আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকায় থাকি!



বছর পনেরো হলো ঢাকায় থাকি। কথা প্রসংগে সেদিন এক বন্ধুর বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিলো ঢাকা শহরের পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে। সে জন্ম থেকেই ঢায় থাকে। তার আফসোস কিংবা পরিতাপ অনেক বেশি। জন্মের পর থেকে গত ৩০ বছর ধরে দেখছে, নগর জীবনের হাজারটা সমস্যা শুধু বেড়েই চলেছে।

এক অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধিই সমস্যা তৈরি করছে, অচল করে তুলছে জনজীবন। প্রতিদিন আয়তন বাড়ছে জনস্রোতের। ঢাকা একসময় ছিলো মসজিদের শহর। আর এখন? গার্মেন্টস কর্মী আর ভক্স কালভার্ট। যানবাহনে, বিশেষ করে দ্বিচক্র-ত্রিচক্রযানে চলাচল করতে শরীরের হাড়গোর ভেঙ্গে তামা তামা হওয়ার যোগার হয়।

এই আদম বাড়ার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রন নেই সরকারের। হেটে শান্তি নেই, গাড়িতে চড়ে শান্তি নেই, বাজারে, দোকানে, কোথাও যেযে শান্তি নেই। সেটা বাড়ছে বানের পানির মতো। বাড়ছে বস্তির আয়তন। বাড়ছে নতুন নতুন অপরাধ।

অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ইত্যাদি পার্টির কবলে পড়তে হচ্ছে নিরীহ নগরবাসীকে। আইন শৃংখলাবাহিনী চলে ডালে ডালে, পার্টি চলে পাতায় পাতায়! অপরাধের এতো অভিনব সব পন্থা আবিষ্কার করছে এদের উর্বর মস্তিষ্ক, যা সত্যিই আন্তর্জাতিক পদক দাবী করে। একটা ছোট উদাহরন দিই। ঈদ-উল ফিতরের আগে, (বিশেষ করে, উৎসব, উপলক্ষ্য এলে সংগবদ্ধ অপরাধ চক্র খুব বেশি সক্রিয় হয়। ) বনানী কামাল আতাতুর্ক থেকে পার্মগেট গামী স্পেশাল গুলশান এক্সপ্রেসে উঠি মহাখালী থেকে।

তখন সাড়ে আটটা। বৃষ্টি পড়ছে মুষলধারে। ভীড় দেখে ইতস্তত না করেই উঠে পড়ি প্রায় তিলধারনশূণ্য মিনিবাসে। তুব খানিকক্ষণের মধ্যে পেছনের দিকে একটা সিট পেয়ে যাই। বৃষ্টি এবং বাসের মাত্রা ছাড়ানো বিলম্বে অনেকেই নেমে গেছেন বিরক্ত হয়।

বাসটির মহাখালী রেলগেট পার হয়ে যাওয়ার কথা ফার্মগেট। তা না যেয়ে, সিগন্যালের দোহাই দিয়ে রওনা হলো সোজা, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড হয়ে সাত রাস্তার দিকে। ততক্ষণে বাসযাত্রীদের মধ্যে থেকে চিৎকার চেচামেচি, হুল্লোড় উঠলো, কারন সবাই ফার্মগেট যাত্রী, অফিস আওয়ারে ঘুরপ্যাচের আভাস পেয়ে সবাই উত্যক্ত। কিন্তু কে শুনে কার কথা! বাস রওনা হলো বুলেট ট্রেনের গতিতে। ড্রাইভার, এতোক্ষণ কারু কথা শোনার যার সময় ছিলো না, শত গালিগালাজ হজম করে যে দাড়িয়েছিলো, এখন তার কানে তুলো।

সে ছুটছে, তো ছুটছে। এক টানে সাতরাস্তা। আমি সিট ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছি আরো আগেই। নামার চেষ্টায়। বাসের পেছন দিকে ফাঁকা থাকতেও একটা বিরক্তিকর জটলা ঠিক গেইটের কাছে।

যাত্রীদের গালিগালাজ যখন ক্ষিস্তিতে রূপ নিলো,বাস তখন কাওরানবাজার রেলগেইটে। ঠিক রেল লাইনের ওপর এসে দাড়িয়েছে। সামনে-পিছে দুয়েকটা রিকশা-সিএনজি। তেমন কোনো ভীড় নেই, সাধারনত: ট্রেইন আসার আগে যেটা হয়। সাইরেন বাজছে ট্রেন আসার।

আমি দরজার কাছে দাড়িয়.,দুপাশের জানালা দিয়ে তাকাচ্ছি, কোথাও কোনো ট্রেইনের ছায়টিও চোখে পড়েনা। কিন্তু বাসের ভেতর কয়েকজনের তাগাদা....আরে নামেন নামেন..,ট্রেইন আইয়া পড়ছে। নামেন...আরে...কি ঐলো...জানালা দিয়া নামেন..লাফ দেন...অথচ, দরজার ওখানে দাড়িয়ে থাকা তিনচারজনের কোনো বিকার নেই। তারা অনড়। মেয়ে, বুড়ো, শিশুরা হুমড়ি খেয়ে জানালা দিয়ে লাফাচ্ছে, পড়ছে...মানে সে এক লংকাকান্ড...না দেখলে বোঝার উপায় নেই।

আমার কাছে পুরো বিষয়টাকে কেমন একটা ভোজবাজি, কারসাজি, একটা সাজানো নাটক বলে মনে হচ্ছে। অনেক ঠেলাধাক্কা খেয়ে বাস থেকে যখন নামার চেষ্টা করছি দরজা দিয়ে, আমার এক হাত পেছনের পকেটে মানব্যাগে,বেশ কিছু টাকা সেখানে। সাধারনত: আরেকটা হাত সামনের পকেটে থাকে। মোবাইলে, কিন্তু মানুষের ঠ্যালাঠেলি এতোই বেশি, আমার সেই হাত মোবাইলের কাছে পৌছাতে পারেনা। এর সাথে প্যানিক, হুলস্থুল আতংক নিয়ে সংঘর্ষমান মানুষের চাপ।

শেষ পর্যন্ত যখন বাস থেকে নামি, লক্ষ্য করি, বাসটি প্রায় খালি, দরজায় সেই তিনচারজন দাড়িয়ে..মানুষ নামার সাথে সাথে খালি বাসটি রওনা হলো ফার্মগেটের দিকে। একপাক ঘুরে, রিকশা ডাকতে যেযে নির্ভার মনে হলো নিজেকে। পকেটে হাত দিয়ে দেখি মোবাইলটা নেই। তখনই বুঝতে পারলাম কতোটা পরিকল্পিত রাহাজনি গটে গেছে এইমাত্র। শান্তনা এই যে, আমি একা নয়, হয়তো বাসের আরো দশজনের মোবাইল, মানিব্যাগ ইত্যাদি হাতিয়ে নিয়েছে নর্দমার কীট রূপি এসব জুচ্চোরেরা।

তখনই আমার মনে পড়লো দুতিনজন ফ্রেন্ড, যারা এমন চক্রের কথা মাত্র ক'দিন আগেই বলেছিলো,কিন্তু তাদের কথা বিশ্বাস করিনি। এটা একটা সামান্য, অতিতুচ্ছ পরিকল্পীত রাহজানি। প্রকাশ্য দিবালোকে, প্রতিদিন এমন হাজারো পন্থায়, চলছে অপরাধ চক্রের কাজকর্ম। এসব থেকে অব্যাহতি নেই নগরবাসীর। যতোদিন না বানের পানির মতো বাড়তে থাকা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে তৎপর হচ্ছে সরকার।

কঠোর ব্যবস্থা চাই।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।