন সমর্থন থাকায়, তাদের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করা যায়নি।
কিন্তু ক্ষমতায় বসেই র্যাবকে আওয়ামি ফ্যাসিস্টদের সংস্থা বানিয়ে ফেলেন আওয়ামি লিগ।
প্রাক্তন ছাত্রলিগের গুন্ডা পান্ডা ক্যাডারদের সেখানে বসিয়ে শুরু করে রাজনৈতিক বা আদর্শিক বিরোধীদের হত্যা করা। তবে আওয়ামি সুশিলদের মুখ রক্ষায় ক্রসফায়ার না করে এখন গুম করে ফেলা হচ্ছে। না থাকবে বাশ না বাজবে বাশরি !
কিন্তু আওয়ামি লিগের লোভ দিন দিন বেড়ে চলাতে , সেটাই তাদের কাল হয়ে দাড়িয়েছে। এতদিন ছোট খাট মানুষ বা বিরোধী দলিয় নেতা কর্মিদের গুম করে যখন তারা দেখলো, বাহ বেশ মজা তো। কেউ তো ট্যা ফু করছে না।
তাই তাদের হা বেড়ে গেলো।
আর সেই লোভেই গিলে ফেললো বিএনপির প্রাক্তন সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলি কে।
ব্যাস ! আর যাবে কোথায়।
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে, আমাদের নদীগুলিকে প্রকাশ্যে হত্যা করা লাইসেন্স দিয়ে, আমাদের কলকারখানা আর লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের পেটে লাথি দিয়ে ভারতের সাথে গোপণ চুক্তি করলেও, কিংবা দ্রব্যমুল্য-গ্যাস-বিদ্যুত- ইত্যাদি ইস্যুতে নাভিশ্বাস উঠা সাধারণ মানুষের জন্য আবেগ না উথলালেও , এক ইলিয়াস আলির গুম হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বিএনপি চারিদিক তোলপাড় করে ফেলেছে।
ইলিয়াস আলি যে দেশ ও জনগণের চেয়েও বড়, সেটা বিএনপি ভালোই বুঝিয়ে দিলো।
তো এখন লোভে পড়ে বড় খেয়ে ফেলায় আওয়ামি লিগ চরম বিপাকে। এতদিন যে কোন ইস্যুতে প্রতিবাদ করলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্থ করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে, যে ভাঙ্গা রেকর্ড বাজানো হতো, সময়ের সাথে সাথে সেই রেকর্ডের আবেদন এখন তলানির কোঠায়।
তাই পরিস্থিত সামাল দিতে এখন আওয়ামি লিগের ত্রিশংকু অবস্থা। কারণ প্রণব দাদা যতই আসাম সীমান্তে হাসিনা গংকে বাচানোর জন্য সৈন্য প্রস্তুত রাখুক না কেন, দেশে মানুষ ক্ষেপে উঠলে তার বিরুদ্ধে যাবার মত সাহস ভারতের পুরো সেনাবাহিনীরও হবে না।
আর ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর আওয়ামি লিগের বীর পুঙ্গবদের লেজ তুলে ইন্ডিয়াতে পালানোর হিড়িক দেখে এটাও তো স্পস্ট যে চাচা আপন বাচা বলে যে প্রবাদ তা কতটুকু সত্য।
ইতিমধ্যে দুই বাম আওয়ামি লিগার সুর বদলাতে শুরু করেছে। ইনু মেনন এখন মিউ মিউ করে উলটো সুর গাইছে। আওয়ামি লিগের কাধে চড়ে এতদিন দুধ মালাই খেলেও, আওয়ামি লিগের পিঠের উপর কিল পড়লে তারা সেটা খেতে রাজি না। তাই মিউ মিউ করে বিড়াল তপস্বির ভুমিকায় অবতীর্ণ তারা।
ইলিয়াস আলি বেচে নেই।
গুম হয়ে যাওয়া মানুষ কোনদিন ফেরত আসেনি। আসবেও না। যদি আসে, তাহলে বলতে হয় ইলিয়াসের পরিবারের উপর স্বয়ং আল্লাহ করুণা করেছেন।
সাপের ছুচো গেলার মত এখন হাসফাসে আওয়ামি লিগের অবস্থা সংগিন। এ থেকে উত্তরণে তারা সাংঘাতিক পদক্ষেপ নিতেও পিছ পা হবে না।
কেননা তারা ভালো করেই জানে যে, দেশদ্রোহিতা-লুটপাট-দুর্নীতি-হত্যা-লুন্ঠন ইত্যাদির অভিযোগে সাধারণ মানুষের কাঠগড়ায় দাড়ালে, তাদের চরম শাস্তি ভোগ করতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।