আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাপলা পরীদের দেশে

এক গুচ্ছ শাপলা তুলতে গিয়েছিলাম ঠিক দুপুর বেলা। গ্রামের মেয়ে শাপলা তুলতে না জনলে লোকে বিশ্বাস করবে কি করে? তাছাড়া শাপলা ফুলের শুভ্রতা আমাকে ব্যকুল করে। খোঁপায় শাপলা পড়লে মনে হয় যেন আপনজন তার দুহাতে মাথা, ঘাড়, গলায় হাত বুলিয়ে আদর দিচ্ছে। সে শাপলা বিলে কারা যেন লিখে রেখেছে বিনা অনুমতিতে এখানে কেও নামবেন না। আমি শাপলার মেয়ে, আমায় কিনা নিষেধ করেছে।

আমি কি আর সেই নিষেধ মানি। ইচ্ছে হলো ওদের গালে কষে দুটো চড় দিয়ে আসি। আমি সন্তর্পনে নেবেছি, ভেবেছি এই দুপুর বেলা এখানে কে আসবে তাও আবার মেঘ করেছে আকাশে বৃষ্টি আসবে, কিন্তু বিপত্তি ঘটতে বেশিক্ষণ লাগলোনা। কে যেন আসছে, আমি ডুবে ডুবে নিজেকে আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টা করছি। কুচুরিপানার আড়ালে লুকিয়ে আছি।

হটাৎ কি যেন হলো, আমার আর কিছু মনে নেই। ঘুম ভাংতেই দেখি আমি বিবস্ত্র, আমার আব্রু ঢেকে রেখেছে কিছু শাপলা ফুল। আমি মনে করার চেষ্টা করছি আমি এখানে কেন? কিভাবে? কোথায়? কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছিনা। ক্ষুধার চোটে পেটের ভেতর ট্রাক্টর চলছে। বিছানা থেকে উঠে বসে লক্ষ্য করলাম এটতো শাপলার বিছানা।

কিন্তু আশে পাশে কেউ নেই কেন? মা-বাবা, আহির সবাই কোথায়? যতই ডাকার চেষ্টা করছি গলা দিয়ে স্বর বেরুতে চাইছেনা। একটুপর দরজা খুলে সারা গায়ে শাপলা পরিহিত এক সুন্দরী রমনী প্রবেশ করলো। খুব মিষ্টি সুরে আমায় ডেকে বললো খেয়ে নাও। ওরা আমার নাম জানলো কি করে? আমিতো ওকে চিনিনা, জীবনে কোনদিন দেখেছি বলেতো মনে পড়ছে না। আর চিন্তা না করে তাড়াতাড়ি করে খেতে শুরু করলাম।

রান্না খুবই মজার, সুস্বাদু হয়েছে। খাওয়া শেষ হওয়া মাত্র ঘরে প্রবেশ করলো যে আমাকে খাবার দিয়ে গিয়েছিল। চল এবার মালকিনের কাছে যাব, তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে। আমি বললাম কে তুমি?? কে তোমার মালকিন?? আমাকে তোমরা ধরে এনেছ কেন? সে আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললো চল আমার সাথে সব জানতে পারবে। আমি প্রতিবাদ করতে চেয়েও পারছিনা।

আমার হাত-পা আমার কথা শুনছেনা, আমি জোর করেও হাটাচলা বন্ধ করতে পারছিনা। আমি ভয় পেয়ে ভেতরে ভেতরে কুকড়ে যাচ্ছি। তবু তার সাথেই যেতে হচ্ছে। আমরা রুম থেকে বের হতেই একটা আজব যানে করে উড়তে উড়তে যাচ্ছি । ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম এটা শাপলার আদলে তৈরি।

অল্প কিছুক্ষনের মাঝেই আমরা মালকিনের কাছে পৌছে গেলাম। আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে এলো মালকিন। এসো এসো শাপলা সুন্দরী আমাদের জগতে তোমাকে স্বাগতম। আমি প্রশ্ন করতে যাব কিন্তু কিছুই বলতে পারছিনা কেন জানি মনে হচ্ছে আমাকে হিপনোটাইজ করে রেখেছে। মালকিন বলে যাচ্ছে............তোমাকে আমরা পৃথিবী থেকে তুলে নিয়ে এসেছি আমাদের এই শাপলা পরীদের জগতে।

এখানে যাদের দেখছ তাদের সবাই শাপলা ভালোবাসে। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শাপলাপ্রিয় মানুষ। আমাদের এখানে সবই শাপলা দিয়ে তৈরি তুমি তোমার ইচ্ছামাফিক শাপলা দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে কিন্তু বাড়ি ফিরে যেতে পারবেনা। এই কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে কান্না বেয়ে বেয়ে পড়ছে আমি হাউমাউ করে কাঁদতে চেষ্টা করেও পারলামনা। বাড়িতে আমার মা-বাবা ভাই ওদের না দেখে আমি থাকবো কি করে।

একদিন যায় দুইদিন যায় আমার আর শাপলা পরীদের দেশে দিন কাটতে চায়না। আমার মনটা বাড়ির জন্য আকুপাকু করতে থাকে। উপায় খুজে খুঁজে আমি হয়রান হয়ে যাচ্ছি। আমার সাথে সবার সম্পর্ক ভালো, সবাই আমাকে বুঝাতে চেষ্টা করে কয়েকদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। সবাই যে যার নিজের গল্প বলে, কেউ এসেছে সোমালিয়া থেকে, কেউবা উরুগুয়ে, কেউবা ফিলিস্তিন, কেউবা কাশ্মীর কেউবা ফিলিস্তিন থেকে।

তারা খুবই খুশি কারন এখানে খাবারের কষ্ট নেই, কেউ বোমা মারেনা, গুলি ছুড়েনা, কে না খেয়ে মরেনা, এখানে ভুমিকম্প হয়না, এখানে সুনামি হয়না। আমাকে আমার দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চায়। কেন আমি শাপলা তুলতে গিয়ে ভয় পেয়ে বার বার পানিতে দুব দিচ্ছিলাম, কেন আমাকে ঢিল ছুড়ে মারতে চেয়েছিল। আমাকে ঢিল ছুড়েছে কে? আমারতো মনে পড়ছেনা। তখন শাপলা পরীরা বললো তুমি ঢিল খেয়ে অজ্ঞান হয়ে মরতে বসেছিলে আমরা তোমাকে আমাদের দেশে নিয়ে এসেছি।

কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমি কি করে মুখ দেখাবো এদের কাছে? আমি কি করে আমার দেশের মানুষ নিয়ে গর্ব করে ওদের গল্প শোনাব, যারা সামান্য শাপলা তোলার অপরাধে মানুষকে মেরে ফেলতে দ্বিধাবোধ করেনা। ওরা বললো আমাদের শাপলা রানী উনি খুবই ভাল, তুমি চাইলে তোমাকে তোমার দেশে ফেরত দিয়ে আসবে কিন্তু তাঁকে খুশি করতে পারলে। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম তোমাদের বাড়ি যেতে ইছে করেনা? ওরা বললো করে। তবে যাওনা কেন? ওরা বললো গিয়ে কি করবো? গুলি খেয়ে মারা যাব? তার চেয়ে এখানেই ভাল আছি। আমি আর কিছু বললামনা।

পরেরদিন সকালে আমি শাপলারানীর কাছে গেলাম। তাকে আমার মনবাঞ্ছা ব্যক্ত করলাম। সে শুনে বলল আমার মনটা ভীষন খারাপ করে দিলে। তুমি এখন যাও কালকে সকালে এসো ভেবে দেখব। এদিকে শাপলার বাড়িতে শাপলার ভাই আহিরের খেলার সাথী ভিজতে ভিজতে এসে খবর দিল, শাপলা চেয়ারম্যানের বিলে ডুবে মরেছে।

গেরামের প্রতাপশালী লোক চেয়ারম্যানসাব, সে প্রতিবছর বিলে বাধ দিয়ে মাছ চাষ করে। বর্ষাকাল এলেই শুধু বিলে গ্রামের মানুষ মাছ ধরতে পারে বাকি সময় তার। পানি কমে গেলে কেউ গোসল পর্যন্ত করতে পারেনা। শাপলার মা শোনা মাত্র অজ্ঞান হয়ে গেল। শাপলার বাবা ভাল করে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?? ছেলেটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলল আমি বিলের ধারেই আম কুড়াতে গেছি দেখি শাপলাবু বিলের দিকে যাচ্ছে।

আমি পেছন থেকে ডাকলাম সে শুনলো না। শাপলাবু আস্তে আস্তে ডুব দিতে দিতে শাপলা তুলতে যাচ্ছে এমন সময় চেয়ারম্যানের পোলা বিলের ধারে এসে দাঁড়িয়ে দেখে শাপলাবু পানিতে নেমেছে। সে কিছু না বলেই একটা টুকরা ইট নিয়ে ঢিল মারে। শাপলাবুর মাথা লেগেছে না কোথায় লেগেছে তা বলতে পারবনা তবে শাপলাবু কে অনেক ডেকেও না পেয়ে ছুটে এলাম। কথা শেষ হতে না হতেই শাপলার বাবা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে চলে বিলের ধারে।

সাথে পেছনে পেছে আহির ও আহিরের বন্ধু। চারদিক থেকে বৃষ্টির পানির ঢল নেমে বিলের পানি কিছুটা বেড়েছে সাথে সাথে বেড়েছে পানির স্রোত। কিছুক্ষনের মাঝেই লোকেলোকারণ্য পরিনত হল বিলের পাড়। সবাই মিলে খুঁজে খুঁজে হয়রান। শাপলার দেখা মেলেনা।

ক্ষোভে ফেটে পরে গেরামের মানুষ, সবাই চেয়ারম্যানের বাড়ির দিকে যেতে থাকে। ততক্ষণে পুলিশ ডেকে নিয়ে এসেছে চেয়ারম্যান। সবাই ফিরতি পথে থানার দিকে যেতে থাকে কেইস করতে যাচ্ছে। ওসি নেই, কেইস করা যাবেন উপরের নিষেধ আছে। সবাই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে।

কিছু সাংবাদিক এসে রিপোর্ট করে নিয়ে যায়। পরেরদিন পত্রিকায় বড় করে ছাপে.............. "শাপলা তুলতে গিয়ে জীবন দিতে হলো চেয়ারম্যানের ছেলের ছোড়া ঢীলে" সব জায়গাতেই টাকা দিয়ে এই ঝামেলা মিমাংসা করে ফেলে চেয়ারম্যান। কিন্ত শাপলার পরিবারের উপর চলে নানা প্রকার হয়রানিমূলক অত্যাচার, হুমকি। শাপোলার মায়ের আহাজারি শোনার কেউ নেই। বেশ কিছুদিন পর একদিন মানবাধিকার কর্মী এসে কিছু কথা বলে চলে গেল।

তারপর ঘটনা নতুন দিকে মোড় নিল। কিছু মানুষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তা ব্যবহার করতে চাইলো। পরেরদিন শাপলা রানির নিকট সকাল সকাল হাজির হয়ে দেখে শাপলা রানী সবাইকে নিয়ে তার মজলিসের ঘরে বসে আছে। ঘরে প্রবেশ করা মাত্র সবাই আমার দিকে তাকালো আমি কিছুটা বিব্রত বোধ করতে লাগলাম। এক্টুপর শাপলারানী নিজেই বললো তোমাকে আমরা ৭ দিনের জন্য দুনিয়াতে পাঠাবো তবে এর পর যদি তুমি আসতে না চাও আমরা তোমাকে জোর করবোনা।

তবে আমাদের গোপনীয়তার জন্য তোমাকে আমরা সমস্ত স্মৃতি ভুলিয়ে দিব শুধু এই লকেট তোমার গলায় থাকবে তুমি চাইলেই আমরা গিয়ে নি আসবো। পরেরদিন আমাকে দুনিয়েতে রেখে গেল কিন্তু এক রেল স্টেশনের পাশে। হাটতে হাটতে দেখতে পেল এক লোক আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে আর তার হাতের পেপারের দিকে বার বার তাকাচ্ছে ভয় পেয়ে দ্রত ঐখান থেকে দৌড়ে পালালাম। বুঝতে পারলাম না কেন লোকটা আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিল। বাড়ির পথে হাঁটছি কিন্ত জানিনা কোথায় আছি এখন।

একজন কে ডেকে জিজ্ঞেস করাতে বললো, ও তুমি চন্দননগরে যাবা সেটাতো পরের গ্রাম দুই মাইল হাঁটতে হবে। আমি সামনের দিকে যেতেই পেছন থেকে ডাকলো, এই শোন, তুমি শাপলা না? আমি তার দিকে ফিরে বললাম হ্যাঁ আমি শাপলা কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না? তোমাকে কালকে টিভিতে দেখালো কিন্তু তুমি তো মৃত তোমার বাবা-মা-ভাই সবাই কেঁদে কেঁদে তো তাই বলল গ্রামের লোকজনও তাই বলল। তুমি বেঁচে আছ কি ভাবে? কোথায় ছিলে এই কয়দিন? আমি বলালাম জানিনে। সে আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে সব খুলে বলতে বলল। আমি বললাম আমার ক্ষুধা লেগেছে।

সে আমাকে নিয়ে হেঁটে যেতে লাগলো সামনের দোকানের দিকে। খাওয়া দাওয়া শেষে সে আবারো বলল এবার বলো কোথায় ছিলে? আমি বললাম আমায় বাড়ি পৌছে দিন। সে আমাকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল। পথিমধ্যে অনেকের সাথেই দেখা হল তাদের নানা প্রশ্নের বানে আমি বিদ্ধ হলাম। বাড়ি পৌছে দেখি মা বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছে আহির তাকে শান্তনা দিচ্ছে।

আর বলছে বুবু চলে গেছে তো কি হয়েছে আমিতো আছি। আমি মা বলে ডাক দিতেই মা আতংকিত হয়ে উঠলো। কিছুটা ভয় পেয়ে গেল, ভূত দেখার মত আমাকে চোখ কুচকে দেখতে লাগলো। আহির এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো, বুবু তুই কই ছিলি? আমাদের ছেড়ে কোথায় গেছিলি? মা-বাবা তোর জন্য কেদে কেঁদে পাগল হয়ে গেছে। চেয়ারম্যানের লোকেরা বাবাকে ভয় দেখিয়ে গেছে, মারতে পর্যন্ত চেয়েছে।

ততক্ষনে মা এসে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো। বাবা এসে আমার সাথের মানুষটাকে জিজ্ঞেস করে সব জেনে নিল। কিছুক্ষনের মাঝেই আমাদের বাড়িতে লোকের ভীড় বারতে লাগলো। সবার প্রশ্নের যন্ত্রনায় আমি অস্থির। মা আমাকে ঘরে আটকিয়ে রাখলো।

সবাই বলতে লাগলো এটা ভূত এসেছে, শাপলা মারা গেছে। দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ আসতে লাগলো। টিভি, পত্রিকার লোকজন আসতে লাগলো। কিন্তু কারো সাথেই আমি কথা বলিনি। বাবা কাউকেই আমার সাথে দেখা করতে দিলেন না।

চারিদিকে রহস্যে আকারে আমার ফিরে আসা ছড়াতে লাগলো। কেউ কেউ নানা ফতোয়া দিয়ে গেল। বাবা-মা, আহির কারো প্রশ্নের কোন উত্তর আমি দিতে পারলামনা। আমার প্রত্যাবর্তনের খবর চেয়ারম্যান যেনে গেল, থানা থেকে লোক আসলো। ঐদিন দুপুরেই জুম্মার নামাজের সময় মসজিদের চেয়ারম্যানের লোকেরা আমার ফিরে আসার কথা ইমামের কানে দিল।

ইমাম এই ঘটনাকে কলিযুগের আবির্ভাব বলে অভিহিত করলো, নানা হাদিস-কুরানের আয়াত শুনিয়ে ঘটনাকে জটিল করার চেষ্ট করলো এবং সফল হলো যে আগামী কালকে আমাকে সালিশে হাজির করতে হবে। সব ঘটনা খুলে বলতে হবে। যদি সত্য কথা না বলে তাহলে এই কলঙ্কীনি-নষ্টা নারীকে একশ বেত্রাঘাত করা হবে এবং ওর বাবা-মা কে গ্রামছাড়া করে দেওয়া হবে। এই সংবাদ একজন মুসুল্লী এসে বাবাকে ইমামের পক্ষথেকে বলে গেল। বাবা মাথা ঘুরিয়ে মাটিতে পড়ে গেল কেউ এসে ধরারো সুযোগ পেলনা।

প্রতিটি ঘটনা আমাকে প্রতি মুহুর্তে তীরের ফলার মত বিদ্ধ করছে। আমার কি হয়েছিল?আমি কেন ফিরে আসলাম? কোথায় ছিলাম? আমার শুধু একটা কথায় মনে হচ্ছে আমাকে কেউ একজন একটা লকেট পড়িয়ে দিয়েছে। সে আমাকে বলেছে তার কথা স্মরণ করলেই সে এসে দেখা দিবে। আমার কেবলই মনে হচ্ছে সে যদি আসে তাহলে কি আমি আবার আগের মতো নিরুদ্দেশ হহ্যে যাব? রাতে বাবা-মা প্লেটে কিছু খাবার নিয়ে আমার কাছে এসে বসলো। আমি কিছু না বলেই খেতে শুরু করলাম, খাবার গলায় আটকে যেতেই মা চরম মমতায় পানি খাইয়ে দিল।

বাবা এসে পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। খাওয়া শেষ হতেই মাকে জিজ্ঞেস করলাম আহির খেয়েছে? মা-বাবা দুজন একসাথেই উত্তর দিল খেয়েছে। তারপর একটু নীরবতা............ আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, বাবা নীরবতা ভেঙে বললো, মারে সত্যি করে একটা কথা বলবি। আমি বললাম কি বল বাবা।

তুই এই কয়দিন কই ছিলি? আমি নীরব থেকে বললাম, জানিনা। আচ্ছা ঠিক আছে, বলতো ঐদিন বিলের পানিতে কেন নেমেছিলি? কেন আবার শাপলা তুলতে। কি ঘটেছিল বলবি? আমি তাকে ডুব দিয়ে লুকানোর চেষ্টা করা পর্যন্ত সব বললাম। কিন্তু এর পর আর কিছু বলতে পারলামনা। বাবা আমি সত্যি কিছু জানিনা, আমার কিচ্ছু মনে নেই।

কালকে তোকে নিয়ে সালিশ বসবে, ওরা তোকে বেত্রাঘাতে জর্জরিত করবে। আমার সামনে তোকে মেরে ফেলবে আমি কি করে সইবো। তার চেয়ে তুই আমাদের ছেড়ে চলে যা। আমরা ভেবে নিব আমাদের মেয়ে মারা গেছে। তুই আহিরের দিক চিন্তা করে হলেও চলে যা।

বাবা-মা দুজনেই চলে গেল। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম, ওঁরা কি বলে গেল এসব? আমাকে এতো সহযে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে বলল? আমার জন্য তাদের সব সমস্যা আবার আমি চলে গেলেই সব সমাধান হয়ে যাবে? আমার জন্য কথা বলার কেউ নেই? আমার জন্য নাগরিক অধিকার বলে কিছু নেই? আমি এইসব চিন্তা করতে করতে লকেটে হাত দিলাম। মনে করতে চেষ্টা করলাম কে দিয়েছে এই লকেট। হটাৎ রাতের অন্ধকার ভেদ করে আলোর শুভ্রতায় ভরে গেল চারিপাশ। শাপলা পরীরা এসেই বললো তোমার হাতে এখনো ৬দিন সময় আছে চিন্তা করে দেখ, আমাদের সাথে যাবে না থাকবে? আমি বললাম আমার এখানে কেউ নেই যে আমি থাকবো, আমাকে নিয়ে চলো তোমাদের সাথে।

আমি যাদের জন্য এসেছিলাম তারা আর আমাকে বাঁচাতে পারবেনা, তারা সমাজের ফতোয়ার ভয়ে ভীত। তাহলে চলো আমাদের সাথে। সেই ভালো তোমাদের সাথেই যাই। পরের ঘটনা................ পরের দিন সালিশের আগে শাপলাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলনা। কোথায় চলে গেছে কেউ জানেনা।

অনেক খুঁজেও না পেয়ে সালিশের লোকজন চলে গেল। ঐদিন রাতেই কারা এসে যেন শাপলাদের ঘর-বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে গেছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।