লিখি প্লেনকে নিচ থেকে বাচ্চারা পাখি বলে ভুল করে,
বড় ট্রেনকে ওভাবে দেখলে কেন্নি বিছা মনে হবে। এরকম হলে বাসকে
বিড়াল বলা উচিত..নাকি? উপমার কথা
আর কি বলবো চড়াই পাখি কে যাদুর মলম মাখিয়ে এরকম উড়োজাহাজের সাইজ করলে
তাকে কি পাখি মনে হবার কথা? আমার কপালে
আজ সিট আছে জানলার পাশে। প্রথম দিকে জানালা ভাল লাগতো। ওঠা নামা দেখবো। মেঘ দেখবো।
প্লেনের যে জানালা
তাতে তিন বিঘত পরিমান
এই খুপড়ি। দুইপরতের ভারী কাচ দিয়ে এতই দুরে রাখা নিচু হয়ে দেখার উপায় নেই। তবে জানলায় মেঘ দেখতে এখন ভাল লাগে। কিন্তু আর কতক্ষণ।
দম বন্ধ হয়ে আসছিল কনফারেন্সের সময়টাতে।
ফেরার আনন্দ আমাকে ঘিরে ধরেছে। আজ বসেছি যেখান ডানার উপর। পাঞ্জাবীর লম্বা হাতার মত দেখতে ডানা। বোয়িং ৭৭৭-২০০ এল আর। প্রতি সারিতে
১০ জন করে বসে থাকছে ।
ছিট ছিট কাপড়ের উঁচু সীট। হাটু গুঁজে বসে আছে
কয়েকশত প্যাসেঞ্জার। সমুদ্রের গর্জনের মত
প্লেনকে উত্তাল মনে হতো
কিন্তু শব্দটা ভারী, যেন কয়েকশত যাঁতায় মাসকলাই ডাল পেষা হচ্ছে । অসহনীয় এক কম্পণ। কিন্তু কি কান্ড মানুষ বাধ্য হয়ে বসে আছে।
অপেক্ষারত থাকছে কখন নেমে যাবে।
অনেকগুলো তারা জ্বলে যাচ্ছে মাথার ওপরে! বাতিগুলো অন্ধকারে সাজানো ঠিক আকাশ যেন। বুদ্ধির প্রশংসা করি শিল্পীর।
একটু অবাক হয়ে যেতে হবে। এমিরাতের মানচিত্রে দেখাচ্ছে এখন সে উড়ে যাচ্ছে
স্পেনের ওপর দিয়ে ন্যু ইয়র্ক সময় পাঁচটা আঠারো পিএম।
সন্ধ্যা নামছে মাত্র স্টেটসে, নিচের স্পেনের সময় ঘুমের কাল। ঘুমাতে হবে যে করে হোক। ছাদে ছোট বড় এল ই ডি বসানো তারা আবারও দেখলাম।
প্লেনে খেতে দেয়া হয়েছিল আগে। আমার খুব একটা যে খিদে পায়
প্লেনে তা না।
আমি পরিচিত এই রুটের খাবারের সাথে। মেনুতে লেখা থাকবে
চিকেন, ডালা মাখানি..অথবা গলে যাওয়া ফিশ। আমি ফিশ খেয়ে
কানে ধরেছি। তবে ডালমাখানি খেতে আগ্রহ নেই
তাই চিকেন চেয়ে নিয়েছি।
আমি ছাড়া অনেকেই চিকেন খেতে চাইলো।
গণভোটে চিকেন জয়ী। এলো ভাত। মনে হলো এঁটেল মাটি দিয়ে বানানো প্লাস্টিক। আর ঠান্ডা গুড়ো ডাল দিয়ে আস্তু আস্তু গোস্তের সঙ্গে
গ্লু দিয়ে আঁটা। পাশের জন
একটু আধটু টানা হেঁচড়া করে খেলো ছোট প্যাকেটে রাখা কুমড়ার কেক।
আমি কাগজের ঠোঙাতে যে প্লাস্টিকের চামচ পেলাম তাতে মাংসের আঁশ ছড়াতে সক্ষম হলাম। একটা এতিম বনরুটি পড়েছিল কাগজে। ওটাও খেলাম।
মনে হল বহুদিন জঙ্গলে থেকে শেষে একটা তিতিরের মাংস পুড়িয়ে খাচ্ছে।
আমার বাম পাশে বসে থাকা যে লোক
সে হঠাৎ একটা কাজ করলো।
মুঠোর ভেতর একটা কিছু নিয়ে তাতে ঠোঁট লাগিয়ে টানতে লাগলো। চোরাগুপ্তা চাউনি। আমি বললাম কি এটা। পাকিস্তানী লোক। রুক্ষ্ম চেহারা।
বললো
ইলেকট্রনিক সিগারেট। ধোঁয়া নেই। তাই মানা নেই প্লেনে।
কি বলবো? মেনে নিলাম।
নিজো নামের একটা তরুণী পাশে বসে আছে।
সে নেপালে ফেরত যাচ্ছে। আমি ভাবলাম পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কঠিন। সে বললো এইচ ওয়ান ভিসায় না পেয়ে কয়েকজন পালিয়েছে ইলিগ্যালি থাকবে বলে। কিন্তু মেয়েটির রেজাল্ট অসম্ভব ভাল। চাকুরী পেয়েছে, ভিসাও।
কিন্তু তারপরও সোনার এই হরিণের দেশ থেকে সে ফিরছে।
বললাম নেপালকে অনেক ভালবাসেন
বললো না, তা নয়। আমি এক ছেলেকে ভালবাসি।
সে নেপাল থেকে কোথাও যাবে না। আমি গৃহিনী হয়েই থাকবো যদি তার সঙ্গে সংসার করতে পারি।
আমার ভাল লাগলো শুনে। কিন্তে এত পড়াশোনা, এত পরিশ্রম, এত স্বপ্ন?
সে বললো, কিছু পেতে কিছু তো হারাতেই হবে। আমার সখের এমএসটা কোন কাজেই লাগলো না। তাতে কি!
--
ড্রাফট ১.০ / মনে হয় এরকম ভ্রমনের লেখা আগেও লিখেছি ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।