অস্তিত্বের মাঝে অস্তিত্বহীন একজন ওকে নিয়ে প্রথম যেদিন বেড়াতে যাই, গিয়েছিলাম এক নদীর ধারে। নদীর দু’পাশে বিস্তৃত ধানক্ষেত আর ছিল গাছের সারি । সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমরা দুজন । পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়া সূর্যের আলো গাছের ফাঁক দিয়ে এসে পড়েছিল ওর চোখে মুখে । এমনিতেই কম কথা বলা আমি একদম নির্বাক হয়ে চেয়েছিলাম ওর দিকে ।
সূর্যটা যদি সব সময় ওখানেই ঝুলে থাকতো তবে আমার চেয়ে থাকা বুঝি কখনই শেষ হত না । এভাবেই আমাদের স্বপ্নময় পথ চলার সূচনা হয়েছিল ।
আমাদের সম্পর্ক কেমন করে হয়েছিল তা নাই বা বললাম তবে সেদিনের পর থেকে আমরা আরো কাছে এসে পড়ি। হাতে হাত রেখে পাড়ি দেই বহু পথ। ও ছিল ভীষণ চঞ্চল।
সারাক্ষন খালি দুষ্টুমি করত আর বকা দিতে গেলেই ছোট বাচ্চাদের মত একটা হাসি দিত। ওর ঐ হাসিতে কী ছিল আমার জানা নেই, তবে আমার আর বকা দেওয়া হত না ।
আমার জীবনটা ছিল প্রচণ্ড অগোছালো। মাঝ নদীতে আমি হয়ে পড়েছিলাম বৈঠাহীন। না, ও আমার জীবনে এসে রাতারাতি কিছুই বদলে দেয় নি ।
তবে আমার ক্রমশ অধঃপতনে যাওয়ার গতিটা ঠিকই রোধ করতে পেরেছিল। আমি ছিলাম প্রচণ্ড অসামাজিক। কারো সাথে তেমন কথা বলতাম না। নিজের আত্মীয় স্বজনকেও তেমন চিন্তাম না। কারো জন্য কখনো কোন ভালবাসা বোধ করতাম না।
কিন্তু ওকে ভালবেসে ফেলার পর বুঝলাম ভালবাসা আসলে কি। পরিবারের সবার জন্য আমার ভালবাসা জেগে উঠলো। সবাইকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে শিখলাম। আগে যেখানে বেঁচে থাকার উদ্যম পেতাম না, সেখানেই বেঁচে থাকার রসদ পেতে লাগলাম। পুরোটা সময় পাশে থাকল ও ।
ওকে আমি প্রচণ্ড ভালবেসে ফেলেছিলাম। ওকে ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করতে পারতাম না। আর তাতে যা হওয়ার তাই হল। ওকে হারানোর ভয় মনে ঢুকে গেল। এত ভালবাসা পাওয়ার পরও প্রায় প্রায় আমার নির্ঘুম রাত কাঁটতে লাগলো ।
ও না থাকলে আমি কেমন করে থাকব এই চিন্তা সারারাত আমায় জাগিয়ে রাখত। আমি না থাকলে ও কত কষ্ট পাবে এটা ভেবেও প্রচণ্ড খারাপ লাগত। ওকে বললেই ও হাসাহাসি করত আর জড়িয়ে ধরে বলত, ‘তোমাকে ছেঁড়ে আমি কোথাও যাব না বাবুটা’। ওর হাসিতে হারিয়ে ফেলতাম আমার কষ্টগুলো। একই সাথে আমরা স্বপ্ন বুনতাম।
আমরা একে অন্যের আত্মা হয়ে উঠেছিলাম। অসম্ভব স্বপ্নময় হয়ে উঠেছিল আমাদের জীবন ।
ও কে আমি সব থেকে বেশি বিশ্বাস করতাম। অবিশ্বাস করিনি ওর দুষ্টুমির ছলে বলা কথাগুলোও। কিন্তু তারপরও ও আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে সেটা আমি কখনও ভাবি নি ।
ওর তো কোন চাহিদাই আমি অপূর্ণ রাখিনি। ও যখন যা আবদার করেছে তাই করেছি। তারপরও ও থাকলনা। হঠাৎ করেই চলে গেল । বলে গেলনা কি আমার অপরাধ।
ওকে তো আমি কম ভালবাসি নি। সেটাতো ও জানত। তবে কেন এরকম করল আমার সাথে? ও তো বলে ছিল কখনো আমার হাত ছাড়বেনা। তবে কেন এত সহজে ছেড়েদিল? আমার পৃথিবী সাজিয়ে কেন নিজের হাতে ভেঙ্গে দিয়ে গেল? আমার প্রশ্নগুলো প্রশ্নই থেকে যায়......
আজও পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়া সূর্য ওর কবর কে আলোকিত করে যায়। আজও আমি ওর কবরের দিকে নির্বাক তাকিয়ে থাকি , ঠিক প্রথম দিনের মত ।
আমার অপেক্ষার পালা কখনও শেষ হয়না। কেউ এসে বলেনা, ‘কাঁদছ কেন প্রিয় ? এই যে দেখ আমি এসে গেছি ............। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।