লেখক/কবি
মুহাম্মদ ‘আজিজা (জন্ম ১৯৪০)
তিউনিসিয়ার কবি, ছোটগল্পকার, লেখক, এবং সাহিত্য সমালোচক মুহাম্মদ ‘আজিজার জন্ম তিউনিসে। তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে সামাজিক সংস্কৃতি বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি বেশ কিছু উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তিউনিসিয়ান টেলিভিশনে আন্তর্জাতিক বিভাগে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে আদ্দিস আবাবায় অবস্থিত অর্গানাইজেশন অব আফ্রিকান ইউনিটির তথ্য বিভাগের পরিচালকের পান।
১৯৭৫ সালে ইউনেস্কো তে যোগ দেবার পর, ১৯৭৮ এ তিনি আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির আরবিয় অংশের সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পান। ১৯৮৯ এ রোমের ইউরো-আরব বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর পদে নিয়োগ পান। নিজ নামে তিনি সমালোচনার অনেক গুলো বই লিখেন, এর মধ্যে থিয়েটার ইন ইসলাম (১৯৬৯) এবং থটস অন কন্টেমপোয়ারি আরব থিয়েটার (১৯৭২) এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। এছাড়াও তার সৃষ্টিশীল বেশকিছু লেখা শামস নাদির ছদ্মনামে ছাপা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দু’টি কবিতা সঙ্কলন, সাইলেন্স অব সিমাফোরস (১৯৭৯), এবং বুক অব সেলিব্রেশন (১৯৮৩), এবং ১৯৮০ সালে ছাপা হওয়া গল্পসংগ্রহ, দ্যা এস্ট্রোল্যাব অব দ্যা সি।
প্রতিশোধ
উড়ে উড়ে দূরে চলে যাই, নবজাতকের সঙ্গে প্রভুর কাছে। –পাহাড়ি এলাকায় সূর্য দিগন্তের সীমা রেখায় মিলিয়ে যাবার সময়কার প্রবাদ, পথ হারানো ঘোড়সওয়ার আরো শক্তকরে তার ঘোড়ার দু’পাশে চাপদেয়, তার বেপরোয়া এই ঝাঁকি ঘোড়াটার সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছেযায়। এধরনের আচরণ করলেও এই যুবক কোন ঘৃণ্য কাপুরুষ নয়, তারপরও এখন সে ভয়ে কাঁপছে। যেদিন থেকে এই এলাকায় লোকজনের রহস্যময় হারিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই তার বানু রাবি গোত্রের পুরুষদের মাঝে এমন ধ্বংসের খেলার শুরু, কেবল তারই ভালো করে জানা আছে আরব উপদ্বীপের কাতারের উত্তর মরু আল-রাব আল-খালির বিরান শূণ্যতার মাঝে পথ হারানো কতটা ভয়ঙ্কর। বিশালাকার বাদুড় আর হিংস্র পশু এবং ভয়ানক মানুষখেকো রাক্ষসের মাঝে তার পূর্বপুরুষেরা কেমন করে এখানে এসে বসতি গড়ে তুলেছে সেই ভাবনা পেয়ে বসে তাকে।
এইসব গাল গল্প সে নিজেও খুব একটা বিশ্বাস করেনা। তারপরও তার গোত্রের লোকেদের নিয়মিত হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে, এটা একটা বাস্তব সত্য। এবং এতসব গল্পের পেছনের সত্যিকার কোন যুক্তি সে দাড় করাতে পারেনি। ভয়ানক দাঙ্গা শেষ হবার পরের বছর থেকে লোকজনের মাঝে অদ্ভুত এই হারিয়ে যাওয়ার বাতিক শুরু হয়েছে। সেই অবুঝ বালক বয়স থেকেই এমন পরিস্থিতি দেখে আসছে সে, তখন তার বয়স খুব কম হলেও আজো সেসব ঘটনার প্রায় সবই তার মনে আছে।
প্রথম এক হিংসাত্মক ঘটনা থেকে এর শুরু। তাদের মিত্র কালব গোত্রের সুন্দরী আইখা কান্দিখার অনেক পাণিপ্রার্থী ছিল। কিন্তু শেষে সে বানু রাবির গোত্রপতি তার নিজের চাচাতো ভাইকে পছন্দ করে। তাদের বিয়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সুন্দর সেই প্রেম কাহিনীর ইতি ঘটে, কিন্তু এরপর থেকে সেই লোলুপ প্রত্যাখ্যাতরা মনের গভীরে সীমাহীন ঘৃণা পুষে ফুঁসে উঠতে থাকে। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হবার সাতদিন পর, প্রাক্তন দু’জন পাণিপ্রার্থী এক হয়ে তাদের কয়েকজন সঙ্গী সাথি সমেত বিয়ে উপলক্ষে বরের বাড়িতে পান করার জন্য আসে।
মদ্য পান করার কিছু ক্ষণের মধ্যে মদের মাদকতায় তাদের সবাই বদ্ধ মাতাল হয়ে ওঠে, মাতলামি করতে করতে একপর্যায়ে মাতালদের সামান্য ঝগড়া সংঘাতে রূপনেয়। একসময় বৈরী প্রতিপক্ষেরা থামলেও, তাদে মধ্যে একজন, সেই সুন্দরী আইখা কান্দিখার স্বামী, মাটিতেই পড়ে থাকে, এরপর আর কখনই সে উঠে দাড়ায়নি; কপালের পাশে প্রচণ্ড আঘাত লাগায় ঘটনা স্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শোকে পাগল প্রায়, আইখা কান্দিখা কাঁদতেও ভুলে যায়, এমন কি তার মুখ থেকে ফোঁপানোর শব্দও কেউ শুনতে পায়নি। তবে গোত্রের আদিম প্রথা অনুসারে সে এর উপযুক্ত একটা বিচার দাবি করে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাদের করনীয় ঠিক করতে, দুই গোত্র প্রধান একসঙ্গে বসে এব্যাপারে বিস্তারিত শলাপরামর্শ করে।
ঘটনার সঙ্গে তাদের কৌশলগত আরো অনেক বিষয় জড়িত থাকায়, এনিয়ে তাদের অনেক দিনের মিত্রতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কোন দাবি তারা কেউই উত্থাপন করেনা-তাদের সবার আশঙ্কা,অন্যদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে গিয়ে, শত্রুপক্ষীয় গোত্রটি বানু চান্ড-ডেড দের সঙ্গেও না আবার তারা খুব দ্রুত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
তাই তারা এর বদলে দেশের প্রথানুগ আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়, যা, নিদিষ্ট ক্ষেত্রে, রক্তপাত সম্পর্কিত প্রাচীন আইনের বদলে, সমঝোতার মাধ্যমে কোন একটা সুন্দর বিকল্প সমাধানে পৌঁছাতে সাহায্য করে। বানু রাবি গোত্র নিহতের অসহায় বাবামাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে একহাজার সাদা উট এবং একপাল সাদা রঙের ছাগল সরবরাহ করবে বলে উভয় পক্ষ এক চুক্তিতে উপনীত হয়। বিধবা ছাড়া অন্য সবাই এই চুক্তি মেনে নেয়। সে টানা তিনদিন ধরে প্রাচীন সেই আইন কার্যকর করার দাবি জানান।
তাকে বোঝাবার সব চেষ্টায় বিফল হয়ে শেষে আবারো এব্যাপারে কথা বলার জন্য কালব গোত্রপতি তার বাবামাকে ডেকে পাঠায় এবং তাকেও সঙ্গে আনতে বলেন, এবং সময়ই একসময় তার মনের সব ক্ষত সারিয়ে তুলবে বলে বোঝান।
উভয় গোত্রপতির মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পাদনের চতুর্থ দিনে তারা বুঝতে পারেন আইখা কান্দিখা বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে। তার তাবুতে গিয়ে তারা দেখেতে পায়, তার সব কিছুই এমন ভাবে পড়ে রয়েছে যেন, ব্যবহৃত জিনিসপত্রের কোন কিছুই সে সঙ্গে করে নিয়ে যাবার প্রয়োজন বোধ করেনি। তবে একটা জিনিস সবার নজর কাড়ে, সে তাঁবুর মাঝখানের খুঁটির সঙ্গে একটা রক্তমাখা জামা ঝুলিয়ে রেখে গিয়েছে। তাতে নিজের রক্তদিয়ে তার উপজাতিয় ভাষায় একটাই শব্দ লেখা রয়েছে- “থা’র”-যার মানে “প্রতিশোধ।
” মনে করা হয় আইখা কান্দিখা তার তীব্র শোক সামলে নিয়ে, তাঁবু ছাড়ার আগে, কব্জি কেটে, নিজের রক্ত দিয়ে শব্দটা লিখে রেখে গেছে। গোত্র প্রধান, সব রক্ত ঝড়ে পড়ার আগেই সেই মতিভ্রষ্ট মহিলাকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। কেননা তার গোত্রে আত্মহত্যা পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং লজ্জাজনক কাজ বলে বিবেচিত হয়, এই কাজ করার পর নরক যন্ত্রণা থেকেও কখনই কেউ রেহাই পায়না বলেও বিশ্বাস প্রচলিত আছে। রক্তের দাগ যতদূর পর্যন্ত পাওয়া গেছে তত দূর পর্যন্ত তারা তার পিছু ধাওয়া করে, এক সময় কোথাও আর তার কোন চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যায়না। এভাবে টানা সাতদিন ধরে তারা সবাই মিলে তার খোঁজ করে।
আশপাশের সবগুলো তাবুতে তার খোঁজ করা হয়। সব কোণা কাঞ্চি, খানাখন্দ আর পাহারের ফাটল ও গুহাতে খোঁজ লাগানো হয়, লুকিয়ে থাকা, বা মড়ে পড়ে থাকা সম্ভব এমন সম্ভাব্য সব জায়গাতে খুঁজে দেখা হয়। এমনকি সমতলের শেষ সীমানা জুড়েও খোঁজা হয়। কিন্তু তাকে খুঁজে পাবার সব চেষ্টাই বিফলে যায়। এবং তাদের সবাইকে এক সময় এই সত্যটা মেনেই নিতে হয় যে আইখা কান্দিখা রহস্য জনক ভাবে বাতাসে মিলিয়ে গেছে।
একসময় তারা খোঁজাখুঁজি পুরোদমে বন্ধ করেদেয়। এবং পাছে তাদের স্রষ্টা আল-লাত, মানাত, এবং ‘ঊযের ক্রোধের উদ্রেগ করে এবং ক্ষমার অযোগ্য এই অপরাধের জন্য তাদের উপর উনাদের ভয়ানক রোষ বর্ষিত হয়, এই ভয়ে তারা সেই বিধবার নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করতে ভুলে যায়। দিন যাবার সঙ্গে সঙ্গে গোত্রের সদস্যেরা তাদের মিত্রতার মাঝে চির ধরাবার মতো সেই অনুতাপের ঘটনা এবং সেই বিধবার হারিয়ে যাবার প্রচণ্ড অস্বস্তিকর পরিস্থিতির কথা ভুলে যেতে থাকে।
কিন্তু তার ঠিক এক বছরের মাথায় অদ্ভুত এক ঘটনার কারণে তাদের সেই পুরাতন ভয়টা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গোত্র প্রধানের ছেলে আল-রাব আল-খালি মরু ভূমির অপর প্রান্তে সম্পূর্ণ সঙ্গী সাথি বিহীন অবস্থায় একা পথ হারিয়ে ফেলে।
সেখান থেকে কখনই সে আর ফিরে আসেনি। হাজার খুঁজেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। তারপর থেকে বানু রাবি গোত্রের যে কেউ বোকার মত সে জায়গাটিতে ঘুরতে গেছে, তাদের কেউই আর পথ হারিয়ে জীবিত ফিরে আসতে পারেনি। তাদের কারোরই টিকিটা পর্যন্ত আর কখনই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এসব কথা ভেবে, পথহারা ঘোড়সওয়ার ভয়ে দমে যায়, তাই সে কোথাও লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করতে পর্যন্ত ভুলে যায়।
তার খানিক বাদেই, মরিয়া হয়ে সে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে, একসময় অনেক দূরে আগুনের ম্লান একটা শিখা দেখতে পায় সে। ঘোড়া দৌড়ে সে দ্রুত সেদিকে রওনা হয়। “অবশেষে,” মনে মনে সে ভাবে, “বিরান এই মরুর মাঝে কারো সন্ধান পাওয়া গেল। বাকি রাতটা আমি সেখানেই কাটাবো, তারপর ভোর হলে আবার রওনা হব। ”
আগুনটার কাছাকাছি হবার সময়, সে তার ভাবি সঙ্গীর একটা অবয়ব ভাল করে দেখে নেয়ার চেষ্টা করে।
জমকালো বুর্নুসে আচ্ছাদিত তারদিকে পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে লোকটা। কাছাকাছি হতেই, ঘোড়াটাকে দাড় করাতেই আগুনটার একেবারে কাছে চলে আসে সে, সেই বুর্নুস পড়া লোকটা এবার তার দিকে ঘুরে দাড়ায়, আয়ত চোখের এক অসাধারণ পরিপাটি যুবক তার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে। তার চোখ ঠিকরে যেনও আলো বেরিয়ে আসছে। সেই মহনীয় দৃষ্টি তাকে প্রায় সম্মোহিত করে ফেলে। প্রথানুগ ভাবে অভ্যাস বসত সে তার অভিবাদনের জবাব দেয়।
সেই যুবক তার গুহাতে রাত কাটাবার জন্য আমন্ত্রণ জানায় তাকে, এবং ঘোড়সওয়ারের পা দু’টো তে কি যেন এক মাদকতা ভরকরে। কোন আপত্তি ছাড়াই সে তার পেছন পেছন হাটতে শুরু করে। এবং নির্লিপ্তের মত তাকে অনুসরণ করতে থাকে। একটুপর সে বিশাল এক গুহা মুখে নিজেকে আবিষ্কার করে। সেই গুহার দেয়াল গুলো অসংখ্য কাচে বাধাই করা।
আলোকিত সেই গুহার দেয়াল থেকে তাই চোখ ধাঁধানো আলো বেরিয়ে আসছে। গুহার এমাথা থেকে ওমাথা দু’পাশে সারি সারি নগ্ন পুরুষ মূর্তি সাজানো রয়েছে। তাদের সবার চুল তুষার ধবল আর চোখের কোটর গুলো ফাঁপা।
ঘোড়সওয়ার নিশ্চুপভাবে সেই যুবকের পিছু নেয়। দেওয়ালের আয়না গুলোতে তাদের অসংখ্য প্রতিবিম্ব ভেসে ওঠে।
অবশেষে তারা গুহার শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছে। সেখানে এসে, অদ্ভুত এক সঙ্গীতের সূক্ষ্ম মূর্ছনায় তার কান সচকিত হয়ে ওঠে। পাশের টেবিলে সাজানো সদ্য রান্নাকরা খাবারের গন্ধে পেটের ভেতর আপনা থেকে ক্ষুধা মোচড় দিয়ে ওঠে। নকশাকরা সাদা পর্দা ঠেলে চমৎকার করে সাজানো প্রশস্ত একটা কামড়ার ভেতর তারা প্রবেশ করে। ঘোড়সওয়ার অবাক হয়ে ঘরের মাঝখানটায় নীল আর সবুজ টাইলসে বাঁধাই করা ফোয়ারার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ঢুকেই যে সঙ্গীত সে শুনতে পেয়েছে, সেটা এক কেতা সেই বাদ্যযন্ত্র থেকে আপনিই ভেসে আসছে, সেগুলো কোন মানুষের হাতের সাহায্যে বাজছে না। সেই বাদ্যযন্ত্র গুলোর মধ্যে রয়েছে-একটা মুক্তোর বীণা, একটা কুয়ানান এবং একটা রাবাব। পাশের নিচু টেবিলটা তার নজর কাড়ে, সদ্য রান্না করা মাংস, সুরা আর অন্যান্য খাবারে ঠাসা রয়েছে সেটা। যুবক তাকে গোসলের আমন্ত্রণ জানায়, এরপর কোন কথা না বলেই পর্দার আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যায়। সেদিকে তাকিয়ে ঘোড়সওয়ার নিচু একটা বিছানা দেখতে পায়।
যন্ত্রবৎ সে পোশাক ছাড়ে, তারপর মেঝের গভীরে পাতা মার্বেলের বেসিনের দিকে খোদাই করা পাথরের পায়ের ছাপের ওপর দিয়ে একে একে পা বাড়ায়। বেসিনের শীতল জলের প্রণয় স্পর্শ তার ক্ষুধিত পরিশ্রান্ত দেহটাকে পরম আদরে আঁকড়ে ধরে। গোসলের মাঝে যখনই তার একটু বিশ্রাম বোধ হতে থাকে, তখনই, যে পর্দার আড়ালে সেই যুবক অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল, সেখান থেকে এক রমণীর আবির্ভাব ঘটে। জীবনে সে আগে কখনই এমন সম্মোহক অনিন্দ্য সুন্দরীর দেখা পায়নি। সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে সেও তারই সঙ্গে সেই সুখের জলে নাইতে নামে।
এক সাথে নাইতে গিয়ে একসময় ঘোড়সওয়ার টেরপায় প্রচণ্ড কামনায় সে পুরোপুরি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তার বাহুডোরে সে লাজুক ভঙ্গিতে এসে ধরা দেয়। প্রথমেই সে তাকে তার সেই তীব্র ক্ষুধা নিবৃত করে নেবার জন্য তাড়া দেয়। অদৃশ্য সেই অর্কেস্ট্রা বাদকেরাও, পান ভোজন করে বদ্ধ মাতাল হয়ে ওঠে। তারপর সুন্দরী তাকে পর্দার ওপারের বিছানার দিকে নিয়ে যায়।
সেখানকার কোন পরিবর্তনই তাকে আর একবারেই অবাক করে না। কামনায় উষ্ণ হয়ে অতি শীঘ্র সে তার সঙ্গে মিলিত হতে চায়, কিন্তু ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দেয় সুন্দরী। তারপর, তার নগ্ন শরীর খানা আরো তুলে ধরতে উরু দু’টি মেলে ধরে। ঘোড়সওয়ার অতি আগ্রহে সেদিকে তাকিয়ে উজ্জ্বল রঙের বিশালাকার অসংখ্য প্রজাপতি উড়ে যেতে দেখে। এখন তার উত্তেজনা এতই প্রবল যে, সে তার যাদুময় নড়াচড়ার অসাড় অবস্থা টেরই পাচ্ছেনা।
অনিন্দ্য সুন্দরী সেই কুমারীকে সে নিজের দিকে টেনে নেয়। এবং নিজেকে দিয়েই তার পুরো শরীর আবৃত করে ফেলে। বর্ণিল সেই ডানার ঝাপটানি ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে বিজড়িত শরীর দু’টিকে ঢেকে ফেলে।
সেই রাত্রিতে যেভাবে ঘোড়সওয়ার মরু সুন্দরীকে জড়িয়ে ধরেছে, তার জানা আনন্দ সেটা আর কখনই স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবেনা। এখানকার সব কিছুই তার কাছে নতুন বলে মনে হচ্ছে।
এবং অযুত এই প্রেমের পরশ হারানোয় ভয়ে সে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সম্পূর্ণ শূন্য মাথায়, সম্মোহিত অবস্থায়, জড়ের মত সে অসম্ভব পেলব সেই শরীরখানা, তার সেই প্রেমময় দু’টি হাতে আরো গভীর করে জড়িয়ে ধরতে চায়। এবং এভাবেই একসময় সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
কোন একসময়, ত্বকে প্রচণ্ড শীতল বাতাসের চাবুকের আঘাতে সে জেগে ওঠে। সমস্ত শরীরে অসম্ভব ক্লান্তি আর ঘাড়ের কাছে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করতে থাকে।
আকাশের তারা গুলো ম্লান হয়ে এসেছে। তাদের দু’জনে এখন আর এক সঙ্গে নেই। তার কেবলই মনে হতে থাকে, শরীর থেকে কে যেন সব রক্ত বের করে নিয়ে গেছে। যেখানটায় সেই একই বিছানাতে তারা সুখের নিদ্রা গিয়েছিল এখনো সেই জায়গাতেই শুয়ে তার এমন মনে হচ্ছে। সে গলার একপাশে খুব স্পষ্ট কয়েকটা দাঁত বসানোর দাগ দেখতে পায়।
সেই দাঁত দিয়ে কেউ মাংসের গভীর থেকে তার সব রক্ত শুষে নিয়ে গেছে।
শরীরটাও যেন একদম হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে, চোখ খুলবার মত শক্তিও তাতে আর অবশিষ্ট নেই। সেই চোখ জোড়া অতি কষ্টে খুলে সে দেখতে পায় একটা মড়া পচা পোকায় ধরা কঙ্কালকে সে অতি আদরে জড়িয়ে রয়েছে। শেষবারের মত অজ্ঞান হয়ে যাবার আগে, সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারে এটা আইখা কান্দিখার কাজ। এবার সে গুহা পথে আরো একটা মূর্তি বসাবে।
আরো একটা শিলীকিত পুরুষ তার তুষার সুরঙ্গ পথের সংগ্রহকে সমৃদ্ধ করবে। তারপর সে ঠিক ঠিক বুঝতে পারে তার গোত্রের শেষ লোকটাকে শিকার হিসেবে পাওয়ার আগ পর্যন্ত এই রক্ত চোষার প্রতিশোধ নেবার আকাঙ্ক্ষা শেষ হবে না।
মোনা এন. মিখাইল এবং ক্রিস্টোফার টিংলে এর ইংরেজি অনুবাদ থেকে সোহরাব সুমন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।