আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুঝিয়ে দিলেন, কেন তাঁকে অধুনা বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার বলা হয়। -আনান্দবাজার

তক বিলেতে ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিনথ’ মানে, দিনটা অশুভ। কিছু না কিছু খারাপ ঘটবে। কিন্তু ওই একই দিন নাইটদের জন্য শুভবার্তা নিয়ে এল। চৈত্রের শেষ রাত এনে দিল মূল্যবান দু’পয়েন্ট। ইডেনে খুলে গেল নাইটদের জয়ের হালখাতা।

এবং খুলল, সাকিব আল হাসান নামের এক বাঙালির হাত ধরে! নববর্ষের সূচনাতে কলকাতাকে এর চেয়ে ভাল উপহার আর কী দিতে পারতেন গম্ভীর ও তাঁর দলবল? রাত সাড়ে এগারোটাতেও ইডেন জুড়ে তুমুল গর্জন। ক্লাবহাউসে উনিশ-কুড়ির উড়ন্ত চুমু। শব্দবিধির ফাঁদে দশটাতে বন্ধ ডিজের জগঝম্প। কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার কলকাতার। ‘করব, লড়ব’-র আদলে গ্যালারি যেন ‘নাচছে, গাইছে, হাসছে রে’।

ফেসবুক-টুইটারে উপচে পড়ছে মেসেজ। ‘নিউ ডন আসছে এ বার। নতুন ভোর শুধু সময়ের অপেক্ষা’...‘হাল্লা বোল কোথায় রে, বলছে তো কেকেআর!’ মধুর প্রতিশোধের স্বাদ পেলে যা হয়! আইপিএলের মাহাত্ম্যটাই অন্য রকম। টিমে যত বড় নামই থাক, চোখ বুজে বাজি ধরার উপায় নেই। আজ যদি আপনার টিমের সেনসেক্স মগডালে চড়ে বসে থাকে, তো পরশু তা পড়তে লাগে মাত্র তিনটে ঘণ্টা, একশো কুড়ি বল।

এই রাজস্থানকেই দু’দিন আগে পর্যন্ত টুর্নামেন্টের অন্যতম কালো ঘোড়া ধরা হচ্ছিল। নিজ দুর্গে যারা কি না হারিয়েছে নাইটদের। কিন্তু এক সপ্তাহও ঘুরতে না ঘুরতেই তারা ‘পপাত ধরণীতলে’! ওই একই টিমের সামনে। বরং ধীরে-ধীরে টানা জয়ের হাইওয়েতে উঠে আসছে কেকেআর। কিং খান আজ মাঠে ছিলেন না।

বিদেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আটকে গিয়েছেন। থাকলে দেখতেন, কী ভাবে চার ম্যাচে দু’নম্বর জয় তুলে নিচ্ছে টিম। কী ভাবে এক ঝটকায় ছয় থেকে চারে উঠে আসছে কেকেআর। দাঁড়িয়ে আছে মুম্বই, দিল্লি, পুণে-র ঠিক পরেই। আর এ জন্য যাবতীয় ধন্যবাদ প্রাপ্য সাকিবের।

কী বোলিংয়ে, কী ব্যাটিংয়ে। টি-টোয়েন্টির ভরা বাজারে ১৩১ কোনও পাতে দেওয়ার মতো স্কোর নয়। কিন্তু নাইটদের টার্গেট আরও উর্ধ্বমূখী হতে পারত, যদি না মোক্ষম সময়ে সাকিবকে ডেকে নিতেন গম্ভীর। যে ভাবে খেলছিলেন দ্রাবিড়! কে বলতে পারে, দেরি করলে আজ ডুবতে হত না? ইডেনের বাইশ গজের যা দশা! একে তো মন্থর, তার উপর টার্নার। সন্ধে সাড়ে আটটা থেকে বল ঘুরছে বাঁই-বাঁই করে।

রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ব্যক্তিত্বও ঠকে যাচ্ছেন স্পিনে। গত দিন ম্যাচ ছিল বারো ওভারের। পিচের মতিগতি সে ভাবে বোঝা যায়নি। এ দিন ছিল কুড়ি ওভারের প্রশ্নপত্র, এবং ইডেন কিউরেটরকে খুব বেশি নম্বর দেওয়া যাচ্ছে না। লোকে গাঁটের কড়ি খরচ করে টি-টোয়েন্টি দেখতে আসে বিনোদনের বুফে চেটেপুটে সাফ করতে।

চার-ছক্কার উৎসব দেখতে। তার বদলে কী দেখতে হল হাজার তিরিশেক দর্শককে? দ্রাবিড়-দুর্গ ভাঙছে স্পিনে। এই সামান্য রানটুকু পার করতে গলদঘর্ম হয়ে যাচ্ছেন নাইটদের বাঘা-বাঘা সব ব্যাটসম্যান! বোঝাই যাচ্ছে, ইডেনে ম্যাচ জিততে গেলে টিমে স্পিনার বোঝাই করতে হবে। যতই হাতে লি-প্যাটনসন-ডি’লাঞ্জ থাক। যতই সিএবি-কে দু’রকমের পিচের ফরমায়েশ পাঠান গম্ভীর।

কলকাতা ময়দানে এপ্রিল-মে মাসের গরমে তো ম্যাচ জেতান স্পিনাররাই। এই ফর্মূলা চলছে বহু বছর ধরে। আইপিএল ব্যতিক্রম হবে কী ভাবে? কিন্তু স্পিনের জাদু দেখাতেও চাই ক্রিকেটীয় স্কিল। যেখানে জোহান বোথা, অঙ্কিত চৌহ্বানদের কয়েক মাইল পিছনে ফেলে দিলেন সাকিব। বল হাতে তিনটে উইকেট, যার মধ্যে আছেন দ্রাবিড়।

আছে পর পর দু’ওভারে দু’টো উইকেট। ম্যাচের সেরা সাকিব বলছেন, “এটাই আমার আইপিএলে সেরা পারফরম্যান্স। এই প্রথম ম্যাচের সেরা হলাম। উইকেট পেলাম প্রথম বলেই। ” আবার ব্যাটিংয়েও যখন টেনশনের ছোট ছোট মুহূর্ত, সাকিবের ব্যাট থেকে ক্ষেপনাস্ত্রের ঢঙে বেরোল গ্যালারি পার করা ছক্কা।

বুঝিয়ে দিলেন, কেন তাঁকে অধুনা বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার বলা হয়। সঙ্গে অবশ্যই জুড়তে হবে মনোজের ছোট কিন্তু কার্যকরী ইনিংস। গম্ভীর ফিরে যাওয়ার পর কালিসের সংসার সামলানোর দায়বদ্ধতা। যত দিন যাচ্ছে, তত কিন্তু দিশা দেখছে নাইট-ব্যাটিং। ফিরে আসছে দরকারি আত্মবিশ্বাস।

যেখান থেকে একটা টিম বড় স্বপ্ন দেখতে পারে। সেমিফাইনালকেও যেখান থেকে আর দূরের নীহারিকা মনে হয় না। প্রীতি জিন্টার সেনাবাহিনী প্রস্তুত তো? আগামী রবিবার কিন্তু এই ‘নতুন’ নাইটদের মুখেই পড়তে হবে! বর্ষশেষে বাঙালির হাত (সাকিব)ধরেই দু’পয়েন্ট এর থেকে বেশি কি কেউ দিতে পারে? আনান্দবাজার  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.