গতকাল একটা পোস্ট দিয়েছিলাম তারেকের এপিএস অপু'র দুর্নীতি সম্পর্কে। আজকে পত্রিকায় দেখলাম চারদলীয় জোট আমলের পিএস-এপিএস দের বিস্তর দুর্নীতির খবর। খবরটি পড়ে আফসোস হলো, হায়রে দেশ। এভাবে বিগত জোট সরকার লুট-পাট এর সংস্কৃতি চালু করেছিলো! এবার জোট আমলের পিএস-এপিএস দের এতো দুর্নীতির সংবাদটি পড়ুন।
'মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের এপিএসের দৌরাত্ম্যে সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব ও রাজনৈতিক নেতারা পর্যন্ত তটস্থ থাকেন।
ধারাবাহিকভাবেই এমনটা ঘটে আসছে। অতীতেও দেখা গেছে, যিনিই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর এপিএস হয়েছেন- তিনিই অবৈধভাবে নিজের প্রভাব জাহির করেছেন। আর এ সুযোগ খোদ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাই করে দিয়েছেন। কেননা, তাঁরা এপিএসদের রাজনৈতিকভাবে নানা অবৈধ কাজে ব্যবহার করেন।
রাজনৈতিক বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে এপিএসরা সব সময় নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ মন্ত্রণালয়ের নানাবিধ কাজ নিজেদের কব্জায় নেন।
বিভিন্ন 'লোভনীয় ফাইল' নানা কায়দায় আটকে অর্থ আদায় করেন। ঢাকায় নিজের সংসার চালানোই দায়- এমন ব্যক্তি এপিএস হওয়ার পর রাতারাতি বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে যান।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর এপিএসদের বিরুদ্ধেও নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধভাবে প্রভাব খাটানোর পাশাপাশি তাঁদের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামানোর ঘটনা নিয়ে পত্রপত্রিকায় খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএসরা : খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর এপিএস শামসুল আলম ও আবদুল মতিন এবং সহকারী প্রেসসচিব আশিক ইসলামের নামে দুর্নীতি ও লুটপাটের নানা অভিযোগ ওঠে।
তাঁরা রাতারাতি গাড়ি-বাড়ির মালিক বনে যান। ৮৬ ব্যাচের ক্যাডারদের মধ্যে এপিএস শামসুল আলম ও আবদুল মতিন অনেককে ডিঙিয়ে পদোন্নতি পান। ক্ষমতার অপব্যবহার করে শামসুল আলম গুলশানের মতো জায়গায় বাড়ির মালিক হয়ে যান। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শামসুল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলাও হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এপিএস থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নাম ভাঙিয়ে আবদুল মতিন সরকারি প্রকল্প পাস করিয়ে দেওয়ায় ব্যস্ত থেকেছেন।
তাঁর নামেও দুদক মামলা করে।
হাওয়া ভবনের আশিক ইসলাম : ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর হাওয়া ভবনের পক্ষ থেকে আশিক ইসলামকে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেসসচিব নিযুক্ত করা হয়। বিএফডিসির সেন্সর বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা না বলে ওই সময় কেউ বিটিভি ও এফডিসিতে নাটক বা সিনেমা বানাতে পারতেন না। সব কিছুরই শেয়ার তাঁকে দিতে হতো।
এভাবে তিনি রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। বগুড়ার গাবতলীতে পৈতৃক জীর্ণ বাড়িটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিশাল অট্টালিকায় রূপান্তর করেন তিনি। ২০০৬ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছাড়ার পর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আশিক দেশত্যাগ করেন। তিনি বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছেন।
তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে ও হাওয়া ভবনের মুখপাত্র দাবি করে আশিক ইসলাম বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন আশিক। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ফাইল আটকে রেখে তিনি আয় করেন কোটি কোটি টাকা।
হারিছ চৌধুরীর এপিএস জিয়াউল : জোট সরকারের পাঁচ বছরে নগ্নভাবে টাকা হাতানোর ধান্ধায় নামেন হারিছ চৌধুরীর এপিএস জিয়াউল ইসলাম। ২০০৩ সালে তিনি ছয়জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে ঊর্ধ্বতন উপপরিচালক পদে পদোন্নতি পান। স্ত্রীকেও রাষ্ট্রপতির কোটায় পদোন্নতি করিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নিয়ে আসেন।
দুই শ্যালককে চাকরি দেন বিসিএস ক্যাডারে। একই সঙ্গে জিয়াউল ইসলাম গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। রাজউকের উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১৯ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর প্লটে প্রথমে পাঁচ কাঠা জমি নিজ হস্তান্তর সূত্রে মালিক হন তিনি। পরে পাশের দুই কাঠার একটি প্লট প্রভাব খাটিয়ে রাজউক থেকে বরাদ্দ নেন। এখানেই শেষ নয়, বিআইডাব্লিউটিএর সব নিয়োগ ও পদোন্নতি তাঁর ইশারায় নিয়ন্ত্রিত হতো।
তারেক রহমানের এপিএস অপু : বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের এপিএস ছিলেন মিয়া নূরুদ্দিন অপু। ওই সময় তারেকের নাম ভাঙিয়ে হাওয়া ভবনে থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হন তিনি। তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী হওয়ার সুবাদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবারের ঘনিষ্ঠদের অন্যতম বনে যান তিনি। হাওয়া ভবনের সূত্র ধরে জোট সরকারের সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও তখন এই এপিএসের কারণে তটস্থ থাকতেন।
অভিযোগ রয়েছে, এক ব্যবসায়ী চাঁদাবাজির নগদ এক কোটি টাকা অপুর হাতে তুলে দেন।
এ ঘটনায় জোট সরকারের বিদায়ের পর দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির মামলায় অপু দুই নম্বর আসামি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অপুকে গ্রেপ্তারের জন্য যৌথ বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের শহীদ মইনুল হোসেন রোডের খালেদা জিয়ার বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করেছিল। অপু এখন পলাতক।
মান্নান ভুঁইয়ার এপিএস শাহীন : বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও জোট সরকারের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আবদুল মান্নান ভুঁইয়ার এপিএস এস এম শাহান শাহ শাহীনের বিরুদ্ধে ছিল অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ। প্রভাব বিস্তার করে তিনি বিপুল অর্থ কামিয়ে নেন।
মান্নান ভুঁইয়া অবশ্য শেষ পর্যন্ত এই দুর্নীতির অভিযোগে শাহীনকে বাদ দিয়েছিলেন।
নাজমুল হুদার এপিএস বাবু : সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার এপিএস সাইদুর রহমান বাবু প্রভাব খাটিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ফাইল পাস করিয়ে দিতেন। একের পর এক অভিযোগ ওঠার পর মন্ত্রী একপর্যায়ে এপিএস সাইদুরকে বরখাস্ত করেন।
সাইফুর রহমানের এপিএস কাইয়ুম : অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের এপিএস আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীরও একই অবস্থা। কাইয়ুম চৌধুরীর দাপটে অন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও ক্ষুব্ধ ছিলেন।
অবশ্য ক্ষমতার শেষের দিকে কাইয়ুমকে বরখাস্ত করেন সাইফুর রহমান।
মির্জা আব্বাসের এপিএস মাসুদ : ঢাকার সাবেক মেয়র ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের এপিএস ছিলেন শামসুল আলম খান মাসুদ। অভিযোগ রয়েছে, উত্তরায় রাজউকের প্লট পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মাসুদ ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। মাসুদের কিছু কিছু জায়গায় দাপট মন্ত্রীকেও ছাড়িয়ে যেত। অবৈধ দাপট ও অর্থ কেলেঙ্কারির বিভিন্ন অভিযোগে শেষ পর্যন্ত মাসুদকে বাদ দেন মির্জা আব্বাস।
বাবরের এপিএস হায়দার : স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের এপিএস ছিলেন এ কে এম মির্জা হায়দার আলী। দলীয় কর্মী বা সন্ত্রাসীদের কারো বিরুদ্ধে মামলা হলে তা দেখভাল করতেন তিনি। এর ফাঁকে পুলিশে নিয়োগ-বদলির মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মওদুদের এপিএস নুরুল্লাহ : আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের এপিএস ছিলেন মো. নুরুল্লাহ। সারা দেশে সরকারি এসিল্যান্ড ও কাজী নিয়োগকে কেন্দ্র করে এপিএসের বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
আমিনুল ইসলামের এপিএস নূরুজ্জামান : ব্যারিস্টার আমিনুল হক ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। তাঁর এপিএস ছিলেন মো. নূরুজ্জামান। এই এপিএসের বিরুদ্ধে ছিল দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারের বিস্তর অভিযোগ। মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ায় নূরুজ্জামানের প্রভাবও ছিল ব্যাপক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
সাদেক হোসেন খোকার দুই এপিএস : ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান মান্না ও মনিরুল ইসলাম। মান্নার বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ছিল। পরবর্তী সময়ে এপিএস থেকে বাদ দেওয়া হয় মান্নাকে। এপিএস মনিরুলের বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ছিল।
জাহানারা বেগমের এপিএস মুকিত : প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী জাহানারা বেগমের এপিএস ছিলেন আবদুল মুকিত।
ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এই মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ওই সময়ে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়েই মন্ত্রীকে বিএনপি থেকে বিদায় নিতে হয়।
আরো ছিলেন : এ ছাড়া জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের এপিএস হারুন অর রশিদ, খাদ্যমন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের এপিএস মাহবুবুল হক চৌধুরী, বনমন্ত্রী শাজাহান সিরাজের এপিএস আনোয়ার হোসেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী খুরশিদ জাহান হকের এপিএস আনোয়ারুল কবির, স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের এপিএস খালেকুজ্জামান ও এম এ মজিদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়ার এপিএস তাজুল ইসলাম, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের এপিএস এবং সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর এপিএসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ছিল। জোট সরকারের ওই পাঁচ বছরে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তাঁরা ফাইল আটকে বা তদবির চালিয়ে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
হায়রে দেশ! কিন্তু আমরা এ থেকে মুক্ত হতে চাই। এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় পদক্ষেপ, আমাদেরকে আশাবাদী করেছে।
সূত্র: কালের কন্ঠ, ১৮.০৪.১২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।