আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সীমাহীন প্রতিপত্তি

একসময় দেখলাম, সবই কল্পনা, বাস্তবতায় শূন্য পৃথিবী। পরিচিত হোন, এক জনদরদী লোকের সাথে। এই গ্রামেই তার বাড়ি, এখানেই বিত্ত বৈভব। এখান থেকেই তার গোড়াপত্তন। কিসের গোড়াপত্তন? এক হিংস্র মানুষের, এক জঘন্য লম্পটের।

একজন খুনীর। আজ থেকে গুণে গুণে ঠিক ১০টি বছর আগে, একরাম সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন। ক্যাডার সার্ভিস। তখন এই গ্রামে হল্লা হয়েছিল। সবাই দেখতে এসেছিল একরামকে।

একরামও তাই চাইত। সে চাইত, এ গ্রামের সবাই তাকে পূজা করবে। সবাই উঠতে বসতে তাকে স্মরণ করবে। লোকে তাই করত। এখনও করে।

তবে সন্তর্পণে। ভয়ে ভয়ে। গ্রামের এই দরিদ্র্য জনবসতিতে তিনি কামড় বসিয়েছিলেন আজ থেকে ৪ বছর আগে। সেদিন ছিল পূর্নিমার রাত। গ্রামে তার আগমন ঘটে সন্ধ্যের ঠিক আগ মুহুর্তে।

তাদের বাড়ি এখন বিশাল অট্টালিকা। রাজপ্রাসাদ বললেও ভুল হবে না। এই বাড়ির ভেতরে তিনি করেছেন অসংখ্য ঘর। পাশে সোনাগাজির ১০ কাঠা জায়গাও তিনি খেয়েছিলেন। এ গল্পে সোনাগাজির একটি বিশেষ ভূমিকা আছে।

সোনাগাজি নিতান্ত দরিদ্র মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষ। পরিশ্রমী, আত্মপ্রত্যয়ী, তাইতো তিনি পড়াশোনা করিয়েছেন খেয়ে না খেয়ে তার আদরের ধন তিন পুত্র ও এক কন্যাকে। কন্যার নাম সারথী রেখেছিলেন। কন্যা একদিন সারথীর মত এগিয়ে নিয়ে যাবে গ্রামের সমস্ত মানুষকে।

এতটাই ছিল তার আশা। কিন্তু সোনাগাজিকে হতবম্ব করে দিয়ে একরাম তার দশকাঠা জমিকে নিজের নামে লিখিয়ে নিলেন। তাতে সোনাগাজীর কপালে জুটলো, ঠিক ৫ কাঠা। তিনি দমে গেলেন না। অনেক আশা করে, কৃষি কাজ করে নিজের ছেলে আর মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন।

যেদিন সোনাগাজির ছেলে ঢাকা থেকে একটা বড় রকমের ডিগ্রী নিয়ে এলো, আর বলল, সে সরকারি ক্যাডারে চাকরি করবে, একরাম কি করে যেন সে খবরটা পেয়ে গেল। তারপরে সোনাগাজির সে ছেলেটা গুম হয়ে গেল। কে করল কেউ বলতে পারে না। কি হলো ছেলেটার কোন হদিসই মিলল না। শেষে সোনাগাজি গেলেন একরামের কাছে।

একরাম সেদিন সে পূর্নিমার রাতে বাসায় একা ছিলেন না, ছিলেন তার পরিবার পরিজন নিয়ে। সোনাগাজির কথা তার কানে আসতেই তিনি নড়েচরে বসলেন। সোনাগাজি প্রবেশ করল। সালাম করে কুশল জিজ্ঞেস করল। তারপরে নিজের ছেলের কথা পারল।

একরাম সাহেব চোখ ছল ছল করে উঠল। তিনি মর্মে ব্যাথিত হয়ে সোনাগাজিকে বললেন, আমি তোমার ছাওয়ালরে ফিরায়া দিমু। কিন্তু আমারে তো কিছু দিতে হয়। সোনাগাজি সব দিতে প্রস্তুত ছিল। সে মনে মনে হিসেব করে বলল, আমার বসত ভিটা নিয়ে নাও বাবা, সব তোমার নামে করে দেব।

একরাম এর বসত ভিটার লোভ কবেই চুকে গেছে। এখন তার লোভ অন্যত্র। একটু বিনোদন। সোনাগাজিকে সে বলল, তোমার মাইয়ারে পাঠায় দাও। আর কিচ্ছু লাগবে না।

সোনাগাজি বলল, না মিয়া, এ হবার নয়, আপনি কি পাইছেন? আমাআর দশকাঠা জমি মারছেন, কিছু কই নাই...এ হবার লো। সোনাগাজি উঠে পড়ে। তার আরও দুইটা ছেলে ও একটা মেয়ে আছে। তাদের সে যক্ষ্মের ধনের মত আগলাইয়া রাখে। ছেলে দুইটা পড়াশোনায় খুব ভালো।

মেয়ে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিবে। তাদের দিয়েই তার সব হবে ক্ষণ। একটা ছেলে গেছে, কি আর করার। এ নিয়তি ছাড়া আর কিছুই না। সোনাগাজি উঠে পড়ে।

বাড়ি যায়। সেদিন পূর্নিমার রাত ছিল। সোনাগাজির বাসায় মধ্যরাতে হামলা হয়। ভয়াবহ হামলা। সোনাগাজির হাতে কোপের পর কোপ মারে কে যেন।

সোনাগাজির দুই ছেলেকে বেঁধে ফেলে কারা যেন। সোনাগাজি চোক্ষে তখন কিছুই দেখে না। সে শুধু সুরা পড়ে। জোড়ে জোড়ে পড়ে। পাশে সারথীর ঘর থেকে চিৎকার আসে, গগন বিদারী চিৎকার।

সে চিৎকার, আর আরবী সূরা মিলে এক অদ্ভূত পরিবেশ হয়। সোনাগাজি রক্তক্ষরণে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সারথীর দম বের হয়ে যায়। সোনাগাজির ছেলেদের গলা কেটে নেওয়া হয়। পরদিন সকালে যখন ফজরের আযান পড়ে, চারিদিকে নিস্তব্ধ নিরবতা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়, সোনাগাজির বাসা এক আদিম নিরবতায় পড়ে থাকে এক পাড়ে।

সেখান থেকে মনুষ্য বলতে সবই হয়ে যায় অতীত। গ্রামের মুসল্লিরা নামাজে যাবার সময় দেখে, একরাম সরকারি গাড়িতে নিজের ছেলে মেয়ে বউকে তুলছে। গাড়িতে পতাকা লাগানো। বাংলাদেশের পতাকা। একরাম কে দেখে কেউ জিজ্ঞেস করে, ঢাকায় চলে যাও? একরাম বলে হ! আজই অফিসের তন ডাক আইছে।

যাইতে হবে। যাওয়ার সময় একবারও একরাম সোনাগাজির বাড়ির দিকে তাকায় না। এটুকু জায়গা তার পাওয়া হবে ভাবতেই পুলকিত অনুভব করে সে। এমন সময় সিটে বসে থাকা নিজের মেয়ের দিকে চোখ পড়ে একরামের। বলে, আম্মু কি করে? ঢাকায় যায়? মেয়েটি নীরবে বাবার দিকে তাকিয়ে ছিল।

সে কিছু উত্তর করে না। শুধু বলে বাবা, কাল রাতে একটা মেয়ে কোথা থেকে যেন চিৎকার করছিল। আমার খুব ভয় লেগেছে বাবা... একরাম এ কথার উত্তরে বলে, কি জানি, ভুতটুত হবে মনে হয়। শেয়ালও হতে পারে। ৪ বছর পর, সোনাগাজির বসতভিটা একরামের বাগানে পরিণত হয়।

এ গ্রামে তার মত প্রতিপত্তি আর কারও নেই। একরাম গ্রামে একটা মসজিদ বানায়, একটা মাদ্রাসা করে। একরাম হজ্জ্ব করে আসার পর, নূরানী দাড়িতে চেহারা ঢেকে গেছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।