তাশফী মাহমুদ রহস্যজনক কিছু প্রকাশনা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিদেশী অখ্যাত কিছু ওয়েব পত্রিকা ও পোর্টালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। এসব প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ঢাকার কিছু পত্রিকা প্রকাশ করছে এসব তথ্য। চাঞ্চল্যকর এসব তথ্যে বিভ্রান্ত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। এসব রিপোর্ট নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
সম্প্রতি আলোচনা হচ্ছে শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ান নামের একটি ওয়েব পোর্টালে বাংলাদেশ সম্পর্কে একের পর এক প্রবন্ধ নিয়ে। জেসিকা ফক্স নামে একজন লেখিকা এসব প্রবন্ধের লেখক। এর আগেও সুনীতা পাল নামে এক লেখিকা বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বের নামী-দামী প্রচার মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করতেন। পরবর্তীত পর্যায়ে জানা গেছে, এই নামে কোন লেখিকার অস্তিত্বই নেই। ধারণা করা হয়, প্রতিবেশী দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এসব প্রতিবেদন সরবরাহ করা হতো।
এবার শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ানে বাংলাদেশ সম্পর্কে যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের কোন সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকরা এসব তথ্য পাচ্ছে না। অথচ বিদেশী একজন অখ্যাত লেখক কিভাবে এসব তথ্য পাচ্ছেন। লেখক জেসিকা ফক্স নামে কি আদৌ কি কেউ আছেন? নাকি অন্য কোন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেই এসব লেখা সরবরাহ করা হচ্ছে?
জেসিকা ফক্স শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ান নামক ওয়েব পোর্টালে বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগের নানা কর্মকা- নিয়ে একাধিক আক্রোশমূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। এতে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন।
এছাড়াও বর্তমান সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে দেশে গুম, হত্যা, অপহরণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে হত্যা, গুম ও অপহরণ শুরু হয়। বিশ্বের এ বিষয়টি এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। বিশেষ করে বর্তমান সরকার তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য দলীয় লোকদের দিয়ে এক শ’ ক্যাডার বাহিনী তৈরি করেছে। এ বাহিনীতে রয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সদস্যরা।
যারা এ ধরনের অপহরণ, গুম ও হত্যার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এ বাহিনীকে সরাসারি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র’-এর তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ভারতের দেরাদুন থেকে এদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন অভিযোগ তোলা হয়েছে, তারেক সিদ্দীকী কমান্ড প্রশিক্ষণের জন্য আওয়ামীদলীয় ক্যাডার সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের দেরাদুনে পাঠাচ্ছেন। এ বাহিনী প্রশিক্ষণ শেষে যখন দেশে ফিরে আসছে তখন তাদের কাছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা, মিডিয়া ও সুশীল সমাজ এবং মিডিয়া ব্যক্তিদের নামের তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ৮৩ জনের নামের একটি তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে বলে প্রচার চালিয়েছেন। নামের এই তালিকা ধরেই তাদেরকে গুম ও হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ক্যাডার বাহিনীকে গুলশান বারিধারার আলাদা আলাদা ভবনে রাখা হয়েছে।
এদের কাছে হাল্কা ধরনের মাঝারি রেঞ্জের অস্ত্র সরবরাহও করা হয়েছে। তারা বেশিরভাগ সময়ে নীরবে চলাফেরা করে এবং তাদের গায়ে বুলেটপ্রুফ জেকেট থাকে।
তাদের অপারেশনের জন্য দেয়া হয়েছে গ্যাস বোম এবং পরিবহন। বিশেষ বাহিনীর কিছু সদস্যদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে স্যাটেলাইট ফোন। আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী এ বাহিনীর সদস্যদের আকর্ষণীয় বেতনসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছে বলে প্রচার চালানো হয়েছে। এদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নাকি আবার দেয়া হয়েছে ঢাকা শহরের একটি করে ফ্ল্যাট এবং ব্যবসায়িক সুবিধা। দিনের বেলা নাকি এসব সদস্যদের বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ এবং অধিকাংশকেই ঢাকা শহর ও এর আশপাশেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
আবার বলা হয়েছে এসব বাহিনীর নাকি সব সময় কালো পোশাক ব্যবহার করতে এবং হেলমেট পরে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে যাতে অন্যরা তাদের মুখ না দেখতে পারে। ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত পারাপারের অনুমতি দেয়া হয়েছে কোন প্রকার ট্রাভেল ডকুমেন্ট ছাড়াই।
এখানেই শেষ নয়। অন্য একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে (২৪ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার গার্ডিয়ানে প্রকাশিত) ২০০৮ সালে সামরিক জান্তার ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। এ সরকার ক্ষমতায় এসেই দেশের জনগণের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপের ফলে দেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে।
এনফোর্স ডিসএপিয়ারেন্স এ্যান্ড ফ্যাসিস্ট ইন বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিবেদনে জেসিকা ফক্স উল্লেখ করেছেন বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে এখন গুম অপরহরণ ও হত্যাকা- সংঘটিত হচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীরাই এ হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছে। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই শুরু হয়েছে এ ধরনের হত্যাকা-। এমনকি বিরোধীদলীয় নেতা এম ইলিয়াস আলী অপহরণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অপহরণ নিয়ে জোক করতে পর্যন্ত ছাড়েননি।
সবচেয়ে উল্লেখ করার বিষয় বর্তমান সরকার নাকি দিল্লীর কাছ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার গ্রীন সিগনাল পেয়েছেন। এজন্য নাকি আওয়ামী লীগ পরিচালিত সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের মাঝেও অনেকটা কমফোর্টেবল বোধ করছেন। তিনি উল্লেখ পর্যন্ত করতে ছাড়েনি বর্তমান সরকারে সময়ে একদলীয় শাসন চলছে। প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের আগের ৫ বছরের শাসনামলের মনগড়া মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দ্বিতীয়বারের মতো তার শাসনামলের দুঃশাসনের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
প্রথমবার নিজের পিতার কর্মকা-ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে মনগড়া অসত্য তথ্য প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ানের লেখক জেসিকা ফক্সের কল্পনার দৌড় এখন যে তিনি অমর্ত্য সেন ও ইউনূসকে দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করে ছেড়েছেন। তিনি লিখেছেন ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টোতে উল্লেখ করা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া ও ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের মেনিফেস্টোসহ সার্বিক নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে দেয়া হয়েছিল ভারত থেকে। ভারতের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব যাঁরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও প্রবণ মুখার্জীর নির্দেশে আওয়ামী লীগকে জয়ী করতে নির্বাচনী মেনিফেস্টো তৈরি করেছিলেন। মেনিফেস্টোর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল নোবেলপ্রাপ্ত ভারতের অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরামর্শে।
সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল নয়া দিল্লীর সাউথ ব্লকের পরামর্শে। নির্বাচনী ক্যাম্পেনে ভারতের পলিসিমেকারও জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারে ভারতে সক্রিয় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য ছিলÑ ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে চুক্তি স্বাক্ষর, যার মাধ্যমে ভারতীয় সিদ্ধান্ত চিরদিনের জন্য বিনা বাধায় বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয়া। ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা তাঁর বিজয় নিশ্চিত করতে ভারতে বিশেষ দূত পাঠিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। সেখানে তাঁকে আওয়ামী লীগকে জয়ী করার আশ্বাস দেয়া হয়।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর গঠিত মন্ত্রী পরিষদকে ভারতের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, ভারতের দেয়া এসব প্রতিশ্রুতি পালন করা হচ্ছে বিনাবাক্যে কোন প্রশ্ন আরোপ ছাড়াই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।