কিছু লোক আমাকে অযথাই সমীহ করে, ভালো বাসে এবং মূল্যায়ন করে এটা আমি টের পাই। কেন করে তার তেমন কোনও কারণ আমি খুঁজে পাই না তবে তাদের আচরণকে অযৌক্তিক সাব্যস্তও করছি না। তবে একটি কারণ বোধয় এরকম, ছোটবেলা থেকেই ছাত্রভালো সুনামটি আমি বয়ে বেড়াচ্ছি এবং এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিলাম। তো সেদিন এক ভাই তার বাসায় আমাকে দাওয়াত করলেন তাদের এক পারিবারিক উৎসব উপলক্ষে। মোটামুটি সব দামি নামি লোকজন ছিল সেখানে।
অন্তত বয়সে আমার চেয়ে সবাই বেশ অগ্রগণ্য এবং আমার বয়েসি কাউকেই দেখলাম না সে আয়োজনে। যে আগ্রহ দিখিয়ে আমাকে দাওয়াত করেছে তাকেতো আর আমি কৈফিয়ত তলব করতে পারি না! কী ব্যাপার ভাইয়া আমাকে কেন ডাকলেন এমন উৎসবে? আর ডাকলেও আমাকে এমন নি:স্বঙ্গ বানিয়ে রাখলেন কেন?....আমি কিছুটা ভাবির বোনের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করলাম, সেও আমার চেয়ে ১বছরের সিনিয়র এবং কোনওপ্রকার লৌকিকতা ছাড়াই সে আমাকে তুমি করে বলতে শুরু করেছে....। ভাবিকেতো ভাগে পাওয়া যাচ্ছিল না, বাগেও না। কী আর করা অতিথি অ্যভ্যাগত হতে হতে আমিও বিদায় চাইলাম বড়দের মতো। ভাইয়া যেন চমকে উঠলেন! তুই কই যাবি? এত রাতে?
এবং বলাই বাহুল্য আমার বিদায়পর্ব স্থগিত করা হলো, অবিনয়ে।
....এরপর আমি আবারও চেষ্টা করলাম যেহেতু সম্পর্কটা একটু অন্যরকম তাই ভাবির বোন নাদিয়ার সঙ্গে একটু অকপটে মেশার। ....
তোমার গার্লফ্রেন্ড কয়টা?
আমার কোনও গার্ল ফ্রেন্ড নাই আপু!
মিত্যে বলো কেন? এই বয়েসী ছেলেদের এই এক সমস্যা, মুখফুটে সত্যকথা বলতে পারে না।
কোন বয়েসী ছেলেদের? আমি একটু ত্যাড়া করে প্রশ্ন করি।
এই তোমার বয়েসী, ইন্টার ফার্স্টইয়ার টিয়ার...
আমার ধারণা বয়সের প্রবলেমটা আপনারই, এই বয়েসী মহিলারা অন্য কারও কথা বিশ্বাসই করতে পারে না।
তুমি ক্ষেপে গেলা নাকি? মেধাবী পোলাপানগুলোর এই আরেক প্রবলেম কোনও কিছুকেই সহজভাবে নিতে পারে না, ইয়ার্কী মশকরা বোঝে না।
বুঝবে কী করে, সারাদিন বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকলেই কি আর সামাজিকতা শেখা যায়?
আঘাতটা অনেক তীব্রভাবে লাগলো। তবে এটাকে আমি আঘাত বলছি না, এটা প্রতিঘাত, আমি তাকে সরাসরি আক্রমণ করায় সে মাইন্ড করেছে, আমার ইয়ার্কীর স্টাইলটাই এমন তাই নতুন কারও সঙ্গে সহসা জমে ওঠে না। আমি তাকে সান্ত্বনা দিতে চাইলাম। তবে তাতে তোষামদের আস্বাদন যেন না লাগে সে ব্যপারে সতর্ক থাকতে গিয়ে আরেকটা ভুল হয়ে গেলো।
আপু আপনাদের আরেকটা সমস্যা কি জানেন করতে চান ইয়ার্কি অথচ হয়ে যায় শ্লেষ।
থাক বাবা তোমার পণ্ডিতি বয়ান আর শুনবো না আমি আসছি। ...তার প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না। অবশ্য কিছু করার আগ্রহ ছিল না। ইদানীং আধুনিকতার খোলসে দারুণ একটা কালচার আমরা আমদানী করেছি সেটি হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড কালচার। বিভিন্ন ছোটদের অনুষ্ঠানেও ওদের জিজ্ঞেস করা হয় তোমার গার্লফ্রেন্ড কয়টা....ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেমেয়েরা বাসায় এসে অন্যদের ধরে তোমার গার্লফ্রেন্ড নেই? আমি এই সংস্কৃতি সঙ্গে অভ্যস্ত নই।
হয়ত এর কারণ আমি বয়েস স্কুল এবং খুব কড়া নিয়মকানুনের কলেজে পড়াশুনা করেছি। যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ।
গার্লফ্রেন্ড বলতে আমি যা বুঝি তা হলো বিয়ে ছাড়া স্ত্রী। বা হবু স্ত্রীও হতে পারে। এটি কোনও বই পড়ে পাইনি, পেয়েছি বন্ধুবরাতে।
রাফি অবশ্য বলেছে মেয়ে বন্ধুতো সব মেয়েরাই তবে গার্লফ্রেন্ড টার্মটা ব্যবহৃত হয় স্পেশাল মেয়েবন্ধুর ক্ষেত্রে, যার সাথে স্ত্রীর কাছাকাছি সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে। অন্তত কিস খাওয়া হয় বা যায় এমন কেউ! যেহেতু রেস্ট্রিকশনের মধ্যে থেকে আমাদের বেড়ে ওঠা এবং প্রায় শতভাগ মুসলমানের দেশ তাই এমন সম্পর্কের কথা কল্পনা করতেও আমাদের পাপবোধ হয়। অতএব ভাবির বোন নাদিয়া আমাকে অবিশ্বাস করলেও তাতে আমি অবাক হইনি যতোটা অবাক হয়েছি গার্লফ্রেন্ড কালচারটায় ধাতস্ত হবার লক্ষণে। ....
একটু পরই ভাবির সঙ্গে তার বোনের আলাপে আমার কানে এলো...ওকে এসব আজেবাজে কথা বলতে গেলি কেন?
ও এরকম একটা গেঁয়ো আচরণ করবে আমি বুঝছি নাকি?...এসব।
আমার ব্যবহারে একজন মানুষ খুব কষ্ট পেয়েছে এটা ভাবতে খুব খারাপ লাগছে।
তারপরও ভালো লাগছে যে সে একটা মেয়ে। এবং সুন্দরী। সুন্দরীদের একটা একচেটিয়া অহমবোধ থাকে সে ভাবে তাকে সবাই স্যালুট-তোষামোদ করে চলবে, অন্তত সে ভাবনায় ঘা পড়েছে। খারাপ লাগছিল একজনের বাসায় এসে তার প্রিয়স্বজনদের অপমান করলাম-এই ভেবে।
যেহেতু ডিনারপার্টি ছিল,তাই এরপরের পর্বে ঘুম ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
অথচ ঠিক ঘুমের সময় সেটা নয়। ভাবলাম ভাইয়াদের ছাদটা একটু ঘুরে আসি। যে গরম পড়েছে....
ছাদে থেকেই বাসায় হৈচৈ'র শব্দ পেলাম। ভাইয়ার উঁচু গলার স্বর, ভাবির চেচামেচি। ভাবির রুমের জানালা খোলা, শব্দটা সহজেই সে পাশের ছাদে উঠে আসে।
আমি নিচে নামতে ভয় পাচ্ছিলাম। ...ভাইয়া হয়ত লজ্জা পাবেন...ভাবিও বিব্রতবোধ করবেন, আর নাদিয়া? সে ভাববে এই ইডিয়েঠটা আবার এসে জুটলো কেন? এতাটুকু সাধায় কেউ থাকে? কিন্তু সেতো জানবে না ভাইয়াকে আমি বড়ভাইর মতোই শ্রদ্ধা করি। তাকে উপক্ষা করার সাহস আমার নেই। এবং ভাইয়া যা বলবেন মন থেকে বলবেন, দেখানোর জন্য নয়। এমনটাই ভেবে আসছি এতোকাল!....
আমার চিন্তা এবং সঙ্কোচ দুটোই কেটে গেলো ঝুমুর ঝুমুর শব্দে।
পেছনে তাকিয়ে দেখলাম নাদিয়া।
আপু আপনি?
তুমি একা কী করছো?
ভাবছি একটা গার্লফ্রেন্ড যদি থাকত?
দুষ্টামি করছ, বাসায়তো ভারি গণ্ডগোল চলছে।
কী নিয়ে?
সে আর বলো না। আব্বু আম্মু আসেনি তাই।
আজকি ভাবির ম্যারেজডে ছিল?
ভাবির হবে কেন? তোমার ভাইরও তো
তাতো বটেই, আমি হেসে ফেললাম।
নাদিয়া বলে,তুমি হাসতে জানো নাকি?
হাসতে জানি,কিন্তু হাসাতে জানি না। রাগাতে জানি।
তাইলে আর তোমার নিচে গিয়ে কাজ নেই। তাদের বিবাদ তারাই সামলাক।
কিন্তু কী নিয়ে? সেটাতো বুঝতে পারছি না!
ওই যে বললাম না আব্বু আম্মুরা আসেনি তাই।
দুলাভাইর ধারণা গিফট আনার ভয়েই তারা আসেনি।
তাদের পক্ষ থেকে আপনি আছেন, অসুবিধা কী?
আমি আছি, অন্ন ধংস করছি, কিন্তু আমিতো আর দামি গিফট আনতে পারিনি।
তো তারা এলেন না কেন?
ওই যে দুলাভাই যা বলছে সেটাই সত্য। আমার বাবা-মা দুজনই ভিন্ন অথচ একটি ব্যাপারে তারা এক, কার্পণ্যে কেউ কাউকে ছেড়ে যায় না।
আমি বোধয় এই প্রথম দেখলাম কাউকে তার বাবা - মার সমালোচনা করতে।
তবে তসলিমা নাসরিন লেখক হিসেবে এ কাজটি করে দেখিয়েছেন। তিনি কাউকেই ছাড়েননি। হুমায়ুন আযাদ,সৈয়দ শামসুল হক থেকে শুরু করে অনেব বাঘাবাঘা নামিদামি লোকের মুখোশ খুলে দিয়েছন বরং উপড়েই ফেলেছেন, এক্ষেত্রে নিজের ব্যাকআপটাও আগলে রাখেননি। যেখানে যতটুকু সম্ভ হয়েছে পিতাপাতার দোষত্রুটির কথাও বলেছেন।
নাদিয়ার কাছে তার বাবা-মার কীর্তি শুনে অবাক হইনি।
এমন কাহিনী প্রায় প্রতিঘরেই পাওয়া যায় কিন্তু এ নিয়ে কেউ তেমন একটা রা করে না। আমার বাবা ভাইয়াকে যতটুকু পড়াশুনা করিয়েছে আপুকে অতোটা করায়নি। আবার ভাইয়ার বিয়েতে যে বিশাল এলাহীকাণ্ড করেছে আপুর বিয়েতে তার ছিটেফোঁটাও দেখিনি। অথচ তারতো কোনওকিছুর অভাব ছিল না। আমার মাও আপুর জন্য কিছু দেয়াটাকে অপচয় মনে করেন।
যা কিছু জমিয়ে রাখেন সব নাকি সন্তানের জন্য, কিন্তু কে সেই সন্তান? আপু নয়, আমি নই, তবে কে? শুধুই ভাইয়া?.....
আমার পড়াশুনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছে এটা শুনে আপু দুলাভাই যুক্তি করে আমাকে ঢাকা নিয়ে এসেছে। বাবার সেকি হম্বিতম্বি। মানুষ কী বলবে, বলবে মেয়ে বিয়ে দিয়ে তারওপর আবার শালীর বোঝাও চাপিয়ে দিয়েছে। ...না না এ সম্ভব নয়। এবং বাবা কোনওভাবেই রাজি নয়, শেষে একপ্রকার পালিয়ে আসার মতোই আমি চলে এসেছি।
এখানে থেকেই ইন্টার পরীক্ষা দিলাম। ....
শুধু এখন না, ছোটবেলাতেও নাকি ভাইয়ার একটু কিছু হলে ডাক্তারটাক্তার ডেকে হস্তবুত করে ফেলতেন, আর আমার বা আপুর কিছু হলে কেয়ারই করতো না। আপুর একবার চিকেনপক্স হলো কতোদিন যে ভুগলো....শেষে আমাদের প্রাইভেট স্যার একদিন আম্মুকে বলে এসব কী ডাক্তার দেখান! মান্নান ডাক্তারের কাছে যান, ভালো চর্ম বিশেষজ্ঞ! মেয়েটারতো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে.....
মাও ছিলেন বাবার আর কোনও বিষয়ে সেটিসফাইড হতে না পারলেও এসব বিষয়ে সম্পূর্ণ তারওপর নির্ভরশীল থাকতেন। ......
নাদিয়ার আরও অনেক কথাই শুনলাম। সে দুলাভাইর পক্ষে।
তাইই হওয়ার কথা। যে দুলাভাই তার ভালোর জন্য বাবা-মার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করলো!....কিন্তু ভাবি কেন বাপমায়ের পক্ষে টানছে?
নাদিয়ার স্পষ্ট জবাব। আপুটা একটু গাধা। বাস্তবতা বোঝে না। মা বাবা সম্পর্কে বলেছে?ব্যাস একেবারে নাড়িতে টান লেগে গেছে।
তাছাড়া বড় মেয়েতো, বাবা-মাকে বেশি ভালোবাসে।
হঠাৎ করেই নাদিয়াকে আমার অনেকখানি ভালো লেগে গেলো। মেয়েটা নিজে অনেকবেশি রূঢ় সত্য বলতে জানে, সাহস রাখে তাই অন্যের ভণিতা পছন্দ করে না। আমি আবার আরে প্রসঙ্গে ফিরতে চাইলাম।
আমি কিন্তু অনেক রেস্ট্রিকটেড একটা ফ্যামিলির ছেলে, আপনারা যা যেভাবে দ্যাখেন আমি সেভাবে দেখতে পাই না।
আর পড়েছি কিন্তু সবসময় বয়েজ স্কুল এবং কলেজেও শুধু ছেলেরা। ...
না, আমি শুনেছি। তুমি একটু অন্যরকম! আপু বলল!
কিন্তু তখন তুমি আমাকে মহিলা বললা কেন? মহিলা সাধারণত কত বয়স হলে বলে জানো?
একটা শোধ নিলাম। আপনি আমাকে হুটকরেই তুমিকরে বললেন কেন? আপনি কিন্তু আমার এমন আহামরি কোনও সিনিয়র নন...তাই না?
ওরেব্বাবা খুব গায়ে লেগেছে? তাই না? তা হলে এখন থেকে আপনাকে আপনি করে বলি?
আপনার দুলাভাই তুই করেই বলে, ভাবি বলে তুমি করে এখন আপনি যদি আপনি করে বলেন ব্যাপারটা মন্দ হয় না, তিনজনের মধ্যে ভেরিয়েশন থাকলো। ....
ঠিক আছে, চলুন মহাশয় এবার বোধয় নিচে নামা যায়,নয়তো খুঁজতে বেরিয়ে যাবে দুজন।
খারাপ কি এই উসিলায় তাদের মিলতো হলো। ....
আমরা নিচে নামলাম। ততক্ষণে আবহাওয়া অনেকখানি ঠাণ্ডা। .....
ভাইয়াতো একবারেই ঠাণ্ডা! বলে গুড! বড়দের কখনও ঝগড়া করতে দেখলে ধারেকাছে দাঁড়াবি না, সরে যাবি। বড়দের অনেক কিছু হজম করতে হয়তো, তাই অনেক কিছু বদহজমও হয়।
এখন বুঝবি না, পরে বুঝবি। .....
আমি এখনও সেই বোঝার অপেক্ষায়।
নাদিয়া এখন আমাকে তুই করে বলে, আমিও বলি তুইকরে।
অনার্সে আমরা একি ব্যাচে। একই ভার্সিটিতে।
ভাইয়া সেদিন আমাকে ডেকেছিল মুলত নাদিয়ার সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দিতে। সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়, আমি কোনওবাবে শিটটিট দিয়ে হেল্প করতে পারি কি না, এটাই ছিল আসল উদ্দেশ্য। ......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।