মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে মানুষ আলাদা আলাদা গোত্রে দলভুক্ত হয়ে বাস করতো। তারই ধারাবাহিকতায় জন্ম নেয় রাষ্ট্র। আর রাস্ট্র গঠনের পরপরই মানুষের বৈদেশিক সম্পর্ক এবং নিজ রাস্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে অন্য রাস্ট্রের সাথে যোগাযোগ জরুরী হয়ে পড়ে। গ্রীক সভ্যতারও আগে রাষ্ট্রিয় দূতের অস্তিত্ব থাকার প্রমান পাওয়া যায়।
এই রাষ্ট্রিয় দূত থেকেই দূতাবাসের উৎপত্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তি সময় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ কয়েকটি রাষ্ট্র বিভাজনের ফলে বর্তমানে পৃথিবীতে স্বাধীন রাষ্ট্রের সংখ্যা ২৪৯ টি। ২৪৯ টি রাষ্ট্রের ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় পতাকা, ভিন্ন ভাষা, সাংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্রতা প্রকাশ পায়। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের নাম আমরা দেখি এ্যাম্বেসী অথবা হাইকমিশন, কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলোকে হাইকমিশন নামে অবিহিত করা হয়। এছাড়া বাকি সব দেশের দূতাবাসকে বলে এ্যাম্বেসী।
বাংলাদেশের বিদেশী হাইকমিশন অফিস বা এ্যাম্বাসীর সবগুলোরই অবস্থান রাজধানী ঢাকায়। বেশির ভাগেরই অবস্থান গুলশন, বনানী ও বারিধারা এলাকায়। এসকল এলাকায় দূতাবাসের অবস্থান হওয়ায় গণমাধ্যমসহ অনেকে উক্ত এলাকাগুলোকে কুটনিতিক পাড়া বলতে সাচ্ছন্দ বোধ করে।
দূতাবাসের উদ্দেশ্যে ও কাজ
* কুটনিতিক সম্পর্ক বজায় রাখা।
* নিজ দেশে অবস্থানরত নিজ দেশের নাগরিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লক্ষ্য রাখা।
* নিজ দেশের সব ধরনের ভিসা প্রদান সংক্রান্ত কাজ।
* নিজ দেশের রাষ্ট্র প্রধান বা উচ্চ পর্যায়ের কোন ব্যাক্তি আসলে তার বিস্তারিত দেখভাল করা। প্রয়োজন বোধে প্রটোকল সংক্রান্ত কাজ করা।
* স্ব-স্ব দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় দেখা ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ে নিজ দেশের সরকারকে অবহিত করা।
ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশী দূতাবাস সমূহ সাধারণত যেসব ভিসা প্রদান করে থাকে।
* বিজনেস ভিসা
* স্টুডেন্ট ভিসা
* ভ্রমণ ভিসা
* আবাসন ভিসা
* সাংবাদিকগণের ভিসা
* ফ্যামিলি ভিসা
* ট্রানজিট ভিসা
* ওয়ার্কিং ভিসা
* ভিজিট ভিসা
* গ্রুপ ভিসা
* মাল্টিপল ভিসা
* শ্যানগেন (Schengen) ভিসা
ভিসা আবেদনের নিয়ম
* ভিসা আবেদনকারী যে দেশে যেতে ইচ্ছুক উক্তদেশের দূতাবাস থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। উক্ত আবেদন ফর্মটি যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।
* প্রত্যেক কর্ম দিবসে দূতাবাস কর্তৃক উল্লেখকৃত সময়ে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
* আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে।
* প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত না করলে বা ভিসা আবেদন বাতিল হওয়ার ৬ (ছয়) মাস অতিক্রম না হলে পূনরায় ভিসার জন্য আবেদন করলে, ভিসা প্রদান করা হয় না।
অনেক দূতাবাসে ভিন্ন নিয়ম পরিলক্ষিত হয়।
* আবেদনপত্র জমা দিলে আবেদনকারীকে অফিস থেকে আবেদনপত্র জমার রশিদ প্রদান করা হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
কোন দেশের দূতাবাস ও কোন ধরনের ভিসায় যেতে ইচ্ছুক তার উপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি হবে নিম্নে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব ভিসার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে ভিসার ক্যাটাগরী অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
* আবেদন ফরম যথা নিয়মে ও নির্ভুল ভাবে পূরণ করতে হয়।
* সদ্যতোলা দূতাবাস কর্তৃক উল্লেখিত ফটো সাইজ ও দেয়া থাকলে উক্ত সাইজের অন্যথায় পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ছবির সংখ্যা দেশ ভেদে ২ থেকে ৮ কপি হতে পারে। পাসপোর্টের ফটোকপি।
* বৈধ পাসপোর্টের প্রথম পাঁচ পাতার ফটোকপি।
* প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি হবে, নিম্নে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় সব ভিসার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে ভিসার ক্যাটাগরী অনুযায়ী কাগজপত্র জমা
* বিজনেস ভিসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এর ইংরেজী অনুবাদ এবং নোটারীকৃত কপির মূলকপি।
* বাংলা ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি।
* বিজনেস কার্ড।
* অফিসিয়াল প্রত্যয়নপত্র/ ট্রেড লাইসেন্স এর ইংরেজী অনুবাদ ও নোটারীকৃত কপির মূলকপি।
* জাতীয় পরিচয়পত্র
* বৈধ পরিচয়পত্রের এবং সর্বশেষ প্রাপ্ত সনদের সত্যায়িত কপি অথবা কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যয়নপত্র / সুপারিশ পত্র।
* গ্রুফ ভিসার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়/ কলেজ/ অফিসের লেটার প্যাডে পাসপোর্ট নম্বর সহ নামের তালিকা লিখতে হবে।
লেটার প্যাডে বিভাগীয় প্রধানের অফিসিয়াল সিল স্বাক্ষরসহ সুপারিশ থাকতে হবে।
* নূনতম ছয় মেয়াদের পাসপোর্ট
* কনস্যুলার বরাবর আবেদনপত্র (ফরওয়াডিং লেটার)
* ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট সহ ব্যাংক স্টেটমেন্ট
* এয়ার টিকেট বুকিং স্লিপ
* আবাসনের প্রমানাদি (ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোন বিল, পানির বিল ইত্যাদি)
* অনেক ক্ষেত্রে নতুন পাসপোর্টের পাশাপাশি পুরনো পাসপোর্টও দরকার হয় যদি থাকে।
* বিভিন্ন ধরনের ভিসা সংক্রান্ত অন্যান্য কাগজপত্রের জন্য ভিসা আবেদনপত্রের প্রথম পাতা দেখতে হয়।
* সকল কাগজপত্র দুই কপি করে (১ কপি মূলকপি ও ১ কপি ফটোকপি) জমা দিতে হয়। মূলকপি সত্যতা যাচাইয়ের পর ফেরত দেয়া হয়।
* বিজনেস পাসপোর্টধারীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স এর মূলকপি ও ফটোকপি।
* কৃষক পাসপোর্টধারীদের জন্য জমির দলিলের ফটোকপি।
* মেডিকেল চেকআপ/চিকিৎসার জন্য যেতে চাইলে ডাক্তারের (প্রেসক্রিপশনপত্র, রিপোর্ট ও রেফার্ড কপি।
* পাসপোর্টের প্রথম পাঁচ পাতার ফটোকপি,অতিরিক্ত পাতা (যদি থাকে),গুরুত্বপূর্ণ ভিসার পাতা (যেমন- দুবাই, ইউএস, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি; যদি থাকে), সকল পাতার স্ক্যান/ সফট কপি (JPEG ফরম্যাট) সিডি অথবা পেন ড্রাইভে জমা দিতে হয়।
* কোম্পানী লেটার হেডে Forwarding লেটার
* দুজন রেফারেন্সের বিস্তারিত ঠিকানা
* স্টুডেন্ট ও বিজনেস ভিসার ক্ষেত্রে ব্যাংকের চলমান লেনদেনের স্টেটমেন্ট।
* বিবাহ সনদ
* জন্ম সনদপত্র
* আমন্ত্রন/ প্রস্তাবপত্র (ইনষ্টিটিউট বা আন্তর্জাতিক সংস্থা হতে)
* অ্যাটাচট্ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট হতে অনুরোধপত্রের মূলকপি।
* ছবিতে উভয় কান দৃশ্যমান হতে হয়
* হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্টের পরিবর্তে নতুন পাসপোর্টের মাধ্যমে আবেদনের ক্ষেত্রে “ডি” ফরম সঠিকভাবে পূরণ করতে হয়।
* বিবাহিত মহিলাগণ যদি নাম পরিবর্তন করতে চান তবে বিবাহ সনদ জমা দিতে হয়।
* পাসপোর্টের যে পৃষ্ঠাগুলোয় তথ্য দেয়া হয় সেগুলোর স্পষ্ট ফটোকপি।
* গ্যারান্টরের সাথে সম্পর্কের কাগজপত্র (যদি গ্যারান্টর থাকে)
* অর্থনৈতিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র (যদি ভ্রমণের খরচ ভ্রমণকারী নিজে বহন করে তাহলে ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট (যদি থাকে) ও ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট)
* অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানী, গ্রিস, হাঙ্গেরী, আইসল্যান্ড, ইতালী, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, এবং সুইজারল্যান্ডে একক ভিসায় ভ্রমণ ব্যবস্থা হল শ্যানগেন ভিসা।
এ ভিসা নিয়ে ইউরোপের এই ২৬টি দেশে স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করা যায় এবং সর্বোচ্চ ৯০ দিন থাকা যায়। এ ভিসার মেয়াদ ৬ মাস, অর্থাৎ ৬ মাসের মধ্যে যেকোন ৯০ দিন ইউরোপের দেশগুলোতে কাটানো যায়। ইউরোপে প্রবেশের প্রথম দিন থেকে দিন গণনা শুরু হয়। তবে শ্যানগেন ভিসার আওতায় স্থায়ীভাবে বসবাস বা কাজের অনুমতি দেয়া হয় না।
বি:দ্র: কিছু তথ্য টেবিল আকারে হওয়ায় এখানে দেওয়া গেলো না।
এছাড়া দেশ ভিত্তিক আলাদা আলাদা দূতাবাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করতে পারেন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।