আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকায় আমিঃ টিভি টক শোতেও আমি

স্বাগতম অন্যান্যবারের মতো এবারো দেখলাম রাস্তা খুড়ার কাজ চলছে। থাকি রামপুরাতে তাই কোথাও গেলে মৌচাকের মোড় পার হতেই হয়। আর সেই জ্যামের মধ্যে বসে থাকা সে কি এক অসহ্য যন্ত্রনা। থ্রি হুইলার যাকে আমরা সিএনজি বলে ডাকি,ওটা এখন একটা জেলের খুপরি। চারিদিকে নেট দিয়ে ঘেরা।

প্রায়ই ভাবি কোন কারনে উলটে গেলে ভেতর থেকে বেরুবো কি করে! অন্যদিকে রেন্ট এ কার বা ট্যাক্সি একদম নেই বললেই চলে। যা দু একটা রয়েছে হারাম (আরবীয়ানদের বুলি), একটারও রোড পারমিশন আছে কিনা সন্দেহ। ভেতরে সিট কভার ছেড়া তাই পড়নের কাপড় ছিড়ে যায়। লুকিং গ্লাস/উয়িন্ডোগ্লাস সবই ভাঙ্গা অথবা তার বা দড়ি দিয়ে বাধা। বাইরের শব্দে কান জ্বালাপালা, এক কথায় আগেকার রামপুরার মুড়িরটিন বাসগুলি এরচেয়েও অনেক উন্নত ছিল।

এছাড়া বাস সার্ভিসও তথৈবচ। ভাঙ্গা বডি,সিটের চেয়ে দাঁড়ানোর জায়গা বেশী। তবে রিক্সার কিন্তু উন্নতি হচ্ছে। ভাড়া যাই হোক না কেন নিত্য নুতন মডেলের রিক্সা বেড়িয়েছে,লোকে যাকে ডিজিটাল রিক্সা বলে! ব্যাটারী চালিত এই রিক্সাতে বসেও অনেক আরাম, রাতে তার আবার ফ্লোরেসেন্স আলোও জ্বলে। এলাকাতে সরকারের সেবা কমেছে আর প্রাইভেট সেবার মান বেড়ে গিয়েছে।

বাসা বাড়ীর আবর্জনা পরিস্কার,রাতে পাহাড়া দেয়া বা জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ যা ছিল মিউনিসিটিপ্যালের অধীনে, এখন এলাকার বাসিন্দা নিজ উদ্যেগে করিয়ে নিচ্ছে। ভাঙ্গা রাস্তা আর মশায় জনজীবন অসহায়। সিটি কর্পোরেশন মাসে একবার ভেজাল ঔষধ ছিটিয়ে দায়িত্ব শেষ করছেন। তাহলে সিটিকর্পোরেশন আসলে কি করছেন, দূষিত পানি সরবরাহ আর গ্যাস ও বিদ্যুতের স্বল্পতা অন্যদের গাড়ে চাপিয়ে বসে থাকা! কিন্তু জনগন থেকে ট্যাক্স কেটে নিচ্ছে ঠিকই। ভাল-মন্দ মিলিয়ে ঢাকা শহরে এখন অনেক হাসপাতাল।

যেখানেই গিয়েছি প্রচন্ড ভীড়। আগে যেমন সিনেমা হলে ভীড় হতো,এখন হচ্ছে হাসপাতালগুলিতে। এতো রোগী আসছে কোথা থেকে জানা নেই। তবে আমার দুমাসের ঢাকাবাসে ১১দিন ছিলাম নিজ বাসাতেই ডায়েরিয়া রোগী হয়ে!আর সাতদিন হাসপাতালে ছিলাম নিকট আত্মীয়কে নিয়ে। বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মান ভালই।

আইসিইউতে রোগী রেখে সারাদিন বাইরে বসে থেকেছি। বিভিন্ন রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা লোকদের দেখেছি। আরো দেখেছি বাংলালিঙ্ক এই ভিজিটরদের স্বার্থে মোবাইল চার্জার বসিয়েছে। অথচ কে বা কাহারা সামান্য এই চার্জারের কর্ডগুলিও চুরি করে কেটে নিয়েছে! আরো এমন অনেক বাজে অভিজ্ঞতা হলো কিন্তু সব লিখে শেষ করা যাবেনা। একটি পুলকিত ঘটনা দিয়েই শেষ করছি।

পুলকিত বলছি এই জন্য যে হঠাৎ করেই একদিন মোবাইলে কল পেলাম বাংলাভিসনের এসকে মোস্তোফা ফিরোজ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আপনি কি মোজাম্মেল হক? আমি অবাক হয়ে কাপা স্বরে বললাম জ্বী আমিই। তিনি আমাকে এককাপ চা খাওয়ার আমন্ত্রন করলেন। পরে জানলাম সৌদি আরব থেকেই আমার ফোন নাম্বার উনাকে একজন দিয়েছেন। সময়মতো উনার অফিসে পৌছে গেলাম।

চা খাওয়ার ফাকে তিনি আমার প্রাক ইন্টারভ্যু নিলেন। অতি অমায়িক এই উপস্থাপককে প্রবাসীদের নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান করেন বলে ধন্যবাদ দিয়ে চলে এলাম। বাসায় ফিরে খবরটা জানাতেই চারিদিকে হৈচৈ পরে গেল। এককান থেকে আরেক কানে গিয়ে এমন হলো যে,ঐ অনুষ্ঠান আমাকে করতেই হবে!কারন সকলের একই প্রশ্ন টকশো টা কবে হবে?উনি যদি আমাকে আর না ডাকে তবে ইজ্জত যাবে আমার! প্রায় তিন হপ্তা পর আমার ডাক এলো। সেখানে পৌছতেই উনার অফিস রুমে নিয়ে বসালেন।

কোন এক কারনে সেদিন লাইভ না হয়ে রেকর্ডেড অনুষ্ঠাণ হবে বলেও জানিয়ে দিলেন। একটু পরই সেখানে উপস্থিত হলেন ওয়ান ইলেভেনের আলোচিত বিএনপি নেতা মেজর হাফিজ এবং বর্তমানের আলোচিত ঢাকার মেয়র প্রার্থী মান্নাভাই। আমাদের দেখে দুজনেই জিজ্ঞেস করলেন আমরা কোন অনুষ্ঠান করতে এসেছি। বললাম তিনজনই মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছি। যাক এই দুজনের সঙ্গে আমাদের চলমান রাজনীতি নিয়ে অনেক কথা হলো।

এটাও আমার আরেক অভিজ্ঞতা। উনারা চলে গেলেন নিউজ এন্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে আর আমি গেলাম মেকআপ রুমে। তার পর বসলাম গিয়ে ক্যামেরার সামনে। শীতের মধ্যেও আমি ঘামতে লাগলাম,ভাগ্যিস লাইভ ছিলনা। আমি যা বলবো বলে মনে মনে ঠিক করেছিলাম তার কিছুই বলা হলোনা।

তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি স্বাভাবিক হয়ে গেলাম আর অনুষ্ঠানও তখন প্রায় শেষ হয়ে এলো। সেদিনের সেই স্মৃতি মনে থাকবে অনেকদিন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।