মানুষের ভালোবাসাই তো মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি,সফল হওয়ার পেছনে। " লিখতে গেলে বহু বিষয়ই মাথায় আসে কোনটা রেখে কোনটা লিখবো? তো ভাবনার দুয়ার খুলে দিলাম কীবোর্ডে, দেখি মাথায় কী আসে!!!!
যেহেতু আমি একজন ছাত্র, এই মুহূর্তে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিষয়ক টপিকসটাই মাথায় আসছে। তো শুরু করা যাক।
“ভাই আমার ছেলেটা এবার প্রথম হয়েছে, দোয়া করিয়েন। “ কিংবা, “আমার মেয়েটা ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাইছে।
“ “ আমার ছেলেটা বুয়েটে প্রথম হয়েছে। “ এরকমই সবাই বলতে চায়, সবার কাছে, খুব গর্ব সহকারেই। বাবা মায়ের এই মানসম্মান প্রচারের জন্য ছেলেমেয়েরা জান কুরবান করে দিয়ে পড়াশুনা করে। নাহলে যে কোনো ইজ্জতই থাকল না, বাবা মায়ের; সাথে নিজের তো কথাই নেই। যে করেই হোক, ভালো রেজাল্ট করতেই হবে, তা না হলে সে কোনো স্টুডেন্ট নাকি!!
আচ্ছা বলুন তো, শিক্ষা কী শেখায় আমাদের? শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষকে বিবেকবান ও আদর্শবান ও ভালো মানুষ করে গড়ে তোলা।
বাবা মায়েরা মহান, তাদের প্রতি কোনো রকম অসম্মান দেখানোর ধৃষ্টতা আমার নেই। কিন্তু আমি হতবাক হয়ে গেছি যখন দেখেছি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র এ+ না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কতোই বা বয়স তার? জীবনের কতটুকুই বা দেখেছে সে? কিন্তু কেনই বা সে আত্মহত্যা করল? কীই বা বুঝে সে এই আত্মহত্যার? কারণ কিন্তু একটাই,তার পরিবার সবার সামনে গর্ব করে বলতে পারবে না যে তাদের ছেলেটা এ+ পেয়েছে, প্রতিনিয়ত পরিবার ও সবার কাছ থেকে ছি ছি শুনতে হবে। নিজেকে আত্মগ্লানিতে ভোগাতে চায় নি সে নিজেকে সাথে পরিবারকেও। আর তাই তো সবাইকে খুশি করে পরিবারের মান রক্ষার্থে নিজের জীবনটাই দিয়ে দিলো!!! ছি!!!!! ধিক জানাই এইরকম শিক্ষাব্যবস্থাকে।
আচ্ছা বলুন তো, কতজন বাবা মা আছে, যারা সমাজে গর্বসহকারে বলে বেড়ান, আমার ছেলেটা একজন ভালো মানুষ। সে ভালো কাজ করে, মানুষের উপকার করে। কয়জন বলে? কেনই বা বলবে? এইসব বললে কি তারা সমাজে ভাত পাবে? পাবে না। তাদের যে গর্ব করার মতো আর কিছু নেই। এ যুগে ওসমান গনী( বনখেকো), আবুল হাসান( আমাগো আবুল) এদের মতো দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন ভালো ছাত্রদের কদর আছে ( যারা কিনা তাদের সময়ে সেরা ছাত্র ছিল সর্বস্তরে) কিন্তু; নিরবে নিভৃতে ভালো কাজ করে যাওয়া পিছনের বেঞ্চের ছাত্রদের কোনো স্থান নেই, নেই সমবেদনা।
যে কোনো স্তরেরই রেজাল্ট বের হলে কে কে গোল্ডেন এ+ পেল , কে কে ফেল করলো, এইসবের খোঁজে পত্রিকা আর মিডিয়াগুলো হুলস্থূল কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলে, কিন্তু কোনোখানে চান্স না পাওয়া একটা ছেলে তার টিউশনির টাকা দিয়ে কোনো এতিমের জামা কিনে দিলো, কিংবা কোনো সমবায় সংগঠন খুলে ফেললো অক্লান্ত চেষ্টায়, তখন পত্রিকা আর মিডিয়াগুলো কই থাকে? তারা এইরকম কয়টা খবর ছাপায়? কোন সংবিধানে লেখা আছে ভালো ছাত্র হিসাবে বাঁচো, ভালো মানুষ হিসাবে নয়?
আমারও নিজের এরকম ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে। শৈশব থেকে অনেক ভালো ছাত্র ছিলাম। তাই আমার কদরের তুলনা ছিল না। দেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক ভার্সিটিতে পড়াশোনা করায় কদর এখনও আছে। কিন্তু এখানেও বাঁধ সাধে।
প্রতিনিয়ত সিজিপিএ জিজ্ঞাসাবাদের চক্করে আমি জর্জরিত, ক্লান্ত। একটা ব্যক্তিগত সত্যি কথা লিখছি। আমি আমার জিএফ এর বাসায় একদিন বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেদিন সর্বপ্রথম আমাকে যা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তা হলো “বাবা তোমার লেখাপড়া কেমন চলছে? তোমার সিজিপিএ জানি কত?” আমি শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম। কীই বা বলার ছিলো আমার ?
আমার এই প্রবন্ধটি কাউকে আক্রমন করে লেখা নয়।
আমি সব বাবা মায়েদের সম্মান করি, সাথে সমাজের সব মানুষকেও। আমার এই লিখা এই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার, এই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। যেখানে কোনো ভালো মানুষের কোনো স্থান নেই, আছে শুধু ভালো ছাত্রের। এটা ঠিক, ব্যতিক্রম সবখানেই আছে। কিন্তু সকলেই বোধহয় জানেন, ব্যতিক্রম কোনো উদাহারণ নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।