আমরাগত পর্বে আয়কর সম্পরকে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছি। আমরা দেখেছি আয়করের সাতটি খাত রয়েছে। এ পর্বে আমরা দেখব কিভাবে আয়কর নিরুপন করতে হয়। প্রতিটি খাতের জন্য আলাদা আলাদা নয় বরং সকল খাত একসাথে যোগ করে তার উপর কর আরোপ করা হয়।
আয় যদি বছরে ১,৮০,০০০ টাকার উপরে হয় তাহলে আপনার আয় করযোগ্য।
তবে নারী ও বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের কথা আলাদা।
নারীদের জন্য ২,০০,০০০।
বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক ২০০,০০০।
প্রতিবন্ধি ২৫০,০০০।
বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক বলতে যাদের বয়স ৬৫’র উপরে তারাই।
আপনার আয় যদি করমুক্ত সীমা অতিক্রম করে তাহলেই কেবল আপনাকে কর দিতে হবে। তাও অতিরিক্ত অংশের জন্য। যেমন আপনার আয় যদি হয় ৩০০,০০০ টাকা তাহলে আপনার আয়কর হবেঃ
১৮০০০০*০% = ০০
১২০০০০*১০% = ১২,০০০
মোট ১২০০০
যাই হোক ব্যক্তি শ্রেণীর কর দাতাদের উপর কর আরোপের হার হলঃ
১৮০,০০০ পর্যন্ত ‘শূণ্য
পরবর্তী ৩০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১০%
পরবর্তী ৪০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১৫%
পরবর্তী ৩০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ২০%
বাকী টাকার উপর ২৫%।
আমরা প্রথমেই দেখব বেতনের উপর আয়কর। আপনার বেতন হতে আয় যদি অন্যান্য আয় সহ করযোগ্য সীমা অতিক্রম করে তাহলেই এর উপর কর দিতে হবে।
অন্যান্য আয় বলতে আয়ের বাকী খাত গুলো হতে আয়। বেতন বলতে শুধুমূল বেতন নয় নিয়োগকর্তা হতে প্রাপ্ত অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও বেতনের আওতায় পড়বে। অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বলতে উত্সব বোনাস, প্রণোদনা বোনাস (ইনসেনটিভ বোনাস), সজ্জিত গৃহ সুবিধা, ফুল টাইম গাড়ি, যাতায়াত ভাতা, চিকিত্সা ভাতা, বাড়ি ভাড়, ড্রাইভারে বেতন, দারোয়ান মালি পরিচারক পরিচারিকার বেতন, বিদেশ ভ্রমন, ছুটি নগদায়ন (লিভ এনক্যাশমেন্ট ), ছুটি ভাতা ( লিভ ফেয়ার এসিসটান্স) ইত্যাদি। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ২ এর উপধারা ৫৮ তে বেতনের সংজ্ঞা দেয়া আছে। এতে বেতনের মধ্যে নিচের জিনিসগুলোকে অন্তরভূক্ত করা হয়েছে
১।
মজুরি
২। বার্ষিক ভাতা ( এ্যানুইটি )
৩। পেনশন ( ৬ষ্ঠ তফসিল, পার্ট - ক, ৮ম অনুচ্ছেদ অনুসারে পুরোপুরি মওকুফ)
৪। গ্রাচুইটি ( ৬ষ্ঠ তফসিল, পার্ট - ক, ২০ অনুচ্ছেদ অনুসারে পুরোপুরি মওকুফ)
৫। ফি
৬।
কমিশন
৭। ভাতা
৮। বর্ধিত সুযোগ সুবিধ (পারকুইজিট)
৯। বেতনের পরিবর্তে মুনাফা (প্রফিট ইন লিউ অফ সেলারি )
১০। মজুরি অথবা বেতনের অতিরিক্ত মুনাফা ( প্রফিট ইন এডিশন টু সেলারি)
১১।
অগ্রিম বেতন
১২। ছুটি নগদায়ন (লিভ এনক্যাশমেন্ট)
এবার আসুন আমরা দেখি বেতনের উপর কর আরোপ কিভাবে করা হয়। আয়কর অধ্যাদেশের ২১ ধারা এবং সংশ্লিষ্ট আয়কর বিধি অনুসারে করযোগ্য আয় বের করতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ধারা ও বিধি গুলো হলঃ
ধারাঃ ২(৫৮), ২(৪৫), ২১
বিধি ৩৩, ৩৩এ [33A] থেকে ৩৩জে [33J]
এবং ষষ্ঠ তফসিল পার্ট বি।
আপনার বেসিক সেলারির পুরো অংশই করযোগ্য।
এর সাথে যোগ করবেন বোনাস। তা উৎসব বোনাস হোক আর ইন্সেন্টিভ বোনাস হোক। পুরোটাই করযোগ্য। আপনার নিয়োগকর্তা আপনাকে যদি গাড়ি দেয় এবং তা যদি আপনার কেবল পারসোনাল কাজের জন্য হয় অথবা পারসনাল এবং অফিস উভয়ের জন্য হয় তাহলে আপনার আয়ের সাথে সরাসরি মূল বেতনের সাড়ে সাত পারসেন্ট [৭.৫%] যোগ হয়ে যাবে। তবে স্রেফ অফিসের জন্য হলে কিছুই যোগ হবে না।
আর বছরে ২৪,০০০ টাকা পর্যন্ত যাতায়াত ভাতা মওকুপ। তবে আপনি যদি গাড়ি ও যাতায়াত ভাতা দুটোই পান তাহলে দুটাই যোগ হবে।
গাড়ি তো গেল এবার আসুন বাড়িতে। আমাদের বেতনের একটা নির্দিষ্ট অংশ বাড়ি ভাড়া হিসেবে আমরা পেয়ে থাকি। এটাও আমাদের আয়ের অংশ।
সূতরাঙ এটাও আপনার আয়ের সাথে যোগ হবে। তবে পুরোটা নয়। আপনার মূল বেতনের ৫০% পর্যন্ত মওকুপ। তবে সর্বোচ্চ বছরে ১৮০,০০০ পর্যন্ত। আসলে হিসাবটা হল এ দুটোর মধ্যে যেটা কম সে পর্যন্তই আপনি মাফ পাবেন।
মনে করুন আপনার বেসিক ২০,০০০ টাকা তাহলে বাড়িভাড়া ভাতা মাসিক ১০,০০০ করে ১২০,০০০ টাকা মওকূপ পাবেন। আর যদি আপনার বেসিক হয় ৪০,০০০ টাকা তাহলে মাসিক ২০,০০০ করে ২৪০,০০০ এবং ১৮০,০০০ টাকা এ দুয়ের মধ্যে কম অর্থাৎ ১৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাফ পাবেন। এ হচ্ছে আপনি যদি ভাতা হিসেবে নগদ টাকা পান সে হিসাব। কিন্তু কম্পানি যদি আপনাকে বিনা ভাড়ায় অথবা স্বল্প ভাড়ায় বাড়ি দেয়। তাহলে? তাও করযোগ্য।
সুতরাং বিনা পয়সার বাড়ি পয়সা হিসেব করে বেতনের সাথে যোগ হয়ে যাবে। মূল বেতনের ২৫% অথবা বাড়ীভাড়া এ দুয়ের মাঝে ছোটটি যোগ হবে। আর যদি স্বল্প ভাড়ায় বাড়ি পান সেক্ষেত্রে যতটুকু কম ভাড়া দিচ্ছেন এবং বেসিকের ২৫% অথবা বাড়ীভাড়া এর মধ্যে যে গ্যাপ টা আছে তা যোগ হবে।
এতো গেল গাড়ি এবং বাড়ির কথা। তবে বাড়ি গাড়িই শেষ কথা নয়।
আরো অনেক বিষয় আছে। এগুলো আমরা পরের পোস্টে আলোচনা করব ।
তৃতীয় পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।