আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যু কি আতঙ্কের?

Quazi Hassan’ World of Writings আমাদের যখন মৃত্যুর মুহূর্ত আসবে, তখন আমরা কি অজানা জগতে যাত্রার ভয় পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠবো, না কি অনাবিল শান্তির ভুবনে যাওয়ার আনন্দে আত্মহারা থাকবো। মৃত্যু কি আমাদের জীবনের সমাপ্তি, না-কি শুধু আমাদের এক জগত থেকে আরেক জগতে স্থানান্তর? আমরা একটা ব্যাপারে সবাই একেবারে নিশ্চিত, মৃত্যু আমাদের অবধারিত। প্রত্যেককেই মারা যেতে হবে। কিন্তু সেই সময়টা কখন এসে হাজির হবে, তা কারোরই জানা নাই। এর থেকে রেহাই পাওয়ার কোন উপায় নাই।

আসুন ইসলাম ধর্মের আলোকে বিষয়টাকে বিশ্লেষনের চেষ্টা করি, ইনশাল্লাহ। হাদিসে( মুসলিম শরীফ) বর্ণিত আছে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্ম(সাঃ) বলেছেন, “পৃথিবীতে একজন আগন্তুক কিংবা মুসাফিরের মত জীবন যাপন কর। " মুসাফির শব্দ টাকে সহজ করার জন্যে আমরা বলতে পারি ভ্রমণকারী। যিনি এক জায়গা থাকে আরেক জায়গা যাচ্ছেন, তার চূড়ান্ত গন্তব্যকে লক্ষ করে। মুসলমানদের বলা হয়েছে, এই পৃথিবীতে পথ চলে মানুষরা তাদের চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

পৃথিবীতে এই পথ চলার উপর নির্ভর করছে, তাদের পথ চলা কোথায় যেয়ে শেষ হবে। আপনি যদি কাওকে বলেন, আপনি কোথা থেকে এসেছেন তা জানেন না আর কোথায় যাবেন তাও জানেন না, তা হলে যেই লোক এই কথা শুনছেন তার অবাক হওয়ার কোন শেষ থাকবে না। আমরা মানুষরা জন্মের আগে কোথায় ছিলাম আর মৃত্যুর পরে কোথায় যাব, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে, আমাদের পবিত্র গ্রন্থ কোরান শরীফ কি বলে, তা আমাদের খুঁটিয়ে দেখার দরকার আছে। কোরান শরীফে বেশ অনেকবার মৃত্যুর ব্যাপারে বলা আছে। সুরা আল আনবিয়া (২১:৩৫)য়, আল্লাহ রাব্বুল আম আমীন বলছেন, “প্রতিটি আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে, আর আমি তোমাদের খারাপ আর ভাল দিয়ে পরীক্ষা করি।

তোমরা আমার কাছে অবশ্যই ফিরে আসবে”। কোরান শরীফের এই উদ্বৃতি থেকে মৃত্যু ছাড়া আরেকটা বিষয় চলে আসছে। আমরা আল্লাহ’র কাছ থেকে এসেছি আর আমরা তার কাছেই ফিরে যাব। আমাদের পিতা মাতা কে হবে আর গোত্র, বর্ণ কি কবে, তা আল্লাহ তা’ লা আমাদের জন্যে নির্ধারণ করে দেন। সুরা আল ইমরানে (৩: ৬) আছে, আল্লাহ তার ইচ্ছা মত আমাদের আকার দিয়ে মায়ের গর্ভে স্থাপন করেন।

সুরা ইয়াসিনে (৩৯:৬৮) বলা হচ্ছে, ইস্রাফিল ফেরেশতা শিঙ্গা বাজান আরম্ভ করলে, হাসরের দিন এসে উপস্থিত হবে আর প্রতিটা আত্মা তাদের শরীরে ফিরে যাবে। সকল মানুষ তখন পুনুরুজ্জিবিত হবে। এর পরে প্রত্যেককে মহান সৃষ্টি কর্তার সামনে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটা মানুষকে তখন ইহ জগতে তাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কৃত ক্রমের রেকর্ডের বই দেয়া হবে। সেখানে মানুষের সব চেয়ে ছোট ঘটনাও লেখা থাকবে।

সুরা আল ইনশিকাক (৮৪:৭--৯) অনুযায়ী, ডান হাতে যারা এই বই গুলো পাবে তারা আনন্দের আত্মহারা হয়ে উঠবে; আর যারা বাম হাতে পাবে তাদের মুখ আতঙ্কে আর ভয়ে ম্লান হয়ে উঠবে। তারা পৃথিবীতে ফিরে যেয়ে আবার নতুন করে জীবন কাটানোর জন্যে কান্নাকাটি করবে। কোরান শরীফে বেশ অনেক বার বলা হয়েছে, প্রত্যেককে বিচার করে আল্লাহ তা’লা স্বর্গ অথবা নরকে পাঠাবেন। যারা স্বর্গে যাবেন, তাদের জন্যে থাকবে খুবই আরামদায়ক সুখকর জীবন। আর যারা পৃথিবীতে আল্লাহ’র নির্দেশ অমান্য করেছিল, তাদেরকে যেতে হবে ভীষণ কষ্টকর নরকে।

শেষ বিচারের দিনে, আল্লাহ বলেছেন, কারোর বিরুদ্ধে বিন্দু মাত্র অবিচার করা হবে না। কিছু মানুষ তাদের ভাল কাজের জন্যে পুরস্কৃত হয়ে স্বর্গে যাবেন, আর পাপীরা তাদের শাস্থি পাবে নরকের কষ্ট-বেদনায়। উপরের আলোচনা থেকে এটা মোটামুটি বলা যায়, ইসলামের দৃষ্টিতে আমাদের বৃহত্তর জীবনকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় ঃ ১) মাতৃ গর্ভে আসার আগে মহান সৃষ্টি কর্তার আছে আমাদের অবস্থান, ২) মাতৃ গর্ভে আমাদের দশ মাসের আবাস, ৩) পৃথিবীর বুকে আমাদের জীবনযাপন, ৪) মৃত্যু আর পুনুরুজ্জিবনের মধ্যকার জীবন আর সর্ব শেষে ৫) পুনুরুজ্জিবন থেকে আরম্ভ করে শেষ বিচার আর তার পরবর্তী স্বর্গ অথবা নরকের জীবন। শেষ বিচারের পরে আমরা আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্যে পোঁছাবো। এর পরে সেখানে আমাদের পথ চলা বন্ধ হবে।

আরম্ভ হবে অনন্ত জীবন, যার কোন শেষ থাকবে না। বর্তমানে আমাদের অবস্থান ৩ নম্বর পর্যায়ে। আমরা পৃথিবীর বুকে ধরে এগিয়ে যাচ্ছি, পরবর্তী পর্যায়ের দিকে, যা হল মৃত্যু। এটা আমরা ইতিমধ্যেই জানি, আমরা আমাদের বর্তমান অবস্থান কি ভাবে কাটাচ্ছি, তার উপরে নির্ভর করছে আমাদের বৃহত্তর জীবনের পর্যায় ৪ ও ৫। যেই ছাত্র সারা বছর নিয়মিত পড়ালেখা করেছে, তার কাছে পরীক্ষা কোন ভয়ের ব্যাপার না।

সে রকম যাত্রা পথের পর্যায় ৪ ও ৫ এর জন্যে যারা প্রস্ততি নিয়েছে, তাদের জন্যে মৃত্যু কিংবা শেষ বিচারের দিন ও তার পরবর্তী জীবন কোন আতঙ্কের কারণ হতে পারে না। বরং তা তাদের খুশী হওয়ার কারণ হতে পারে, আল্লাহ’র সান্নিধ্য পাওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে। কোরান শরীফে বলা হয়েছে, মৃত্যুর পরের জীবনই আসল আর সত্যিকার জীবন। এই পৃথিবীর জীবনকে বলা হয়েছে মরীচিকার কৃত্রিম জীবন। এই জীবনের খুব অল্প সময়ের।

কিন্তু এই অল্প সময়ের মহাত্ম অনেক। এই সময় সঠিক ব্যাবহার করতে পারলেই আমাদের বাকি পথ চলাটুকু নির্বিঘ্ন হতে পারে। শেষে সুরা আল বাকারা (২:২৮৫) থেকে দুটো লাইন উদ্ধৃত করে, আজকের আলোচনা শেষ করি, “ আমরা শুনি ও মান্য করি। আমাদের ক্ষমা করুন প্রভু। আপনার কাছেই আমাদের যাত্রার সমাপ্তি” আমিন।

জানুয়ারি ০৩, ২০১২ http://www.lekhalkehi.net লেখাটা আপনার ভাল লাগলে আর আমার নতুন লেখার খবর পেতে, এই লিঙ্কে যান, LIKE BUTTON এ ক্লিক করুনঃ http://www.facebook.com/lekhaleki ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.