আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেদিন প্রথম প্লেনে চড়া

Little boxes on the hillside,Little boxes made of ticky-tacky,Little boxes, little boxes,Little boxes, all the same. আমি যে এক্কেবারে মফু এইটা পুরাই প্রমাণিত! আমি আমার জীবনে কোনদিন প্লেন এর ধরেকাছে যাবার সুযোগ পাই নাই! বিলাত যাওয়া ছিল মহা বিশাল ব্যাপার! অস্ট্রেলিয়া খুব সহজে যখন ভিসা দিয়া দিল, আমি তো ভাবা সুরু করে দিছি আমি নোবেল টোবেল কিছু না পাইয়া থামতাচি না! কেমনে? আমি জানি না! হাঃ হাঃ! যাই হোক গল্প হইলো গিয়া বরিশালী মফুর প্লেন যাত্রা নিয়া! আমার প্রথম প্লেন যাত্রা ছিল দীর্ঘ ১৩ ঘন্টার যাত্রা! মাথার মধ্যে ছিল দুনিয়ার সব প্লেন ক্রাশ মুভির দৃশ্য! সাপ ও দুই তিন টা ছিল! যাই হোক প্লেন দিল উড়াল! তার আগে আত্মীয় স্বজন দের কান্না কাটি পর্ব বাদ যায় নাই (আগেই কইছি আমি মফু)! আচ্ছা প্লেন উড়াল দিল, অনেক টা আমার দীর্ঘ ২৬ বছরের জীবন পিছনে ফেলে! প্লেন এর মধ্যে ছিল বাঙালিদের দৌড়াদৌড়ি! দীর্ঘ দিনের অভ্যাস কেমনে যাবে! আগে ই গুরুজনরা বলে দিছিল এই বেপারে! আমি ও আমার ঠেলাঠেলির অভিজ্ঞতা দিয়া সবার আগে ই সিট এ গিয়া বইস্যা পরলাম! কি কি জানি চকোলেট দিল , আবার খাওন ও দিল! আমি তো ভাবি "খাইছে"!! কেউ কেউ আবার চামে দুইবার খাওন নিয়া ব্যাগে ভরে ফেলল! সে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! আমার মনে সন্দেহ হইতেছিল, "প্লেন এর ছাদে কেউ গাট্টি বোচকা নিয়া ওঠছে কিনা!!" এদিকে এক জন চিল্লায় ওদিকে আর একজন! আমার জানলা ডা খুইল্লা হওয়া খাওয়ার এক দুর্দমনীয় সখ জাগছিল! উড়োজাহাজ মোডেও মোগো বরিশালের ছোড লঞ্চের চাইতে বড় আছিল না! কি কয় উড়োজাহাজ, এইডা হইলো গিয়া উড়োলন্চ! এইসব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে মালয়শিয়ায় ধুম কইররা উড়োলন্চ দুই তিন ডা ঝাকি দিয়া নামাইয়া দিল!! মালয়শিয়া বিমান বন্দর, সে এক হুলুস্থুলু ব্যাপার!! দোকান টোকান বসাইয়া পুরা সুপার মার্কেট বানাইয়া ফেলছে! আমি যাই দেখি গুন টুন দিয়া যে দাম আহে, তাতে মোটামুটি অজ্ঞান হবার দশা! যাই হোক, খুব ভাব নিয়া স্টিল এর স্ট্রাকচার দেখতাছি, ভাবখান এমন ছিল যে, "এইগুলা কিছু হইলো!" পরে চিন্তা কইররা দেখছি, "আমি যেমনে গবেষণা করতে ছিলাম সন্ত্রাসী ভাইব্বা পুলিশ এ ধরল না কেন, বড়ই আশ্চর্য!" বড় বড় প্লেন দ্যাখতে দ্যাখতে মোটামুটি ঘন্টা দুএক আগে গেটের সামনে আমি হাজির. যদি আমার প্লেন আমারে রাইক্ষা অস্ট্রেলিয়া যায় গা! দেখি আরো কিছু বাঙালি এদিকে সেদিকে কিচির মিচির করতাছে! মনে মনে আমি মহা খুসি, "যাউক গা আমি একলা না!!" আস্তে আস্তে সুরু হইলো অর্ধনগ্ন মেয়দের আগমন! আমার হৃতপিন্ডের ধুক পুক মনে হয় বাংলাদেশ থেইক্কা শোনা গেছিল! এরা সবাই আমার প্লেন সঙ্গী! লুকাই চুরাই চোখভরে দেখছিলাম! উল্টা পাল্টা ভাবি নাই বইল্লা আমি মিথ্যা বলব না! আবার ওই সাপ আইস্যা ভাবনায় বাগড়া দিল (ভাই রে ভাই, "স্নেক অন ডা প্লেন" কড়া একটা মুভি)! এর মধ্যে কই থেকে এক কাপল আইল! বইস্যা, দাড়ায়া চুমা চুমি সুরু করে দিল! আমি তো মহা খুসি! সময় যে কখন কই দিয়া গেল আমি নিজেও জানি না! এর মধ্যে এক বাঙালি ছেলের সাথে পরিচয় হইলো! আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এক সাথে বসব, জানালার পাশের সিট নিতে হবে! লাইন এ দাড়াবার ঘোষণা দিতে পারে নাই, আমরা এক লাফে সবার আগে লাইনএ! অন্যরা দেখলাম আস্তে সুস্তে হেলেদুলে আসতেছে! অমি মহা অবাক! কত্ত বড় ছাগল! জানালার পাশের সিট পাবি না বেটা গাধা! ওড়ে আমার ঠাহুরমা! কত্ত বড় প্লেন! এইডা পুরাই উড়োজাহাজ! বাপক সন্দেহ হইতেছিল এইডা কেমনে উড়বো! সমুদ্রের মইধ্যে ঝাপ দিয়া পইড়া না গেলেই হয়! এর পরে যেমনে প্লেন ক্রাশ করলে কি করতে হইব কইলো, আমার বিশ্বাস ভাইঙ্গা পুরাই গুড়া গুড়া হয়ে ময়দা হযে গেল! এই জিনিস কেমনে উড়বো! তারপর আবার এতগুলো মানুষ গাদায়া ভরছে! হারামজাদারা! বাত্তি টাত্তি নিভাইয়া আমাগো বাইন্ধা থুইয়া এক ভয়াল পরিবেশ! যাই হোক আল্লাহ এর অসীম করুনায় এই জিনিস খিচ্চা এক দৌড় দিয়া আকাশে উইড়া গেল! এক হারামজাদা এই উত্তেজনাকর পুরা সময় ঘুমাইয়া কাটায়া দিল! আমার ওড়ে এক থাবরা দিয়া ঘুম ছুটাইয়া দেবার ইচ্ছা হইতেছিল! পরে শিখছি সাদা জাতটার মাথায় কিঞ্চিত ছিট আছে! যাই হোক প্লেন আকাশে ঠান্ডা মাথায় ভাসতাছে, আর সুন্দরীরা সুরা পরিবেশন সুরু করছে! অনেকটা বেহেস্তের কাছাকাছি চইল্লা আসছি মনে হইতেছিল! জিগাইল কিছু লাগবে কিনা! "লাগব না মানে!" আমি জিগাইলাম আছে কি (খুব ভাব!!)..একটা অক্ষর ও বুঝলাম না! একটা জিনিস বঝলাম যে ওয়াইনের মধ্যে সাদা আর কালা আছে, বিয়ারের মধ্যে হাজার হাজার নাম আছে! আঙ্গুল দিয়া দেখায়া কইলাম এইডা দাও! আমার পাশের পিচ্চি দেখি কেমন কেমন করতাছে! আমি কইলাম খাইলে চাও, কি খাবা! ভাব নিয়া ওই পোলার জন্য ও একটা নিয়া লইলাম! জানালা দিয়া তাকাইয়া দেখি খালি পানি আর পানি! মনে পড়ল, "পৃথিবীর এক ভাগ স্থল, তিন ভাগ জল"! ছোটবেলা থেকে বড়ভাইরা বলত প্লেন দেখলে গাছ তলায় যাইতে! প্লেনের হাগুখানার হাগুমুতু নাকি টুপ তাপ কইররা মাটিতে পরে! আমি আমার হাগু ছড়াইয়া দেবার সুযোগ ছাড়ি নাই! ওই হালার ভাইগো এক বার পাইলে, "আমার এক দিন কি ওগো দশ বারো দিন!" কি দৌড়ডা না দৌড়ায়ছি! অস্ট্রেলিয়া, হটাত করে দেখি নিচে আর পানি নাই!! লাল বিদ্খুটে একটা দেশ! মঙ্গল গ্রহে চইল্লা আসলাম নি!! চারিদিকে লাল!! আবার হেগে দিলাম! অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে ফুর্তি ফুর্তি ভাব! দেশে চলে আসছে! ৫-৬ ঘন্টা মঙ্গল গ্রহের উপর, আমি মহা বিরক্ত হয়ে গেলাম!! একটা কেন্গারু তো ভালো, কোনো ঘর বাড়ি ও নাই! বিরক্তির চূড়ান্তে গিয়া দিলাম ঘুম! আমার পাশের পোলায় ঘুম দিয়া উঠাইয়া কইলো, দাদা আইস্যা গেছি! আমি লাফ দিয়া জানালায়, দেখি অদ্ভুত সুন্দর এক শহর, হাজার হাজার বাতি! আমার সব দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে বিশাল প্লেন দীর্ঘ ৮-৯ ঘন্টা আকাশে ভাসতে ভাসতে মেলবর্ন চলে আসলো! শেষ হলো আমার প্রথম উড়োজাহাজ যাত্রা! আমি আর আমার সুটকেস...সামনে এক নতুন জীবন! সুরু হলো "গু দে" জীবন! (একান্তই এক মফুর অভিজ্ঞতা, কেউ মাইন্ড করলে আমি তার নিকুচি করি! কষ্ট করে পড়বার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!)  

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.