আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পানিতে মারবো, ব্যবসায় মারবো, অর্থনীতিতে মারবো বাংলাদেশকে –এটাই ভারতের অলিখিত বক্তব্য

পানি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। যার চরম শিকার বন্ধু রাষ্ট্রের দ্বারা বাংলাদেশ নামক আমার প্রিয় ছোট্ট দেশটি। যখন এই অবস্থা তখন ক্ষমতাসীন সরকারের নেতারা গতকাল দেখলাম বল্লেন এবার ভারতের কাছ থেকে যুদ্ধ করে সমুদ্র জয় করবো। তবে সেজন্যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে হবে তবেই তারা এটা করতে পারবে। কিন্তু আমার ঠিক বোধগম্য নয় এই সরকার ভারতের কাছ থেকে কি আদায় করেছে আজ পর্যন্ত এটি কিন্তু দেশের জনগণের কাছে বড় প্রশ্ন।

তারা আবার এ কথাও বলেছেন- দেশের উন্নয়নের জন্য এই সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে হবে অথবা রাখতে হবে। এতে কিন্তু দুটো প্রছ্ন্ন ইংগিত রয়েছে। একটি সরকারের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা উঠিয়ে দেয়া এবং তাদের অধীনে নির্বাচনের পথকে সুগম করা- যাতে আজকের এই কথাটা বাস্তবায়ন করা যায়, তাছাড়া আওয়ামী লীগের ভীষণ ২১ ( ভীশন ২১) এর ঘোষণা তারা তো আগেই দিয়েছিল এ দুটো বিষয় থেকে কিন্তু স্পষ্ট হয়ে যায় আজকের আওয়ামী লীগের বক্তব্য থেকে। তাহলে আগামী নির্বাচন নিয়ে যে সংকট রয়েছে সেটি কিন্তু স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারপরও অন্যান্যা বিষয়- তিস্তার বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবুন সবাই।

এরপরও কি তাদের মতি গতি ঠিক হবে না !!! প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি তো করেইনি, উল্টো এখন একতরফাভাবে তিস্তায় বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির পথে এগোচ্ছে ভারত। প্রায় এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিবেশী দেশটি দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিস্তা-৩ নামের এ প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং তিস্তা-৪ নামের প্রকল্পের আওতায় ৪৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এবং নেপাল ও ভুটানের কয়েকটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে যৌথ বিনিয়োগের জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে এই খবর মিলেছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, সিকিমের তিস্তা অংশে এত বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে অনেক বেশি পানি ধরে রাখার প্রয়োজন হবে।

এতে সিকিমের প্রতিবেশী ভারতের অপর রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার প্রবাহ কমে যাবে। আর বাংলাদেশে তো এর বিরূপ প্রভাব পড়বেই। কারণ, বাংলাদেশ এখনই তিস্তায় প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছে না। সেখানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হলে পানি প্রবাহ আরো কমে যাবে। তা ছাড়া পরিবেশের ক্ষতি তো রয়েছেই।

এ বিষয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি আমার কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। তারপরও ভারত সরকার যদি সিকিম রাজ্যে তিস্তা নদীতে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র করে, তাহলে আমরা আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরব। সিকিম বাংলাদেশের ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ওপরে। তাই সেখানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করার সুযোগ রয়েছে। ' পানি বিশেষজ্ঞ ও পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক ম ইনামুল হক কালের কণ্ঠকে এ বিষয়ে বলেন, তিস্তায় এরই মধ্যে ভারত কয়েকটি ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প করেছে।

আর এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে বিশাল বিশাল প্লান্ট করতে হবে। এ জন্য বিপুল পরিমাণ পানি আটকে রাখতে হবে। যার তীব্র বিরূপ প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। আমরা খাদ্যশস্য উৎপাদনে পানি পাব না এবং পরিবেশের ভারসাম্য ভেঙে পড়বে। দেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাবে, যার নমুনা এখনই আমরা দেখতে পাচ্ছি।

' তিস্তায় ভারতের নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতা করে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত এর তীব্র প্রতিবাদ করা। শুধু প্রতিবাদ করলেই হবে না- দেশের মানুষকে বাঁচাতে বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন বন্ধ করে দিতে হবে। এটা আমাদের বাঁচা-মরার প্রশ্ন। এর আগে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যৌথ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, বিদ্যুতের হিস্যা প্রাপ্তির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে। এই গ্রুপ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বিদ্যুৎ গ্রিড সংযোগ স্থাপন, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করছে।

কমিটি এরই মধ্যে একাধিক বৈঠক করে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় ভারত, নেপাল ও ভুটানে যৌথভাবে বাস্তবায়নযোগ্য সম্ভাব্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকা থেকে জানা যায়, ১৯৯২ সালে তিস্তায় বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভারত সরকারকে সহায়তা করতে চেয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। ব্যাংকটি এবারও এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বর্তমানে তিস্তা নদীর ভারত অংশের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে অসংখ্য সেচ প্রকল্প চালু রয়েছে। নদীটির একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

ভারতের এই একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশের তিস্তা মৃতপ্রায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভরা সেচ মৌসুমে তিস্তার পানি প্রবাহ এক হাজার ২০০ কিউসেকে নেমে আসে। যেখানে জানুয়ারি মাসেও এই নদীতে পানির প্রবাহ ছিল ছয় হাজার কিউসেক। উজানে পানির প্রবাহ কমতে থাকায় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট বন্ধ রেখে অল্প পরিমাণ পানি সেচ খালে প্রবেশ করানো হচ্ছে। যে হারে তিস্তায় পানি কমছে, তাতে পরবর্তী বছরগুলোতে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাবে না।

ওয়ার্কিং গ্রুপের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যৌথভাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমরা কাজ করছি। এই তিনটি দেশের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হবে। সেখানে এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে বলে আশা করা যায়। ' জানা গেছে, বাংলাদেশের ওয়ার্কিং গ্রুপ সম্পর্কে ভারত, নেপাল ও ভুটানকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে এসব দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ঢাকায় একটি সেমিনার আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এসব দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মৌখিকভাবে আলোচনা হয়েছে। তারা ঢাকায় সেমিনারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন। সেমিনারে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের রূপরেখা ও যৌথভাবে বিনিয়োগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কমকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভারত তিস্তায় কী ধরনের বিদ্যুৎ প্রকল্প করবে- সে বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। তবে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সেমিনারে বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলব।

' পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পরিমল চন্দ্র সাহাকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এতে সদস্য হিসেবে আছেন যৌথ নদী কমিশনের সদস্য (বাংলাদেশ) মীর সাজ্জাদ হোসেন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান পরিকল্পনা, বিদ্যুৎ বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং আইডাবি্লউএমের নির্বাাহী পরিচালক ও সিইজিআইএসের নির্বাহী পরিচালক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফরের সময় তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি আর হয়নি। সেই সফরে মনমোহন বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, খুব দ্রুত চুক্তি হবে।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রীও বলেছিলেন, তিন মাসের মধ্যেই চুক্তি হবে। কিন্তু এর পর মমতা পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার পানির প্রাপত্য নিয়ে রুদ্র কমিশন গঠন করেন। সেই কমিশন আজো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়নি। ফলে তিস্তার চুক্তি কবে হবে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই দুই দেশের সরকারেরই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।